বাষ্পমোচন (Transpiration)

Submitted by arpita pramanik on Sat, 04/20/2013 - 21:00

বাষ্পমোচন (Transpiration) :

সংজ্ঞা :-  যে শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ায় উদ্ভিদ তার মূল দ্বারা শোষিত জলের অপ্রয়োজনীয় ও অতিরিক্ত অংশ লেন্টিসেল, কিউটিকল, পত্ররন্ধ্র ইত্যাদি বায়বীয় অংশের মাধ্যমে দেহ থেকে বাস্পের আকারে বের করে দেয়, প্রোটোপ্লাজম নিয়ন্ত্রিত ওই শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়াকে বাষ্পমোচন বলে ।

বাষ্পমোচন কে প্রয়োজনীয় ক্ষতিকর পদ্ধতি বলে কেন ? 

স্থলজ উদ্ভিদের বাষ্পমোচন একটি সাধারণ জীবজ প্রক্রিয়া । এই প্রক্রিয়ায় উদ্ভিদের অতিরিক্ত জল নির্গত হয়ে উদ্ভিদ দেহ সতেজ রাখে । কিন্তু বায়ুতে জলীয় বাস্প কম থাকলে বা পরিবেশের উষ্ণতা বেশি হলে উদ্ভিদ দেহ থেকে প্রয়োজনের অতিরিক্ত জল নির্গত হয়ে গিয়ে উদ্ভিদের পাতা নেতিয়ে পড়ে, এমনকি উদ্ভিদের মৃতুও হতে পারে । অপরপক্ষে বাষ্পমোচন উদ্ভিদের বৃদ্ধি, জল বিশোষণ, জল ও খাদ্য পরিবহণ ইত্যাদিতে পরোক্ষভাবে সাহায্য করে।

বাষ্পমোচনের স্থান :-বাষ্পমোচন সাধারণত পাতার পত্ররন্ধ্রের মাধ্যমে হয়। কাণ্ড ও পাতার ত্বকের ক্ষেত্রে কিউটিকল ও লেন্টিসেলের মাধ্যমে হয় ।

বাষ্পমোচনের সময়:- দিনের বেলা ।

 

বাষ্পমোচনের প্রভাব সৃষ্টিকারী উপাদান

উদ্ভিদ দেহে বাষ্পমোচনের প্রভাব গুলিকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে যথা বহিঃপ্রভাব ও অন্তঃপ্রভাব ।

a) বহিঃপ্রভাব

১৷ কার্বন ডাই অক্সাইডের গাঢ়ত্বের প্রভাব :কার্বন ডাই অক্সাইডের গাঢ়ত্ব বেশি হলে আলোর উপস্থিতিতেও পত্ররন্ধ্র উন্মুক্ত হয় না । দিনের বেলায় আলোর উপস্থিতিতে কার্বন ডাই অক্সাইড সালোকসংশ্লেষে বিজারিত হওয়ায় পত্ররন্ধ্রে রক্ষীকোষে কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ হ্রাস পায় ফলে পত্ররন্ধ্র উন্মুক্ত হয় । অপরপক্ষে রাতে সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়া বন্ধ থাকায় কোষে কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় ফলে পত্ররন্ধ্রগুলি বন্ধ হয় ।

২৷ বায়ুর আদ্রতা :- বায়ুর আদ্রতার উপর বাষ্পমোচনের হার নির্ভর করে । বায়ুর আদ্রতা কম থাকলে বাষ্পমোচনের হার বৃদ্ধি পায়। অপরপক্ষে বাষ্পমোচনের হার কমে বায়ুর আদ্রতা বেশি হলে ।

৩৷ উষ্ণতার প্রভাব:- পরিবেশের উষ্ণতা বৃদ্ধি পেলে বায়ুমণ্ডলের আদ্রতা হ্রাস পায় ফলে বাষ্পমোচনের হার বাড়ে । সাধারণভাবে [tex]10 - {25^0}C[/tex] তাপমাত্রা পত্ররন্ধ্রের বন্ধ ও উন্মোচন প্রক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করে ।

৪৷ বায়ুপ্রবাহের প্রভাব:- বায়ুপ্রবাহের হার বৃদ্ধি পেলে বায়ুমণ্ডলের জলীয় বাষ্পের পরিমাণ কমে ফলে বাষ্পমোচনের হার বৃদ্ধি পায় । মৃদু বায়ুপ্রবাহে বাষ্পমোচনের হার বৃদ্ধি পেলেও প্রবল বায়ুপ্রবাহে যান্ত্রিক উদ্দীপনার ফলে পত্ররন্ধ্র বন্ধ হয়ে যায় তার কারণে বাষ্পমোচনের হার হ্রাস পায় ।

৫৷ বায়ুমণ্ডলের চাপ:- বায়ুর চাপ হ্রাস পেলে বাষ্পমোচনের হার বৃদ্ধি পায়, কারণ বায়ুমণ্ডলের চাপের উপর ব্যাপন পদ্ধতি নির্ভর করে। পাহাড়ি অঞ্চলে বায়ুর চাপ কম হওয়ায় বাষ্পমোচনের হার বৃদ্ধি পায় ।

 

b) অন্তঃপ্রভাবক

১৷ প্রোটোপ্লাজম :- কোষের প্রোটোপ্লাজমের উপর বাষ্পমোচন প্রক্রিয়া নির্ভরশীল । প্রোটোপ্লাজমের ঘনত্ব বেশি হলে কোষে শোষণ চাপ সৃষ্টি হয় । উদ্ভিদের দেহের কোষ গুলিতে বিশেষ করে পাতায় শোষণ চাপ বেড়ে গেলে মূল থেকে পাতায় জল প্রবাহ অব্যাহত হতে থাকে এবং বাষ্পমোচনের হার বাড়ে। প্রোটোপ্লাজমের ঘনত্ব কমে গেলে বাষ্পমোচনের হার কমে যায় ।

২৷ পত্ররন্ধ্রের ছিদ্রের হ্রাস এবং বৃদ্ধি:- পত্ররন্ধ্রের ছিদ্র সম্পূর্ণ উন্মুক্ত হলে বাষ্পমোচন বেশি পরিমাণে হয় এবং ছিদ্র আংশিক উন্মুক্ত হলে বাষ্পমোচন কম পরিমাণে হয় ।

৩৷ পাতার গঠন বৈচিত্র্য :- পাতার গঠনের উপরে বাষ্পমোচনের হার নির্ভর করে । বৃষ্টি বিরল অঞ্চলে জন্মানো গাছের পাতা বাষ্পমোচনের হার কমিয়ে দেয়। মরুভূমি অঞ্চলে যে সমস্ত গাছ জন্মায় তাদের পাতায় কিউটিন বা মোম জাতীয় পদার্থের প্রলেপ থাকায় বাষ্পমোচনের হার কম হয় । জঙ্গল উদ্ভিদের পাতায় ঘন রোমের আবরণ বাষ্পমোচন কমিয়ে দেয় । পদ্ম শালুক প্রভৃতি উদ্ভিদের বিস্তৃত পত্রফলক বাষ্পমোচনের হার বাড়াতে সাহায্য করে ।

 

বাষ্পমোচনের গুরুত্ব

উদ্ভিদ দেহে বাষ্পমোচনের গুরুত্ব গুলি হল

১৷ পাতার বাষ্পমোচনের ফলে জাইলেম বাহিকায় জলের যে টান পড়ে তা মূলরোম দিয়ে জল শোষণে সাহায্য করে ।

২৷ প্রস্বেদনের ফলে পাতায় যে শোষণ চাপের সৃষ্টি হয় তা সরাসরি জলকে বা খাদ্য রসকে জাইলেম বাহিকার মাধ্যমে পাতায় পৌঁছাতে সাহায্য করে ।

৩৷ খাদ্য উৎপাদনের জন্য পাতায় অবিরাম জল সরবরাহ করা হল বাষ্পমোচনের একটি গুরুত্ব পূর্ণ কাজ ।

৪৷ বাষ্পমোচন প্রক্রিয়া পরোক্ষভাবে মূল দ্বারা লবণ শোষণে সাহায্য করে ।

৫৷ প্রস্বেদন প্রক্রিয়ায় উদ্ভিদ দেহের মূল দ্বারা শোষিত অতিরিক্ত জল নিষ্কাশিত হয় ।

৬৷ স্বাভাবিক বাষ্পমোচন প্রক্রিয়া উদ্ভিদদেহের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে ।

৭৷ বাষ্পমোচন প্রক্রিয়ায় উদ্ভিদের বিভিন্ন অংশে জল সংবহনে সহায়তা করে ।

৮৷ বাষ্পমোচন প্রক্রিয়া উষ্ণ অঞ্চলের উদ্ভিদকে তুলনামূলক ভাবে শীতল রাখে এবং প্রখর সূর্যালোকে পাতাকে শুকিয়ে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা করে ।

৯৷ বাষ্পমোচন দ্বারা পত্ররন্ধ্রের যে হ্রাস বৃদ্ধি ঘটে তা সালোকসংশ্লেষ ও শ্বসন ক্রিয়াকে প্রভাবিত করে ।

১০৷ বাষ্পমোচন প্রক্রিয়ায় উদ্ভিদ দেহের বিভিন্ন অংশে খাদ্য পরিবাহিত হয় ।

১১৷ বাষ্পমোচন প্রক্রিয়া পাতার উষ্ণতা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে ।

১২৷ বাষ্পমোচনের ফলে পাতায় কোষ রসের ব্যাপন চাপের ঘাটতি বেড়ে যায় এবং প্রক্রিয়াটি কোষ থেকে কোষান্তরে জল সরবরাহে সাহায্য করে ।

*****

Related Items

আরশোলার গমন

চলা ফেরা বা হাঁটার জন্য আরশোলার তিন জোরা সন্ধিল পদ বর্তমান। আরশোলার পৃষ্ঠ দেশে দ্বিতীয় ও তৃতীয় খণ্ডকে মোট দু জোরা ডানা আছে। আরশোলার দু জোরা ডানার মধ্যে প্রথম ডানা জোরা শক্ত ও পুরু। তারা উড্ডয়নে সাহায্য করে না। দ্বিতীয় ডানা জোরা স্বচ্ছ ও পাতলা ...

কেঁচোর গমন

প্রাণীর নাম – কেঁচো, গমন অঙ্গের নাম, গমনে সাহায্যকারী পেশীর নাম, গমন পদ্ধতির নাম, গমন পদ্ধতি - কেঁচোর দেহ খণ্ডতলের অঙ্গীয় তলে অবস্থিত আণুবীক্ষণিক এক আয়তন কণ্টক সদৃশ্য অঙ্গ হল সিটি । সিটির এক প্রান্ত দেহ অভ্যন্তরস্ত থলির মধ্যে থাকে। ...

অ্যামিবার গমন

প্রাণীর নাম - অ্যামিবা, গমন অঙ্গের নাম, গমন পদ্ধতির নাম, গমন পদ্ধতি - ক্ষনপদ হল অ্যামিবার কোষ পর্দা সমূহ দেহ প্রোটোপ্লাজমের অংশ বিশেষ যা নলাকারে প্রসারিত হয়। গমনের সময় ক্ষনপদ সামনের দিকে প্রসারিত হয় এবং কোনো কঠিন বস্তুর সঙ্গে ক্ষনপদটিকে দৃঢ় ভাবে আবদ্ধ করে।

উদ্ভিদ দেহে ন্যাস্টিক চলন

উদ্ভিদের স্থায়ী অঙ্গের চলন যখন উদ্দীপকের তীব্রতা বা ব্যাপ্তি অনুসারে হয় , তখন তাকে ন্যাস্টিক চলন বা ব্যাপ্তি চলন বলে। ন্যাস্টিক চলনের প্রকারভেদ , ফটোন্যাস্টি, থার্মোন্যাস্টি, নিকটিন্যাস্টি, কেমোন্যাস্টি, সিসমোন্যাস্টি। ...

উদ্ভিদ দেহে ট্রপিক চলন

উদ্ভিদ অঙ্গের চলন যখন উদ্দীপকের গতিপথ অনুসরন করে হয় তখন তাকে ট্রপিক চলন বা দিকনির্ণীত চলন বা ট্রপিজম বলে। ট্রপিক চলনের প্রকারভেদ, ফটোট্রপিক চলন, ফটোট্রপিক চলনের পরীক্ষা, জিওট্রপিক চলন, জিওট্রপিক চলনের পরীক্ষা, হাইড্রোট্রপিক চলন ...