আলিপুর বোমার মামলা (Alipur Conspiracy Case)

Submitted by avimanyu pramanik on Mon, 04/23/2012 - 10:52

আলিপুর বোমার মামলা (Alipur Conspiracy Case) :

অরবিন্দ ঘোষ তাঁর রাজনৈতিক কার্যকলাপ দু’ভাবে পরিচালিত করেন । একদিকে তিনি কংগ্রেসে নরমপন্থী নেতৃত্বকে ক্ষমতাচ্যুত করতে চেয়েছিলেন এবং অন্যদিকে গোপন বৈপ্লবিক কার্য পরিচালনার মাধ্যমে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে আঘাত হানতে চেয়ে ছিলেন । বৈপ্লবিক কার্য পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় বোমা ও অন্যান্য মারাত্মক বিস্ফোরক পদার্থ তৈরির জন্য ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দে অরবিন্দ ঘোষের কনিষ্ঠ ভ্রাতা বারীন্দ্রকুমার ঘোষ তরুণ বাঙালি বিপ্লবীদের নিয়ে কলকাতার মানিকতলা অঞ্চলে ৩২ নং মুরারিপুকুর রোডে তাঁদের পৈত্রিক বাগান বাড়িতে বোমা তৈরির কারখান স্থাপন করেন । মজঃফরপুরের ঘটনার পরেই পুলিশ মুরারিপুকুর রোডের বাগান বাড়িতে তল্লাসী চালিয়ে প্রচুর বোমা তৈরির মালমসলা, ডিনামাইট ও বোমা উদ্ধার করেন । এসবের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থাকার অভিযোগে অরবিন্দ ঘোষ, বারীন্দ্রকুমার ঘোষ, অবিনাশ ভট্টাচার্য, উপেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, উল্লাসকর দত্ত সমেত বিপ্লবীদের গ্রেপ্তার করা হয় । ১৯০৮ খ্রিস্টাব্দে পুলিশ ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে বিপ্লবী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকা ও রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ এনে ঐতিহাসিক আলিপুর বোমার মামলায় তাঁদের বিচার শুরু হয় । এই মামলা প্রায় এক বছর ধরে চলে । মামলায় অভিযুক্তরা সকলে দোষী সাব্যস্ত হয়ে দীর্ঘমেয়াদি কারাদন্ড অথবা নির্বাসন দন্ডে দন্ডিত হন । এই মামলায় আসামি পক্ষের উকিল ছিলেন দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস । আত্মপক্ষ সমর্থন করে তিনি দৃপ্তকন্ঠে ঘোষণা করেন যে, স্বাধীনতার আদর্শ প্রচার করা কোনো অপরাধ নয় । মূল অভিযুক্ত অরবিন্দ ঘোষ তরুণ ব্যারিস্টার চিত্তরঞ্জন দাসের চমৎকার সওয়ালে সসম্মানে মুক্তি পান । আলিপুর বোমার মামলা থেকে মুক্ত হয়ে অরবিন্দ ঘোষ রাজনীতির সঙ্গে সম্পর্ক ছেদ করে দক্ষিণ ভারতের পন্ডিচেরীতে আধ্যাত্মিক সাধনায় আত্মনিয়োগ করেন । আধ্যাত্ম চেতনার পরিপূর্ণ বিকাশ ঘটিয়ে দিব্য জীবনের সন্ধান লাভ করা তাঁর প্রধান লক্ষ ছিল ।

আলিপুর বোমার মামলা চলাকালীন আদালত প্রাঙ্গনে সরকারি আইনজীবী আশুতোষ বিশ্বাস ও গোয়েন্দা পুলিশ ইন্সপেক্টর সামসুল আলম খুন হন । বিশ্বাস ঘাতক রাজসাক্ষী নরেন গোঁসাইকে জেলের ভিতরেই কানাইলাল দত্তসত্যেন বসু গুলি করে হত্যা করেন ও উভয়েই প্রাণদন্ডে দন্ডিত হন । এতসব সরকারি দমননীতি সত্ত্বেও বিপ্লবী কার্যকলাপ থেমে ছিল না ।

*****

 

 

Related Items

ভারতের রাষ্ট্রপতি (President of India)

গণতান্ত্রিক ক্ষেত্রে ইংল্যান্ডের সঙ্গে ভারতবর্ষের মিল থাকলেও ভারতের রাষ্ট্রপ্রধান অর্থাৎ রাষ্ট্রপতির পদটি বংশানুক্রমিক নয় । এ ক্ষেত্রে প্রজাতান্ত্রিক দেশ চিন বা সোভিয়েত রাশিয়ার সঙ্গে অনেকাংশে মিল আছে । ওই সব দেশের মতো ভারতবর্ষের রাষ্ট্রপ্রধানও প্রজাপুঞ্জের মধ্যে থেকে ...

ভারতীয় সংবিধানের মূল বৈশিষ্ট্য (Salient features of Constitution of Independent India)

১৯৫০ খ্রিস্টাব্দের ২৬শে জানুয়ারি ভারতের সংবিধান বলবৎ হওয়ার দিন থেকে এই সংবিধান অনুযায়ী ভারত রাষ্ট্রের শাসনকার্য পরিচালিত হয়ে আসছে । পৃথিবীর অগ্রণী দেশসমূহের সংবিধানের ভালো দিকগুলি নিতে গিয়ে ভারতের সংবিধান নানা বৈশিষ্ট্যে মন্ডিত হয়েছে । ...

গণ পরিষদ গঠন (Constituent Assembly)

১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ১৫ ই আগস্ট ভারতবর্ষ ব্রিটিশ শাসন থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীন রাষ্ট্ররূপে আত্মপ্রকাশ করে । শাসনতন্ত্র অনুসারে দেশ পরিচালিত হয় আর এই শাসনতন্ত্রই হল সংবিধান । ক্ষমতা হস্তান্তরের সময় লর্ড মাউন্টব্যাটেন ভারত ও পাকিস্তানের সংবিধান রচনার জন্য দুটি পৃথক গণপরিষদ ...

ভারতের স্বাধীনতা আইন ও ক্ষমতা হস্তান্তর (Indian Independence Act, 1947)

লর্ড মাউন্টব্যাটেন তাঁর প্রস্তাবটি অনুমোদনের জন্য ব্রিটিশ মন্ত্রিসভায় পাঠান । ব্রিটিশ মন্ত্রিসভা মাউন্টব্যাটেনের প্রস্তাবটি অনুমোদনের পর ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ক্লিমেন্ট এটলি সেটি ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ৩ জুলাই ব্রিটিশ পার্লামেন্টে পেশ করেন । পরের দিন ৪ঠা জুলাই ভারতের স্বাধীনতা বিলটি ...

মাউন্টব্যাটেন পরিকল্পনা (The Mountbatten Plan)

দেশব্যাপী চরম উত্তেজনার মধ্যে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ক্লিমেন্ট এটলি ঘোষণা করেন যে, ব্রিটিশ সরকার ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দের জুন মাসের মধ্যে ভারতীয়দের হাতে ক্ষমতা প্রত্যার্পণ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন । এ বিষয়ে প্রস্তুতি সম্পূর্ণ করার জন্য লর্ড মাউন্টব্যাটেনকে দায়িত্ব দেওয়া হয় । ...