সালোকসংশ্লেষ (Photosynthesis)

Submitted by arpita pramanik on Wed, 08/26/2020 - 10:14

সালোকসংশ্লেষ (Photosynthesis) :

১৮৯৮ খৃষ্টাব্দে বিজ্ঞানী বার্নেস (Bernes) সালোকসংশ্লেষ বা ফটোসিন্থেসিস শব্দটি প্রচলন করেন । গ্রিক শব্দ ফোটোস (Photos) শব্দের অর্থ আলোক এবং সিন্থেসিস (Synthesis) শব্দের অর্থ সংশ্লেষ । আলোকের উপস্থিতিতে সংশ্লেষ ঘটে বলেই একে সালোকসংশ্লেষ নামে অভিহিত করা হয় ।

সবুজ উদ্ভিদেরা পরিবেশ থেকে কাঁচামাল - কার্বন ডাই-অক্সাইড এবং জল সংগ্রহ করে পাতার মেসোফিল কলায় নিয়ে আসে । সূর্যালোকের উপস্থিতিতে এবং ক্লোরোফিলের সক্রিয়তায় জল ও কার্বন ডাই-অক্সাইডের রাসায়নিক বিক্রিয়ায় উৎপন্ন হয় শর্করা জাতীয় খাদ্য - গ্লুকোজ ।

সালোকসংশ্লেষর সংজ্ঞা (Definition of Photosynthesis)

যে শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ায় ক্লোরোফিলযুক্ত কোষে আলোর উপস্থিতিতে পরিবেশ থেকে শোষিত জল ও গৃহিত কার্বন ডাই-অক্সাইডের আলোক রাসায়নিক ও জৈব রাসায়নিক বিক্রিয়ার ফলে সরল শর্করা (গ্লুকোজ) সংশ্লেষিত হয় ও উৎপন্ন খাদ্যে সৌরশক্তি স্থিতিশক্তি রূপে আবদ্ধ হয় এবং উপজাত বস্তু হিসেবে পরিবেশ থেকে গৃহিত কার্বন ডাই-অক্সাইডের সম-অণু অক্সিজেন ও জল উৎপন্ন হয়, তাকে সালোকসংশ্লেষ বা (Photosynthesis) বলে ।

 

অঙ্গার আত্তীকরণ:-

যে প্রক্রিয়ায় পরিবেশ থেকে গৃহিত কার্বন ডাই-অক্সাইডের কার্বন কোষস্থ জৈব যৌগে আবদ্ধ হয় তাকে অঙ্গার আত্তীকরণ বা কার্বন অ্যাসিমিলেশন বলে ।

সালোকসংশ্লেষকে অঙ্গার আত্তীকরণ বা কার্বন অ্যাসিমিলেশন বলে কেন ? (Why is Photosynthesis called carbon assimilation ?)

সালোকসংশ্লেষর অন্ধকার দশায় ক্লোরোপ্লাসটের স্ট্রোমায় পরিবেশ থেকে গৃহিত কার্বন ডাই-অক্সাইড RuBP -র সঙ্গে বিক্রিয়া করে ফসফোগ্লিসারিক অ্যাসিড (PGA) উৎপন্ন করে । পরে তা থেকে গ্লুকোজ তৈরি হয় । এভাবে পরিবেশের কার্বন ডাই-অক্সাইডের কার্বন কোষস্থ জৈব যৌগ গ্লুকোজে অঙ্গীভূত হওয়ায় সালোকসংশ্লেষকে অঙ্গার আত্তীকরণ বা কার্বন অ্যাসিমিলেশন বলে ।

 

সালোকসংশ্লেষ ও  অঙ্গার আত্তীকরণের পার্থক্য :

সালোকসংশ্লেষ অঙ্গার আত্তীকরণ
১. সালোকসংশ্লেষ আলোক-নির্ভর প্রক্রিয়া  । ১. অঙ্গার আত্তীকরণ আলোক-নির্ভর প্রক্রিয়া  ।
২. প্রক্রিয়াটি কেবল ক্লোরোফিলযুক্ত কোষে ঘটে  ২. প্রক্রিয়াটি যে কোন সজীব কোষে ঘটতে পারে 
৩. এই প্রক্রিয়ায় শক্তি উৎপন্ন হয়  । ৩. এই প্রক্রিয়ায় শক্তি উৎপন্ন হয় না ।
৪. অক্সিজেন নির্গত হয় । ৪. অক্সিজেন নির্গত হয় না ।
৫. এই প্রক্রিয়ায় সৌরশক্তি ব্যবহৃত হয়ে গ্লুকোজ উৎপন্ন হয় ৫. এই প্রক্রিয়ায় সৌরশক্তি ব্যবহৃত নাও হতে পারে । তবে জৈব অ্যাসিড সংশ্লেষিত হয়  ।

 

সালোকসংশ্লেষ এক রকমের  উপচিতি বিপাক (Photosynthesis is an anabolic metabolism)

যে গঠনমূলক বিপাক ক্রিয়ায় সরল অজৈব যৌগ থেক জটিল যৌগ সৃষ্টি হয়ে কোষের শুষ্ক ওজন বৃদ্ধি পায় ও শক্তির স্থিতি ঘটে তাকে উপচিতি বিপাক বলে । যেমন সালোকসংশ্লেষ । সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ায় উদ্ভিদদেহে সরল অজৈব যৌগ জল (H2O) ও কার্বন ডাই-অক্সাইড (CO2) -এর  রাসায়নিক বিক্রিয়ায় শর্করা জাতীয় জটিল জৈব (C6H12O6) খাদ্য উৎপন্ন হয়, ফলে প্রোটোপ্লাজমের বৃদ্ধি অর্থাৎ শুষ্ক ওজন (dry weight) বৃদ্দি পায় ও শক্তির স্থিতি ঘটে । তাই সালোকসংশ্লেষকে উপচিতিমূলক বিপাক ক্রিয়া বলে ।

সালোকসংশ্লেষের স্থান (Site of Photosynthesis) ক্লোরোফিল সমন্বিত সকল সজীব কোষে সালোকসংশ্লেষ সংঘটিত হয় । তবে ক্লোরোফিলযুক্ত সবুজ পাতাই উদ্ভিদের প্রধান সালোকসংশ্লেষকারী অঙ্গ । পাতায় অবস্থিত মেসোফিল কলার কোষগুলিতে ক্লোরোফিলের আধিক্য থাকায় সালোকসংশ্লেষর মাত্রা সর্বাধিক পরিলক্ষিত হয় । তবে পাতা ছাড়াও যে কোনো সজীব কোষে অর্থাৎ সবুজ কান্ডে (ফণীমনসা, লাউ, কুমড়ো, পুঁই ইত্যাদি), ফুলের সবুজ বৃতিতে, অর্কিড মূলের সবুজ অংশে, গুলঞ্চের আত্মীকরণ মূলে, সবুজ শৈবাল (নস্টক, ভলভক্স, ইডোগোনিয়াম, কারা ইত্যাদি) এমনকি এককোশী প্রাণী ইউগ্লিনা (Euglena) ক্রাইস্যামিবা (Chrysamoeba) প্রভৃতির দেহেও সালোকসংশ্লেষ ঘটে । রোডোস্পাইরিলাম (Rhodospirillum) , রোডোসিউডোমোনাস (Rhodopseudomonas) নামক সবুজ ব্যাকটেরিয়াও সালোকসংশ্লেষ ঘটাতে সক্ষম ।

 

উদ্ভিদের সালোকসংশ্লেষের স্থান:-

১. মূল - গুলঞ্চ, অর্কিড 

২. কান্ড - লাউ ফনীমনসা 

৩. পাতা - সবুজ পাতা

৪. বৃতি - ফুলের সবুজ বৃতি

৫. দল - আতা, কাঁঠালিচাঁপার সবুজ দল  

৬. ত্বক - কাঁচা ফলের ত্বক ।

* সালোকসংশ্লেষের প্রধান অঙ্গ - পাতা

* সালোকসংশ্লেষের প্রধান স্থান - মেসোফিল কলা

* সালোকসংশ্লেষকারী অঙ্গাণু - ক্লোরোপ্লাস্ট

* সালোকসংশ্লেষের আলোক বিক্রিয়ার ঘটনাস্থল - ক্লোরোপ্লাস্টের গ্রানা ।

* সালোকসংশ্লেষের অন্ধকার বিক্রিয়ার ঘটনাস্থল - ক্লোরোপ্লাস্টের স্ট্রোমা ।

* সালোকসংশ্লেষকারী রঞ্জক - ক্লোরোফিল ।

* সালোকসংশ্লেষে সক্ষম প্রাণী - ইউগ্লিনা, ক্রাইস্যামিবা ।

* সালোকসংশ্লেষে অক্ষম উদ্ভিদ  - ছত্রাক, স্বর্ণলতা ।

* সালোকসংশ্লেষে সক্ষম ব্যাকটেরিয়া - রোডোস্পাইরিলাম , রোডোসিউডোমোনাস ।

সালোকসংশ্লেষকে জারণ-বিজারণ প্রক্রিয়া বলে -

কারণ সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ায় জল জারিত হয়ে অক্সিজেন (O2)  উৎপন্ন করে এবং কার্বন ডাই-অক্সাইড বিজারিত হয়ে কার্বোহাইড্রেট উৎপন্ন করে ।

 

মেসোফিল কলা : (Mesophyll tissue)

পাতার উর্ধ্বত্বক ও নিম্নত্বকের মধ্যে অবস্থিত ক্লোরোফিলযুক্ত আদি কলাস্থরকে মেসোফিল কলা বলে । পাতার মেসোফিল কলা সালোকসংশ্লেষের প্রধান ঘটনাস্থল । বিষমপৃষ্ঠ পাতার মেসোফিল কলা প্যালিসেড প্যারেনকাইমা (palisade parenchyma) ও স্পঞ্জি প্যারেনকাইমা (spongy parenchyma) দ্বারা গঠিত । কিন্তু সমাঙ্কপৃষ্ঠ পাতার মেসোফিল কলায় কেবলমাত্র স্পঞ্জি প্যারেনকাইমা থাকে । দ্বিবীজপত্রী উদ্ভিদের ক্ষেত্রে মেসোফিল কলা উপরের দিকে প্যালিসেড প্যারেনকাইমা (palisade parenchyma) এবং নীচের দিকে স্পঞ্জি প্যারেনকাইমা (spongy parenchyma) নামক দুটি কলাস্থরে বিভেদিত  । কিন্তু সমাঙ্কপৃষ্ঠ পাতার মেসোফিল কলায় কেবলমাত্র স্পঞ্জি প্যারেনকাইমা থাকে । একমাত্র ক্লোরোফিলই সূর্যালোক শোষণে সক্ষম

উচ্চশ্রেণির উদ্ভিদে সালোকসংশ্লেষের জন্য দায়ী কোষ গুলির নাম:-

উচ্চশ্রেণির উদ্ভিদের পাতার মেসোফিল কলার প্যালিসেড প্যারেনকাইমা ও স্পঞ্জি প্যারেনকাইমা কোষগুলি সালোকসংশ্লেষের জন্য দায়ী ।

সালোকসংশ্লেষের রাসায়নিক সমীকরণ এবং তার ব্যাখ্যা  (Chemical Reaction of Photosynthesis and its Explanation)

[tex]6C{O_2}+12{H_2}O \mathop \longrightarrow \limits_{Chlorophyll}^{Sunlight}{C_6}{H_{12}}{O_6} + 6{O_2} \uparrow  + 6{H_2}O [/tex]

উপরোক্ত সমীকরণ থেকে নিম্নলিখিত তথ্যগুলি উল্লেখ করা যেতে পারে -

১. ক্লোরোফিল কর্তৃক আলোক শোষণ ।

২. জলের অণুর বিশ্লেষণ ও অক্সিজেন উৎপাদন ।

৩. গৃহিত কার্বন ডাই-অক্সাইডের সমপরিমাণ অক্সিজেন নির্গত হওয়া (উভয় ক্ষেত্রে ৬ অণু) ।

৪. ছয় অণু কার্বন ডাই-অক্সাইড এবং বারো অণু জলের সমন্বয়ে উৎপন্ন হয় এক অণু গ্লুকোজ, ছয় অণু জল এবং ছয় অণু অক্সিজেন ।

৫. প্রতি গ্রাম অণু গ্লুকোজ (C6H12O6) প্রায় 686 কিলোক্যালোরি (K.Cal) সৌরশক্তি স্থৈতিক শক্তিরূপে আবদ্ধ থাকে ।

৬. সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ার উৎপন্ন অক্সিজেনের উৎস হল জল ।

৭. কার্বন ডাই-অক্সাইড বন্ধনের জন্য বিজারক পদার্থের উৎপাদন ।

৮. সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ায় উৎপন্ন জল পুনরায় দেহস্থ কোষগুলির মধ্যে শোষিত হয়, যা উদ্ভিদ কর্তৃক বিভিন্ন বিপাকীয় কার্যে ব্যবহৃত হয় ।     

উদ্ভিদের মূলে ও মৃদগত কান্ডে সালোকসংশ্লেষ হয় না :-

কারণ উদ্ভিদের মূলে ক্লোরোফিল থাকে না এবং মূল সাধারনত মাটির নীচে থাকায় সূর্যালোক পায় না, তাই উদ্ভিদের মূলে ও মৃদগত কান্ডে সালোকসংশ্লেষ হয় না ।

রাত্রে সালোকসংশ্লেষ হয় না :-

রাত্রে সূর্যালোক থাকে না এবং গাছের পত্ররন্ধ্র বন্ধ থাকায় CO2 ( কার্বন ডাই-অক্সাইড) প্রবেশ করতে পারে না তাই রাত্রে সালোকসংশ্লেষ হয় না । সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ার জন্য যে শক্তির প্রয়োজন তার প্রধান উৎস সূর্যালোক । সূর্যালোকের ফোটন কণা ক্লোরফিলকে সক্রিয় করে, জলের আলোক বিশ্লেষণ ঘটায় ও ফটোফসফোরাইলেশন -এ সহায়তা করে । সুতরাং সূর্যালোকের অভাবে সালোকসংশ্লেষ সম্ভব নয় ।  তবে কৃত্রিম পর্যাপ্ত আলোতেও সালোকসংশ্লেষ সম্ভব ।

রাত্রে গাছের নীচে থাকা অস্বাস্থ্যকর:-

রাত্রে সূর্যালোকের অনুপস্থিতিতে গাছ সালোকসংশ্লেষ চালায় না বলে গাছ থেকে অক্সিজেন (O2) নির্গত হয় না । অন্যদিকে রাত্রে গাছের শ্বসনক্রিয়ার হার বৃদ্ধি পাওয়ায় গাছের নীচে কার্বন ডাই-অক্সাইড (CO2) -এর পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়ে বায়ু দুষিত হয় ও শ্বাসক্রিয়ায় ব্যাঘাত ঘটে । তাই রাত্রে গাছের নীচে থাকা অস্বাস্থ্যকর ।

সমস্ত সবুজ উদ্ভিদ ধ্বংস হলে প্রাণীজগতের অস্তিত্ব বিপন্ন হবে

সবুজ উদ্ভিদ সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ায় খাদ্য উৎপন্ন করে এবং উপজাত বস্তুরূপে অক্সিজেন নির্গত করে । এছাড়া এই সময় গাছ পরিবেশ থেকে দুষিত কার্বন ডাই-অক্সাইড (CO2) গ্যাস শোষণ করে বায়ুকে দুষণমুক্ত করে  । সুতরাং সবুজ উদ্ভিদ ধ্বংস হলে খাদ্য ও অক্সিজেনের অভাবে প্রাণীজগতের অস্তিত্ব বিপন্ন হবে ।

ভেলামেন ও এর কাজ :-

পরাশ্রয়ী উদ্ভিদের (অর্কিড) বায়বীয় মূলের মৃতকলার আবরণকে ভেলামেন বলে । এর সাহায্যে পরাশ্রয়ী উদ্ভিদেরা বায়ুমণ্ডল থেকে জলীয় বাষ্প শোষণ করে ।

ক্লোরোসিস:-

মাটিতে ম্যাগনেসিয়াম (Mg) ও নাইট্রোজেনের অভাব ঘটলে উদ্ভিদের ক্লোরোফিল সংশেষণ ব্যাহত হয় । যার ফলে গাছে সবুজ পাতা হলুদ হয়ে যায় । একে ক্লোরোসিস বলে । 

ফটোলাইসিস বা জলের আয়নীকরণ:-

সালোকসংশ্লেষের আলোক দশায় সবুজ পাতার ক্লোরোফিল সূর্যালোকের ফোটন কণা শোষণ করে সক্রিয় হয় । এই সক্রিয় ক্লোরোফিল জলকে (H2O) ভেঙ্গে হাইড্রোজেন আয়ন (H+) ও হাইড্রক্সিল আয়নে (OH-) পরিণত করে ।  সূর্যালোকের প্রভাবে সক্রিয় ক্লোরোফিল দ্বারা জলের (H2O)  হাইড্রোজেন আয়ন (H+) ও হাইড্রক্সিল আয়নে (OH-) বিশ্লিষ্ট হওয়ার পদ্ধতিকে ফটোলাইসিস বলে ।

 

সালোকসংশ্লেষের প্রয়োজনীয় উপাদান (Components of Photosynthesis) 

সালোকসংশ্লেষের প্রয়োজনীয় উপাদানগুলি দুই প্রকার - বাহ্যিক উপাদান ও অভ্যন্তরীণ উপাদান । বাহ্যিক উপাদান গুলি হল  (১) কার্বন ডাই-অক্সাইড (CO2) , (২) সূর্যালোক (Sunlight) , (৩) জল (H2O) । আর অভ্যন্তরীণ উপাদান হল ক্লোরোফিল (Chlorophyll)

উদ্ভিদে জলের আলোক বিশ্লেষণ :-

জলের আলোক বিশ্লেষণ বা ফটোলাইসিস ক্লোরোপ্লাস্টের গ্রানায় ঘটে । ফটোলাইসিস প্রক্রিয়াটি দিনের বেলায় সূর্যালোকের উপস্থিতিতে ঘটে । 

হিল বিক্রিয়া:- (Hill reaction)

1940 খৃষ্টাব্দে বিজ্ঞানী রবার্ট হিল কোষ থেকে সংগৃহিত ক্লোরোপ্লাস্ট, হাইড্রোজেন গ্রাহক পটাশিয়াম ফেরিক অক্সালেট (A) এবং জলের মিশ্রণ আলো প্রয়োগ করে দেখান যে, পটাশিয়াম ফেরিক অক্সালেট বিজারিত হয়ে ফেরাস একসলেটে হয় এবং অক্সিজেন গ্যাস নির্গত হয় । এই বিক্রিয়াটিকে হিল বিক্রিয়া বলে ।

[tex]2{H_2}O{\mathop \longrightarrow \limits_{ActiveChlorophyll}^{Sunlight}} 2{H^ + } + 2O{H^ - }[/tex]

 

আলোক দশার প্রয়োজনীয় উপাদান (Components of Light Phase)

সূর্যালোক, জল, ক্লোরোফিল, ও অন্যান্য সাহায্যকারী রঞ্জক, NADP (নিকোটিনামাইড অ্যাডেনিন ডাই-নিউক্লিওটাইড ফসফেট) ও ADP (অ্যাডিনোসিন ডাই ফসফেট) ।

আলোক দশার উৎপন্ন পদার্থগুলি:-

NADPH + H+ (বিজারিত নিকোটিনামাইড অ্যাডেনিন ডাই-নিউক্লিওটাইড ফসফেট),  ATP (অ্যাডিনোসিন ট্রাই ফসফেট) H2O (জল) ও  O2 (অক্সিজেন) ।

 

অন্ধকার দশার প্রয়োজনীয় উপাদান (Components of Dark Phase)

অথবা কেলভিন চক্রের প্রয়োজনীয় উপাদান:-

কার্বন ডাই-অক্সাইড (CO2), রিবিউলোজ বিস ফসফেট (RuBP),  NADPH + H+,  ATP (অ্যাডিনোসিন ট্রাই ফসফেট) ও রিবিউলোজ বিস ফসফেট কার্বক্সিলেজ (RuBISCO) সহ অন্যান্য উৎসেচক  ।

 

আলোক দশার বিভিন্ন পর্যায়:-

আলোক দশার পর্যায়গুলো  হল:-

(i)  সৌরশক্তি শোষণ ও ক্লোরোফিলের সক্রিয়তা ;

(ii)  জলের আলোক বিশ্লেষণ বা ফটোলাইসিস ;

(iii)  বিজারিত গ্রাহক বা NADPH2 গঠন ;

(iv)  সৌরশক্তির রাসায়নিক শক্তিতে রুপান্তর বা ফটোফসফোরাইলেশন ।  

 

অন্ধকার দশার বিভিন্ন পর্যায়:-

অথবা কেলভিন চক্রের ধারাবাহিক পর্যায়:-

অথবা সালোকসংশ্লেষের দ্বিতীয় পর্যায়ের বিক্রিয়ার ধাপ:-

অন্ধকার দশার পর্যায়গুলি হল : (i) CO2 ( কার্বন ডাই-অক্সাইড) সংবন্ধন ও PGA উৎপাদান;   (ii) PGA থেকে PGAld বা ফসফোগ্লিসারলডিহাইড গঠন ;   (iii) শর্করা সৃষ্টি ;   (iv) RuBP -এর পুনরূৎপাদন ।

 

অন্ধকার দশায় উৎপন্ন দ্রব্য:-

অথবা কেলভিন চক্রের শেষে উৎপাদিত দ্রব্য:-

অন্ধকার দশার প্রধান উৎপাদিত দ্রব্যটি হল গ্লুকোজ । এছাড়া RuBP, NADP ও  ADP পুনঃসংশ্লেষিত হয় ।

সালোকসংশ্লেষের আলোক দশায় উৎপন্ন পদার্থ অন্ধকার দশায় ব্যবহৃত হয়:-

বিজারিত নিকোটিনামাইড অ্যাডেনিন ডাই-নিউক্লিওটাইড ফসফেট (NADPH + H+) ও অ্যাডিনোসিন ট্রাই ফসফেট (ATP)

 

আলোক দশা ও অন্ধকার দশার পার্থক্য : (Difference between Light and Dark Phase)

আলোক দশা অন্ধকার দশা
১. সূর্যালোকের প্রয়োজন হয় । ১. সূর্যালোকের প্রয়োজন হয় না ।
২. ক্লোরপ্লাস্টের গ্রানা অঞ্চলে ঘটে । ২. ক্লোরপ্লাস্টের স্ট্রোমা অঞ্চলে ঘটে ।
৩. অক্সিজেন নির্গত হয় । ৩. অক্সিজেন নির্গত হয় না ।
৪. NADP বিজারিত হয় । ৪. NADP বিজারিত হয় না ।
৫. কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষিত হয় না । ৫. কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষিত হয় ।
৬. গ্লুকোজ উৎপন্ন হয় না । ৬. গ্লুকোজ উৎপন্ন হয় ।

 

ফটোফসফোরাইলেশন :- (Photophosphorylation)

সূর্যালোক শোষণ করে ক্লোরোফিল অণু উদ্দীপিত হয়ে ইলেকট্রন নির্গত করে । এই ইলেকট্রন বিভিন্ন বাহকের মাধ্যমে বাহিত হয় । এই ইলেকট্রনের শক্তি কাজে লাগিয়ে ADP (অ্যাডিনোসিন ডাই ফসফেট) -এর সাথে Pi (অজৈব ফসফেট) যুক্ত হয়ে ATP (অ্যাডিনোসিন ট্রাই ফসফেট) তৈরি করে ।  এই প্রক্রিয়াকে ফটোফসফোরাইলেশন বলে ।

[tex]ADP + Pi {\mathop \longrightarrow \limits^{Sunlight}} ATP[/tex]

 

চক্রাকার ও অচক্রাকার  ফটোফসফোরাইলেশনের পার্থক্য

চক্রাকার  ফটোফসফোরাইলেশন অচক্রাকার  ফটোফসফোরাইলেশন
১. জলের প্রয়োজন হয় না । ১. জলের প্রয়োজন হয়  ।
২. অক্সিজেন উৎপন্ন হয় না । ২. অক্সিজেন উৎপন্ন হয় ।
৩. NADP -এর কোনো ভুমিকা নেই । ৩. NADP বিজারিত হয় ।
৪. প্রতি চক্রে 2 অণু ATP উৎপন্ন হয় । ৪. মাত্র এক অণু ATP উৎপন্ন হয় ।

 

কেলভিন চক্র (Calvin cycle)

সালোকসংশ্লেষের অন্ধকার দশায় যে চক্রাকার বিক্রিয়ার মাধ্যমে CO2 (কার্বন ডাই-অক্সাইড) -এর সংবন্ধন, ফসফোগ্লিসারিক অ্যাসিডের বিজারণ, শর্করা সৃষ্টি ও RuBP -এর পুনঃসংশ্লেষণ ঘটে তাকে কেলভিন চক্র বলে ।

কেলভিন চক্রকে C3 চক্র বলে :-

কেলভিন চক্রে (অন্ধকার বিক্রিয়ায়) প্রথম উৎপাদিত স্থায়ী যৌগটি হল তিন কার্বনযুক্ত (3C) ফসফোগ্লিসারিক অ্যাসিড (PGA) । তাই একে C3 চক্র বলে ।

 

রুবিসকো (RuBISCO)

সালোকসংশ্লেষের অন্ধকার দশায় একটি অতি প্রয়োজনীয় উৎসেচক হল রুবিসকো বা রিবিউলোজ বিস ফসফেট কার্বক্সিলেজ এক্সিজেনেজ । এই উৎসেচকটি RuBP ও CO2 (কার্বন ডাই-অক্সাইড) -এর সংযুক্তি ঘটিয়ে তিনকার্বন যুক্ত যৌগ PGA উৎপন্ন করে ।

 

গ্রাণা ও স্ট্রোমার মধ্যে পার্থক্য

গ্রানা: স্ট্রোমা :
(1)  ক্লোরোপ্লাসটের চাকতির মতো সবুজ বর্ণের অংশ হল গ্রানা । (1)  ক্লোরোপ্লাস্টের ধাত্র হল স্ট্রোমা ।
(2)  এতে ক্লোরোফিল থাকে । (2)  এতে ক্লোরোফিল থাকে না , তবে উৎসেচক থাকে ।
(3)  আলোক দশা ঘটে  ।  (3)  অন্ধকার দশা ঘটে ।

 

সালোকসংশ্লেষীয় অণুপাত বা ফটোসিন্থেটিক কোশেন্ট (Photosynthetic Quotient)

সালোকসংশ্লেষকালে এক অণু গ্লুকোজ উৎপাদনের জন্য যে পরিমাণ অক্সিজেন (আয়তন) উৎপন্ন হয় ও যে পরিমাণ কার্বন ডাই-অক্সাইড গৃহিত হয় তার অনুপাতকে সালোকসংশ্লেষীয় অনুপাত বা ফটোসিন্থেটিক কোশেন্ট বলে ।

PQ =  সালোকসংশ্লেষকালে উৎপন্ন O2 -এর আয়তন / সালোকসংশ্লেষকালে ব্যবহৃত CO2 -এর আয়তন

 

সালোকসংশ্লেষের দুটি প্রধান তাৎপর্য

(i) শর্করা জাতীয় খাদ্য তৈরি করা ।

(ii)  পরিবেশে O2 (অক্সিজেন) ও CO2 ( কার্বন ডাই-অক্সাইড) -এর সমতা বজায় রাখা ।

 

বায়ু শোধনে সালোকসংশ্লেষের ভুমিকা

দহন ও শ্বসনে পরিবেশে CO2 ( কার্বন ডাই-অক্সাইড) উৎপন্ন হয়ে পরিবেশকে দুষিত করে । সালোকসংশ্লেষের সময় উদ্ভিদ পরিবেশের CO2 (কার্বন ডাই-অক্সাইড) গ্রহন করে ও O2 (অক্সিজেন) নির্গত করে, ফলে পরিবেশ CO2 (কার্বন ডাই-অক্সাইড) -এর পরিমাণ কমে ও O2 (অক্সিজেন) -এর পরিমাণ বাড়ে । অর্থাৎ বায়ু শোধিত হয় ।

 

সবুজ গাছ আমাদের শ্বাসক্রিয়ায় সাহায্য করে :-

সবুজ গাছ পরিবেশ থেকে CO2 (কার্বন ডাই-অক্সাইড) গ্রহন করে সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে এবং উপজাত বস্তুরূপে পরিবেশে গৃহিত CO2 (কার্বন ডাই-অক্সাইড) -এর সমঅণু O2 (অক্সিজেন) পরিবেশে নির্গত করে । এই অক্সিজেনের সাহায্যেই মনুষ্যকূল তথা সকল প্রাণী শ্বাসকার্য চালায় ।  অর্থাৎ সবুজ উদ্ভিদ প্রাণীজগতের শ্বাসকার্য চালানোর অক্সিজেন সরবরাহ করে ।

 

সালোকসংশ্লেষে শক্তির রুপান্তর :-

সালোকসংশ্লেষের আলোক দশায় ক্লোরোফিল সৌরশক্তিকে শোষণ করে উহাকে রাসায়নিক শক্তিতে পরিনত করে । এই রাসায়নিক শক্তি ATP (অ্যাডিনোসিন ট্রাই ফসফেট) অণুর মধ্যে সঞ্চিত থাকে । অন্ধকার দশায় ATP  -স্থিত রাসায়নিক শক্তি গ্লুকোজের মধ্যে স্থৈতিক শক্তিরূপে আবদ্ধ হয় ।

 

সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ায় উপজাত হিসেবে অক্সিজেন উৎপন্ন :-

সালোকসংশ্লেষের আলোক দশায় সক্রিয় ক্লোরোফিল জল অণুকে বিশ্লিষ্ট করে H+ ও OH- আয়নে পরিণত করে ।  এই OH- (হাইড্রক্সিল আয়ন) ইলেকট্রন (e-) ত্যাগ করে হাইড্রক্সিল মূলকে (OH) পরিণত হয় ।  4-অণু হাইড্রক্সিল মূলক (4OH) থেকে 2 অণু জল ও 1 অণু অক্সিজেন উৎপন্ন হয় ।  উৎপন্ন অক্সিজেন পাতার পত্ররন্ধ্র দিয়ে পরিবেশে নির্গত হয় ।

 

সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ায় বিজারিত গ্রাহক বা NADPH2  গঠন :-

সালোকসংশ্লেষের আলোক দশায় সূর্যালোকের প্রভাবে উত্তেজিত ক্লোরোফিল থেকে নির্গত ইলেকট্রন (e-) কতকগুলি বাহকের মাধ্যমে পরিবাহিত হয়ে কোষসহ কো-এনজাইম বা হাইড্রোজেন গ্রাহক NADP এবং জলের আলোক বিশ্লেষণের ফলে উৎপন্ন হাইড্রোজেন আয়ন (H+) -এর সঙ্গে যুক্ত হয়ে অর্থাৎ বিজারিত হয়ে NADPH2  গঠন করে । 

[tex]2NADP + 4{H^ + } + 4{e^ - } \longrightarrow 2NADP{H_2}[/tex] 

 

কোয়ান্টোজোম :-

ক্লোরোপ্লাস্টের গ্রানা থাইলাকয়েডের ভেতর ক্লোরোফিল ও ক্যারোটিনয়েড সমন্বিত যে সকল বটিকাকৃতি দানা সৌরশক্তি শোষণ করে আলোক বিক্রিয়া সূচনা করে তাদের কোয়ান্টোজোম বলে । কোয়ান্টোজোমকে সালোকসংশ্লেষীয় এককও বলে ।

 

অন্ধকার দশা কি কেবল অন্ধকারেই ঘটে ?

অন্ধকার দশায় আলোর প্রয়োজন হয় না । এই দশা সূর্যালোকের উপস্থিতিতে বা অনুপস্থিতিতে ঘটে । আলোক দশা সম্পূর্ণভাবে আলোকনির্ভর, সেক্ষেত্রে অন্ধকার দশা আলোক নিরপেক্ষ দশা । অন্ধকার দশা সম্পন্ন হয় ঠিক আলোক দশার পরেই এবং আলোক দশায় উৎপন্ন ATP (অ্যাডিনোসিন ট্রাই ফসফেট) ও  NADPH2 অন্ধকার দশায় ব্যবহৃত হয় ।

 

অন্ধকার দশাকে কার্বন-বিজারণ দশা বলে :-

অন্ধকার দশায় কার্বন ডাই-অক্সাইডের বিজারণ (NADPH2 দ্বারা) ঘটে গ্লুকোজ উৎপন্ন হয় বলে একে কার্বন বিজারণ বলে ।

 

ব্ল্যাকম্যান বিক্রিয়া :-

বিজ্ঞানী ব্ল্যাকম্যান সালোকসংশ্লেষের অন্ধকার বিক্রিয়াটি প্রথম পর্যবেক্ষণ করেন বলে অন্ধকার বিক্রিয়াকে ব্ল্যাকম্যান বিক্রিয়া বলে ।

 

সালোকসংশ্লেষে উৎপন্ন গ্লুকোজ বিভিন্নভাবে সঞ্চিত হয় :-

সালোকসংশ্লেষে উৎপন্ন গ্লুকোজ থেকে এক অণু জল বেরিয়ে গিয়ে অদ্রবণীয় স্টার্চ ব শ্বেতসারে পরিণত হয় । উৎপন্ন শ্বেতসার উদ্ভিদের বিভিন্ন সঞ্চয়ী অঙ্গে যেমন : মূল (মূলো, গাজর ), মৃদগত কান্ড (আলু), বীজপত্র (মটর) শস্য (ধান, গম) ফল (আঙ্গুর, আম) বীজে (কাঁঠাল বীজ ) সঞ্চিত হয় ।

 

সালোকসংশ্লেষে উৎপন্ন গ্লুকোজ শ্বেতসার ব স্টার্চে রুপান্তরিত হয়:-

সালোকসংশ্লেষে উৎপন্ন গ্লুকোজ (দ্রবণীয়) থেকে দুটি বিশেষ উদ্দেশ্যে এক অণু জল বের হয়ে অদ্রবণীয় শ্বেতসার ব স্টার্চে পরিণত হয় ।

(i)  সহজে দ্রবণীয় গ্লুকোজের বেশি ঘনত্ব সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ায় যাতে বিপত্তি ঘটাতে না পারে ।

(ii)  ভবিষ্যতের জন্য খাদ্য সঞ্চয় ।

       [tex]{({C_6}{H_{12}}{O_6})_n} \longrightarrow ({C_6}{H_{10}}{O_5}) + {H_2}O[/tex]

 

আত্তীকরণীয় স্টার্চ ও সঞ্চিত স্টার্চ :-

দিনের বেলায় সবুজ উদ্ভিদের সূর্যালোকের উপস্থিতিতে সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ায় যাতে গ্লুকোজ সৃষ্টি বাধা না পায়, তার জন্য সদ্য উৎপন্ন গ্লুকোজের প্রতি অণু থেকে জল বেরিয়ে গিয়ে যে ক্ষণস্থায়ী, অদ্রবণীয় শ্বেতসার তৈরি হয় তাকে আত্তীকরণীয় শ্বেতসার (স্টার্চ) বা অ্যাসিমিলেটরি স্টার্চ বলে ।

    উদ্ভিদের ভান্ডার অংশে (বিশেষত মূল ও মৃদগত কাণ্ড) গ্লুকোজ অ্যামাইলেজ উৎসেচকের প্রভাবে জল নির্গত করে যে অদ্রবণীয় শ্বেতসার উৎপন্ন করে তাকে সঞ্চিত স্টার্চ বা রিজার্ভড স্টার্চ বলে ।

 

সালোকসংশ্লেষে গ্লুকোজ মধ্যস্থ অক্সিজেন ও পরিবেশে নির্গত অক্সিজেনের উৎস:-

সালোকসংশ্লেষে গ্লুকোজ মধ্যস্থ অক্সিজেনের উৎস হল পরিবেশ থেকে গৃহিত CO2 (কার্বন ডাই-অক্সাইড) ও পরিবেশে নির্গত অক্সিজেনের উৎস হল H2O ।

 

সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ায় উদ্ভিদের শুষ্ক ওজন বাড়ে :-

সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ায় গ্লুকোজ উৎপন্ন হওয়ায় উদ্ভিদের শুষ্ক ওজন বাড়ে ।

 

সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ায় উদ্ভিদের প্রয়োজনীয় গ্যাসীয় উপাদান সংগ্রহ :-

সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ায় প্রয়োজনীয় গ্যাসীয় উপাদানটি হল কার্বন ডাই-অক্সাইড (CO2 ) । স্থলজ  উদ্ভিদরা পত্ররন্ধ্রের মাধ্যমে বায়ুমণ্ডল থেকে CO2 (কার্বন ডাই-অক্সাইড) গ্রহন করে । জলজ উদ্ভিদরা জলে দ্রবীভূত কার্বন ডাই-অক্সাইড বাই-কার্বনেট ([tex]HCO_3^ - [/tex]) আয়ন রূপে গ্রহন করে । পরাশ্রয়ী উদ্ভিদরা পারিপার্শ্বিক বায়ুমণ্ডল থেকে CO2 (কার্বন ডাই-অক্সাইড) গ্রহন করে ।

 

সালোকসংশ্লেষের অন্ধকার দশায় প্রথম রাসায়নিক বিক্রিয়া :-

সালোকসংশ্লেষের অন্ধকার দশায় প্রথম রাসায়নিক বিক্রিয়াটি হল CO2 (কার্বন ডাই-অক্সাইড) সংবন্ধন বা অঙ্গার আত্তীকরণ । এই পর্যায়ে পরিবেশ থেকে গৃহিত CO2 (কার্বন ডাই-অক্সাইড) কোষস্থ শর্করা যৌগ RuBP -এর সঙ্গে বিক্রিয়া করে তিন কার্বন যুক্ত যৌগ ফসফোগ্লিসারিক অ্যাসিড (PGA) নামক কার্বন যৌগ সৃষ্টি করে ।

[tex]6C{O_2} + 6RuBP \mathop \longrightarrow \limits_{RuBiSCO}^{Enzyme} 12PGA[/tex]

 

স্ট্রোমা ও স্ট্রোমাটার পার্থক্য :-

(i) স্ট্রোমা হল ক্লোরোপ্লাস্টের ধাত্র, অপর পক্ষে স্ট্রোমাটা হল প্রহরী কোষবেষ্টিত রন্ধ্র বা পত্ররন্ধ্র ।

(ii) স্ট্রোমা CO2 (কার্বন ডাই-অক্সাইড) -এর স্থিতিকরণের জন্য সালোকসংশ্লেষের অন্ধকার বিক্রিয়ার স্থান, অপরপক্ষে স্ট্রোমাটা বাষ্পমোচন ও গ্যাসীয় আদান-প্রদান ঘটানোর স্থান । 

 

সোলারাইজেশন :-

ধারাবাহিক আলোর থেকে বিক্ষিপ্ত আলোতে সালোকসংশ্লেষের হার বেশি হয় । তীব্র আলোকে ক্লোরোফিল বিনষ্ট হয়ে সালোকসংশ্লেষ বন্ধ হয়ে যায় । একে সোলারাইজেশন বলে ।

 

গাছে পাতা দেখতে সবুজ হয় :-

ক্লোরোফিল রঞ্জকের 'হিম' অংশ দৃশ্যমান বর্ণালির লাল ও নীল-বেগুনী অংশ শোষণ করে কিন্তু সবুজ অংশ (500-560nm) প্রতিফলিত করে ক্লোরোফিল তথা গাছের পাতা সবুজ দেখায় ।

 

অ্যাকোয়ারিয়ামে মাছের সঙ্গে সবুজ গাছ রাখার সুবিধা :-

অ্যাকোয়ারিয়ামে সবুজ গাছ রাখলে সবুজ গাছ সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়া চালিয়ে অক্সিজেন নির্গত করবে এবং এই অক্সিজেন (O2)  মাছের শ্বাসকার্যের প্রয়োজনীয় অক্সিজেন যোগাবে । আবার মাছ -এর শ্বাসক্রিয়ায় উৎপন্ন CO2 (কার্বন ডাই-অক্সাইড)  সবুজ গাছকে সালোকসংশ্লেষ চালাবার প্রয়োজনীয় CO2 (কার্বন ডাই-অক্সাইড) সরবরাহ করবে ।

*****

Comments

Related Items

শ্বসন (Respiration)

যে জৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় জীবকোষস্থ খাদ্যবস্তু (শ্বসন বস্তু) মুক্ত অক্সিজেনের উপস্থিতিতে বা অনুপস্থিতিতে উৎসেচকের সহায়তায় জারিত হয়ে কার্বন ডাই-অক্সাইড, জল (কখনো ইথাইল অ্যালকোহল বা ল্যাকটিক অ্যাসিড) উৎপন্ন করে এবং খাদ্যে আবদ্ধ স্থৈতিক শক্তি গতি শক্তি বা তাপশক্তিতে ...

মানুষের গমন পদ্ধতি

গমন অঙ্গের নাম, গমন পদ্ধতির নাম, মানুষের গমনে সহায়ক অস্থি সমূহ , মেরুদণ্ড, শ্রোণীচক্র, পায়ের অস্থি , ফ্লেক্সর পেশী, এক্সটেনসর পেশী, অ্যাডাকটর পেশী , মানুষের গমনে সহায়ক অস্থি সন্ধি সমূহ , মানুষের গমনে সহায়ক পেশী , দ্বিপদ গমন ক্রিয়া । ...

প্রাণীদের গমন

প্রাণীদের গমন , প্রাণীদের গমন অঙ্গ সম্পর্কে সাধারণ ধারণা - গমনের সময় প্রাণীরা কোনো না কোনো অঙ্গ বা অঙ্গাণু ব্যবহার করে। গমনে সাহায্যকারী অঙ্গকে গমন অঙ্গ বলে। মানুষের হাত ও পা , তিমির প্যাডেল , ব্যাঙের পা , পাখির ডানা , হাঁসের লিপ্ত পদ , শামুকের মাংসল পদ ...

মাছের গমন (Locomotion of Fish)

গমন অঙ্গের নাম, গমন পদ্ধতির নাম, গমন পদ্ধতি - মাছের সাতটি পাখনা আছে। একটি পৃষ্ঠপাখনা, একটি পায়ুপাখনা, একটি পুচ্ছপাখনা এবং একজোড়া করে বক্ষ ও শ্রোণী পাখনা। বক্ষপাখনার সাহায্যে মাছ জলের গভীরে যেতে পারে এবং শ্রোণীপাখনার সাহায্যে ...

মানব দেহে খনিজ লবনের প্রয়োজনীয়তা

খনিজ লবনের প্রয়োজনীয়তা জীব দেহের স্বাভাবিক পুষ্টির জন্য খনিজ লবনের প্রয়োজনীয়তা আছে। জীব দেহের স্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য খনিজ লবনের প্রয়োজন। রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা অর্জনের জন্য খনিজ লবনের গ্রহনের প্রয়োজন আছ, সাতটি খনিজ লবনের নাম ও তাদের উৎস ।