জাতীয় শিক্ষা আন্দোলন (National Education Movement)

Submitted by avimanyu pramanik on Mon, 04/23/2012 - 10:35

জাতীয় শিক্ষা আন্দোলন (National Education Movement) :

দেশের বিভিন্ন অংশে ছাত্রসমাজ সভাসমিতির মাধ্যমে বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনকে জনপ্রিয় করে তোলে । স্বদেশি আদর্শ প্রচার এবং বিদেশি পণ্যের দোকানে পিকেটিং করার ক্ষেত্রে ছাত্ররা মুখ্য ভূমিকা নিয়েছিল । সরকার তাই ছাত্রদের বিরুদ্ধে কার্লাইল সার্কুলার জারি করেন । বহু ছাত্রকে জরিমানা, বিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার ও গ্রেপ্তার করা হয় । ছাত্রদের বিরুদ্ধে সরকারি দমন নীতির পরিপেক্ষিতে আন্দোলনের নেতারা জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়ন করেন । ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দের ১১ই মার্চ ৯২ জন সদস্যবিশিষ্ট 'জাতীয় শিক্ষাপরিষদ' (National Council of Education) গঠিত হয় । সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর, অরবিন্দ ঘোষ প্রমুখ এর মূল কর্ণধার ছিলেন । এই সময় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বীরভূমের ভুবনডাঙ্গা-র জমিদারীতে 'শান্তিনিকেতন আশ্রম' গঠন করেন । কোনো প্রকার সরকারি সাহায্য ছাড়াই এই শিক্ষা পরিষদের অধীনে ১৯০৮ খ্রিস্টাব্দে জাতীয় শিক্ষায়তন প্রতিষ্ঠিত হয় । কয়েকটি কলেজ, ৫০০টি মাধ্যমিক স্কুল ও ৩০০টির বেশি প্রাইমারি স্কুল তৈরি হয়েছিল । এইসব শিক্ষায়তনগুলিতে বহিষ্কৃত ছাত্রদের ভর্তি ও শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করা হয় । জাতীয় শিক্ষার আর্থিক ব্যয় নির্বাহের জন্য রাজা সুবোধ চন্দ্র মল্লিক এক লক্ষ টাকা, মুক্তাগাছার রাজা সূর্যকান্ত আচার্য চৌধুরি আড়াই লক্ষ টাকা, ময়মনসিংহের গৌরীপুরের জমিদার ব্রজেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী পাঁচ লক্ষ টাকা দান করেন ।  রাসবিহারী ঘোষ প্রমুখ লক্ষ লক্ষ দেশবাসীর দানে গড়ে ওঠে ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, ন্যাশনাল মেডিকেল স্কুল, বিজ্ঞান কলেজ । বিজ্ঞানী তারকনাথ পালিত নিজ ব্যয়ে 'বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট' গঠন করেন । এটি বর্তমানে 'যাদবপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ' নামে পরিচিত । অরবিন্দ ঘোষ বরোদার মহারাজার রাজ কলেজের লোভনীয় চাকরি ছেড়ে বাংলায় এসে সামান্য ৫০০ টাকা বেতনে জাতীয় শিক্ষাপরিষদের অধ্যক্ষের পদ গ্রহণ করেন । স্বদেশি আন্দোলনের এই ব্যাপকতা ব্রিটিশ সরকারকে চিন্তিত করে তোলে । সরকার নানা প্রকার ব্যবস্থা অবলম্বন করে এই আন্দোলন বন্ধ করতে তত্পর হন । ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দে মর্লে মিন্টো সংস্কার প্রবর্তন করে মুসলিমদের কিছু সাম্প্রদায়িক সুবিধা দিয়ে আন্দোলনকে দূর্বল করার চেষ্টা করেন । নরমপন্থী নেতৃবৃন্দ এবং মুসলিম লিগ এই সংস্কার আইন গ্রহণ করলেও চরমপন্থীরা তা প্রত্যাখ্যান করেন । বাংলার বাইরে বোম্বাই, মাদ্রাজ, পাঞ্জাবে স্বদেশি আন্দোলনের ক্ষেত্র সম্প্রসারিত হয় । ভারতীয় বাজারে ব্রিটিশ পণ্যের বাজার মন্দা ডেকে আনে । শেষ পর্যন্ত স্বদেশি আন্দোলনের তীব্রতায় এবং ব্রিটিশ পুঁজিপতিদের প্রবল চাপে ১৯১১ খ্রিস্টাব্দের ১২ই ডিসেম্বর ব্রিটিশ সরকার কলকাতা থেকে ভারতের রাজধানী দিল্লিতে স্থানান্তরিত করে বঙ্গভঙ্গের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন ও বাংলায় স্বদেশি আন্দোলনের অবসান হয় ।

******

Related Items

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর ভারতে গণ আন্দোলন

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে নানা গণসংগঠন অত্যাচার ও শোষণের বিরুদ্ধে বিভিন্নমুখী আন্দোলন গড়ে তোলে । এই সব আন্দোলনগুলির মধ্যে ১৯৪৬-৪৭ খ্রিস্টাব্দের তেভাগা আন্দোলন অন্যতম । ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত Floud Commission -এর সুপারিশ অনুযায়ী ...

নৌ-বিদ্রোহ, ১৯৪৬ (Revolt of the Royal Indian Navy, 1946)

ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্তিম লগ্নে যেসব ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন শুরু হয়েছিল ১৯৪৬ সালের নৌ-বিদ্রোহ তাদের মধ্যে অন্যতম । আজাদ হিন্দ বাহিনীর দৃষ্টান্ত ইতিমধ্যেই ব্রিটিশ সরকারের ভারতীয় সেনাদের মনে ব্রিটিশ বিরোধী প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছিল । তার ওপর ব্রিটিশ ...

ওয়াভেল পরিকল্পনা (Wavell Plan)

লর্ড লিনলিথগোর পর ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দের অক্টোবর মাসে লর্ড আর্কিবল্ড ওয়াভেল ভারতের বড়লাট নিযুক্ত হন । ভারতীয়দের দীর্ঘ প্রতীক্ষিত স্বাধীনতার দাবি সম্পর্কে সচেতন হয়ে লর্ড ওয়াভেল ভারতে রাজনৈতিক সমস্যার সমাধানে এগিয়ে আসেন । ভারতীয়দের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের ক্ষেত্রে ...

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর সমাপ্তি ও ভারতীয় রাজনীতি

১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তি এবং আজাদ হিন্দ বাহিনীর অভিযান ভারতে রাজনৈতিক পালাবদলের নতুন পটভূমি তৈরি করে । মহাত্মা গান্ধি জাতীয় সরকার গঠনের আহ্বানে জানালে ব্রিটিশ সরকার তাতে গুরুত্ব না দেওয়ায় গান্ধির প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয় । পক্ষান্তরে মহম্মদ আলি ...

১৯৪২ এর ভারত ছাড়ো আন্দোলন (Quit India Movement)

ক্রিপস মিশনের ব্যর্থতার অব্যবহিত পরেই ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ভারতের বোঝাপড়া শেষ করে দিয়ে গান্ধিজি তীব্র ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের পরিকল্পনা করতে শুরু করেন । ভারতে ব্রিটিশের উপস্থিতি জাপানকে ভারত আক্রমণ করতে প্ররোচিত করবে । এই পরিস্থিতিতে গান্ধিজি ...