দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর ভারতে গণ আন্দোলন

Submitted by avimanyu pramanik on Tue, 04/24/2012 - 09:52

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর ভারতে গণ আন্দোলন :

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে নানা গণসংগঠন অত্যাচার ও শোষণের বিরুদ্ধে বিভিন্নমুখী আন্দোলন গড়ে তোলে । এই সব আন্দোলনগুলির মধ্যে ১৯৪৬-৪৭ খ্রিস্টাব্দের তেভাগা আন্দোলন অন্যতম । ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত Floud Commission -এর সুপারিশ অনুযায়ী কাকদ্বীপ, মালদা, মেদনীপুর, জলপাইগুড়ি, ময়মনসিংহ, রংপুর ও দিনাজপুরে বর্গাদার বা ভাগচাষী কৃষকেরা নিজেদের স্বার্থ সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে উৎপন্ন ফসলের দুই-তৃতীয়াংশ দাবি করে জোতদার ও ধনী কৃষকদের বিরুদ্ধে এই আন্দোলন সংগঠিত করেছিলেন । এই আন্দোলনের মূল কথা হল জমির মালিক পাবে উৎপন্ন ফসলের তিন ভাগের এক ভাগ অর্থাৎ এক-তৃতীয়াংশ এবং বর্গাদার বা ভাগচাষী পাবে দু-ভাগ বা দুই-তৃতীয়াংশ । এই আন্দোলনকে কেন্দ্র করে এক সময় উত্তর বাংলা, কেরলের ত্রিবাঙ্কুর ও অন্ধ্রপ্রদেশের তেলেঙ্গনা অঞ্চলের রাজনীতি উত্তাল হয়ে উঠেছিল । দিনাজপুরের ঠাকুরগাঁও মহকুমাতে প্রথম তেভাগা আন্দোলন শুরু হয় । পরে 'বুড়ি মা' নামে এক বৃদ্ধা রাজবংশী বিধবার নেতৃত্বে জলপাইগুড়ির দেবীগঞ্জে এবং চারু মজুমদারের নেতৃত্বে পচাগড়ে তেভাগা আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে । তারপর মালদহের গাজোল, দার্জিলিং -এর নকশালবাড়ি, ময়মনসিংহের কিশোরগঞ্জে, মেদিনীপুরের সুতাহাটা, নন্দীগ্রাম, পাশকুড়া ও মহিষাদলে তেভাগা আন্দোলন সর্বাত্মক রূপ লাভ করে । উপজাতি, বর্গাদার ও নিম্নবর্ণের বহু কৃষক এই আন্দোলনে সামিল হয়েছিলেন ।

কেরলের ত্রিবাঙ্কুরে পুন্নাপ্রা ও ভায়্লার গ্রামে কমিউনিস্টদের পরিচালনায় এই কৃষক আন্দোলন শুরু হয় । নারকেল ছোবড়া কারখানার শ্রমিক, জেলে, ক্ষেতমজুর সম্প্রদায় এই আন্দোলন যোগ দেন । খাদ্যসংকট ও ত্রিবাঙ্কুরের দেওয়ান সি. পি. রামস্বামী আয়ারের স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে মূলত এই আন্দোলন সংগঠিত হয় । কে. সি. জর্জ ও টি. ভি. টমাস নামে দুই কমিউনিস্ট এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন । 

বর্তমান অন্ধ্রপ্রদেশের তেলেঙ্গনা অঞ্চলের প্রায় ৩০০০ এর কিছু বেশি গ্রামের প্রায় ৩০ লক্ষ কৃষক একই সময়ে কমিউনিস্টদের নেতৃত্বে সামন্ততান্ত্রিক শোষণ ও সাম্রাজ্যবাদী অপশাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন । এই বিদ্রোহ তেলেঙ্গনা বিদ্রোহ নামে খ্যাত । বিদ্রোহীরা গেরিলা কায়দায় পাঁচ বছর ধরে যুদ্ধ চালিয়েছিল । লংকার গুঁড়ো, পাথর ও লাঠি ছিল তেলেঙ্গনা বিদ্রোহীদের মূল হাতিয়ার । হায়দরাবাদের নিজামের নিজস্ব রাজবাহিনী বিদ্রোহ দমনে তৎপর হলে পরিস্থিতি উত্তাল হয়ে ওঠে । নিজাম সৈন্যের গুলিতে প্রায় ২০০০ কৃষক প্রাণ হারান । শেষ পর্যন্ত বেট্টি বা বেগার প্রথা লোপ, শোষণ ও বঞ্চনার অবসান হলে ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দের দিকে তেলেঙ্গনা বিদ্রোহ প্রশমিত হয় । তেলেঙ্গনার প্রায় ২৫০০ গ্রামে নিজামশাহীর অবসান ঘটে ।

*****

Related Items

আজাদ হিন্দ ফৌজের ভারত অভিযান সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখ । কী কারণে শেষ পর্যন্ত আজাদ হিন্দ ফৌজ আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়ে ছিল ?

প্রশ্ন:-  আজাদ হিন্দ ফৌজের ভারত অভিযান সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখ । কী কারণে শেষ পর্যন্ত আজাদ হিন্দ ফৌজ আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়ে ছিল ?

আজাদ হিন্দ ফৌজের ভারত অভিযান—

’করেঙ্গা ইয়া মরেঙ্গে’ -কোন আন্দোলনের রণধ্বনি ছিল ? এই আন্দোলনে কৃষক ও শ্রমিকরা কীরূপ ভূমিকা নিয়েছিল ?

প্রশ্ন:-  ’করেঙ্গা ইয়া মরেঙ্গে’ -কোন আন্দোলনের রণধ্বনি ছিল ? এই আন্দোলনে কৃষক ও শ্রমিকরা কীরূপ ভূমিকা নিয়েছিল ?

১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের ভারত ছাড়ো আন্দোলনের রণধ্বনি ছিল 'করেঙ্গা ইয়া মরেঙ্গে' ।

ভারত ছাড়ো আন্দোলনের প্রসার আলোচনা কর ।

প্রশ্ন:- ভারত ছাড়ো আন্দোলনের প্রসার আলোচনা কর ।

১৯৪২ সালের ৮ই আগষ্ট ‘ভারত-ছাড়ো প্রস্তাব’ গৃহীত হলে পরদিন অর্থাৎ ৯ই আগষ্ট, ১৯৪২ এর ভোর থেকেই আন্দোলন শুরু হয়, যেমন—

১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে কোন ঘটনাবলীর পরিপ্রেক্ষিতে স্যার স্ট্যাস্ট্যাস্ট্যাফোর্ড ক্রিপ্‌স ভারতে এসেছিলেন ?

প্রশ্ন:-  ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে কোন ঘটনাবলীর পরিপ্রেক্ষিতে স্যার স্ট্যাফোর্ড ক্রিপ্‌স ভারতে এসেছিলেন ?

ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে মাতঙ্গিনী হাজরার অবদান আলোচনা কর ।

প্রশ্ন:- ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে মাতঙ্গিনী হাজরার অবদান আলোচনা কর ।

ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে মাতঙ্গিনী হাজরার অবদান বিশেষভাবে স্মরনীয় ।