বাংলায় সমাজ সংস্কার ও শিক্ষা প্রসারের ক্ষেত্রে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের কার্যাবলি উল্লেখ কর ।

Submitted by avimanyu pramanik on Sun, 01/09/2022 - 09:55

প্রশ্ন:-  বাংলায় সমাজ সংস্কার ও শিক্ষা প্রসারের ক্ষেত্রে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের কার্যাবলি উল্লেখ কর ।

(১) সমাজ-সংস্কারে বিদ্যাসাগরের অবদান : বাংলার সংস্কার আন্দোলন, বিশেষত নারীকল্যাণের ক্ষেত্রে বিদ্যাসাগরের অবদান চিরস্বীকার্য । উনিশ শতকের নবজাগরণ ছিল তাঁর সমাজ-সংস্কার ও শিক্ষা প্রসার আন্দোলনের সার্থক পরিণতি ।

(i) পন্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের কার্যকলাপ বাংলা তথা ভারতের সমাজ-সংস্কার আন্দোলনকে শক্তিশালী করে তোলে । বাল্য বিবাহ নিবারণ ও বিধবা বিবাহ প্রবর্তনের ক্ষেত্রে তাঁর অবদান সশ্রদ্ধ চিত্তে স্মরণীয় । তাঁর প্রচেষ্টায় গভর্নর জেনারেল লর্ড ডালহৌসি ১৮৫৬ খ্রিস্টাব্দে এক আইন প্রণয়ন করে বিধবা বিবাহকে আইন সিদ্ধ বলে ঘোষণা করেন । এছাড়া প্রধানত বিদ্যাসাগরের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ১৮৬০ খ্রিটাব্দে সরকারি আইন প্রণয়ন করে কন্যার বিবাহের বয়স সর্বনিম্ন দশ বছর নির্ধারিত করা হয় ।

(ii) ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর সমাজ সংস্কারের সঙ্গে ধর্মকে সংযুক্ত না করে মানবতাবাদের ওপর ভিত্তি করে একান্ত নিজস্ব উদ্যোগে সমাজ সংস্কার আন্দোলনে ব্রতী হন । বিদ্যাসাগর ছিলেন একক সংগ্রামী— তিনি কোনো গোষ্ঠী বা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সমাজ সংস্কার আন্দোলনে প্রয়াসী হননি । রামমোহনের মতো ব্রাহ্মসমাজ অথবা ডিরোজিও -র নব্যবঙ্গ গোষ্ঠীর মতো কোনো প্রতিষ্ঠান তিনি গড়ে তোলেননি ।

(২) শিক্ষা প্রসারে বিদ্যাসাগরের অবদান :

(i) শিক্ষা বিস্তারের ক্ষেত্রে বিদ্যাসাগরের চেষ্টার ত্রুটি ছিল না, কারণ তিনি বুঝেছিলেন, নারী জাতি অনগ্রসর ও কুসংস্কারচ্ছন্ন হয়ে থাকলে সমাজ পিছিয়ে থাকবে ।

(ii) স্ত্রীশিক্ষা বিস্তারের ক্ষেত্রে তিনি রামগোপাল ঘোষ, রাধাকান্ত দেব প্রমুখ ব্যক্তিদের সাহায্য ও সহযোগিতা পান । বিদ্যালয় পরিদর্শকের সরকারি পদে থাকার সুবাদে তিনি ৩৫ টি বালিকা বিদ্যালয় এবং ১০০ টি বাংলা স্কুল স্থাপন করেন । এক্ষেত্রে ১৮৪৯ সালে বেথুন সাহেবের সহযোগিতায় ‘হিন্দু ফিমেল স্কুল’ স্থাপন করে তিনি তাঁর উল্লেখযোগ্য কৃতিত্বের অবদান রাখেন । সংস্কৃত-শিক্ষার প্রসারের জন্য তিনি সংস্কৃত কলেজে অ-ব্রাহ্মণ শ্রেণির ছাত্রদের ভর্তির ব্যবস্থা করেন ।

(iii) গণশিক্ষার প্রসারের জন্য বিদ্যাসাগর মাতৃভাষায় পঠনপাঠনের গুরুত্ব অনুভব করেন । এই জন্য তিনি সহজ-সরল পাঠ্যপুস্তক রচনায় আগ্রহী হন । শিক্ষাবিস্তারের জন্য তিনি বোধোদয়, বর্ণপরিচয়, কথামালা, শকুন্তলা, সীতার বনবাস, ভ্রান্তিবিলাস প্রভৃতি গ্রন্থ রচনা করেন ।

*****

Comments

Related Items

শ্রীরামপুর মিশন প্রেস কিভাবে একটি অগ্রনী মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানে পরিণত হল ?

প্রশ্ন : শ্রীরামপুর মিশন প্রেস কিভাবে একটি অগ্রনী মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানে পরিণত হল ?

উঃ- ১৮০০ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৮৩৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ৩৮ বছর বাংলা মুদ্রণ ও প্রকাশনায় শ্রীরামপুর মিশনের অবদান খুবই গুরুত্বপূর্ণ ।

বাংলায় মুদ্রণ শিল্পের বিকাশে গঙ্গাকিশোর ভট্টাচার্যের কীরূপ অবদান ছিল ?

প্রশ্ন : বাংলায় মুদ্রণ শিল্পের বিকাশে গঙ্গাকিশোর ভট্টাচার্যের কীরূপ অবদান ছিল ?

১৮৫৭ -এর মহাবিদ্রোহকে কি সামন্ত-শ্রেণির বিদ্রোহ বলা যায় ?

প্রশ্ন : ১৮৫৭ -এর মহাবিদ্রোহকে কি সামন্ত-শ্রেণির বিদ্রোহ বলা যায় ?

উঃ- ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহের সময় থেকেই এই বিদ্রোহের চরিত্র বা প্রকৃতি নিয়ে বিভিন্ন ধারার ইতিহাসচর্চার নানা ধরনের গবেষণালব্দ মতামত পাওয়া যায় ।

কী উদ্দেশ্যে ঔপনিবেশিক সরকার অরণ্য আইন প্রণয়ন করেন ?

প্রশ্ন : কী উদ্দেশ্যে ঔপনিবেশিক সরকার অরণ্য আইন প্রণয়ন করেন ?

এদেশের চিকিৎসাবিদ্যার ক্ষেত্রে কলিকাতা মেডিকেল কলেজের কীরূপ ভূমিকা ছিল ?

প্রশ্ন : এদেশের চিকিৎসাবিদ্যার ক্ষেত্রে কলিকাতা মেডিকেল কলেজের কীরূপ ভূমিকা ছিল ?