লাহোর ষড়যন্ত্র মামলা (Lahore Conspiracy Case)

Submitted by avimanyu pramanik on Mon, 04/23/2012 - 11:05

লাহোর ষড়যন্ত্র মামলা (Lahore Conspiracy Case) :

১৯১৪ খ্রিস্টাব্দে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে রাসবিহারী বসু উত্তর ভারতে এক সশস্ত্র বিপ্লবী অভ্যুত্থান ঘটাবার পরিকল্পনা করেন । এই সময় গদরপন্থী কয়েক শত শিখ ও পাঞ্জাবি যুবক 'কোমাগাতামারু' ও 'তোশামারু' নামে দুই জাহাজে করে পাঞ্জাবে ফিরে সামরিক অভ্যুত্থান ঘটাতে সচেষ্ট হলে রাসবিহারী বসু দেশব্যাপী স্বাধীনতা আন্দোলন গড়ে তোলার অনুকূল পরিস্থিতিকে কাজে লাগান । এই উদ্দেশ্যে তিনি ব্রিটিশ সেনানিবেশের ভারতীয় সৈনিকদের সঙ্গে গোপনে যোগাযোগ স্থাপন করেন ও সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দের ২১শে ফেব্রুয়ারি দিল্লি, লাহোর, আম্বালা, রাওয়ালপিন্ডি, মিরাট, ফিরোজপুর প্রভৃতি স্থানে সেনাছাউনিতে এক সামরিক অভ্যুত্থানের দিনক্ষণ ধার্য করেছিলেন । ভারতীয় বন্দিদের কারামুক্ত করা ও স্থানীয় প্রশাসন দখল করা ছিল তাঁর লক্ষ্য । দুর্ভাগ্যক্রমে কৃপাল সিং নামক জনৈক বিশ্বাসঘাতক ষড়যন্ত্রের কথা ফাঁস করে দিলে পরিকল্পনা ব্যর্থ হয় । তার উপর রাসবিহারী বসুর সহকর্মী বিষ্ণু গণেশ পিংলে ১০টি বোমা সহ মিরাটে ধরা পড়ে । পুলিশ ব্যাপক অভিযান চালিয়ে দেড়শোর মতো বিপ্লবীকে বন্দী করে তাঁদের বিরুদ্ধে ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দে 'লাহোর ষড়যন্ত্র মামলা' দায়ের করে । কাতার সিং ও পিংলে -সহ মোট ১৭ জন বিপ্লবীর এই মামলার রায়ে মৃত্যুদন্ড হয় । অভিযুক্তদের মধ্যে ভাই পরমানন্দও ছিলেন । বিচারে তাঁর যাবজ্জীবন দ্বীপান্তর হয় । রাসবিহারী বসুকে প্রধান আসামি রূপে ধরতে পুলিশি তল্লাশি শুরু হলে তিনি গ্রেপ্তার এড়িয়ে পি. এন. ঠাকুর ছদ্মনামে খিদিরপুর থেকে এস.এস. সারুকিমারু জাহাজে করে জাপানে চলে যান । এই ঘটনার পর পাঞ্জাব তথা সমগ্র উত্তর ভারতে বিপ্লবী আন্দোলনের পরিসমাপ্তি ঘটে ।

*****

 

 

Related Items

অহিংস অসহযোগ আন্দোলন পর্বে নারী আন্দোলন

অহিংস অসহযোগ আন্দোলন পর্বে নারী আন্দোলন (Women and the Non Co-operation Movement):-

মূল্যবৃদ্ধি, বেকারত্ব, দমনমূলক রাওলাট আইন, জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকান্ড প্রভৃতির প্রতিবাদে গান্ধিজির নেতৃত্বে জাতীয় কংগ্রেস ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে অহিংস অসহযোগ আন্দ

বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলন পর্বে নারী আন্দোলন

বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলন পর্বে নারী আন্দোলন (Women and the Anti-partition Movement):-

সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশ শাসনকালে লর্ড কার্জন প্রশাসনিক অজুহাত দেখিয়ে ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দের ২০শে জুলাই সরকারিভাবে বঙ্গভঙ্গের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করলে বাংলা তথা ভারতে এ

বিশ শতকের ভারতে নারী আন্দোলনের চরিত্র, বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ

বিশ শতকের ভারতে নারী আন্দোলনের চরিত্র, বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ (Women's Movements in the Twentieth Century):-

বিশ শতকের ভারতে ব্রিটিশ-বিরোধী আন্দোলনগুলির মধ্যে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ চারটি জাতীয় আন্দোলন হল—(i) ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে বঙ্গভঙ্গ বিরোধী স্ব

মানবেন্দ্রনাথ রায় ও ভারতের বামপন্থী আন্দোলন

মানবেন্দ্রনাথ রায় ও ভারতের বামপন্থী আন্দোলন(M.N.Roy and the Left Movement in India):-

মানবেন্দ্রনাথ রায়ের আসল নাম হল নরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য । বিপ্লবী কাজ করতে গিয়ে তিনি অসংখ্য ছদ্মনাম গ্রহণ করেন, যেমন— মি. মার্টিন, হরি সিং, ডা. মাহমুদ, মি.

বিশ শতকের ভারতে উপনিবেশ-বিরোধী আন্দোলনে বামপন্থী রাজনীতির অংশগ্রহণ

বিশ শতকের ভারতে উপনিবেশ-বিরোধী আন্দোলনে বামপন্থী রাজনীতির অংশগ্রহণ (Participation of the Left in the Anti-Colonial Movement in India):-

রুশ বিপ্লবের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে মানবেন্দ্রনাথ রায়, অবনী মুখার্জি, মহম্মদ আলি সহ ২৪ জন প্রবাসী ভারতীয়