সুভাষচন্দ্রের বামপন্থী মানসিকতা সম্পর্কে আলোচনা কর । কোন পরিস্থিতিতে সুভাষচন্দ্র বাংলা কংগ্রেসের সভাপতি পদ থেকে বহিষ্কৃত হন ?

Submitted by avimanyu pramanik on Fri, 01/14/2022 - 09:10

প্রশ্ন:- সুভাষচন্দ্রের বামপন্থী মানসিকতা সম্পর্কে আলোচনা কর । কোন পরিস্থিতিতে সুভাষচন্দ্র বাংলা কংগ্রেসের সভাপতি পদ থেকে বহিষ্কৃত হন ?

বিংশ শতকের দ্বিতীয় দশকে জাতীয় কংগ্রেসের ভেতরে ও বাইরে বামপন্থী ঝোঁক প্রকট হয়ে ওঠে । কংগ্রেসে বামপন্থী প্রবণতার দু’জন প্রতীক পুরুষ ছিলেন জওহরলাল নেহরু ও সুভাষচন্দ্র বসু । তাঁরা ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে মুক্তি অর্জনের জন্য রাজনৈতিক সংগ্রামের পাশাপাশি জাতীয় আন্দোলনকে শ্রমিক ও কৃষক আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত করার পক্ষপাতি ছিলেন । সে জন্য সুভাষ চন্দ্র বসু ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে লাহোর কংগ্রেসের অধিবেশনে ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে শ্রমিক-কৃষকদের নিয়ে এক সমান্তরাল সরকার গঠনের প্রস্তাব দেন ।

সুভাষ চন্দ্র বসু, জওহরলাল নেহেরু প্রমুখ নবীন নেতারা জাতীয় আন্দোলনের মধ্যে সংগ্রামী চেতনা বৃদ্ধি করতে চেয়েছিলেন । তাঁরা যেমন শুধুমাত্র রাজনৈতিক মুক্তিকে অর্থাৎ বিদেশি শাসনের অবসান ঘটানোকে চরম লক্ষ বলে মনে করেন নি, তেমনি একই সঙ্গে তাঁরা সামাজিক ও অর্থনৈতিক শোষণের অবসান ঘটানো প্রয়োজনীয় কর্তব্য বলে মনে করে ছিলেন । এই সময়ে কংগ্রেসের মধ্যে একটি বামপন্থী মনোভাবাপন্ন গোষ্ঠির আত্মপ্রকাশ ঘটে । নেহেরু ও সুভাষচন্দ্র বসু ছিলেন তাঁদের মধ্যে অগ্রগণ্য ।

১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দে জাতীয় কংগ্রেসের হরিপুরা অধিবেশনে গান্ধিজির সঙ্গে সুভাষচন্দ্র বসুর মতপার্থক্য হয় । পরের বছর ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দের ২৯শে জানুয়ারি মধ্যপ্রদেশের ত্রিপুরিতে অনুষ্ঠিত কংগ্রেসের অধিবেশনে কংগ্রেসের নবীন সম্প্রদায়ের অনুরোধে সুভাষচন্দ্র বসু দ্বিতীয়বার কংগ্রেস সভাপতির পদপ্রার্থী হন । এবার তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন গান্ধিজির মনোনীত এবং সমর্থিত পট্টভি সীতারামাইয়া । নির্বাচনে বিপুল ভোটাধিক্যে পট্টভি সীতারামাইয়াকে হারিয়ে সুভাষচন্দ্র বসু দ্বিতীয়বার কংগ্রেস সভাপতি নির্বাচিত হন । ক্ষুব্ধ গান্ধিজি সদলবলে অধিবেশন ত্যাগ করেন । এরপর সুভাষচন্দ্র বসু গান্ধিজির ইচ্ছার বিরুদ্ধে দীর্ঘকাল কংগ্রেস সভাপতি থাকা সমীচীন নয় বলে মনে করেন । তাই কংগ্রেসের স্বার্থে তিনি কংগ্রেসের সভাপতির পদ ত্যাগ করে কংগ্রেসের মধ্যেই তাঁর অনুগামীদের নিয়ে ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দের ৩রা মে ‘ফরওয়ার্ড ব্লক’ নামে একটি সংগঠনের প্রতিষ্ঠা করেন । সুভাষ চন্দ্র বসু চেয়েছিলেন ফরওয়ার্ড ব্লক কংগ্রেসের ভেতরের ও বাইরের বামপন্থী শক্তি গুলিকে সুসংহত করে একটি সংগ্রামী মঞ্চে পরিণত করা । এ জন্য তিনি ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দের জুন মাসে ফরওয়ার্ড ব্লক ও কয়েকটি বামপন্থী গোষ্ঠীকে নিয়ে বামপন্থী সমন্বয় কমিটি গঠন করেন ।

এই পরিস্থিতিতে কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটি সুভাষ চন্দ্রের বিরদ্ধে শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ আনেন ও দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে তাঁকে বাংলা কংগ্রেসের সভাপতির পদ থেকে বহিষ্কৃত করা হয় এবং তিন বছরের জন্য কংগ্রেসের কোনো পদ গ্রহণের অধিকার থেকে তাঁকে বঞ্চিত করা হয় । সুভাষ চন্দ্র বসুর আধিপত্য হ্রাস করার জন্য বঙ্গীয় কংগ্রেস কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়।

*****

Comments

Related Items

বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলন পর্বে নারী আন্দোলন

বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলন পর্বে নারী আন্দোলন (Women and the Anti-partition Movement):-

সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশ শাসনকালে লর্ড কার্জন প্রশাসনিক অজুহাত দেখিয়ে ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দের ২০শে জুলাই সরকারিভাবে বঙ্গভঙ্গের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করলে বাংলা তথা ভারতে এ

বিশ শতকের ভারতে নারী আন্দোলনের চরিত্র, বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ

বিশ শতকের ভারতে নারী আন্দোলনের চরিত্র, বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ (Women's Movements in the Twentieth Century):-

বিশ শতকের ভারতে ব্রিটিশ-বিরোধী আন্দোলনগুলির মধ্যে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ চারটি জাতীয় আন্দোলন হল—(i) ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে বঙ্গভঙ্গ বিরোধী স্ব

মানবেন্দ্রনাথ রায় ও ভারতের বামপন্থী আন্দোলন

মানবেন্দ্রনাথ রায় ও ভারতের বামপন্থী আন্দোলন(M.N.Roy and the Left Movement in India):-

মানবেন্দ্রনাথ রায়ের আসল নাম হল নরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য । বিপ্লবী কাজ করতে গিয়ে তিনি অসংখ্য ছদ্মনাম গ্রহণ করেন, যেমন— মি. মার্টিন, হরি সিং, ডা. মাহমুদ, মি.

বিশ শতকের ভারতে উপনিবেশ-বিরোধী আন্দোলনে বামপন্থী রাজনীতির অংশগ্রহণ

বিশ শতকের ভারতে উপনিবেশ-বিরোধী আন্দোলনে বামপন্থী রাজনীতির অংশগ্রহণ (Participation of the Left in the Anti-Colonial Movement in India):-

রুশ বিপ্লবের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে মানবেন্দ্রনাথ রায়, অবনী মুখার্জি, মহম্মদ আলি সহ ২৪ জন প্রবাসী ভারতীয়

ভারত ছাড়ো আন্দোলন পর্বে শ্রমিক আন্দোলন

ভারত ছাড়ো আন্দোলন পর্বে শ্রমিক আন্দোলন (Quit India Movement and the Working Class):-

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের ৯ই আগস্ট মহাত্মা গান্ধির নেতৃত্বে ভারতের জাতীয় কংগ্রেস ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে ভারত ছাড়ো আন্দোলনের ডাক দেয় । এই আন্দো