ইতিহাসের ধারণা :- ইতিহাস কথাটির অর্থ হল অতীতে যা ঘটেছে তার বিবরণ । সুদুর অতীত, নিকট অতীত, এমনটি গতকালের ঘটনাও অতীত । সুদুর অতীতে ঘটে যাওয়া ঘটনা থেকে শুরু করে গতকালের ঘটনাও ইতিহাসের বিষয়বস্তু । ঐতিহাসিক তাঁর ব্যক্তিগত অনুভব এবং বিশ্লেষণের মধ্য দিয়ে বিভিন্ন উপাদান থেকে তথ্য সংগ্রহ করে ইতিহাস রচনা করেন ।
আধুনিক ইতিহাসচর্চার বৈচিত্র্য :- মানুষের অতীত কর্মকাণ্ড হল ইতিহাসের বিষয়বস্তু । ইতিহাসচর্চা হল ইতিহাস-রচনার ধারাবাহিক বিবর্তন বা প্রগতির কাহিনির বিবরণ । ইতিহাস-রচনার বিভিন্ন ধারণা ও রীতি এবং প্রকৃতিগত ধারাবাহিক পরিবর্তনের ইতিহাস হল ইতিহাসচর্চা । যুগ যুগ ধরে ইতিহাস কীভাবে লেখা হয়ে চলেছে তার ধারণা মেলে ইতিহাসচর্চার মাধ্যমে । আধুনিক ইতিহাসচর্চায় ইতিহাসের বিষয়বস্তুকে সমাজের একেবারে তলা থেকে বিশ্লেষণ করা শুরু হয়েছে । ঐতিহাসিক ঘটনার মূল চালিকাশক্তি অথচ অনালোচিত সমাজের গরিষ্ট শ্রেণির ভূমিকা তুলে ধরার প্রচেষ্টা দেখা যাচ্ছে । এই ধরণের আধুনিক ইতিহাসচর্চায় সমাজের নিম্নবর্গীয় মানুষের ভূমিকাকেই মুখ্য চরিত্র হিসেবে গ্রহণ করা হয় । কোনো ঘটনার মূল চরিত্রের বা আন্দোলনের নেতৃবর্গের কৃতিত্ব বর্ণনাই শুধু ইতিহাস নয়, সেই ঘটনা বা আন্দোলনে সমাজের গরিষ্ট অংশের ভুমিকা তুলে ধরার মধ্যে রয়েছে বৃহত্তর ইতিহাস । সমাজ পরিবর্তনের ধারাকে বুঝতে ইতিহাসচর্চায় প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে মানুষের সামাজিক-সাংকৃতিক কর্মকাণ্ড । খেলা, বিনোদন, খাদ্যাভ্যাস, পোষাক-পরিচ্ছদ, রুচি, সাহিত্য-সংস্কৃতির চর্চার মধ্যে ব্যক্তি ও সমাজের সম্পর্ক স্পষ্ট হয় । সামাজিক অবস্থান, শ্রেণিগত বিভেদ, নারী-পুরুষ সম্পর্ক এইসব সাধারণ মানুষের জীবন ও সমাজে কীভাবে মিশে আছে তা ইতিহাসচর্চার এক একটি ধারায় পর্যালোচিত হয় । এই সব ধারাগুলির মধ্যে নতুন সামাজিক ইতিহাস, খেলার ইতিহাস, খাদ্যাভাসের ইতিহাস, শিল্পচর্চার ইতিহাস, দৃশ্য শিল্পের ইতিহাস, পোষাক-পরিচ্ছদের ইতিহাস, সামরিক ইতিহাস, যানবাহন-যোগাযোগ ব্যবস্থায় ইতিহাস, বিজ্ঞান-প্রযুক্তি ও চিকিৎসাবিদ্যার ইতিহাস, স্থাপত্যের ইতিহাস, স্থানীয় ইতিহাস, শহরের ইতিহাস, পরিবেশের ইতিহাস ও নারী ইতিহাস প্রভৃতি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য ।
*****