স্যার স্ট্যাফোর্ড ক্রীপ্‌স কী উদ্দেশ্যে ভারতে আসেন ? তাঁর প্রস্তাবগুলি কী ছিল ? তাঁর ব্যর্থতার কারণ কী ?

Submitted by avimanyu pramanik on Fri, 01/14/2022 - 15:45

প্রশ্ন:-  স্যার স্ট্যাফোর্ড ক্রীপ্‌স কী উদ্দেশ্যে ভারতে আসেন ? তাঁর প্রস্তাবগুলি কী ছিল ? তাঁর ব্যর্থতার কারণ কী ?

স্যার স্ট্যাফোর্ড ক্রীপস -এর ভারতে আসার উদ্দেশ্য—

(ক) দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ব্রিটিশদের বিপর্যয় মোকাবিলায় ভারতীয়দের পূর্ণ সহযোগিতা লাভ এবং

(খ) ভারতের ভবিষ্যৎ সংবিধান ও শাসন সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রস্তাব নিয়ে ভারতীয় নেতৃবর্গের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার জন্য ব্রিটেনের যুদ্ধকালীন উপ-প্রধানমন্ত্রী ও বিশিষ্ট আইনজ্ঞ স্যার স্ট্যাফোর্ড ক্রীপস ভারতে এসে ছিলেন ।

ক্রিপসের প্রস্তাব : স্যার স্টাফোর্ড ক্রীপস ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের ২২শে মার্চ দিল্লীতে এসে পৌছান । তিনি মূলত কংগ্রেস ও মুসলিম লিগসহ অন্যান্য দলের নেতৃবর্গের সঙ্গে দীর্ঘ্য আলাপ-আলোচনার পর নীচের প্রস্তাবগুলি পেশ করেন—

(১) যুদ্ধের অবসানে ভারতীয়দের কানাডার মতো ডোমিনিয়নের মর্যাদা দেওয়া হবে ।

(২) ভারতীয় প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি সংবিধান সভা গঠন করা হবে এবং সেই সভাকে ভারতের নতুন সংবিধান রচনার দায়িত্ব দেওয়া হবে ।

(৩) নতুন সংবিধান অনুসারে ভারতের যে কোনো প্রদেশ বা দেশীয় রাজ্য ইচ্ছে করলে ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রের বাইরেও থাকতে পারবে ।

(৪) সংখ্যালঘুদের জন্য সংরক্ষণ-ব্যবস্থা বহাল রাখা ।

(৫) প্রদেশগুলির প্রাদেশিক আইনসভা সংবিধান সভার সদস্যদের নির্বাচন করবে, অন্যদিকে দেশীয় রাজ্যের রাজারা তাঁদের সদস্যদের মনোনীত করবেন ।

(৬) ভারতের প্রতিরক্ষার দায়িত্ব ব্রিটিশ সরকারের হাতে ন্যস্ত থাকবে এবং বড়লাটের কার্যনির্বাহক কাউন্সিলের সংখ্যাগরিষ্ঠের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ‘ভিটো’ ক্ষমতা প্রয়োগ করে তা বাতিল করার অধিকার বড়লাটের থাকবে ।

ক্রীপস মিশনের ব্যর্থতার কারণ—

ক্রীপসের প্রস্তাবগুলি ভারতের বেশিরভাগ রাজনৈতিক দলের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠতে পারে নি, কারণ—

(ক) এই প্রস্তাবে পাকিস্তানের দাবিকে পরোক্ষভাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয় এবং ভারতের প্রতিরক্ষার পূর্ণ দায়িত্ব ভারতীয়দের হাতে ছেড়ে দিতেও ব্রিটিশ সরকার রাজি ছিল না ।

(খ) ক্রীপস প্রস্তাবিত জাতীয় সরকারকে ব্রিটিশ মন্ত্রীসভার মত সম-মর্যাদা ও ক্ষমতা দেওয়ার কোনো প্রতিশ্রুতি ছিল না ।

এক কথায় ক্রীপসের প্রস্তাবে ব্রিটিশ সরকারের সদিচ্ছার অভাব প্রকাশ পায়, তাই ভারতের প্রায় সমস্ত রাজনৈতিক দলই  ক্রীপস -এর প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে ।

*****

Comments

Related Items

হায়দ্রাবাদ রাজ্যের ভারত অন্তর্ভুক্তি

হায়দ্রাবাদ রাজ্যের ভারত অন্তর্ভুক্তি (Annexation of Hyderabad):-

১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের 'ভারতের স্বাধীনতা আইন' -এ বলা হয় ভারতে ব্রিটিশ শাসনের অবসানের পর দেশীয় রাজ্যগুলির সঙ্গে ব্রিটিশ সরকারের সম্পাদিত চুক্তির পরিসমাপ্তি ঘটবে ।

দেশীয় রাজ্যগুলির ভারতভুক্তির উদ্যোগ ও বিতর্ক

দেশীয় রাজ্যগুলির ভারতভুক্তির উদ্যোগ ও বিতর্ক (Initiatives Undertaken and Controversies Related to the Accession of Princely State with India):-

১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের 'ভারতের স্বাধীনতা আইন' অনুসারে ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ১৫ই আগস্ট অবিভক্ত ভারত দ্বিখণ

উত্তর ঔপনিবেশিক ভারত : বিশ শতকের দ্বিতীয় পর্ব (১৯৪৭ - ১৯৬৪)

উত্তর ঔপনিবেশিক ভারত : বিশ শতকের দ্বিতীয় পর্ব (১৯৪৭ - ১৯৬৪) [Post-Colonial India : Second Half od the 20th Century (1947-1964)]:-

দীর্ঘদিনের ত্যাগ, তিতিক্ষা ও আত্মবলিদানের পর ব্রিটিশ পার্লামেন্টে পাস হওয়া ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের 'ভারতের স্বাধীনতা

বাংলায় নমঃশূদ্র আন্দোলন

হিন্দু জাতিভুক্ত নিম্নবর্গীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে নমঃশূদ্র সম্প্রদায় ছিল ঔপনিবেশিক আমলে বাংলার উল্লেখযোগ্য দলিত হিন্দু সম্প্রদায় । নমঃশূদ্ররা হিন্দু জাতিভুক্ত হওয়া সত্ত্বেও তথাকথিত উচ্চবর্ণের হিন্দুরা নমঃশূদ্রদের অত্যন্ত ঘৃণার চোখে দেখত । নমঃশূদ্ররা উচ্চবর্ণের হিন্দুদের বিভিন্ন ধরণের নির্যাতন, বঞ্চনা ও বৈষম্যের শিকার হয়েছিল । ...

দলিত অধিকার বিষয়ে গান্ধি-আম্বেদকর বিতর্ক

ভারতীয় সমাজব্যবস্থায় দীর্ঘ সময় জুড়ে সাধারণ নিম্নবর্ণের মানুষ উপেক্ষিত, অবহেলিত ও বঞ্চিত । সমাজের তথাকথিত ওপর তলার উচ্চবর্ণ ও উচ্চবর্গের শিক্ষিত মানুষ রাজনীতি, সমাজ ও অর্থনীতির সবকিছুর হাল ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃতভাবে নিজেদের করায়ত্ত করে রাখত । নিচু তলার মানুষ ভীত, ...