ব্যাপকতর ত্রৈরাশিক (Rules of Three)

Submitted by arpita pramanik on Wed, 02/16/2011 - 00:06

ত্রৈরাশিক (Rule of Three)

1. সমানুপাতী চারটি সংখ্যার মধ্যে তিনটি সংখ্যা জানা থাকলে চতুর্থ সংখ্যাটি নির্ণয় করার প্রণালীকে ত্রৈরাশিক বলে । সময়-কার্য , সময়-দুরত্ব, এবং ঐকিক নিয়মের নানা সমাধানের ক্ষেত্রে সাধারণত তা চারটি সমানুপাতী রাশির মধ্যে তিনটির মান দেওয়া থাকে , চতুর্থটি নির্ণয় করতে হবে । সুতরাং ত্রৈরাশিকের চতুর্থ রাশি নির্ণয়ের নিয়ম হল ,

           প্রথম রাশি : দ্বিতীয়া রাশি ::  তৃতীয় রাশি : নির্ণেয় রাশি (x)

নির্ণেয় রাশি (x) = ( দ্বিতীয় রাশি X তৃতীয় রাশি ) / প্রথম রাশি

বা নির্ণেয় রাশি (x) = [tex]{{B \times C} \over A}[/tex]

যেখানে  দ্বিতীয় রাশি =B

           তৃতীয় রাশি =C

            প্রথম রাশি =A

(i) নির্ণেয় রাশিটির সাংখ্যমানকে  x দ্বারা সূচিত করে তাকে চতুর্থ সমানুপাতির স্থানে রাখতে হবে , x -এর সমজাতীয় প্রদত্ত রাশিকে তৃতীয় স্থানে রাখবে ।

(ii) প্রশ্নের প্রকৃতি হতে নির্ণেয় রাশিটি প্রদত্ত রাশি অপেক্ষা ক্ষুদ্রতর বা বৃহত্তর তা বুঝতে হবে ।

(iii)  x তৃতীয় রাশি অপেক্ষা বৃহত্তর হলে প্রদত্ত অবশিষ্ট রাশি দুইটির বৃহত্তরটিকে দ্বিতীয় স্থানে এবং ক্ষুদ্রতরটিকে প্রথম স্থানে স্থাপন করতে হবে । নির্ণেয় রাশি তৃতীয় রাশি অপেক্ষা ক্ষুদ্রতর হলে এর বিপরীত হবে ।

2..  সরল সমানুপাতী : পরস্পর সম্পর্কযুক্ত দুটি রাশির একটির বৃদ্ধি বা হ্রাসের সাথে সাথে অপর রাশিটি যথাক্রমে বৃদ্ধি বা হ্রাস পেলে , রাশিদুটিকে সরল সমানুপতিক বলা হয় । অর্থাৎ রাশি দুটি সরল সম্পর্কযুক্ত ।

3.  ব্যস্তানুপাতিক : পরস্পর সম্পর্কযুক্ত দুটি রাশির একটির বৃদ্ধি বা হ্রাসের সাথে সাথে অপর রাশিটি যথাক্রমে বা হ্রাস বৃদ্ধি  পেলে , রাশিদুটিকে  ব্যস্তানুপাতিক  বলা হয় । অর্থাৎ রাশি দুটি বিপরীত বা ব্যস্ত সম্পর্কযুক্ত ।

4. জ্ঞাতব্য বিষয়ের নির্ণেয় মান = জ্ঞাতব্য বিষয়ের জানা মান X ( প্রদত্ত বিষয়ের একটি মান /  প্রদত্ত বিষয়ের অপর মান )

  বা জ্ঞাতব্য বিষয়ের নির্ণেয় মান = [tex]A \times {B \over C}[/tex]

যেখানে ,জ্ঞাতব্য বিষয়ের জানা মান = A

           প্রদত্ত বিষয়ের একটি মান = B

           প্রদত্ত বিষয়ের অপর মান  = C

 

জ্ঞাতব্য বিষয়ের নির্ণেয় মান বের করার জন্য জ্ঞাতব্য বিষয়ের জানা মানকে একটি সুনির্দিষ্ট ভাগ্নাংশ দ্বারা গুণ করতে হয় ।

5.  ভাগ্নাংশ তৈরির নিয়ম : প্রশ্নের মাধ্যমে স্থির করতে হবে , নির্ণেয় মানটি জ্ঞাতব্য বিষয়ের জানা মানের চেয়ে বেশি হবে না কম হবে ?

(i) যদি উত্তর বেশি হয়, তবে প্রদত্ত বিষয়ের মান দুটি নিয়ে 1-এর চেয়ে বড় ভাগ্নাংশ তৈরি করতে হবে অর্থাৎ লব > হর হবে

(ii) যদি উত্তর কম হয়, তবে প্রদত্ত বিষয়ের মান দুটি নিয়ে 1-এর চেয়ে ছোটো ভাগ্নাংশ তৈরি করতে হবে অর্থাৎ লব < হর হবে ।

 

উদাহরণ -1 :

 স্বাভাবিক আবহাওয়ায় একটি বাস ঘন্টায় 40 কিমি বেগে 3  ঘন্টায় গন্তব্য স্থানে পৌঁছলো । ফেরার সময় তিন-চতুর্থাংশ গতিবেগ নিয়ে যাত্রাস্থলে ফিরে এল । ফেরার সময় বাসটির কত সময় লেগেছিল ?

 

  গতিবেগ      সময় 

     40         3

[tex]40 \times {3 \over 4} = 30[/tex]     ?     

 

সমাধান :

গতিবেগের সঙ্গে সময়ের বিপরীত সম্পর্ক । গতিবেগ হ্রাস পেয়েছে । সুতরাং সময় বৃদ্ধি পাবে ।

ভাগ্নাংশটি 1-এর চেয়ে বড়ো অর্থাৎ [tex]{{40} \over {30}}[/tex] হবে ।

অতএব নির্ণেয় সময় = [tex]3 \times {{40} \over {30}} = 4[/tex]

উত্তর:  ফেরার সময় বাসটির 4 ঘন্টা সময় লেগেছিল ।

 

উদাহরণ - 2 :

5টি কলমের মূল্য 45 টাকা হলে 135 টাকায় কটি কলম পাওয়া যাবে ?

 

সমাধান :

ধরি 135 টাকায় x টি কলম পাওয়া যাবে

কলমের সংখ্যা (টি)    ক্রয়মূল্য (টাকা)

          5            45

          x           135

যেহেতু মূল্য বৃদ্ধি পেলে কলমের সংখ্যা বাড়ে সুতরাং সমস্যাটির অনুপাত দুটি সরল সমানুপাতী হবে

অতএব  5 : x  = 45  : 135

বা [tex]{5 \over x} = {{45} \over {135}}[/tex] বা [tex]x = {{5 \times 135} \over {45}} = 15[/tex]

 

উত্তর : 15টি কলম পাওয়া যাবে ।

 

উদাহরণ - 3

12 জন লোকের যে খাদ্য 21 দিন চলে 28  জন লোকের সেই খাদ্যে কতদিন চলবে ?

 

সমাধান :

ধরি 28 জন লোকের ঐ খাদ্য x দিন চলবে ।

লোকসংখ্যা  (জন)   দিন সংখ্যা

      12                    21

      28                     x

লোকসংখ্যা বৃদ্ধি পেলে দিন সংখ্যা কমবে । অতএব দুটি লোকসংখ্যার অনপাত = দুটি দিন সংখ্যার ব্যস্ত অনুপাত ।

অতএব   28 : 12  :: 21 : x

অতএব [tex]x = {{12 \times 21} \over {28}} = 9[/tex]

উত্তর : অতএব নির্ণেয় দিনসংখ্যা =  9

 

ব্যাপকতর  ত্রৈরাশিক  (Rules of Three)

ত্রৈরাশিক পদ্ধতির প্রতিষ্ঠিত সূত্রটিকে সম্প্রসারিত আকারে ব্যবহার করাকে ব্যাপকতর ত্রৈরাশিক বলে। প্রতিটি  বিষয়ের মান দুটি দিয়ে ভগ্নাংশ তৈরির ক্ষেত্রে ভগ্নাংশটি প্রকৃত না অপ্রকৃত হবে তার সিদ্ধান্ত নেবার সময় ধরে নিতে হবে যে অপর বিষয়গুলির মান অপরিবর্তিত থাকছে ।

 

সম্প্রসারিত আকারে সূত্রটি হল :

জ্ঞাতব্য-বিষয়ের নির্ণেয় মান = জ্ঞাতব্য-বিষয়ের জানা মান X (1ম-এর একটি মান / 1ম-এর অপর মান) X (2য় -এর একটি মান / 2য় -এর অপর মান) X (3য় -এর একটি মান / 3য় -এর অপর মান) .... ইত্যাদি ইত্যাদি ।

 

বা জ্ঞাতব্য-বিষয়ের নির্ণেয় মান =[tex]A \times {B \over C} \times {D \over E} \times {F \over G} \ldots [/tex] ইত্যাদি ইত্যাদি ।

যেখানে ,

জ্ঞাতব্য-বিষয়ের জানা মান= A

1ম-এর একটি মান =B

1ম-এর অপর মান =C

2য় -এর একটি মান =D

2য় -এর অপর মান =E

3য় -এর একটি মান =F

3য় -এর অপর মান =G

 

বিষয়টি পরিষ্কার ভাবে বোঝার জন্য একটি উদাহরণ সহ আলোচনা করা হল :

 

উদাহরণ- 1

দৈনিক 6 টি লাঙ্গল মাঠে নামালে 15  দিনে 20 বিঘা জমি চাষ করা যায় । দৈনিক  9 টি লাঙ্গল মাঠে নামিয়ে 24 বিঘা জমি চাষ করতে হলে কত দিন সময় লাগবে  ?

 

লাঙ্গলের সংখ্যা  জমির পরিমান

 প্রয়োজনীয় সময়

6 20 15
9 24 ?

সমস্যা সমাধানের জন্য প্রথমে জ্ঞাতব্য বিষয়ের সঙ্গে প্রদত্ত অন্য বিষয়গুলির এক একটির সম্পর্ক আলাদা আলাদাভাবে বিচার করে ভগ্নাংশ তৈরি করে নিতে হবে (তখন বিবেচনা করতে হবে যেন ঐ দুটি ছাড়া অপর বিষয়ের মান অপরিবর্তিত থাকছে ) । পরে সেই ভগ্নাংশগুলি দিয়ে জ্ঞাতব্য বিষয়ের জানা মানটিকে গুণ করলেই জ্ঞাতব্য বিষয়ের নির্ণেয় মানটি পাওয়া যাবে ।

(i)  এখানে জ্ঞাতব্য বিষয় সময়-এর সঙ্গে 1 নং বিষয় লাঙ্গলের সংখ্যার ব্যস্ত সম্পর্ক, যখন জমির পরিমাণ অপরিবর্তিত থাকে। তাই লাঙ্গলের সংখ্যা বাড়ায় সময় কম লাগবে, অর্থাৎ ভগ্নাংশটি 1-এর চেয়ে ছোটো, যথা [tex]{6 \over 9}[/tex]  হবে । 

(ii) জ্ঞাতব্য বিষয় সময়-এর সঙ্গে 2 নং বিষয় জমির পরিমাণের সরল সম্পর্ক, যখন লাঙ্গলের সংখ্যা অপরিবর্তিত থাকে । তাই জমির পরিমাণ বাড়ায় সময় বেশি লাগবে, অর্থাৎ ভগ্নাংশটি 1-এর চেয়ে বড়ো , যথা [tex]{24 \over 20}[/tex] হবে । 

 

এবার জ্ঞাতব্য বিষয় অর্থাৎ সময়-এর  জানা মান  15 -কে ভগ্নাংশ দুটি দিয়ে গুণ করলেই নির্ণেয় সময় পাওয়া যাবে ,

যথা  নির্ণেয় সময় = [tex]15 \times {6 \over 9} \times {{24} \over {20}} = 12[/tex]

উত্তর :  12 দিন সময় লাগবে ।

 

 

উদাহরণ - 2  15 টি পাম্প দৈনিক 8 ঘন্টা চালিয়ে 7 দিনে 1260 মিরিয়ালিটার জল তোলা যায়, দৈনিক 9 ঘন্টা করে কতগুলি পাম্প চালালে 14 দিনে 7560 মিরিয়ালিটার জল তোলা যাবে   ?

 

সমাধান : 

    দৈনিক

  সময়(ঘন্টা) 

দিনের

সংখ্যা

 জলের পরিমান   

 মিরিয়া লিটার

পাম্পের

 সংখ্যা

8 7 1260   15
9 14 7560 X

 

পাম্প চালাবার সময় বাড়ানো হলে পাম্পের সংখ্যা  কম হয়। দিনের সংখ্যা বাড়ানো হলেও পাম্পের সংখ্যা কমবে । কিন্তু জলের পরিমান বাড়লে পাম্পের সংখ্যা বাড়বে । প্রথম দুটি লঘু অনুপাত এবং তৃতীয়টি গুরু-অনুপাত হবে ।

[tex]\left. {\matrix{{9:8} \cr {14:7} \cr {1260:7560} \cr}} \right\}::15:x[/tex]

 

অতএব [tex]x = {{8 \times 7 \times 7560} \over {9 \times 14 \times 1260}} \times 15 = 40[/tex]

উত্তর : 40টি পাম্পের প্রয়োজন হবে ।

 

বি:দ্র: তিন বা ততোধিক বিষয় ঘটিত সমস্যায় নিয়োজিত পদ্ধতিকে "বহুরাশিক পদ্ধতি " ও বলা হয় ।

উদাহরণ - 3   36 জন কর্মী দৈনিক 6  ঘন্টা কাজ করে 8 দিনে 120  মিটার রাস্তা তৈরি করে ।  6  জন নতুন সদস্য যুক্ত করে দৈনিক কাজের সময় 2 ঘন্টা বাড়িয়ে দিলে 9  দিনে কতটুকু রাস্তা তৈরি হবে  ?

 

কর্মী সংখ্যা 

 দৈনিক কাজের  সময়  (ঘন্টা)

 দিন সংখ্যা  

কাজের পরিমাণ (মিটারে)
36  6 8   120

(36+6) 

=42

(6+2) =8 ?

 

  (i)  কর্মী সংখ্যার সঙ্গে কাজের পরিমাণের সরল সম্পর্ক, তাই কর্মী সংখ্যা বাড়ায় কাজের পরিমাণ বাড়বে এবং ভগ্নাংশটি 1-এর চেয়ে বড়ো, যথা [tex]{{42} \over {36}}[/tex] হবে ।

 (ii) দৈনিক কাজের সময় ও কাজের পরিমাণের মধ্যে সরল সম্পর্ক, তাই দৈনিক কাজের সময় বাড়ায় কাজের পরিমাণ বাড়বে  এবং ভগ্নাংশটি 1-এর চেয়ে বড়ো, যথা [tex]{{8} \over {6}}[/tex] হবে ।

(iii) কাজের দিন ও কাজের পরিমাণের মধ্যে সরল সম্পর্ক, তাই কাজের দিন বাড়ায় কাজের পরিমাণ বাড়বে  এবং ভগ্নাংশটি 1-এর চেয়ে বড়ো, যথা [tex]{{9} \over {8}}[/tex] হবে ।

 

সুতরাং , নির্ণেয় কাজের পরিমাণ = [tex]120 \times {{42} \over {36}} \times {8 \over 6} \times {9 \over 8} = 120[/tex]

উত্তর:  210  মিটার রাস্তা তৈরি হবে ।

*****

Related Items

সামন্তরিকের ষষ্ঠ উপপাদ্য

কোনো চতুর্ভুজের কর্ণদ্বয় পরস্পরকে সমদ্বিখন্ডিত করলে চতুর্ভুজটিকে সামান্তরিক বলে।

সামন্তরিকের পঞ্চম উপপাদ্য

পঞ্চম উপপাদ্য : সামান্তরিকের কর্ণদ্বয় পরস্পরকে সমদ্বিখণ্ডিত করে।

সামন্তরিকের চতুর্থ উপপাদ্য

কোনো চতুর্ভুজের বিপরীত কোণগুলি সমান হলে , চতুর্ভুজটি একটি সামান্তরিক হবে।

সামন্তরিকের তৃতীয় উপপাদ্য

কোনো চতুর্ভুজের বিপরীত বাহুগুলি সমান হলে , চতুর্ভুজটি একটি সামান্তরিক হবে।

সামন্তরিকের দ্বিতীয় উপপাদ্য

কোনো সামান্তরিকের (i) প্রতিটি কর্ণ সামান্তরিককে দুটি সর্বসম ত্রিভুজে বিভক্ত করে (ii) বিপরীত বাহুগুলির দৈর্ঘ্য সামন। (iii) বিপরীত কোণ গুলি মানে সমান।