প্রশ্ন:- আজাদ হিন্দ ফৌজের লক্ষ্য কতদূর পরিপূর্ণ হয় ? আজদ হিন্দ ফৌজের বিচার ভারতীয় জনগণের ওপর কী প্রভাব বিস্তার করে ?
আজাদ হিন্দ বাহিনী তার ঘোষিত লক্ষ্য পূরণে ব্যর্থ হলেও ভারতের স্বাধীনতার ইতিহাসে আজাদ হিন্দ বাহিনীর অভিযানের ফলাফল ছিল সুদূরপ্রসারী ।
(১) আজাদ হিন্দ বাহিনীর সংগ্রামের তাৎক্ষণিক ফল হিসাবে ভারতীয় নৌ-সেনারা বিদ্রোহ ঘোষণা করে;
(২) ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে ভারতের নৌ-সেনাদের বিদ্রোহের পর, আজাদ হিন্দ সরকারের প্রধান হিসাবে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুই ভারতবর্ষের স্বাধীনতার দাবিকে একটি আন্তর্জাতিক প্রশ্নে পরিণত করেন ।
(৩) আজাদ হিন্দ বাহিনীর বন্দি সেনাদের বিচারকে কেন্দ্র করে ১৯৪৫ সালের শেষের দিকে সারা ভারতে যে তুমুল উত্তেজনা ও ব্রিটিশ-বিরোধী আন্দোলনের সৃষ্টি হয়, তা সরকার পক্ষকে ক্রমশ ভীতি ও সন্ত্রস্ত করে তোলে ।
তাই ঐতিহাসিক দিক থেকে বিচার করলে দেখা যায়, নেতাজির আজাদ হিন্দ বাহিনী প্রকৃত পক্ষে ব্যর্থ হয় নি । ব্রিটিশ শক্তির ওপর চূড়ান্ত আঘাত হেনে তারা ভারতের স্বাধীনতা অর্জনের পথকে সুগম করে তুলেছিল ।
১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে দিল্লীর লালকেল্লার প্রকাশ্য সামরিক আদালতে আজাদ হিন্দ ফৌজের বিচার ভারতীয় জনগণের ওপর ভয়ংকর প্রভাব বিস্তার করে । আজাদ হিন্দ ফৌজের বন্দি আধিকারিকদের বিচারে যে সিদ্ধান্ত হয় তার প্রতিবাদে—
(১) দেশব্যাপী গণবিক্ষোভ ও ছাত্র আন্দোলন শুরু হয় ।
(২) ভারতের নানা স্থানে বিশেষত কলকাতা ও তার পার্শ্ববর্তী শিল্পাঞ্চলে ব্যাপক ধর্মঘট ডাকা হয় ।
(৩) আজাদ হিন্দ বাহিনীর বন্দি সেনাদের বিচারকে কেন্দ্র করে সারা ভারতে যে প্রবল গণবিক্ষোভ ও গণ-উন্মাদনা দেখা দিয়েছিল তার ফলে ব্রিটিশ শাসকদের মধ্যে প্রবল ভীতির সঞ্চার হয় । এই প্রসঙ্গে প্রখ্যাত ঐতিহাসিক ফিলিপ ম্যাস্ন বলেছেন, ‘এই ঐতিহাসিক বিচার ভারতে ব্রিটিশ শাসনের মৃত্যু ঘন্টা বাজিয়ে দেয় ।'
*****