প্রশ্ন: সংগ্রামশীল জাতীয়তাবাদী আন্দোলন বলতে কী বোঝায় ? পরাধীন ভারতের সংগ্রামশীল আন্দোলনে বালগঙ্গাধর তিলকের ভূমিকা আলোচনা কর ।
উনবিংশ শতাব্দীর শেষে ও বিংশ শতকের শুরুতে ভারতের সংগ্রামশীল জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের মূল কথা ছিল; স্বাধীনতা মানুষের জন্মগত অধিকার । দয়া ভিক্ষা করে স্বাধীনতা পাওয়া যায় না । দীর্ঘ সংগ্রাম, আত্মত্যাগ ও আত্মশক্তির দ্বারাই দেশের স্বাধীনতা অর্জন করতে হয় । পরাধীন ভারতের সংগ্রামশীল জাতীয়তাবাদী আন্দোলন তিনটি ধারায় পরিচালিত হয়, যথা—
(১) আত্মশক্তির আদর্শ বা স্বদেশি আন্দোলন,
(২) নিষ্ক্রিয় প্রতিরোধ আন্দোলন বা বয়কট এবং
(৩) সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলন ।
ভারতের সংগ্রামশীল জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে বালগঙ্গাধর তিলকের ভূমিকা :
ভারতের সংগ্রামশীল জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে বালগঙ্গাধর তিলকের গুরুত্বপূর্ণ অবদান আছে । মহারাষ্ট্রের অগ্রণী পুরুষ বালগঙ্গাধর তিলকের ব্যক্তিত্ব ও কার্যকলাপকে কেন্দ্র করে মহারাষ্ট্র তথা ভারতের জাতীয় আন্দোলন বলিষ্ঠ ও প্রাণবন্ত রূপ ধারণ করেছিল । তিনি ছিলেন ভারতের সংগ্রামী জাতীয়তাবাদের পথিকৃৎ ।
(১) প্রথম পর্যায় : জাতীয়তাবাদী চেতনার প্রসারের উদ্দেশ্যে তিনি ‘মারহাট্টা’ নামে ইংরেজি এবং ‘কেশরী’ নামে মারাঠি সংবাদপত্র প্রকাশ করেন । এই দুটি পত্রিকার মাধ্যমে তিনি একদিকে কংগ্রেসের ভিক্ষাবৃত্তি নীতির কঠোর সমালোচনা করেন এবং ক্ষুরধার লেখনীর মাধ্যমে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে জনমত গঠনে উদ্যোগী হন । এরপর তিলকের উদ্যোগে মহারাষ্ট্রে ‘গণপতি উৎসব’ সর্বজনীন উৎসবে পরিণত হয় । ১৮৯৫ সালে তিনি ‘শিবাজী উৎসব’ কে জাতীয় উৎসবে পরিণত করেন।
(২) দ্বিতীয় পর্যায় : ১৯০০ খ্রিস্টাব্দের পর তিলক মহারাষ্ট্রের রাজনীতির মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে জাতীয় রাজনীতির বৃহত্তর আঙিনায় তাঁর জাতীয়তাবাদী কার্যকলাপ শুরু করেন । বাংলার স্বদেশি আন্দোলনকে তিলক অকুন্ঠ সমর্থন জানান । তিনি ঘোষণা করেন, ‘স্বরাজ আমার জন্মগত অধিকার’ । এরপর থেকে তিনি চরমপন্তী নেতা হিসাবে জনপ্রিয়তা র্জন করেন । ১৯০৮ খ্রিস্টাব্দে লোকমান্য তিলকের গ্রেফতারের প্রতিবাদে বোম্বাইয়ের শ্রমিকরা হরতাল পালন করলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়ে সাত বছরের জন্য তিনি ব্রহ্মদেশের মান্দালয়ে নির্বাসিত হন ।
******