উনিশ শতকের সমাজ সংস্কার আন্দোলনের প্রধান লক্ষ্য কী ছিল ? ব্রাহ্মসমাজের প্রতিষ্ঠাতা কে ? ব্রাহ্মসমাজের সমাজ সংস্কারের লক্ষ্য কী ছিল ?

Submitted by administrator on Sat, 01/08/2022 - 22:34

প্রশ্ন:- উনিশ শতকের সমাজ সংস্কার আন্দোলনের প্রধান লক্ষ্য কী ছিল ? ব্রাহ্মসমাজের প্রতিষ্ঠাতা কে ? ব্রাহ্মসমাজের সমাজ সংস্কারের লক্ষ্য কী ছিল ?

উনিশ শতকের সমাজ-সংস্কার আন্দোলনগুলির প্রধান লক্ষ্য ছিল—

(১) যুক্তিবাদী চিন্তাধারার দ্বারা ভারতীয় সমাজে প্রচলিত কুসংস্কার ও কুপ্রথার উচ্ছেদ ঘটানো,

(২) নারী কল্যাণ— নারীদের মধ্যে উচ্চশিক্ষার বিস্তার ঘটিয়ে নারীসমাজের মান উন্নয়ন ঘটানো ।

(৩) সমাজসেবা ও জনকল্যাণমূলক আদর্শ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে জাতীয়তাবাদের উন্মেষ ঘটানো ।

(৪) জাতিভেদ প্রথা ও ধর্মীয় গোঁড়ামির বিরোধিতা করা ।

(৫) ধর্মের নামে অধর্ম এবং সামাজিক অত্যাচারের প্রতিকার করা ।

(৬) নিজেদের সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি ও ভেদবুদ্ধি ত্যাগ করে আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে ওঠা এবং দেশাত্মবোধ জাগরিত করা ।

আধুনিক ভারতের রূপকার রাজা রামমোহন রায় বেদান্তের একেশ্বরবাদের ওপর ভিত্তি করে ১৮৩০ সালে ব্রাহ্মসমাজ প্রতিষ্ঠা করেন ।

ব্রাহ্মসমাজের সমাজ-সংস্কারের লক্ষ্য : ব্রাহ্মসমাজের অন্যতম লক্ষ্য ছিল সমাজ ও ধর্মসংস্কার ।

(১) সমাজসংস্কারের মধ্য দিয়ে ধর্মসংস্কার আন্দোলনকে গতিশীল করে তোলা ।

(২) হিন্দু সমাজের প্রচলিত বাল্যবিবাহ, বহুবিবাহ, কৌলিন্য প্রথা, জাতিভেদ, অস্পৃশ্যতা, গঙ্গাসাগরে সন্তান বিসর্জন প্রভৃতি কু-প্রথার অবসান ঘটানো ও সেই সঙ্গে নারীজাতির মধ্যে উচ্চশিক্ষার প্রচলন প্রভৃতি নারীকল্যাণমূলক কর্মসূচির মাধ্যমে ভারতীয় নারীদের সামাজিক অবস্থানের সামগ্রিক উন্নতিসাধন ।

(৩) ব্রাহ্মসমাজের অপর সমাজ-সংস্কার মূলক বিষয় ছিল সমাজসেবা ও জনসেবামূলক আদর্শের প্রতিষ্ঠা, দুর্ভিক্ষ ও মহামারির সময় মানুষকে সর্বতোভাবে সাহায্য করা । এক্ষেত্রে ব্রাহ্ম আন্দোলনের অন্যতম নেতা কেশবচন্দ্র সেন একদল তরুণকে নিয়ে ত্রাণ কমিটি গঠন করার যে দৃষ্টান্ত রেখেছিলেন, তা পরবর্তীকালে রাককৃষ্ণ মিশন এবং ভারত সেবাশ্রম সংঘের প্রধান আদর্শ হয়ে ওঠে ।

(৪) সমাজসেবা ও জনসেবামূলক কাজের মাধ্যমে জাতীয়তাবাদী আদর্শের প্রতিষ্ঠা ।

(৫) উদারনৈতিক ধর্মীয় আদর্শ প্রচারের মাধ্যমে জাতীয় সংহতির পথ রচনা ।

*****

Comments

Related Items

আইন অমান্য আন্দোলন পর্বে শ্রমিক আন্দোলন

আইন অমান্য আন্দোলন পর্বে শ্রমিক আন্দোলন (The Civil Disobedience Movement and the Working Class) :-

১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে আইন অমান্য আন্দোলন শুরু হলে ভারতের বিভিন্ন প্রদেশের শ্রমিকরা এই আন্দোলনে অংশ গ্রহণ করে । এই সময় বাংলায় শ্রমিক আন্দোলন যথেষ্ট শ

ওয়ার্কার্স অ্যান্ড পেজেন্টস পার্টি

ওয়ার্কার্স অ্যান্ড পেজেন্টস পার্টি (Workers and Peasants Party) :-

কুতুবুদ্দিন আহমদ, কাজী নজরুল ইসলাম, অধ্যাপক হেমন্ত সরকার, সামসুদ্দিন হোসেন প্রমুখ ব্যক্তির উদ্যোগে ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দের ১লা নভেম্বর বাংলায় 'লেবার স্বরাজ পার্টি অব দা ইন্ডিয়ান

অহিংস অসহযোগ আন্দোলন পর্বে শ্রমিক আন্দোলন

অহিংস অসহযোগ আন্দোলন পর্বে শ্রমিক আন্দোলন (Non Co-operation Movement and the Working Class):- 

অহিংস অসহযোগ আন্দোলনের সময় সারা ভারতে শ্রমিকরা আন্দোলনে শামিল হয় । এই সময় বাংলায় শ্রমিক আন্দোলন অত্যন্ত শক্তিশালী ওঠে । শ্রমিকদের কাজের সময় কমানো, ব

বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলন পর্বে শ্রমিক আন্দোলন

বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলন পর্বে শ্রমিক আন্দোলন (Anti-Partition Movement and the Working Class):-

ব্রিটিশ শাসনের প্রথমদিকে পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ ব্রিটিশ শাসনের বিরোধিতা না করলেও ভারতের নিম্নবর্গের মানুষ বিশেষত শ্রমিক

বিশ শতকের ভারতে শ্রমিক আন্দোলনের বৈশিষ্ট্য

বিশ শতকের ভারতে শ্রমিক আন্দোলনের বৈশিষ্ট্য (Working Class Movement in the Twentieth Century):-

দীর্ঘ চার বছর ধরে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ধ্বংসলীলা চলার পর ১৯১৮ খ্রিস্টাব্দের ১১ই নভেম্বর জার্মানি আত্মসমর্পণ করলে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের অবসান  ঘটে । বিশ শ