উদ্ভিদের সংবহন

Submitted by arpita pramanik on Sat, 04/20/2013 - 20:55

উদ্ভিদের সংবহন (Circulation in plants) :

কোষ রসের উৎস্রোত:

যে প্রক্রিয়ায় মূলরোম দ্বারা শোষিত জল ও খনিজ লবণ জাইলেম বাহিকার মাধ্যমে অভিকর্ষের বিরুদ্ধে উদ্ভিদের ঊর্ধ্বমুখে বাহিত হয়ে পাতায় পৌঁছায় তাকে কোষ রসের উৎস্রোত   বলে ।

কোষ রসের উৎস্রোতের বিভিন্ন মতবাদ :-

কোষ রসের উৎস্রোত সম্পর্কে বিভিন্ন বিজ্ঞানী বিভিন্ন মতবাদ দিয়েছে । নিম্নে সেই মতবাদ গুলি আলোচনা করা হল ।

 

১৷ মূলজ চাপ মতবাদ

বিজ্ঞানী স্টোফেন ও হেলস (1727) এই মতবাদ প্রণয়ন করেন যে, উদ্ভিদের মূলরোমের মাধ্যমে কোষ রস কর্টেক্স কোষ সমূহে প্রবেশ করে, এর ফলে এক প্রকার অভিস্রাবন চাপের সৃষ্টি হয় । এই চাপকে মূলজ চাপ বলে ।

সমালোচনা :-এই মূলজ চাপের পরিমাণ দুই বায়ুমণ্ডলীয় চাপের বেশী নয় বলে সুউচ্চ বৃক্ষের ক্ষেত্রে এই মতবাদটি প্রযোজ্য নয় ।

 

২৷ অভিপ্রান মতবাদ

বিজ্ঞানী J.C Bose (1923) এই মতবাদ প্রণয়ন করেন। তার মতে কর্টেক্স কোষ সমূহের পর্যায়ক্রমে সংকোচন ও প্রসারণ ঘটে। এই সংকোচন ও প্রসারনের ফলে রসের উৎস্রোত ঘটে ।

সমালোচনা :- পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে যে জীবিত কোষ গুলিকে মেরে ফেললেও কোষ রসের উৎস্রোত ঘটতে পারে ।

 

৩৷ বায়ুমণ্ডলীয় চাপ মতবাদ

1809 সালে এই মতবাদটি প্রণয়ন করা হয়। এর মতে বায়ুমণ্ডলীয় চাপের জন্য রসের উৎস্রোত ঘটে। এক্ষেত্রে জাইলেমের ট্রাকীয়া গুলি কৈশিক নলের মত অবস্থান করে, ফলে বায়ুমণ্ডলীয় চাপে ট্রাকিয়া গুলির মাধ্যমে জল উপরে উঠতে থাকে ।

সমালোচনা :- সাধারণ বায়ুমণ্ডলীয় চাপের ফলে জলস্তম্ভ সাত মিটারের বেশি উপরে উঠতে পারেনা। তাছাড়া বায়ুমণ্ডলীয় চাপ কার্যকর করার জন্য যে মুক্ততল প্রয়োজন তা মূলের ক্ষেত্রে অনুপুস্তিত ।

 

৪৷ বাষ্পমোচন জনিত টান ও জলের তীব্র সমসংযোগ মতবাদ

1894 খ্রিস্টাব্দ বিজ্ঞানী ডিক্সন ও জলি এই মতবাদ প্রণয়ন করেন। এই মতবাদটি মূলত তিনটি বৈশিষ্ট্যের উপর নির্ভরশীল

(ক) জলের তীব্র সমসংযোগ ও অসমসংযোগ বল :- তাদের মতে মূল থেকে পাতা পর্যন্ত জলের অনু গুলি নিজেদের মধ্যে সমসংযোগ ও জাইলেম বাহিকা গাত্রের অনুর সাথে জলের অনুর অসমসংযোগ বলে আবদ্ধ থাকে ।

(খ) জলস্তম্ভের নিরবিছিন্নতা:- জলের তীব্র সমসংযোগ ও অসমসংযোগ বলের ফলে জাইলেম বাহিকার মধ্যে নিরবিছিন্ন জল স্তম্ভ তৈরি হয় ।

(গ) বাষ্পমোচন জনিত টান:- পাতার মধ্যে দিয়ে ক্রমাগত বাষ্পমোচন প্রক্রিয়া চলতে থাকায় পাতার জাইলেম বাহিকায় অবস্থিত জলস্তম্ভের উপরিতল থেকে জল বাস্পাকারে নির্গত হতে থাকে বাষ্পমোচনের ফলে জাইলেম বাহিকায় একটি টানের সৃষ্টি হয় একে বাষ্পমোচন টান বলে। এই বাষ্পমোচন টানের ফলে জাইলেম বাহিকার মধ্যে দিয়ে কোষ রসের উৎস্রোত ঘটে ।

বর্তমানে এই মতবাদটি সর্বজন স্বীকৃত

 

উদ্ভিদের সংবহনে ব্যাপনের ভূমিকা

১৷ মূলরোমের সাহায্যে জল ও খনিজ লবণ শোষণ এবং কোষ থেকে কোষান্তরে খনিজ লবণ সংবহনে ব্যপনের ভূমিকা আছে ।

২৷ সালোকসংশ্লেষের সময় পরিবেশ থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ ও মেসোফিল কলার পরিবহণে ব্যপনের ভূমিকা আছে ।

৩৷ পাতায় উৎপন্ন খাদ্য রস ব্যপন প্রক্রিয়ায় ফ্লোয়েম কলায় প্রবেশ করে এবং ফ্লোয়েম কলা থেকে ব্যপন প্রক্রিয়ায় উদ্ভিদ দেহের বিভিন্ন কোষে ছড়িয়ে পড়ে ।

৪৷ শ্বসনের জন্য পরিবেশ থেকে শোষিত অক্সিজেন ব্যপন প্রক্রিয়ায় উদ্ভিদের বিভিন্ন সজীব কোষে এসে পৌঁছায় ।

 

উদ্ভিদের সংবহনে অভিস্রাবনের ভূমিকা

১৷ অন্ত অভিস্রাবন প্রক্রিয়ায় জল মূলরোমে প্রবেশ করে ।

২৷ কোষান্তর অভিস্রাবন প্রক্রিয়ায় শোষিত জল কর্টেক্স কোষ গুলির মাধ্যমে জল জাইলেম বাহিকায় পৌঁছায় ।

৩৷ জাইলেম বাহিকা থেকে জল অভিস্রাবন প্রক্রিয়ায় পাতার মেসোফিল কলায় ছড়িয়ে পড়ে ।

 

উদ্ভিদের নিম্নমুখী পরিবহণ অর্থাৎ পাতায় প্রস্তুত খাদ্য সংবহন

নিম্নমুখী পরিবহণ :-পাতায় উৎপন্ন তরল খাদ্য বস্তু ফ্লোয়েম কলার মাধ্যমে নীচের দিকে প্রবাহিত হয় । ফ্লোয়েম কলার অন্তর্গত সীভনলের নলাকার কোষ গুলি একটির উপর একটি খাড়া ভাবে অবস্থান করে একটি অবিছিন্ন অঙ্গ গঠন করে । সীভনলের দুটি কোষের মধ্যবর্তী অনুপ্রস্থ প্রাচীর চালুনির মত ছিদ্রবহুল হওয়ায় ঐ ছিদ্রের মাধ্যমে তরল খাদ্য বস্তু সহজেই বাহিত হতে পারে । সীভনল থেকে খাদ্য রস ব্যপন প্রক্রিয়ায় উদ্ভিদ দেহের বিভিন্ন সঞ্চয় কোষে ছড়িয়ে পড়ে ।

*****

Related Items

সালোকসংশ্লেষ (Photosynthesis)

যে শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ায় ক্লোরোফিলযুক্ত কোষে আলোর উপস্থিতিতে পরিবেশ থেকে শোষিত জল ও গৃহিত কার্বন ডাই-অক্সাইডের আলোক রাসায়নিক ও জৈব রাসায়নিক বিক্রিয়ার ফলে সরল শর্করা (গ্লুকোজ) সংশ্লেষিত হয় ও উৎপন্ন খাদ্যে সৌরশক্তি স্থিতিশক্তি রূপে আবদ্ধ হয় এবং উপজাত বস্তু ..

মানুষের গমন পদ্ধতি

গমন অঙ্গের নাম, গমন পদ্ধতির নাম, মানুষের গমনে সহায়ক অস্থি সমূহ , মেরুদণ্ড, শ্রোণীচক্র, পায়ের অস্থি , ফ্লেক্সর পেশী, এক্সটেনসর পেশী, অ্যাডাকটর পেশী , মানুষের গমনে সহায়ক অস্থি সন্ধি সমূহ , মানুষের গমনে সহায়ক পেশী , দ্বিপদ গমন ক্রিয়া । ...

প্রাণীদের গমন

প্রাণীদের গমন , প্রাণীদের গমন অঙ্গ সম্পর্কে সাধারণ ধারণা - গমনের সময় প্রাণীরা কোনো না কোনো অঙ্গ বা অঙ্গাণু ব্যবহার করে। গমনে সাহায্যকারী অঙ্গকে গমন অঙ্গ বলে। মানুষের হাত ও পা , তিমির প্যাডেল , ব্যাঙের পা , পাখির ডানা , হাঁসের লিপ্ত পদ , শামুকের মাংসল পদ ...

মাছের গমন (Locomotion of Fish)

গমন অঙ্গের নাম, গমন পদ্ধতির নাম, গমন পদ্ধতি - মাছের সাতটি পাখনা আছে। একটি পৃষ্ঠপাখনা, একটি পায়ুপাখনা, একটি পুচ্ছপাখনা এবং একজোড়া করে বক্ষ ও শ্রোণী পাখনা। বক্ষপাখনার সাহায্যে মাছ জলের গভীরে যেতে পারে এবং শ্রোণীপাখনার সাহায্যে ...

মানব দেহে খনিজ লবনের প্রয়োজনীয়তা

খনিজ লবনের প্রয়োজনীয়তা জীব দেহের স্বাভাবিক পুষ্টির জন্য খনিজ লবনের প্রয়োজনীয়তা আছে। জীব দেহের স্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য খনিজ লবনের প্রয়োজন। রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা অর্জনের জন্য খনিজ লবনের গ্রহনের প্রয়োজন আছ, সাতটি খনিজ লবনের নাম ও তাদের উৎস ।