প্রশ্ন:- উনিশ শতকের সমাজ সংস্কার আন্দোলনের প্রধান লক্ষ্য কী ছিল ? ব্রাহ্মসমাজের প্রতিষ্ঠাতা কে ? ব্রাহ্মসমাজের সমাজ সংস্কারের লক্ষ্য কী ছিল ?
উনিশ শতকের সমাজ-সংস্কার আন্দোলনগুলির প্রধান লক্ষ্য ছিল—
(১) যুক্তিবাদী চিন্তাধারার দ্বারা ভারতীয় সমাজে প্রচলিত কুসংস্কার ও কুপ্রথার উচ্ছেদ ঘটানো,
(২) নারী কল্যাণ— নারীদের মধ্যে উচ্চশিক্ষার বিস্তার ঘটিয়ে নারীসমাজের মান উন্নয়ন ঘটানো ।
(৩) সমাজসেবা ও জনকল্যাণমূলক আদর্শ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে জাতীয়তাবাদের উন্মেষ ঘটানো ।
(৪) জাতিভেদ প্রথা ও ধর্মীয় গোঁড়ামির বিরোধিতা করা ।
(৫) ধর্মের নামে অধর্ম এবং সামাজিক অত্যাচারের প্রতিকার করা ।
(৬) নিজেদের সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি ও ভেদবুদ্ধি ত্যাগ করে আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে ওঠা এবং দেশাত্মবোধ জাগরিত করা ।
আধুনিক ভারতের রূপকার রাজা রামমোহন রায় বেদান্তের একেশ্বরবাদের ওপর ভিত্তি করে ১৮৩০ সালে ব্রাহ্মসমাজ প্রতিষ্ঠা করেন ।
ব্রাহ্মসমাজের সমাজ-সংস্কারের লক্ষ্য : ব্রাহ্মসমাজের অন্যতম লক্ষ্য ছিল সমাজ ও ধর্মসংস্কার ।
(১) সমাজসংস্কারের মধ্য দিয়ে ধর্মসংস্কার আন্দোলনকে গতিশীল করে তোলা ।
(২) হিন্দু সমাজের প্রচলিত বাল্যবিবাহ, বহুবিবাহ, কৌলিন্য প্রথা, জাতিভেদ, অস্পৃশ্যতা, গঙ্গাসাগরে সন্তান বিসর্জন প্রভৃতি কু-প্রথার অবসান ঘটানো ও সেই সঙ্গে নারীজাতির মধ্যে উচ্চশিক্ষার প্রচলন প্রভৃতি নারীকল্যাণমূলক কর্মসূচির মাধ্যমে ভারতীয় নারীদের সামাজিক অবস্থানের সামগ্রিক উন্নতিসাধন ।
(৩) ব্রাহ্মসমাজের অপর সমাজ-সংস্কার মূলক বিষয় ছিল সমাজসেবা ও জনসেবামূলক আদর্শের প্রতিষ্ঠা, দুর্ভিক্ষ ও মহামারির সময় মানুষকে সর্বতোভাবে সাহায্য করা । এক্ষেত্রে ব্রাহ্ম আন্দোলনের অন্যতম নেতা কেশবচন্দ্র সেন একদল তরুণকে নিয়ে ত্রাণ কমিটি গঠন করার যে দৃষ্টান্ত রেখেছিলেন, তা পরবর্তীকালে রাককৃষ্ণ মিশন এবং ভারত সেবাশ্রম সংঘের প্রধান আদর্শ হয়ে ওঠে ।
(৪) সমাজসেবা ও জনসেবামূলক কাজের মাধ্যমে জাতীয়তাবাদী আদর্শের প্রতিষ্ঠা ।
(৫) উদারনৈতিক ধর্মীয় আদর্শ প্রচারের মাধ্যমে জাতীয় সংহতির পথ রচনা ।
*****