প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ (Resistance and Rebellion) : ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দের ২৩শে জুন নবাব সিরাজদ্দৌলাকে পলাশির যুদ্ধে পরাজিত করার পর ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ভারতে তাদের ক্ষমতা বিস্তার করতে শুরু করে । এদিকে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অপশাসনের বিরুদ্ধে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে নানা শ্রেণির মানুষ প্রতিরোধ গড়ে তোলে ও বিদ্রোহ ঘোষণা করতে থাকে । প্রাথমিকভাবে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনে কৃষকসমাজ ও উপজাতি গোষ্ঠী সবথেকে বেশি শোষিত ও অত্যাচারিত হয় । ফলে সবার আগে কৃষকসমাজ ও উপজাতি গোষ্ঠী ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অপশাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে । এ ছাড়া ঔপনিবেশিক শাসনকালে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি অরণ্য আইন পাশ করিয়ে অরণ্যসম্পদ সংরক্ষণ করলে তার প্রতিক্রিয়া হিসেবে অরণ্যচারী আদিবাসী গোষ্ঠীও বিদ্রোহী হয়ে ওঠে । ব্রিটিশ কোম্পানির কুশাসনের পাশাপাশি কৃষকসমাজ ও উপজাতি গোষ্ঠী জমিদার, মহাজন ও ব্যবসায়ীদের অন্যায়-অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে শামিল হয় । কোম্পানির নতুন ভূমিরাজস্ব ব্যবস্থা প্রবর্তনের পর থেকে কৃষক ও উপজাতি গোষ্ঠীর বিদ্রোহের তীব্রতা আরও বাড়তে থাকে । নতুন ভূমিরাজস্ব ব্যবস্থার প্রেক্ষাপটে ব্রিটিশ কোম্পানির সমর্থনে জমিদার, মহাজন ও ব্যবসায়ীদের অত্যাচারের মাত্রা ছাড়িয়ে গেলে কৃষক ও উপজাতি গোষ্ঠীর ধৈর্য্যের বাঁধ ভেঙে যায় এবং তারা বিদ্রোহের পথে যেতে বাধ্য হয় । এই সমস্ত কৃষক ও উপজাতি বিদ্রোহগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল— চুয়াড় বিদ্রোহ, কোল বিদ্রোহ, সাঁওতাল বিদ্রোহ, মুন্ডা বিদ্রোহ, রংপুর বিদ্রোহ, ভিল বিদ্রোহ, সন্ন্যাসী-ফকির বিদ্রোহ, ওয়াহাবি-ফরাজি বিদ্রোহ, পাগলপন্থী বিদ্রোহ, নীল বিদ্রোহ ও পাবনার কৃষকবিদ্রোহ ।
******