প্রাদেশিক শাসন (Provincial Government) :
১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দের ভারত শাসন আইনে ভারতবর্ষকে ১১টি প্রদেশে বিভক্ত করা হয় । প্রত্যেক প্রদেশে একজন গভর্নর নিযুক্ত হয় । গভর্নর কেন্দ্রীয় শাসনে গভর্নর জেনারেল -এর অনুরূপ ক্ষমতা ও অধিকার ভোগ করবেন । আইন সভায় নির্বাচিত সদস্যের মধ্য থেকে গভর্নর কর্তৃক নিযুক্ত মন্ত্রীদের পরামর্শক্রমে প্রাদেশিক শাসনব্যবস্থা চালানো হবে বলে স্থির হয় । প্রাদেশিক মন্ত্রীদের কার্যকাল গভর্নরের ইচ্ছার উপর নির্ভরশীল ছিল । তিনি ইচ্ছা করলে আইনসভা ও মন্ত্রিসভা ভেঙ্গে দিতে পারতেন । নতুন ভারত শাসন আইনে কতকগুলি বিষয়ে আইন প্রণয়নের ক্ষমতা কেন্দ্রীয় আইন সভার ওপর ও অন্য কতকগুলি বিষয়ে আইন প্রণয়নের ক্ষমতা প্রাদেশিক আইন সভার ওপর ন্যস্ত হয় । প্রতিরক্ষা, পররাষ্ট্র সংক্রান্ত বিষয়, মুদ্রাব্যবস্থা, যোগাযোগ, ডাক ও তার ব্যবস্থা কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে থাকে এবং স্বরাষ্ট্র, পুলিশ, স্থানীয় স্বায়ত্ত শাসন ইত্যাদি বিষয়গুলি প্রাদেশিক সরকারের হাতে অর্পণ করা হয় । কতকগুলি বিষয়ের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক আইনসভার ওপর আইন প্রণয়নের যুগ্ম দায়িত্ব দেওয়া হয় । একটি যুক্তরাষ্ট্রীয় বিচারালয় গঠন করা হয় । কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক সরকারের মধ্যে বিরোধ দেখা দিলে তার নিষ্পত্তির জন্য যুক্তরাষ্ট্রীয় বিচারালয়ের কাছে পেশ করার ব্যবস্থা হয় ।
১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দের ভারত শাসন আইনে মুসলমান, তপশিলি জাতি, খ্রিস্টান, অ্যাংলো ইন্ডিয়ান, শিখ প্রভৃতি বিভিন্ন সম্প্রদায়ের লোকদের আলাদা নির্বাচনের সুযোগ দেওয়া হয় । শিখগণ পৃথক নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেন । উপরিউক্ত বিভিন্ন সম্প্রদায় ছাড়া অপরাপর লোকদের সাধারণ নির্বাচক হিসাবে রাখা হয় । ব্রিটিশ সরকার এই সম্প্রদায়-ভিত্তিক নির্বাচন ব্যবস্থা চালু করে ভারত বিভাগের পটভূমি রচনা করে ।
১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দের ভারত শাসন আইন সামগ্রিকভাবে ভারতীয়দের হতাশ করে এবং এই আইন নিয়ে কংগ্রেসের মধ্যে তীব্র মতভেদ দেখা দেয় । কংগ্রেস ইতিপূর্বে পূর্ণ স্বাধীনতা অর্জনকে জাতীয় আন্দোলনের চূড়ান্ত লক্ষ্য হিসাবে গ্রহণ করেছিল । কংগ্রেস নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে কিনা, বা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলেও শাসন ব্যবস্থায় অংশ গ্রহণ করবে কী না এই সব নানা বিষয়ে প্রশ্ন ও মতবিরোধ দেখা দেয় । এই সব প্রশ্নের মিমাংসার জন্য ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে লখনউতে কংগ্রেসের অধিবেশন বসে । অধিবেশনে ঠিক হয়, কংগ্রেস সাময়িকভাবে এই শাসনবিধিকে অগ্রাহ্য করে একটি গণপরিষদের দাবি জানাবে । ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দের ভারত শাসন আইন অনুসারে কংগ্রেস নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে । নির্বাচন প্রচারের সূত্রে জনসাধারণ অধিকতর নিকটবর্তী হতে এবং তাঁদের মধ্যে রাজনৈতিক চেতনার বিকাশ ঘটাতে সচেষ্ট হয় । এই অধিবেশনে আরও স্থির হয় যে, নির্বাচনী প্রচারের সময় এবং নির্বাচনের পরে কংগ্রেস প্রতিক্রিয়াশীল আইনগুলি বাতিল করার উদ্দেশ্যে এবং গোল টেবিল বৈঠকে আলোচিত দাবি দাওয়ার সপক্ষে জনমত গঠনের চেষ্টা করবে । ১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দে প্রাদেশিক আইন সভাগুলির নির্বাচনে সাধারণ নির্বাচন ক্ষেত্রসমূহে কংগ্রেস বিপুল সংখ্যা গরিষ্ঠতা লাভ করে । এগারোটি প্রদেশের মধ্যে সাতটি প্রদেশে কংগ্রেস মন্ত্রিসভা গঠন করতে সক্ষম হয় । মুসলমানদের জন্য সংরক্ষিত নির্বাচন ক্ষেত্রগুলিতে মুসলিম লিগ প্রত্যাশিত সাফল্য লাভ করতে পারে নি । মুসলিম লিগ কিছু সংখ্যক আসনে জয়ী হয় । মুসলিম লিগ কংগ্রেসের সঙ্গে যৌথভাবে মন্ত্রিসভা গঠনের প্রস্তাব করে । মুসলিম লিগ দলের নীতি ও কর্মসূচির সঙ্গে কংগ্রেসের নীতি ও কর্মসূচির মিল না থাকায় কংগ্রেস যথারীতি যৌথ মন্ত্রিসভা গঠনের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে । কংগ্রেসের এই ঘোষণায় মুসলিম লিগ নেতা অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হন । এরপর মুসলিম লিগ কংগ্রেস বিরোধী ও মুসলমানদের জন্য স্বতন্ত্র রাষ্ট্র গঠনের ডাক দেন ।
*****
- 2352 views