অন্তর্বর্তী সরকার (Interim Government)

Submitted by avimanyu pramanik on Tue, 04/24/2012 - 14:28

অন্তর্বর্তী সরকার (Interim Government) :

ক্যাবিনেট মিশন তাঁদের পরিকল্পনায় কংগ্রেস ও মুসলিম লিগের মধ্যে সমন্বয় সাধনের চেষ্টা করে এক ঐক্যবদ্ধ ভারত গঠনের প্রস্তাব করেছিলেন । এছাড়া ক্যাবিনেট মিশন ভারতীয় রাজন্যবর্গকে তাঁদের ভাগ্য নির্ধারণেরও সুযোগ দিয়েছিলেন । মন্ত্রী মিশনের প্রস্তাব অনুসারে একটি স্বতন্ত্র ও স্বাধীন পাকিস্তান রাষ্ট্র গঠনের সম্ভাবনা লক্ষ্য করে মুসলিমগণ সন্তুষ্ট হয়েছিলেন । কিন্তু অন্য সব বিষয়ে সম্মতি থাকলেও সাম্প্রদায়িক ভিত্তিতে প্রদেশগুলির শ্রেণিবিভাগ ও চিহ্নিত করণ কংগ্রেসের মনঃপুত হয় নি । কিন্তু ব্রিটিশ সরকার কংগ্রেসকে অন্তর্বর্তী সরকার ও সংবিধান সভাকে যথাসম্ভব স্বাধীনভাবে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিলে কংগ্রেস শেষ পর্যন্ত ক্যাবিনেট মিশনের প্রস্তাব গ্রহণ করে ।

এরপরই লর্ড ওয়াভেল কংগ্রেস সভাপতি জওহরলাল নেহরুকে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করতে আহ্বান জানালে কংগ্রেস সম্মতি জানায় । এই ঘটনায় উত্তেজিত ও ক্রুদ্ধ হয়ে পাকিস্তান দাবি আদায়ের জন্য মুসলিম লিগ ‘প্রত্যক্ষ সংগ্রাম’ শুরু করার সিদ্ধান্ত নিলে ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দের ১৬ই আগস্ট সমগ্র ভারতে ‘প্রত্যক্ষ সংগ্রাম দিবস’ রূপে পালিত হয় । দেশের অন্যান্য অঞ্চলে ওই দিনটি শান্তিপূর্ণ ভাবে অতিবাহিত হলেও কলকাতা, নোয়াখালি এবং ত্রিপুরায় ব্যাপক সাম্প্রদায়িক দাঙ্গাহাঙ্গামা বেধে যায় । অসংখ্য জীবনহানি, সম্পত্তি নাশ, লুঠতরাজের মধ্যে দিয়ে দিনটি অতিবাহিত হয় । বাংলার দাঙ্গার প্রতিক্রিয়ায় বিহার, উত্তরপ্রদেশ, পাঞ্জাব প্রভৃতি স্থানেও সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষের আগুন জ্বলে ওঠে । আইন শৃঙ্খলার চরম অবনতি হয় । সবচেয়ে লক্ষনীয় বিষয় ছিল, কেন্দ্রে ওয়াভেল সরকার কিংবা রাজ্যে লিগ সরকার কেউই এই সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা নিবারণে কোনো কার্যকর ভূমিকা নিতে পারে নি বা নেওয়ার চেষ্টা করে নি । 

সারা উত্তর-পূর্ব ভারতব্যাপী সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় রক্তস্নানের মধ্যে ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে ২রা সেপ্টেম্বর জওহারলাল নেহরুর নেতৃত্বে ভারতীয় প্রতিনিধিদের নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার শপথ গ্রহণ করে । ডঃ রাজেন্দ্রপ্রসাদ, সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল, চক্রবর্তী রাজাগোপালাচারী, অরুণা আসিফ আলি, জগজ্জীবন রাম, শরৎচন্দ্র বসু প্রমুখ কংগ্রেস সদস্যরা এই সরকারে যোগ দেন । পরে লর্ড ওয়াভেলের প্রচেষ্টায় কিছুদিনের মধ্যে জওহরলাল নেহেরুর অন্তর্বর্তী সরকারে মুসলিম লিগ যোগ দান করে । মুসলিম লিগের নেতাদের মধ্যে চন্দ্রিগড়, আবদুল বর নিস্তার, গজনফর আলি, লিয়াকৎ আলি, যোগেন্দ্রনাথ মন্ডল প্রমুখ অন্তর্বর্তী সরকারে যোগ দেন । কিন্তু উভয় দলের চরম মত পার্থক্যের জন্য কংগ্রেস-লিগ মন্ত্রিসভা ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে ব্যর্থ হয় । ফলে সরকারি প্রশাসনে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয় । পরন্তু দেশের নানা স্থানে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা শুরু হয় । সমগ্র দেশ নিষ্ঠুর হত্যালীলায় মেতে ওঠে । মহাত্মা গান্ধি হিন্দু-মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের মানুষের কাছে এই ভ্রাতৃঘাতী যুদ্ধ বন্ধ করার আহ্বান জানান, কিন্তু তাঁর আবেদন নিষ্ফল হয় ।

*****

Related Items

প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ : বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ

প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ (Resistance and Rebellion) : ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দের ২৩শে জুন নবাব সিরাজদ্দৌলাকে পলাশির যুদ্ধে পরাজিত করার পর ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ভারতে তাদের ক্ষমতা বিস্তার করতে শুরু করে । এদিকে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অপশাসনের বিরুদ্ধে ভারতের বি

উনিশ শতকের বাংলার 'নবজাগরণ' ধারণার ব্যবহার বিষয়ক বিতর্ক

পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রভাবে উনিশ শতকে বাংলার সমাজ, সংস্কৃতি, ধর্ম, শিক্ষা প্রভৃতি ক্ষেত্রে যে অগ্রগতি লক্ষ্য করা যায় কেউ কেউ তাকে 'নবজাগরণ' বলে অভিহিত করেছেন । প্রকৃত অর্থে এই অগ্রগতিকে নবজাগরণ বলা যায় কি না তা নিয়ে ঐতিহাসিক ও পন্ডিতমহলে বিতর্কের শেষ নেই । ঐতিহাসিক যদুনাথ

বাংলার নবজাগরণ -এর চরিত্র ও পর্যালোচনা

ঊনিশ শতকে বাংলায় আধুনিক পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রভাবে বাংলার শিক্ষা, সংস্কৃতি, শিল্পকলা, রাজনীতি, ধর্ম, সমাজ প্রভৃতি ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব অগ্রগতি লক্ষ্য করা যায় । এই অগ্রগতি সাধারণভাবে 'ঊনিশ শতকে বাংলার নবজাগরণ' নামে পরিচিত । রেনেসাঁস (Renaissance) কথাটির আক্

লালন ফকির

ঊনিশ শতকে বাংলায় সর্বধর্মসমন্বয়ের ক্ষেত্রে যাঁরা গুরুত্বপূর্ন অবদান রেখেছিলেন লালন ফকির বা লালন সাঁই হলেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম আধ্যাত্মিক বাউলসাধক । তিনি বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী ও বাংলাদেশের বাউলগানের শ্রেষ্ঠতম রচয়িতা ছিলেন । তিনি সাধারণ মানুষের কাছে লালন ফকির ...

স্বামী বিবেকানন্দের ধর্মসংস্কারের অভিমুখ : নব্য বেদান্ত — বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা

ভারতের প্রাচীন অদ্বৈত বেদান্ত দর্শনের ব্যাখ্যাকর্তা ছিলেন আদি জগৎগুরু 'শঙ্করাচার্য' । 'বেদান্ত' শব্দের অর্থ হল বেদের অন্ত বা শেষ, আর বেদের অন্ত হল উপনিষদসমূহ । ব্রহ্ম হল বেদান্ত দর্শনের মূল আলোচ্য বিষয় । উপনিষদ, ভগবতগীতা এবং ব্রহ্ম সূত্র ও তার ভাষ্য বি