Submitted by avimanyu pramanik on Mon, 04/23/2012 - 10:41

যুগান্তর দল (Jugantar Dal) :

অনুশীলন সমিতির আন্দোলনের পদ্ধতিগত দিক থেকে দুটি ধারা ছিল— (ক) নিষ্ক্রিয় প্রতিরোধ এবং (খ) সশস্ত্র আন্দোলনের মাধ্যমে সন্ত্রাস ছড়ানো । বিপ্লবী বারীন্দ্রকুমার ঘোষ ছিলেন সশস্ত্র আন্দোলন ও গুপ্ত হত্যার পক্ষপাতী । ক্রমে অনুশীলন সমিতির মূল ধারার সঙ্গে বারীন্দ্রকুমার ঘোষের মত বিরোধ দেখা দেয় । ফলস্বরূপ ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দে বাংলার বিপ্লবী নেতারা বারীন্দ্রকুমার ঘোষের নেতৃত্বে 'যুগান্তর' নামে একটি গোপন সমিতি গঠন করেন । বিপ্লবী অবিনাশ ভট্টাচার্য, ভূপেন্দ্রনাথ দত্ত, উপেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, দেবব্রত বসু প্রমুখ যুগান্তর দলে যোগ দেন । এই দলের সাপ্তাহিক মুখপত্র 'যুগান্তর' পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন ভূপেন্দ্রনাথ দত্ত । এই যুগান্তর দল এবং পত্রিকাই প্রথম ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে বিপ্লবের আদর্শ প্রচার করতে থাকে । যুগান্তর দলের সদস্যরাই প্রথম বিদেশি শাসকদের বিরুদ্ধে বোমা ও পিস্তলের রাজনীতি অনুসরণ করেন । ব্রিটিশ সরকার কঠোর হাতে স্বদেশি আন্দোলন দমন করার চেষ্টা করলে বিপ্লবীরাও সক্রিয় হয়ে ওঠেন । বারীন ঘোষ ও তাঁর সহযোগী বিপ্লবীরা বিপ্লবী ভাবধারা সমূহ জনসাধারণের মধ্যে প্রচারের ব্যবস্থা করেন । এই উদ্দেশ্যে তাঁরা বাংলার বাইরে বিহার, ওড়িশা, মাদ্রাজ, মহারাষ্ট্র প্রভৃতি রাজ্যে প্রতিনিধি প্রেরণ করেছিলেন । বাংলার সর্বত্র বিভিন্ন পুস্তক ও পত্রপত্রিকার মাধ্যমে বিপ্লবী ভাবধারা প্রচারের ব্যবস্থা করা হয় । এইসব বিপ্লবী পত্রপত্রিকাগুলির মধ্যে ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত 'ভবানী মন্দির' এবং ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দে অবিনাশ ভট্টাচার্য প্রণীত 'বর্তমান রণনীতি' গ্রন্থ দুটি বিশেষ উল্লেখযোগ্য । পত্রিকাগুলির মধ্যে অরবিন্দ ঘোষ সম্পাদিত 'বন্দেমাতরম', ভূপেন্দ্রনাথ দত্ত সম্পাদিত 'যুগান্তর', ব্রহ্মবান্ধব উপাধ্যায় সম্পাদিত 'সন্ধ্যা', দ্বারকানাথ বিদ্যাভূষণ সম্পাদিত 'সোমপ্রকাশ' পত্রিকা বিশেষ উল্লেখযোগ্য । বিপ্লবী ভাবধারায় পুষ্ট হয়ে বাংলায় 'আত্মোন্নতি সমিতি', 'ব্রতী সমিতি', 'সনাতন সম্প্রদায়' নামক আরও অনেক গুপ্ত সমিতি গড়ে উঠেছিল । বিপ্লবী কার্যকলাপ পরিচালনা ও তাঁদের রাজনৈতিক ক্রিয়াকলাপ চালনার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ বিপ্লবীরা তাঁদের বন্ধুবান্ধব বা বিত্তশালী হিতৈষীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করতেন । পরে বিপ্লবী কার্যকলাপ বিস্তার করলে প্রচুর অর্থের প্রয়োজন মেটাবার জন্য তাঁরা বলপূর্বক অর্থ আদায় অর্থাৎ রাজনৈতিক ডাকাতির পথ গ্রহণ করেন । বিপ্লবের প্রাথমিক প্রস্তুতি সম্পূর্ণ করে বিপ্লবী বারীন্দ্রকুমার ঘোষ ও তাঁর সহযোগী বিপ্লবীগণ কাজে নেমে পড়েন । বোমা ও অন্যান্য মারাত্মক বিস্ফোরক পদার্থ তৈরির জন্য ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দে বিপ্লবী বারীন্দ্রকুমার ঘোষ কলকাতার মানিকতলা অঞ্চলে ৩২ নং মুরারিপুকুর রোডের এক বাগানবাড়িতে বোমা তৈরির কারখান স্থাপন করেন । হেমচন্দ্র কানুনগো ও প্রেসিডেন্সি কলেজের ছাত্র উল্লাসকর দত্ত এই বাগানবাড়িতে বোমা তৈরির দায়িত্ব নেন । বিপ্লবীদের বিরুদ্ধে দমন মূলক কার্যকলাপে নিযুক্ত সরকারি কর্মচারীদের হত্যার উদ্দেশ্যে তাঁরা বোমা তৈরিতে লিপ্ত ছিলেন । ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে নবগঠিত 'পূর্ববঙ্গ ও আসামের' অত্যাচারী লেফটেন্যান্ট গভর্নর মিঃ ব্যামফিল্ড ফুলারকে নৈহাটি স্টেশনে হত্যার জন্য প্রথম বোমাটি তৈরি হয়েছিল এবং সতের বছর বয়স্ক প্রফুল্ল চাকীর ওপর ব্যামফিল্ড ফুলারকে হত্যার দায়িত্ব ন্যস্ত হয়েছিল । প্রফুল্ল চাকী সে কাজে ব্যর্থ হন । ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দের ৬ই ডিসেম্বর পুনরায় মেদিনীপুরের কাছে ব্যামফিল্ড ফুলারের ট্রেনকে লাইনচ্যুত করলেও এবারেও বিপ্লবীরা তাঁকে হত্যা করতে ব্যর্থ  হন ।

*****

Related Items

শ্রীরামপুর মিশন প্রেস কিভাবে একটি অগ্রনী মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানে পরিণত হল ?

প্রশ্ন : শ্রীরামপুর মিশন প্রেস কিভাবে একটি অগ্রনী মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানে পরিণত হল ?

উঃ- ১৮০০ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৮৩৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ৩৮ বছর বাংলা মুদ্রণ ও প্রকাশনায় শ্রীরামপুর মিশনের অবদান খুবই গুরুত্বপূর্ণ ।

বাংলায় মুদ্রণ শিল্পের বিকাশে গঙ্গাকিশোর ভট্টাচার্যের কীরূপ অবদান ছিল ?

প্রশ্ন : বাংলায় মুদ্রণ শিল্পের বিকাশে গঙ্গাকিশোর ভট্টাচার্যের কীরূপ অবদান ছিল ?

১৮৫৭ -এর মহাবিদ্রোহকে কি সামন্ত-শ্রেণির বিদ্রোহ বলা যায় ?

প্রশ্ন : ১৮৫৭ -এর মহাবিদ্রোহকে কি সামন্ত-শ্রেণির বিদ্রোহ বলা যায় ?

উঃ- ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহের সময় থেকেই এই বিদ্রোহের চরিত্র বা প্রকৃতি নিয়ে বিভিন্ন ধারার ইতিহাসচর্চার নানা ধরনের গবেষণালব্দ মতামত পাওয়া যায় ।

কী উদ্দেশ্যে ঔপনিবেশিক সরকার অরণ্য আইন প্রণয়ন করেন ?

প্রশ্ন : কী উদ্দেশ্যে ঔপনিবেশিক সরকার অরণ্য আইন প্রণয়ন করেন ?

এদেশের চিকিৎসাবিদ্যার ক্ষেত্রে কলিকাতা মেডিকেল কলেজের কীরূপ ভূমিকা ছিল ?

প্রশ্ন : এদেশের চিকিৎসাবিদ্যার ক্ষেত্রে কলিকাতা মেডিকেল কলেজের কীরূপ ভূমিকা ছিল ?