দক্ষিণ ভারতের সংস্কার আন্দোলন (Reform Movement in South India) :
দক্ষিণ ও দক্ষিণ পশ্চিম ভারতে মহারাষ্ট্র ছিল ধর্ম সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম ক্ষেত্র । ১৮৪০ সালে মুম্বই -এ স্থাপিত, পরমহংসমন্ডলী এই শিক্ষা ও আন্দোলন গড়ে তোলেন । এই আন্দোলনকে যাঁরা আরও এগিয়ে নিয়ে যান তাঁরা হলেন মহাত্মা জ্যোতিবা ফুলে এবং লোকহিতবাদী গোপালহরি দেশমুখ । এই সংস্থা জাতিভেদ ও মূর্তিপূজার ঘোর বিরোধী ছিলেন । মহারাষ্ট্রের সমাজ সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃত জ্যোতিবা ফুলে জাতিভেদ প্রথা, অস্পৃশ্যতা দূরীকরণ এবং নিম্নবর্গের মানুষের অবস্থার উন্নতির জন্য আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন । পাশ্চাত্য শিক্ষা, বিশেষত নারী শিক্ষার বিস্তারেও তিনি সচেষ্ট হয়েছিলেন । মহারাষ্ট্রের পারসিরাও সংস্কার আন্দোলনে ব্রতী হয়েছিলেন । ১৮৫১ খ্রিস্টাব্দে ইংরেজি শিক্ষিত তরুণ পারসিরা 'রুনুমাই মায়দামসনান সভা' গড়ে তুলেছিলেন । ধর্মগুরু জরথুষ্টু প্রচারিত ধর্মের বিশুদ্ধতা রক্ষা ছিল এই সভার কাজ । পারসি সংস্কারকরা স্ত্রী শিক্ষার বিস্তার, পর্দাপ্রথা রোধ ও বিয়ের বয়স বৃদ্ধির পক্ষে মত ব্যক্ত করেছিলেন । এছাড়া ঊনিশ শতকের শেষ দিকে পাঞ্জাবের অমৃতসর ও লাহোরে প্রতিষ্ঠিত সিংহসভার নেতৃত্বে পাঞ্জাব সংস্কার আন্দোলন শুরু হয়েছিল । খালসা কলেজের প্রতিষ্ঠা এবং আকালীদের যোগদানে এই আন্দোলন গতি পায় । উনবিংশ শতকে ভারতে যে ধর্মীয় এবং সামাজিক পুনরুজ্জীবন আন্দোলন শুরু হয় তা ভারতীয় সমাজে বহুবিধ প্রভাব বিস্তার করে, যেমন-
(১) ভারতবাসীরা তাদের সামাজিক কুপ্রথার বিরুদ্ধে ক্রমশ সজাগ হয়ে ওঠে ।
(২) ভারতবাসীরা তাদের প্রাচীন ঐতিহ্য, কৃষ্টি ও সভ্যতার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে ওঠে ।
(৩) ভারতীয় নবজাগরণ ভারতীয়দের মধ্যে জাতীয়তাবাদী চিন্তাধারার বিকাশে নানা ভাবে সাহায্য করেছিল ।
(৪) ভারতীয় জাতীয়তাবাদ প্রথমে ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে বিকশিত হয়েছিল, পরে উনবিংশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে তা রাজনৈতিক চরিত্র লাভ করে ।
বীরসা লিঙ্গম পানতুলে :
(১) বীরসালিঙ্গম পানতুলে ছিলেন উনিশ শতকের মধ্যভাগে দক্ষিণ ভারতের সমাজ সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা ।
(২) তিনি অন্ধ্র তথা দক্ষিণ ভারতের সমাজ, শিক্ষা, সাহিত্য-সংস্কৃতির মান উন্নয়নের জন্য আন্তরিক প্রচেষ্টা চালান এবং তেলেগু উপন্যাস, নাটক এবং পত্রপত্রিকা প্রকাশের মাধ্যমে সমাজের প্রচলিত কুসংস্কার, জাতিভেদ, বাল্যবিবাহ, বহুবিবাহ প্রভৃতি কুপ্রথার বিরোধিতা করেন ।
(৩) শিক্ষা বিস্তারের উদ্দেশ্যে তিনি দুটি বালিকা বিদ্যালয়সহ বহু বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন । এইব কাজের জন্য বীরসা লিঙ্গমকে ‘আধুনিক অন্ধ্রের জনক’ বলা হয় ।
*****
- 3901 views