বিপ্লবী আন্দোলন - পাঞ্জাব

Submitted by avimanyu pramanik on Mon, 04/23/2012 - 11:04

বিপ্লবী আন্দোলন - পাঞ্জাব (Revolutionary Activities in punjab) :

বিপ্লবী আন্দোলন সংগঠনে পাঞ্জাবের একটা নির্দিষ্ট ভুমিকা আছে । ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ভারতের স্বাধীনতা অর্জনই ছিল বিংশ শতকের শুরুতে বিপ্লবীদের মূলমন্ত্র । পাঞ্জাবের বিপ্লবীদের মধ্যে সর্বাগ্রে রাম সিং কুকা-র নাম স্মরণীয় । ১৯০৪ খ্রিস্টাব্দে এক প্রবাসী বাঙালি জে. এম. চট্টোপাধ্যায় বাংলার গুপ্ত সমিতির অনুকরণে পাঞ্জাবের সাহারানপুরে সর্বপ্রথম একটি গুপ্ত সমিতি গঠন করেন । দীননাথ প্রমুখ কয়েক জন বিপ্লবী সাহারানপুর জেলার দামোলা নদীর তীরে সমবেত হয়ে দেশের স্বার্থে নিজেদের জীবন উত্সর্গ করার সংকল্প গ্রহণ করেন । দেশের অন্যান্য অঞ্চলের বিপ্লবীদের মতো পাঞ্জাবের বিপ্লবীদেরও লক্ষ্য ছিল স্বদেশের স্বাধীনতা অর্জন করা । এই কাজে তাঁরা স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতী ও লালা লাজপত রায়ের দ্বারা বিশেষভাবে প্রভাবিত হন । ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দে যতীন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় কিছুকাল 'সাহারানপুর গুপ্ত সমিতির' সদস্যদের বিপ্লবমন্ত্রে ও দেশের জন্য প্রাণ বিসর্জনের পবিত্র আদর্শে  দীক্ষিত করেছিলেন । এই সময় তিনি গুপ্ত সমিতির প্রধান কেন্দ্র রুরকিতে স্থানান্তরিত করেছিলেন । সে সময় রুরকি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ ছিল পাঞ্জাবী বিপ্লবীদের অন্যতম কেন্দ্র । রুরকি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের বহু ছাত্র এই গুপ্ত সমিতির সঙ্গে সম্পর্ক রেখেছিলেন । গুপ্তহত্যা ও রাজনৈতিক ডাকাতি করাই ছিল সাহারানপুর গুপ্ত সমিতির প্রধান কাজ । ক্রমান্বয়ে লালা হরদয়াল, সুফি অম্বাপ্রসাদ, সর্দার অজিত সিং, লালা লাজপত রায়, ভাই পরমানন্দ প্রমুখ ব্যক্তিত্ব বিপ্লবীদলে যোগ দিলে দলে নতুন প্রাণ সঞ্চার হয় । এই সময় সর্দার অজিত সিং সম্পাদিত 'ভারতমাতা' ও সুফি অম্বাপ্রসাদের 'ঝঙ্গের-শিয়ার' পত্রিকা দুটি সশস্ত্র আন্দোলনের পক্ষে জনমত গঠনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছিল । সরকার পাঞ্জাবে বিপ্লবী কার্যকলাপের ওপর কড়া নজর রেখেছিলেন । ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দে সর্দার অজিত সিং ও লালা লাজপত রায়কে দেশদ্রোহিতার অভিযোগে ব্রহ্মদেশে নির্বাসনে পাঠালে পাঞ্জাবের অবস্থা কিছুদিনের জন্য শান্ত হয় । নির্বাসন থেকে ফিরে এসে সর্দার অজিত সিং এবং সুফি অম্বাপ্রসাদ পাঞ্জাবে বিপ্লবী কর্মতৎপরতা বৃদ্ধি করেন । লালা হরদয়াল বিপ্লবী সমিতির নেতৃত্বভার গ্রহণ করলে পাঞ্জাবে বিপ্লবী ভাবধারা আরও প্রসারিত হয় । উচ্চশিক্ষার জন্য তিনি বেশ কিছুকাল বিদেশে ছিলেন । সেই সূত্রে তিনি বিনায়ক দামোদর সাভারকরের সঙ্গে পরিচিত হন এবং 'অভিনব ভারতের' সদস্যপদ লাভ করেন । সরকারি মতে পাঞ্জাবে বিপ্লবী অভ্যুত্থানের জন্য প্রধানত হরদয়াল দায়ী । তিনি সরাসরি পাঞ্জাবি যুবক বৃন্দের মনে বিপ্লবী আদর্শ প্রচার করতেন । তাঁরই উদ্যোগে পাঞ্জাবের সর্বত্র বিপ্লবী সমিতির শাখাকেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হয় । ব্রিটিশ সরকার তাঁকে গ্রেপ্তারের উদ্যোগ নিলে তিনি ভারত ত্যাগ করে আমেরিকায় চলে যান । হরদয়ালের প্রস্থানে জে.এম.চট্টোপাধ্যায়, দীননাথ প্রমুখ বিপ্লবী পাঞ্জাবের বিপ্লবী আন্দোলনের নেতৃত্ব গ্রহণ করেন । পাঞ্জাবে বিপ্লবী ভাবধারা প্রসারের জন্য ভাই পরমানন্দের নামও বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য ।

*****

Related Items

অলিন্দ যুদ্ধ -র সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও ।

প্রশ্ন:-  অলিন্দ যুদ্ধ -র সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও ।

স্যার স্ট্যাফোর্ড ক্রীপ্‌স কী উদ্দেশ্যে ভারতে আসেন ? তাঁর প্রস্তাবগুলি কী ছিল ? তাঁর ব্যর্থতার কারণ কী ?

প্রশ্ন:-  স্যার স্ট্যাফোর্ড ক্রীপ্‌স কী উদ্দেশ্যে ভারতে আসেন ? তাঁর প্রস্তাবগুলি কী ছিল ? তাঁর ব্যর্থতার কারণ কী ?

স্যার স্ট্যাফোর্ড ক্রীপস -এর ভারতে আসার উদ্দেশ্য—

কীভাবে ভারতে কমিউনিস্ট পার্টি গঠিত হয় ? আইন অমান্য আন্দোলনে শ্রমিক শ্রেণি কী ভূমিকা গ্রহণ করে ?

প্রশ্ন:- কীভাবে ভারতে কমিউনিস্ট পার্টি গঠিত হয় ? আইন অমান্য আন্দোলনে শ্রমিক শ্রেণি কী ভূমিকা গ্রহণ করে ?

সুভাষচন্দ্রের বামপন্থী মানসিকতা সম্পর্কে আলোচনা কর । কোন পরিস্থিতিতে সুভাষচন্দ্র বাংলা কংগ্রেসের সভাপতি পদ থেকে বহিষ্কৃত হন ?

প্রশ্ন:- সুভাষচন্দ্রের বামপন্থী মানসিকতা সম্পর্কে আলোচনা কর । কোন পরিস্থিতিতে সুভাষচন্দ্র বাংলা কংগ্রেসের সভাপতি পদ থেকে বহিষ্কৃত হন ?

কংগ্রেসে সমাজতন্ত্রী দলের উদ্ভব কীভাবে হয় ? সুভাষচন্দ্র বসু জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতির পদ থেকে ইস্তফা দেন কেন ?

প্রশ্ন:- কংগ্রেস সমাজতন্ত্রী দলের উদ্ভব কীভাবে হয় ? সুভাষচন্দ্র বসু জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতির পদ থেকে ইস্তফা দেন কেন ?

কংগ্রেস সমাজতন্ত্রী দলের উদ্ভবের কারণগুলির মধ্যে নিম্নলিখিত কারণগুলি উল্লেখ করা যেতে পারে—