জাতীয় কংগ্রেসের প্রথম যুগে বিভিন্ন দাবি

Submitted by avimanyu pramanik on Thu, 05/30/2013 - 11:23

কংগ্রেসের বিভিন্ন দাবি (Demand of Indian National Congress) :

কংগ্রেসের প্রথম যুগে অর্থাৎ প্রথম কুড়ি বাইশ বছর এই দলের নেতৃত্বে ছিল মধ্যপন্থীদের হাতে । এঁরা সরকারের সঙ্গে সংঘাতের পথে না গিয়ে নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে ভারতীয়দের স্বার্থ সংরক্ষণে সচেষ্ট ছিলেন । এই সময়কার কংগ্রেসের বার্ষিক অধিবেশনগুলিতে যেসব দাবিদাওয়া উত্থাপন করা হয়েছিল সেগুলিকে চারটি শ্রেণিতে ভাগ করা যায় । যথা— (১) সাংবিধানিক সংস্কার, (২) অর্থনৈতিক সংস্কার, (৩) প্রশাসনিক সংস্কার এবং (৪) গণতান্ত্রিক রীতিনীতি প্রবর্তনের দাবি । এইসব দাবিদাওয়া পূরণের জন্য কংগ্রেসের প্রথম যুগের নেতারা তেমন পীড়াপীড়ি করেন নি । এ ব্যাপারে তারা 'ধীরে চল' নীতির পক্ষপাতী ছিলেন । তার মাধ্যমে যেটুকু অধিকার ভারতীয়দের জন্য আদায় করা যায়, তাই নিয়েই তাঁরা সন্তুষ্ট থাকতেন । তবে তাঁদের প্রয়াস একেবারে নিষ্ফল হয় নি ।

সাংবিধানিক সংস্কার (Demand for Constitutional Reforms) :

ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের নেতাদের ক্রমাগত চাপে সরকার ১৮৯২ খ্রিস্টাব্দে ভারতীয় কাউন্সিল আইন (Indian Council Act of 1892) বিধিবদ্ধ করেন । এই আইন অনুসারে কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক আইন সভাগুলিতে অতিরিক্ত বেসরকারি সদস্য গ্রহণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় এবং সদস্য গ্রহণের ব্যাপারে পরোক্ষ নির্বাচন প্রথা মেনে নেওয়া হয় । অবশ্য এই আইনে যথারীতি আইন সভাগুলিতে সরকারের বাৎসরিক বাজেটের ওপর আলাপ আলোচনার অধিকার দেওয়া হয় । কিন্তু সদস্যরা ভোটদানের অধিকার থেকে বঞ্চিত হয় । কংগ্রেসী নেতৃবৃন্দ এই সাংবিধানিক সংস্কারে খুশি হন নি । তাঁরা আইন সভায় ভারতীয়দের হাতে আরও বেশি ক্ষমতা প্রত্যর্পণের দাবি জানিয়েছিলেন । বিংশ শতাব্দীর প্রথম পর্বে ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা অধিবেশনে কংগ্রেস ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের মধ্যে থেকে স্বায়ত্ব শাসন অর্জন তাদের মূল লক্ষ্য বলে ঘোষণা করেছিল ।

অর্থনৈতিক সংস্কার (Demand for Economic Reforms) :

রাজনৈতিক দাবিদাওয়ার পাশাপাশি কংগ্রেস অর্থনৈতিক সংস্কারের দাবিও সরকারের কাছে পেশ করেন । তাঁরা ভারতবাসীর ক্রমবর্ধমান বেকারি, দারিদ্র ও অর্থনৈতিক দুর্দশার জন্য ব্রিটিশ সরকারের সাম্রাজ্যবাদী শোষণ নীতিকে দায়ী করেন । এই দুর্দশা মোচন এবং ভারতবাসীর অর্থনৈতিক উন্নতির জন্য তাঁরা আধুনিক শিল্পবিকাশ, শুল্কনীতির পরিবর্তন এবং সরকারি সাহায্যে শিল্পে উন্নয়নের দাবি পেশ করেন । কৃষকদের দুর্দশা মোচনের জন্য তাঁরা অতিরিক্ত ভূমি রাজস্ব ও খাজনার হার কমানো, লবণ করের বিলুপ্তি, সরকারি সাহায্যে শিল্পোন্নয়ন ইত্যাদি নানা অর্থনৈতিক সংস্কারের দাবি জানান । কিন্তু সরকার এই দাবিতে কর্ণপাত না করে পূর্বের মতোই তাঁদের অর্থনৈতিক সংস্কার চালিয়ে যেতে থাকেন । 

প্রশাসনিক সংস্কার (Demand for Administrative Reforms) :

প্রশাসনিক সংস্কারের ক্ষেত্রেও কংগ্রেসের নেতারা সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে বেশি সংখ্যায় ভারতীয়দের নিয়োগের দাবি করেন । তাঁরা স্পষ্ট উপলবদ্ধি করেছিলেন যে, সরকারি প্রশাসনকে ভারতীয়করণ করা হলেই ভারতীয়দের স্বার্থ সুরক্ষিত হবে । এই সঙ্গে তাঁরা শাসন বিভাগ থেকে বিচার বিভাগের পৃথকীকরণ, ভারত সচিবের পদটির বিলোপসাধন, ব্রিটিশ পার্লামেন্টে ব্রিটেনে ও ভারতে প্রতিযোগিতামূলক আই.সি.এস. পরীক্ষা এবং এই পরীক্ষায় বসার বয়সের উর্ধ্বসীমা ২১ বছর রাখার দাবি জানিয়েছিলেন । সংবাদপত্র সমূহের স্বাধীনতা ও বাক স্বাধীনতার প্রতিও কংগ্রেসি নেতারা গুরুত্ব আরোপ করেছিলেন । কারণ তাঁদের ধারণা ছিল যে এসব অধিকার না থাকলে ভারতবর্ষে জাতীয় চেতনার বিকাশ এবং জাতীয় আশা আকাঙ্খা পূর্ণ হবে না ।  

ফলাফল : জাতীয় কংগ্রেসের প্রথম যুগের নেতারা একদিকে যেমন বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্রিটিশ শাসনের কুফলগুলি জনসমক্ষে তুলে ধরেন অন্যদিকে তাঁরা জনপ্রিয় কতকগুলি সাংবিধানিক, অর্থনৈতিক ও প্রশাসনিক সংস্কারের সুপারিশও সরকারের সামনে পেশ করেন । দাদাভাই নৌরজী তাঁর 'দারিদ্র ও ভারতে অনুচিত ব্রিটিশ শাসন' (Poverty and Un-British Rule in India) গ্রন্থে ব্রিটিশ শাসনকে অনুচিত শাসন বলে মন্তব্য করতে ছাড়েন নি । রমেশচন্দ্র দত্ত তাঁর ভারতের অর্থনৈতিক ইতিহাস গ্রন্থে ব্রিটিশ শাসনে ভারতের অর্থনৈতিক শোষণের চিত্র তুলে ধরেন । এসব সত্ত্বেও ব্রিটিশ সরকার জাতীয় কংগ্রেসের দাবিদাওয়া গুলি সম্পর্কে ইচ্ছাকৃতভাবে উদাসীন ছিলেন এবং তাঁরা যথারীতি ভারতবর্ষে তাঁদের ঔপনিবেশিক শাসন ও অর্থনৈতিক শোষণ সমানে চালিয়ে যেতে থাকেন ।

*****

Related Items

আজাদ হিন্দ ফৌজের ভারত অভিযান সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখ । কী কারণে শেষ পর্যন্ত আজাদ হিন্দ ফৌজ আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়ে ছিল ?

প্রশ্ন:-  আজাদ হিন্দ ফৌজের ভারত অভিযান সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখ । কী কারণে শেষ পর্যন্ত আজাদ হিন্দ ফৌজ আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়ে ছিল ?

আজাদ হিন্দ ফৌজের ভারত অভিযান—

’করেঙ্গা ইয়া মরেঙ্গে’ -কোন আন্দোলনের রণধ্বনি ছিল ? এই আন্দোলনে কৃষক ও শ্রমিকরা কীরূপ ভূমিকা নিয়েছিল ?

প্রশ্ন:-  ’করেঙ্গা ইয়া মরেঙ্গে’ -কোন আন্দোলনের রণধ্বনি ছিল ? এই আন্দোলনে কৃষক ও শ্রমিকরা কীরূপ ভূমিকা নিয়েছিল ?

১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের ভারত ছাড়ো আন্দোলনের রণধ্বনি ছিল 'করেঙ্গা ইয়া মরেঙ্গে' ।

ভারত ছাড়ো আন্দোলনের প্রসার আলোচনা কর ।

প্রশ্ন:- ভারত ছাড়ো আন্দোলনের প্রসার আলোচনা কর ।

১৯৪২ সালের ৮ই আগষ্ট ‘ভারত-ছাড়ো প্রস্তাব’ গৃহীত হলে পরদিন অর্থাৎ ৯ই আগষ্ট, ১৯৪২ এর ভোর থেকেই আন্দোলন শুরু হয়, যেমন—

১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে কোন ঘটনাবলীর পরিপ্রেক্ষিতে স্যার স্ট্যাস্ট্যাস্ট্যাফোর্ড ক্রিপ্‌স ভারতে এসেছিলেন ?

প্রশ্ন:-  ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে কোন ঘটনাবলীর পরিপ্রেক্ষিতে স্যার স্ট্যাফোর্ড ক্রিপ্‌স ভারতে এসেছিলেন ?

ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে মাতঙ্গিনী হাজরার অবদান আলোচনা কর ।

প্রশ্ন:- ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে মাতঙ্গিনী হাজরার অবদান আলোচনা কর ।

ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে মাতঙ্গিনী হাজরার অবদান বিশেষভাবে স্মরনীয় ।