সংগ্রামশীল জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে বালগঙ্গাধর তিলক ও অরবিন্দ ঘোষের ভূমিকা

Submitted by avimanyu pramanik on Mon, 06/03/2013 - 14:46

ভারতের সংগ্রামশীল জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে বালগঙ্গাধর তিলকের ভূমিকা (Role of Bal Gangadhar Tilak on millitant Natioalism in India) :

ভারতের সংগ্রামশীল জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে বালগঙ্গাধর তিলক গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে গেছেন । বালগঙ্গাধর তিলকের ব্যক্তিত্ব ও কার্যকলাপকে কেন্দ্র করে মহারাষ্ট্র তথা ভারতের জাতীয় আন্দোলন বলিষ্ঠ ও প্রাণবন্ত রূপ ধারণ করেছিল । তিনি ছিলেন ভারতের সংগ্রামশীল জাতীয়তাবাদের পথিকৃৎ ।

(১) জাতীয়তাবাদী চেতনা প্রসারের উদ্দেশ্যে তিনি ‘মারহাট্টা’ নামে ইংরেজি এবং ‘কেশরী’ নামে মারাঠি সংবাদপত্র প্রকাশ করেন । এই দুটি পত্রিকার মাধ্যমে তিনি একদিকে কংগ্রেসের ভিক্ষাবৃত্তি নীতির কঠোর সমালোচনা করেন এবং অন্যদিকে ব্রিটিশ শাসন ও শোষণের বিরুদ্ধে জনমত গঠনে উদ্যোগী হন । তিলকের উদ্যোগে মহারাষ্ট্রে ‘গণপতি উৎসব’ সর্বজনীন উৎসবে পরিণত হয় । ১৮৯৫ সালে তিনি ‘শিবাজী উৎসব’ কে জাতীয় উৎসবে পরিণত করেন ।

(২) ১৯০০ খ্রিস্টাব্দের পর তিলক মহারাষ্ট্রের রাজনীতির মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে জাতীয় রাজনীতির বৃহত্তর আঙিনায় তাঁর জাতীয়তাবাদী কার্যকলাপ শুরু করেন । বাংলার স্বদেশি আন্দোলনকে তিলক অকুন্ঠ সমর্থন জানান । তিনি ঘোষণা করেন, ‘স্বরাজ আমার জন্মগত অধিকার’ । এরপর থেকে তিনি চরমপন্থী নেতা হিসাবে জনপ্রিয়তা অর্জন করেন । ১৯০৮ খ্রিস্টাব্দে লোকমান্য তিলকের গ্রেফতারের প্রতিবাদে বোম্বাইয়ের শ্রমিকরা হরতাল পালন করলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়ে সাত বছরের জন্য তিনি ব্রহ্ম দেশের মান্দালয়ে নির্বাসিত হন । 

ভারতের সংগ্রামশীল জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে অরবিন্দ ঘোষের ভূমিকা (Role of Aurobindo Ghosh on millitant Natioalism in India) :

বিংশ শতাব্দীর প্রথমে ভারতীয় জাতীয় আন্দোলনের ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয় । এই সময় জাতীয় কংগ্রেসের নরমপন্থী নেতাদের আচার-আচরণ ও কার্যকলাপে বীতশ্রদ্ধ হয়ে অনেকে জাতীয় আন্দোলনকে সক্রিয় ও আন্দোলনমুখী করে তুলতে চেয়ে ছিলেন । এই সংগ্রামী আন্দোলনের নেতাদের মধ্যে অরবিন্দ ঘোষ ছিলেন অন্যতম ।

(১) কংগ্রেসের প্রতি মনোভাব : তিলকের মতো অরবিন্দও কংগ্রেসের নরমপন্থী নেতাদের ও কংগ্রেসি আন্দোলনের কঠোর সমালোচনা করেন । বরোদা থেকে প্রকাশিত ‘ইন্দু প্রকাশ’ পত্রিকার কয়েকটি প্রবন্ধে তিনি কংগ্রেসের নরমপন্থীদের আবেদন-নিবেদন নীতির তীব্র সমালোচনা করে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক স্বাধীনতা দাবি করেন ।

(২) কার্য কলাপ :  বাংলার স্বদেশি আন্দোলন শুরু হবার পর অরবিন্দ বরোদায় অধ্যাপনার কাজ ত্যাগ করে কলকাতায় জাতীয় শিক্ষা পরিষদ কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত জাতীয় কলেজের অধ্যক্ষ পদ গ্রহণ করেন । ওই বছরেই তাঁর সম্পাদনায় ইংরেজি দৈনিক ‘বন্দেমাতারম’ প্রকাশিত হয় । অল্প সময়ের মধ্যেই ‘বন্দেমাতারম’ পত্রিকাটি বাংলার রাজনৈতিক জগতে আলোড়ন সৃষ্টি করে । এই পত্রিকায় অরবিন্দ ঘোষণা করেন “স্বরাজ হল বর্তমান অবস্থায় প্রাচীন ভারতের আদর্শকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা, সত্যযুগের জাতীয় গৌরবকে পুনরুদ্ধার করা এবং রাজনীতির ক্ষেত্রে বেদান্তের আদর্শ প্রচার করা”।

*****

Related Items

মধুসূদন গুপ্ত

ভারতে আধুনিক চিকিৎসাবিদ্যা প্রসারের সঙ্গে মধুসূদন গুপ্তের নাম ওতপ্রোতভাবে জড়িত । তিনি ১৮০০ খ্রিস্টাব্দে হুগলি জেলার বৈদ্যবাটি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন । ডেভিড হেয়ারের 'পটলডাঙ্গা স্কুলে' প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে তিনি কলকাতার সংস্কৃত কলেজে আয়ুর্বেদ চিকিৎসা নিয়ে পড়াশুনা ...

কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ এবং চিকিৎসাবিদ্যা চর্চার বিকাশ

কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ এবং চিকিৎসাবিদ্যা চর্চার বিকাশ:-

ঊনিশ শতকের সূচনালগ্নে ভারতে প্রাচীন দেশীয় চিকিৎসা-ব্যবস্থা প্রচলিত ছিল । পরবর্তীকালে ভারতের গভর্নর জেনারেল লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্ক দেশীয় চিকিৎসা-শাস্ত্রে শিক্ষাদানের পরিবর্তে আধু

পাশ্চাত্য শিক্ষাবিস্তারে ডেভিড হেয়ার ও জন এলিয়ট ড্রিঙ্কওয়াটার বিটন -এর ভূমিকা

উনিশ শতকে যে সব মানুষ বাংলায় পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম হলেন ডেভিড হেয়ার । ১৭৭৫ খ্রিস্টাব্দে তিনি স্কটল্যান্ডে জন্মগ্রহণ করেন । ১৮০০ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় এসে ঘড়ির ব্যবসা করে প্রচুর অর্থ উপার্জন করেন । ঔ

পাশ্চাত্য শিক্ষাবিস্তারে রাজা রামমোহন রায় ও রাজা রাধাকান্ত দেব -এর ভূমিকা

ঊনিশ শতকে বাংলায় আধুনিক পাশ্চাত্যশিক্ষার প্রসারে রাজা রামমোহন রায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেন । রাজা রামমোহন রায় মনে করতেন আধুনিক পাশ্চাত্য শিক্ষার ওপর ভিত্তি করেই নতুন ভারত গড়ে উঠবে । তিনি নিজের খরচে ১৮১৫ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় 'ইন্ডিয়ান অ্যাকাডেমি' নামে

নারীশিক্ষা ও ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর

ঊনিশ শতকের সূচনালগ্ন পর্যন্ত নানা রকম সামাজিক বিধিনিষেধের ফলে বাংলায় নারীশিক্ষার বিশেষ প্রসার ঘটেনি । এরপর থেকে উনিশ শতকে ভারতে নারীশিক্ষা প্রসারের উদ্দেশ্যে কিছু সমষ্টিগত ও ব্যক্তিগত উদ্যোগ শুরু হয় । সমষ্টিগত উদ্যোগে নব্যবঙ্গীয় গোষ্ঠী, খ্রিস্টান মিশনারি এবং ব্রাহ্মসমা