বাংলার বাইরে বিপ্লবী আন্দোলন (Revolutionary movements in Outside of Bengal):
বাংলা দেশের বাইরে বিহার, যুক্তপ্রদেশ, রাজস্থান, বোম্বাই এবং মাদ্রাজে সন্ত্রাসবাদী বিপ্লবী কার্যকলাপ পরিচালিত হয়েছিল । বাংলার বাইরে সন্ত্রাসবাদীদের যে সকল সংস্থা গড়ে উঠেছিল তার মধ্যে উত্তরপ্রদেশে গঠিত 'হিন্দুস্থান রিপাবলিকান অ্যাসোসিয়েশন' সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য । চন্দ্রশেখর আজাদ ছিলেন হিন্দুস্থান রিপাবলিকান অ্যাসোসিয়েশন -এর প্রতিষ্টাতা । সশস্ত্র বিপ্লবের দ্বারা ভারতে একটি স্বাধীন প্রজাতান্ত্রিক যুক্তরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করাই ছিল এই 'হিন্দুস্থান রিপাবলিকান অ্যাসোসিয়েশন' -এর লক্ষ । ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দে ভগৎ সিং এই সংস্থার সদস্যপদ গ্রহণ করেন । ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে ভগৎ সিং নিজেও 'নওজওয়ান ভারত সভা' নামে একটি জঙ্গি যুবসংগঠন গড়ে তুলেছিলেন । এই সংস্থার অন্যতম সদস্য রামপ্রসাদ বিসমিলের নেতৃত্বে বিপ্লবী দল কাকোরির কাছে ট্রেনে ডাকাতি করতে গিয়ে ধরা পড়ে । ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দের ৮ই আগস্ট রেল ডাকাতিকে কেন্দ্র করে 'কাকোরি ষড়যন্ত্র মামলা' শুরু হয় । অভিযুক্তদের মধ্যে প্রধান ছিলেন রামপ্রসাদ বিসমিল, রোশন সিং, রাজেন লাহিড়ি, শচীন সান্যাল, মন্মথ গুপ্ত, প্রণবেশ ভট্টাচার্য, আসফাকউল্লা প্রমুখ । বিচারে এঁদের অধিকাংশের যাবজ্জীবন, দ্বীপান্তর অথবা সশ্রম কারাদন্ড হয় । রামপ্রসাদ বিসমিল ও অপর তিন সহযোগীর ফাঁসি হয় । এই মামলায় ভগৎ সিং অভিযুক্ত হন নি, যদিও তিনি ছিলেন অন্যতম পরামর্শদাতা ।
১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে ভগৎ সিং হিন্দুস্থান রিপাবলিকান অ্যাসোসিয়েশন -এর নেতৃত্ব গ্রহণ করেন । রুশ বিপ্লবের সমাজতান্ত্রিক আদর্শে তিনি এই দলের নতুন নামকরণ করেন 'হিন্দুস্থান সোসালিস্ট রিপাবলিকান অ্যাসোসিয়েশন' । পাঞ্জাব, দিল্লি, উত্তরপ্রদেশ ও বিহারে এই দলের সক্রিয় ভূমিকা ছিল । সাইমন কমিশন বিরোধী আন্দোলনে ব্রিটিশ পুলিশের লাঠির আঘাতে ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দের ১৭ই নভেম্বর লালা লাজপত রায়ের মৃত্যু হয় । এর প্রতিশোধ নিতে ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দের ১৭ই নভেম্বর নির্ভীক ভগৎ সিং লাহোরের পুলিশ সুপারিন্টেডেন্ট মিঃ স্যান্ডার্সকে গুলি করে হত্যা করেন । ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দের ৮ই এপ্রিল ভগৎ সিং ও দলের অপর একজন সদস্য বটুকেশ্বর দত্ত দিল্লির আইন পরিষদে বোমা নিক্ষেপ করেন । ওই সময় আইন পরিষদে বিপ্লবী তৎপরতার বিরুদ্ধে দমন মূলক ব্যবস্থা হিসেবে ট্রেড ডিসপিউট বিলের আলোচনা চলছিল । এই ঘটনার সূত্র ধরে পুলিশ লাহোরে ও সাহারানপুরে দুটি বোমা তৈরির কারখানার সন্ধান পায় । এ দুটির সঙ্গে যুক্ত বিপ্লবীদের গ্রেফতার করে তাঁদের বিরুদ্ধে ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে ঐতিহাসিক 'লাহোর ষড়যন্ত্র মামলা' শুরু হয় । মামলা চলাকালে জেলে বন্দি বিপ্লবীদের ওপর পুলিশি নির্যাতন, কর্তৃপক্ষের বৈষম্যমূলক আচরণ এবং অবর্ণনীয় দুঃখকষ্টের প্রতিবাদে বিপ্লবীগণ অনশন শুরু করেন । অন্যান্য বন্দিরা পরে অনশন ভঙ্গ করেন । কিন্তু যতীন দাস ৬৩ দিন অনশন চালিয়ে লাহোর জেলে ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দের ১৩ই সেপ্টেম্বর মৃত্যুবরণ করেন । লাহোর ষড়যন্ত্র মামলার বিচারের রায়ে ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দের ২৩শে মার্চ ভগৎ সিং, সুখদেব থাপার, শিবরাম রাজগুরু, বটুকেশ্বর দত্ত সহ কয়েকজন বিপ্লবীর ফাঁসি হয় । অন্যান্য অনেকের দীর্ঘমেয়াদি কারাদন্ড হয় । ফাঁসির মঞ্চে যাওয়ার আগে ভগৎ সিং জোর গলায় বলেছিলেন 'ইনকিলাব জিন্দাবাদ' অর্থাৎ 'বিপ্লব দীর্ঘজীবী হোক' ।
*****
- 1966 views