ভারতের সংগ্রামশীল জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে অরবিন্দ ঘোষের ভূমিকা আলোচনা কর ।

Submitted by avimanyu pramanik on Mon, 01/10/2022 - 21:40

প্রশ্ন:  ভারতের সংগ্রামশীল জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে অরবিন্দ ঘোষের ভূমিকা আলোচনা কর ।

বিংশ শতাব্দীর প্রথমে ভারতীয় জাতীয় আন্দোলনের ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয় । এই সময় জাতীয় কংগ্রেসের নরমপন্থী নেতাদের আচার-আচরণ ও কার্যকলাপে বীতশ্রদ্ধ হয়ে অনেকে জাতীয় আন্দোলনকে সক্রিয় ও আন্দোলনমুখী করে তুলতে চেয়ে ছিলেন । এই সংগ্রামী আন্দোলনের মূর্তপ্রতীক ছিলেন অরবিন্দ ঘোষ ।

(১) কংগ্রেসের প্রতি মনোভাব : বাল গঙ্গাধর তিলকের মতো অরবিন্দ ঘোষও কংগ্রেসের নরমপন্থী নেতাদের ও কংগ্রেসি আন্দোলনের কঠোর সমালোচনা করেন । বরোদা থেকে প্রকাশিত ‘ইন্দু প্রকাশ’ পত্রিকার কয়েকটি প্রবন্ধে তিনি কংগ্রেসের নরমপন্থীদের আবেদন-নিবেদন নীতির তীব্র সমালোচনা করে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক স্বাধীনতা দাবি করেন ।

(২) কার্য কলাপ : বাংলার স্বদেশি আন্দোলন শুরু হবার পর অরবিন্দ ঘোষ বরদায় অধ্যাপনার কাজ ত্যাগ করে কলকাতায় জাতীয় শিক্ষা পরিষদ কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত জাতীয় কলেজের অধ্যক্ষ পদ গ্রহণ করেন । ওই বছরেই তাঁর সম্পাদনায় ইংরেজি দৈনিক ‘বন্দেমাতারম’ প্রকাশিত হয় । অল্প সময়ের মধ্যেই ‘বন্দেমাতারম’ পত্রিকাটি বাংলার রাজনৈতিক জগতে আলোড়ন সৃষ্টি করে । এই পত্রিকায় অরবিন্দ ঘোষ ঘোষণা করেন “স্বরাজ হল বর্তমান অবস্থায় প্রাচীন ভারতের আদর্শকে পুণঃপ্রতিষ্ঠা করা; সত্যযুগের জাতীয় গৌরবকে পুনরুদ্ধার করা এবং রাজনীতির ক্ষেত্রে বেদান্তের আদর্শ প্রচার করা” ।

আলিপুর ষড়যন্ত্র মামলা :  অরবিন্দ ঘোষ তাঁর রাজনৈতিক কার্যকলাপ দু’ভাবে পরিচালিত করেন । একদিকে তিনি কংগ্রেসে নরমপন্থী নেতৃত্বকে ক্ষমতাচ্যুত করতে চেয়েছিলেন এবং অন্যদিকে গোপন বৈপ্লবিক কার্য পরিচালনার মাধ্যমে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে আঘাত হানতে চেয়ে ছিলেন । অরবিন্দ ঘোষের কনিষ্ঠ ভ্রাতা বারীন্দ্রকুমার ঘোষ তরুণ বাঙালি বিপ্লবীদের নিয়ে কলকাতার মুরারিপুকুরে তাঁদের পৈত্রিক বাগানবাড়িতে একটি গোপন বিপ্লবী কর্মকেন্দ্র গড়ে তোলেন । ১৯০৮ খ্রিস্টাব্দে অরবিন্দ ঘোষ ও তাঁর সহকর্মীরা ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে বিপ্লবী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার হন এবং ঐতিহাসিক আলিপুর ষড়যন্ত্র মামলায় তাঁদের বিচার শুরু হয় । এই মামলা প্রায় এক বছর ধরে চলে । এই মামলায় আসামি পক্ষের উকিল ছিলেন চিত্তরঞ্জন দাশ । পরবর্তীকালে তিনি দেশবন্ধু’ নামে পরিচিত হন । আত্মপক্ষ সমর্থন করে তিনি দৃপ্তকন্ঠে ঘোষণা করেন যে, স্বাধীনতার আদর্শ প্রচার করা কোনো অপরাধ নয় । আলিপুর বোমার মামলা থেকে মুক্ত হয়ে অরবিন্দ রাজনীতির সঙ্গে সম্পর্ক ছেদ করে দক্ষিণ ভারতের পন্ডিচেরীতে আধ্যাত্মিক সাধনায় আত্মনিয়োগ করেন । তাঁর প্রধান লক্ষ ছিল, আধ্যাত্মচেতনার পরিপূর্ণ বিকাশ ঘটিয়ে দিব্য জীবনের সন্ধান লাভ ।

******

Comments

Related Items

বহু বিকল্পীয় প্রশ্নোত্তর (M.C.Q) - উত্তর ঔপনিবেশিক ভারত (১৯৪৭-১৯৬৪)

বহু বিকল্পীয় প্রশ্নোত্তর (M.C.Q) - উত্তর ঔপনিবেশিক ভারত:-

মাধ্যমিকের নমুনা প্রশ্ন:-

১. ভারতের রাজনীতিতে 'লৌহ মানব' বলে পরিচিত ছিলেন—        [মাধ্যমিক-২০১৭]

বহু বিকল্পীয় প্রশ্নোত্তর (M.C.Q) - বিশ শতকের ভারতের নারী, ছাত্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর আন্দোলন

বহু বিকল্পীয় প্রশ্নোত্তর (M.C.Q) - বিশ শতকের ভারতের নারী, ছাত্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর আন্দোলন:-

মাধ্যমিকের নমুনা প্রশ্ন:-

১. দীপালি সংঘ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন—          [মাধ্যমিক-২০১৭]

বহু বিকল্পীয় প্রশ্নোত্তর (M.C.Q) - বিশ শতকের ভারতে কৃষক, শ্রমিক ও বামপন্থী আন্দোলন

বহু বিকল্পীয় প্রশ্নোত্তর (M.C.Q) - বিশ শতকের ভারতে কৃষক, শ্রমিক ও বামপন্থী আন্দোলন:-

মাধ্যমিকের নমুনা প্রশ্ন:-

১. একা আন্দোলনের নেতা ছিলেন—     [মাধ্যমিক-২০১৭]

স্যাডলার কমিশন (Sadler Commission)

১৯০৪ খ্রিস্টাব্দে বিশ্ববিদ্যালয় আইন পাশ হবার পর দেশে উচ্চশিক্ষার প্রসার ক্রমশ বৃদ্ধি পায় । উচ্চশিক্ষাকে আরও ফলপ্রসূ করার লক্ষ্যে ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে বড়লাট চেমসফোর্ডের সময় স্যার মাইকেল স্যাডলারের সভাপতিত্বে 'স্যাডলার কমিশন' গঠন করা হয় । স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায় এই কমিশনের সদস্য ছিলেন ...

বিশ্ববিদ্যালয় কমিশন (Indian universities Act, 1904)

লর্ড কার্জন প্রতিক্রিয়াশীল শাসক হলেও শিক্ষার ব্যাপারে তিনি খুবই উৎসাহী ছিলেন । লর্ড কার্জন স্যার টমাস র‍্যালের সভাপতিত্বে ১৯০২ খ্রিস্টাব্দে 'র‍্যালে কমিশন' গঠন করেছিলেন । এটি 'ভারতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কমিশন' নামেও পরিচিত । স্যার টমাস র‍্যালে ছিলেন বড়লাটের কার্যনির্বাহক সমিতির আইন সদস্য । এই কমিশন ...