অধ্যায় ভিত্তিক প্রশ্নোত্তর : শ্বসন

Submitted by arpita pramanik on Wed, 01/04/2012 - 20:32

অধ্যায় ভিত্তিক প্রশ্নোত্তর : শ্বসন (Respiration)

Question No. 1  শ্বসন কাকে বলে (Definition of Respiration) ?

Answer:-  যে জৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় জীবকোষস্থ খাদ্যবস্তু (শ্বসন বস্তু) মুক্ত অক্সিজেনের উপস্থিতিতে বা অনুপস্থিতিতে উৎসেচকের সহায়তায় জারিত হয়ে কার্বন ডাই-অক্সাইড, জল (কখনো ইথাইল অ্যালকোহল বা ল্যাকটিক অ্যাসিড) উৎপন্ন করে এবং খাদ্যে আবদ্ধ স্থৈতিক শক্তি গতি শক্তি বা তাপশক্তিতে রূপান্তরিত হয়ে মুক্ত হয় তাকে শ্বসন বা Respiration বলে ।

Question No. 2  শ্বসনকে অপচিতিমূলক বিপাক (Catabolic Metabolism) প্রক্রিয়া বলে কেন ?

Answer:-  শ্বসন প্রক্রিয়ায় জটিল খাদ্যবস্তু (জৈব যৌগ) বিশ্লিষ্ট হয়ে সরল উপাদানে (অজৈব যৌগ) পরিণত হয় । এতে কোষের শুষ্ক ওজন হ্রাস পায় ও শক্তির মুক্তি ঘটে , তাই শ্বসনকে অপচিতিমূলক বিপাক (Catabolic Metabolism) বলে ।

Question No. 3  শ্বসন অপচিতিমূলক বিপাক হলেও জীবের পক্ষে অপরিহার্য কেন ?

Answer:-  জীবের বেঁচে থাকার জন্য শক্তির প্রয়োজন । শ্বসন প্রক্রিয়ার ফলেই খাদ্যস্থ শক্তির মুক্তি ঘটে যা জীবের বিভিন্ন জৈবনিক কাজে ব্যয়িত হয় । তাই শ্বসন অপচিতিমূলক বিপাক প্রক্রিয়া হলেও জীবের পক্ষে অপরিহার্য ।

Question No. 4  শ্বসনকে তাপমোচী বিক্রিয়া বলে কেন ?

Answer:- শ্বসনে কোষস্থ খাদ্য (শ্বসন বস্তু) -এ আবদ্ধ স্থৈতিক শক্তির কিছু অংশ উচ্চ শক্তিধর জৈব যৌগ ATP -এর মধ্যে রাসায়নিক শক্তিরূপে সঞ্চিত হয় (প্রায় 40%) যা জীবদেহের জৈবিক ক্রিয়ায় সাহায্য করে ।  বাকি অংশ আলোকশক্তি, তাপশক্তি, বৈদুতিক শক্তিরূপে মুক্ত হয় । শ্বসনে উৎপন্ন শক্তির বেশ কিছু অংশ তাপ শক্তিরূপে মুক্ত হয় বলে শ্বসনকে তাপমোচী বিক্রিয়া বলে ।

Question No. 5  'শ্বসনে শক্তির মুক্তি ঘটে' - বলতে কী বোঝায় ?

অথবা শ্বসনকে শক্তির মুক্তি বলে কেন ?

Answer:-  শ্বসন প্রক্রিয়ায় কোষস্থ খাদ্য জারিত হয়ে খাদ্যস্থ স্থৈতিক শক্তি তাপশক্তি রূপে মুক্ত হয়,  তাই শ্বসনকে শক্তির প্রকাশ বা মুক্তি বলে ।

Question No. 6  "শ্বসন প্রক্রিয়ায় শক্তির মুক্তি ও রুপান্তর ঘটে" - উক্তিটির ব্যাখ্যা করো

Answer:-  শ্বসন প্রক্রিয়ায় কোষস্থ খাদ্য (শ্বসন বস্তু)  জারিত হয়ে খাদ্যস্থ শক্তির মুক্তি ঘটায় ।  কোষস্থ খাদ্যে স্থৈতিক শক্তি  আবদ্ধ থাকে । খাদ্য জারিত হবার ফলে খাদ্যস্থ স্থৈতিক শক্তি গতিশক্তি বা তাপশক্তিতে রূপান্তরিত হয়ে মুক্ত হয় । সুতরাং শ্বসনে স্থৈতিক শক্তি তাপশক্তিতে রূপান্তরিত হয় ।

Question No. 7  দহন (Combustion) কাকে বলে ?

Answer:- যে রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় কোনো দাহ্য বস্তু উৎসেচক ছাড়াই কোষের বাইরে অক্সিজেনের উপস্থিতিতে জারিত হয়ে তাপ ও আলো উৎপন্ন করে এবং শক্তির দ্রুত মুক্তি ঘটায় তাকে দহন বলে ।

Question No. 8  শ্বসনকে নিয়ন্ত্রিত দহন বা মৃদু দহন বলে কেন ?

Answer:-  দহনকালে জৈব বা অজৈব বস্তুর কার্বন পরমাণুর যোজকগুলি একই সঙ্গে ভেঙ্গে গিয়ে দ্রুত প্রচুর পরিমাণে তাপ ও আলোকশক্তি উৎপন্ন করে । কিন্তু শ্বসনকালে গ্লুকোজ অণুর কার্বন পরমাণুর যোজকগুলি ধাপে ধাপে ধীর গতিতে ভেঙ্গে তাপশক্তির মুক্তি ঘটায় । তাই শ্বসনকে নিয়ন্ত্রিত দহন বা মৃদু দহন বলে ।

Question No. 9  দহন ও শ্বসনের মধ্যে দুটি উল্লেখযোগ্য পার্থক্য লেখো ।

Answer:-  (i) দহনে আলো ও তাপ দুই-ই উৎপন্ন হয়, কিন্তু শ্বসনে কেবল তাপ উৎপন্ন হয় ।

              (ii) দহনে উৎপন্ন শক্তি কোথাও সঞ্চিত হয় না, সবটুকু পরিবেশে ছড়িয়ে পড়ে । কিন্তু শ্বসনে উৎপন্ন শক্তি সাময়িকভাবে ATP অণুর মধ্যে সঞ্চিত থাকে ।

Question No. 10  শ্বসন প্রক্রিয়ায় গ্লুকোজে সঞ্চিত শক্তির মুক্তি কীভাবে ঘটে ?

Answer:-  গ্লুকোজই প্রধান শ্বসনবস্তু । শ্বসন প্রক্রিয়ায় গ্লুকোজ জারিত হয়ে শক্তি উৎপন্ন করে । সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ায় গ্লুকোজ অণুর মধ্যে সৌরশক্তি স্থিতিশক্তিরূপে সঞ্চিত থাকে । শ্বসন প্রক্রিয়ায় গ্লুকোজ জারিত (O2 দ্বারা বা O2 ছাড়াই) হওয়ায় গ্লুকোজ মধ্যস্থ শক্তি ধাপে ধাপে নির্গত হয় ।

Question No. 11  শ্বসনবস্তু কাকে বলে ?

Answer:- শ্বসনকালে যে সকল কোষস্থ জৈব বস্তু জারিত হয়ে শক্তি উৎপন্ন করে বা শক্তির মুক্তি ঘটায় তাদের শ্বসনবস্তু বলে । প্রধান শ্বসনবস্তু হল গ্লুকোজ ।    

Question No. 12  শ্বসন কোথায় এবং কখন সংঘটিত হয় ?

Answer:-  শ্বসনের সময় : প্রতিটি সজীব কোষে দিবারাত্র শ্বসন সংঘটিত হয় ।

               শ্বসনের স্থান : শ্বসন (সবাত শ্বসন) প্রক্রিয়াটি দুটি পর্যায়ে সম্পন্ন হয় । প্রথম পর্যায় গ্লাইকোলাইসিস কোষের সাইটোপ্লাজমে ও দ্বিতীয় পর্যায় ক্রেবস-চক্র মাইটোকনড্রিয়ায় ঘটে ।

Question No. 13 সবাত শ্বসন কাকে বলে ?

Answer:-  যে শ্বসন প্রক্রিয়ায় মুক্ত অক্সিজেনের উপস্থিতিতে বায়ুজীবি জীবের কোষস্থ শ্বসনবস্তু (গ্লুকোজ) সম্পূর্ণরূপে জারিত হয়ে জল ও কার্বন ডাই-অক্সাইড উৎপন্ন করে এবং শ্বসন বস্তুস্থিত শক্তি সম্পূর্ণরূপে নির্গত হয় তাকে সবাত শ্বসন বলে ।     

  [tex]{C_6}{H_{12}}{O_6} + 6{O_2} \longrightarrow 6C{O_2} + 6{H_2}O + 686K.Cal[/tex]

Question No. 14  অবাত শ্বসন কাকে বলে ?

Answer:-  যে শ্বসন প্রক্রিয়ায় অবায়ুজীবি জীবের কোষস্থ খাদ্য মুক্ত অক্সিজেনের অনুপস্থিতিতে কিন্তু অক্সিজেনযুক্ত যৌগের (অজৈব অক্সাইড) সাহায্যে আংশিকভাবে জারিত হয়ে কার্বন ডাই-অক্সাইড ও অন্যান্য যৌগ উৎপন্ন করে এবং শ্বসন বস্তুস্থিত শক্তির আংশিক নির্গমন ঘটায় তাকে অবাত শ্বসন বলে ।

[tex]{C_6}{H_{12}}{O_6} + 12N{O_3} \longrightarrow 6C{O_2} + 6{H_2}O + 12N{O_2} + 50K.Cal[/tex]

Question No. 15  সন্ধান (Fermentation) কাকে বলে ?

Answer:-  যে অবাত শ্বসন প্রক্রিয়ায় শ্বসন বস্তু অক্সিজেন ছাড়াই অণুজীব নিঃসৃত উৎসেচকের সাহায্যে জারিত হয়ে বিভিন্ন জৈব যৌগ (ইথাইল অ্যালকোহল, ল্যাকটিক অ্যাসিড) উৎপন্ন করে ও শ্বসন বস্তু থেকে শক্তির আংশিক নির্গমন ঘটে তাকে সন্ধান (Fermentation) ঘটে ।      

Question No. 16  কোহল সন্ধানের দুটি ব্যবহারিক প্রয়োগ উল্লেখ করো ।

অথবা শিল্পে কেন সন্ধান প্রক্রিয়ার গুরুত্ব অপরিসীম ?

Answer:-  (i) বাণিজ্যিকভাবে অ্যালকোহল তথা মদ তৈরিতে কোহল সন্ধানের ব্যাপক প্রয়োগ রয়েছে ।

               (ii)  বেকারি শিল্পে পাউরুটি, কেক, বিস্কুট তৈরিতে ।

Question No. 17  দই পাতার সময়ে দুধে সামান্য দই মেশালে তাড়াতাড়ি দই পড়ে - এর কারণ কী ?   

Answer:-  দুধকে দইতে পরিণত করে ল্যাকটোব্যাসিলাস নামক ব্যাকটেরিয়া । এই ব্যাকটেরিয়াগুলি দই -এর মধ্যে থাকে । দই তৈরি করবার সময় দুধে দই মেশালে উপস্থিত ব্যাকটেরিয়া খুব তাড়াতাড়ি দুধকে দইতে পরিণত করে ।     

Question No. 18  গ্লাইকোলাইসিস কাকে বলে ?

Answer:-  শ্বসনের যে সাধারণ পর্যায়ে কোষের সাইটোপ্লাজমে এক অণু গ্লুকোজ কয়েক রকম উৎসেচকের প্রভাবে আংশিকভাবে জারিত হয়ে দুই অণু পাইরুভিক অ্যাসিড (CH3COCOOH), 2 অণু ATP, 2 অণু NADH2 ও 2 অণু H2O উৎপন্ন করে তাকে গ্লাইকোলাইসিস বলে ।  গ্লাইকোলাইসিসের অপর নাম EMP পথ ।

Question No. 19 গ্লাইকোলাইসিসকে EMP  পথ বলে কেন ?

Answer:-  গ্লাইকোলাইসিস প্রক্রিয়ার ধারাবাহিক বিক্রিয়াগুলি বিজ্ঞানী এম্বডেন, মেয়ারহফ ও পারনাস আবিষ্কার করেন বলে তাদের নামানুসারে গ্লাইকোলাইসিস প্রক্রিয়াকে EMP পথ বলে ।

Question No. 20  অন্তঃশ্বসনের দুটি ধাপের নাম করো ।

Answer:-  অন্তঃশ্বসন বা কোশীয় শ্বসনের (সবাত শ্বসন) প্রথম ধাপটি হল গ্লাইকোলাইসিস যা কোষের সাইটোপ্লাজমে ঘটে । দ্বিতীয় ধাপটি হল ক্রেবস-চক্র যা কোষের মাইটোকনড্রিয়ায় ঘটে ।     

Question No. 21 গ্লাইকোলাইসিসের অন্তঃজাত পদার্থগুলি কী কী ?

   অথবা গ্লাইকোলাইসিস প্রক্রিয়ায় প্রাপ্ত অন্তিম বস্তুগুলি কী কী ?

Answer:- গ্লাইকোলাইসিসের অন্তঃজাত পদার্থগুলি হল 2 অণু পাইরুভিক অ্যাসিড (CH3COCOOH), 2 অণু ATP, 2 অণু NADH2 ও 2 অণু H2O ।

Question No. 22  ক্রেবস চক্র কাকে বলে ?

Answer:-  সবাত শ্বসনের দ্বিতীয় পর্যায়ে পাইরুভিক অ্যাসিড থেকে উৎপন্ন অ্যাসিটাইল কো-এ মাইটোকনড্রিয়ার মধ্যে প্রবেশ করে যে চক্রাকার মাধ্যমে বিভিন্ন প্রকার জৈব অ্যাসিড, কার্বন ডাই-অক্সাইড ও জল উৎপন্ন করে তাকে ক্রেবস-চক্র বলে ।  

Question No. 23  ক্রেবস-চক্রকে সাইট্রিক অ্যাসিড চক্র বলে কেন ?

Answer:- ক্রেবস-চক্রে উৎপন্ন প্রথম অ্যাসিডটি হল 6 কার্বনযুক্ত সাইট্রিক অ্যাসিড ।  সাইট্রিক অ্যাসিড দিয়ে ক্রেবস-চক্র শুরু হয় বলে ক্রেবস-চক্রকে সাইট্রিক অ্যাসিড চক্র বলে ।

Question No. 24 ক্রেবস-চক্রকে TCA চক্র বলে কেন ?

Answer:-  ক্রেবস-চক্রের প্রথম উৎপন্ন অ্যাসিডটি হল সাইট্রিক অ্যাসিড । সাইট্রিক অ্যাসিডে তিনটি কার্বক্সিলিক (-COOH) মূলক থাকায় ক্রেবস-চক্রকে TCA চক্র বা  ট্রাই কার্বক্সিলিক অ্যাসিড চক্র বলে ।

Question No. 25  গ্লাইকোলাইসিস ও ক্রেবস-চক্র কী পরস্পর সম্পর্কিত ? যুক্তিসহ উত্তর লেখো

Answer:-  সবাত শ্বসনের দুটি পর্যায় গ্লাইকোলাইসিস ও  ক্রেবস-চক্র পরস্পর সম্পর্কিত । কোষের সাইটোপ্লাজমে গ্লাইকোলাইসিসের ফলে গ্লুকোজ থেকে পাইরুভিক অ্যাসিড উৎপন্ন হয় । এই পাইরুভিক অ্যাসিড থেকে CO2 অপসারিত হয়ে ও কো-এনজাইম A (CO - A) যুক্ত হয়ে অ্যাসিটাইল কো-এ উৎপন্ন করে । অ্যাসিটাইল কো-এ মাইটোকনড্রিয়ার মধ্যে প্রবেশ করে ক্রেবস-চক্র সূচনা করে । সুতরাং গ্লাইকোলাইসিস ও ক্রেবস-চক্র পরস্পর সম্পর্কিত ।

Question No. 26 মাইটোকনড্রিয়া কোথায় অবস্থিত এবং এর কাজ কী ?

Answer:-  মাইটোকনড্রিয়া সমস্ত আদর্শ কোষের সাইটোপ্লাজমে অবস্থিত । মাইটোকনড্রিয়ার প্রধান কাজ হল সবাত শ্বসনের দ্বিতীয় পর্যায় ক্রেবস-চক্র সম্পন্ন করা ও ATP উৎপন্ন করা ।

Question No. 27  মাইটোকনড্রিয়াকে কোষের শক্তিঘর বলে কেন ?

Answer:-  মাইটোকনড্রিয়া মধ্যে সবাত শ্বসনের ক্রেবস-চক্র ও প্রান্তীয় শ্বসন ঘটে যার ফলে ATP উৎপন্ন হয় । এই ATP জীবের বিভিন্ন কাজে প্রয়োজনীয় শক্তির যোগান দেয় । তাই মাইটোকনড্রিয়াকে কোষের শক্তিঘর বলে ।

Question No. 28  শ্বাস অনুপাত বা RQ (Respiratory Quotient) কী ?

Answer:-  শ্বসনকালে নির্গত CO2 গ্যাসের আয়তন ও গৃহিত O2 গ্যাসের আয়তনের অনুপাতকে শ্বাস অনুপাত বা RQ বলে ।

RQ = শ্বসনকালে নির্গত CO2 গ্যাসের আয়তন / শ্বসনকালে গৃহিত O2 গ্যাসের আয়তনের

Question No. 29  সবাত ও অবাত শ্বসনে RQ -এর মান কত ?

Answer:-  সবাত শ্বসনে RQ -এর মান 1 ও অবাত শ্বসনে RQ -এর মান অসংজ্ঞাত ।

Question No. 30 একটি সজীব কোষ থেকে সমস্ত মাইটোকনড্রিয়াগুলিকে অপসারণ করলে কোষটির কী হবে ? 

Answer:-  মাইটোকনড্রিয়া না থাকলে কোষে শ্বসন ক্রিয়া সম্পূর্ণ হবে না, ফলে শক্তি উৎপন্ন হবে না । শক্তি সরবরাহের অভাবে কোষের বিপাকীয় ক্রিয়াগুলি ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে কোষটির মৃত্যু ঘটবে ।    

Question No. 31 বায়ুজীবী ও অবায়ুজীবী কাদের বলে ? 

Answer:-  বায়ুজীবী : যেসব জীব বায়ুমণ্ডলের মুক্ত অক্সিজেন (O2) গ্রহন করে শ্বসন ক্রিয়া সম্পন্ন করে তাদের বায়ুজীবী বলে । এদের সবাত শ্বসন হয় ।

অবায়ুজীবী:  যেসব জীব বায়ুমণ্ডলের মুক্ত অক্সিজেন (O2) ছাড়াই শ্বসন ক্রিয়া চালাতে পারে তাদের অবায়ুজীবী বলে । এদের অবাত শ্বসন হয় ।

Question No. 32 উন্নত জীবে অবাত শ্বসন হয় না কেন ?

Answer:-  উন্নত জীবের জীবন ধারণের জন্য বেশি পরিমাণ শক্তির প্রয়োজন । যেহেতু অবাত শ্বসনে অল্প পরিমাণ শক্তি উৎপন্ন হয়, তাই অবাত শ্বসনের দ্বারা তাদের এই চাহিদা মেটানো সম্ভব নয় । তাই উন্নত জীবে অবাত শ্বসন হয় না ।

Question No. 33  কোহল সন্ধান ও ল্যাকটিক অ্যাসিড সন্ধানকারী জীবাণুর নাম করো ।

Answer:-  কোহল সন্ধান সন্ধানকারী জীবাণুর নাম হল ঈস্ট এবং ল্যাকটিক অ্যাসিড সন্ধানকারী জীবাণুর নাম হল ল্যাকটোব্যাসিলাস নামক ব্যাকটেরিয়া ।

Question No. 34  সন্ধানের দুটি উদাহরণ দাও ।

Answer:-  কোহল সন্ধান ও ল্যাকটিক অ্যাসিড সন্ধান ।

Question No. 35 কয়েকটি সন্ধানকারী জীবের নাম করো ।

Answer:-  ঈস্ট (স্যাকারোমাইসিস সেরিভেসি) —  কোহল সন্ধান ঘটায় ।

               ল্যাকটোব্যাসিলাস ট্রাইকোডেস —  ল্যাকটিক অ্যাসিড সন্ধান ঘটায় ।

              অ্যাসিটোব্যাকটর অ্যাসেটি—  অ্যাসিটিক অ্যাসিড সন্ধান ঘটায় ।

Question No. 36  শ্বাসকার্য কাকে বলে ?

Answer:-  যে যান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় জীবদেহে সবাত শ্বসনের জন্য শ্বাসঅঙ্গের মাধ্যমে পরিবেশ থেকে বেশি অক্সিজেনযুক্ত বায়ু গ্রহন বা প্রশ্বাস এবং বেশি কার্বন ডাই-অক্সাইডযুক্ত বায়ুর বর্জন বা নিশ্বাস ক্রিয়া সম্পন্ন হয় তাকে শ্বাসকার্য বলে ।     

Question No. 37  প্রাণী ও উদ্ভিদের শ্বাসকার্যের মধ্যে পার্থক্য কী ?

Answer:-  (i)  উন্নত প্রাণীদের নির্দিষ্ট শ্বাসযন্ত্র থাকে কিন্তু উদ্ভিদের নির্দিষ্ট শ্বাসযন্ত্র থাকে না ।   

              (ii)  শ্বাসবায়ু পরিবহনের জন্য প্রাণীদের শ্বাসরঞ্জক থাকে কিন্তু উদ্ভিদের কোনো শ্বাসরঞ্জক থাকে না ।

Question No. 38  প্রশ্বাস ও নিশ্বাস বলতে কী বোঝায় ?

Answer:-  প্রশ্বাস:- শ্বাসকার্যের যে পর্যায়ে শ্বাসঅঙ্গের মাধ্যমে অধিক অক্সিজেনযুক্ত বায়ু প্রাণীদেহে গৃহিত হয় তাকে প্রশ্বাস বলে ।

              নিশ্বাস:- শ্বাসকার্যের যে পর্যায়ে প্রাণীদেহের শ্বাসঅঙ্গ থেকে অধিক কার্বন ডাই-অক্সাইডযুক্ত বায়ু পরিবেশে নির্গত হয় তাকে নিশ্বাস বলে ।

Question No. 39  বহিঃশ্বসন ও অন্তঃশ্বসন বলতে কী বোঝো ? 

Answer:-  যে যান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় প্রাণীদেহে শ্বাসঅঙ্গ ও পরিবেশের বায়ুর মধ্যে গ্যাসীয় আদানপ্রদান ঘটে তাকে বহিঃশ্বসন বলে । অপরপক্ষে যে জৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় কোষ মধ্যস্থ খাদ্য জারিত হয়ে খাদ্যস্থ শক্তির মুক্তি ঘটায় তাকে অন্তঃশ্বসন বলে । 

Question No. 40  বহিঃশ্বসন ও অন্তঃশ্বসনের মধ্যে দুটি পার্থক্য কী কী ?

Answer:-  (i)বহিঃশ্বসন কোষের বাইরে ঘটে এবং এটি যান্ত্রিক প্রক্রিয়া , কিন্তু অন্তঃশ্বসন কোষের মধ্যে ঘটে এবং এটি জৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়া । 

(ii)   বহিঃশ্বসনের শক্তি উৎপন্ন হয় না কিন্তু অন্তঃশ্বসনে শক্তি উৎপন্ন হয় ।

Question No. 41  দিনের বেলায় সবুজ উদ্ভিদে সালোকসংশ্লেষ ও শ্বসনের মধ্যে কী সম্পর্ক লক্ষ করা যায় ? 

Answer:-  দিনের বেলায় সবুজ উদ্ভিদে সালোকসংশ্লেষ ও শ্বসন একই সঙ্গে ঘটে । সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ায় যে গ্লুকোজ সংশ্লেষিত হয়, শ্বসন প্রক্রিয়ায় সেই গ্লুকোজ জারিত হয় ।  সালোকসংশ্লেষের ফলে উপজাত পদার্থ হিসেবে যে অক্সিজেন নির্গত হয়, তার কিছু অংশ শ্বসনের কাজে লাগে । আবার শ্বসনের ফলে উৎপন্ন কার্বন ডাই-অক্সাইডের কিছুটা সালোকসংশ্লেষের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয় ।      

Question No. 42  সবুজ উদ্ভিদে সালোকসংশ্লেষ ও শ্বসন প্রক্রিয়ার কোনটি রাত্রিবেলায় সংঘটিত হয় না এবং কেন ?

Answer:-  সবুজ উদ্ভিদে সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়াটি রাত্রিবেলায় সংঘটিত হয় না । কারণ :

(i) রাত্রে সূর্যালোক না থাকায় ক্লোরোফিল সক্রিয় হতে পারে না ।

(ii) জলের ফটোলাইসিস বা আয়নীকরণ ঘটতে পারে না ।  

Question No. 43 শ্বসনের জন্য প্রয়োজনীয় অক্সিজেনের উৎস কী কী ?

Answer:-  পরিবেশে অক্সিজেনের উৎস :

(i) সবুজ উদ্ভিদের সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়া দ্বারা উৎপন্ন অক্সিজেন ।

(ii) বায়ুমন্ডলে ওজোন (O3) গ্যাসের বিয়োজন ।

(iii) বিদ্যুৎ ক্ষরণের সময় বায়ুমন্ডলের জলীয় বাষ্প থেকে উৎপন্ন অক্সিজেন ।

Question No. 44 পত্ররন্ধ্র কাকে বলে ?

Answer:-  উদ্ভিদের সবুজ পাতায় ঊর্ধ্বত্বক ও নিম্নত্বকে প্রহরীকোষ বেষ্টিত যে ছিদ্রের মাধ্যমে প্রয়োজনাতিরিক্ত জল বাষ্পরূপে নির্গত হয় ও গ্যাসীয় পদার্থের বিনিময় বা আদানপ্রদান ঘটে তাকে পত্ররন্ধ্র বলে ।    

Question No. 45  লেন্টিসেল কী ?

Answer:- গুল্ম ও বৃক্ষ জাতীয় উদ্ভিদের কাণ্ডের ত্বকের বিদীর্ণ কিউটিকল বিহীন যে ছিদ্রের মাধ্যমে গ্যাসীয় বিনিময় ঘটে তাকে লেন্টিসেল বলে ।

Question No. 46 শ্বাসমূল বা নাসিকামূল বা নিউম্যাটোফোর  (Pneumatophore) কী ?   

Answer:-  সুন্দরী, গেঁও, গরাণ প্রভৃতি লবণাম্বু উদ্ভিদের কিছু শাখাপ্রশাখা মূল অভিকর্ষের বিপরীতে খাড়াভাবে মাটির ওপরে উঠে আসে এবং মূলে উপস্থিত ছিদ্রের মাধ্যমে অক্সিজেন গ্রহন করে । এই মুলগুলিকে স্বাসমূল বলে ।  

Question No. 47  লবণাম্বু উদ্ভিদে শ্বাসমূল থাকে কেন ?

Answer:- লবণাম্বু উদ্ভিদরা কর্দমাক্ত লবণাক্ত মাটিতে জন্মায় । এই মাটিতে অক্সিজেনের পরিমাণ কম থাকায় উদ্ভিদের শ্বাসকার্যের অসুবিধা হয় । এই অসুবিধা দূর করার জন্য উদ্ভিদের মূলের শাখাপ্রশাখাগুলি মাটির উপরে উঠে আসে এবং মূলে উপস্থিত ছিদ্র দ্বারা বায়ুমন্ডল থেকে অক্সিজেন গ্রহন করে । তাই লবণাম্বু উদ্ভিদে শ্বাসমূল থাকে । 

Question No. 48 শ্বাসঅঙ্গ কাকে বলে ?

Answer:- যে বিশেষ অঙ্গের দ্বারা প্রাণীদেহে শ্বাসকার্যের সময় পরিবেশ ও দেহরস বা রক্তের সাথে শ্বাসবায়ুর আদানপ্রদান বা গ্যাসীয় বিনিময় ঘটে তাকে শ্বাসঅঙ্গ বা শ্বাসযন্ত্র বলে ।     

Question No. 49 শ্বাসঅঙ্গের বৈশিষ্ট্য কী কী ?

Answer:- (i) শ্বাসঅঙ্গগুলি বিস্তৃত, আর্দ্র ও ব্যাপনে সক্ষম   (ii) শ্বাসঅঙ্গগুলি বেশি মাত্রার রক্তজালকপূর্ণ হওয়ায় রক্তসরবরাহ বেশি হয় ও গ্যাসীয় আদানপ্রদান ঘটে ,    (iii) শ্বাসঅঙ্গগুলির শ্বসন তলের ক্ষেত্রফল বেশি হয় । 

Question No. 50  মধ্যচ্ছদা কাকে বলে ?

Answer:-  স্তন্যপায়ী প্রাণীদের বক্ষগহ্বর ও উদরগহ্বরের মাঝখানে অবস্থিত অংশত পেশি ও অংশত টেনডন দ্বারা গঠিত যে ব্যবধায়ক পর্দা বক্ষগহ্বরের আয়তন কমিয়ে ও বাড়িয়ে শ্বাসকার্যে সাহায্য করে তাকে মধ্যচ্ছদা বলে ।

Question No. 51  অ্যালভিওলাই কী ?

Answer:- ফুসফুসের যে অসংখ্য সুক্ষ্ম সুক্ষ্ম রক্তজালক পরিবেষ্টিত বায়ু প্রকোষ্ঠে গ্যাসীয় আদানপ্রদান ঘটে তাদের অ্যালভিওলাই বলে । অ্যালভিওলাইকে ফুসফুসের একক বলে ।

Question No. 52   শ্বাসরঞ্জক কাকে বলে ? উদাহরণ দাও  ।

Answer:- যে সমস্ত প্রোটিনযুক্ত রঞ্জক পদার্থগুলি শিথিল রাসায়নিক যৌগরূপে শ্বাসবায়ু (O2 ও CO2) পরিবহন করে তাদের শ্বাসরঞ্জক বলে । যেমন : হিমোগ্লোবিন ও হিমোসায়নিন ।

Question No. 53  অতিরিক্ত বায়ুথলি বা এয়ার স্যাক কাকে বলে ?

Answer:- পাখিদের ফুসফুসের সঙ্গে প্রায় রক্তজালকবিহীন কতকগুলি বায়ুপূর্ণ থলি থাকে যা শ্বাসকার্যের সময় ফুসফুসে অতিরিক্ত অক্সিজেন (O2) সরবরাহ করে । এদের অতিরিক্ত বায়ুথলি বা এয়ার স্যাক বলে । পায়রার অতিরিক্ত বায়ুথলি নয়টি ।

Question No. 54  ভেজা ত্বক ও ফুলকার সাহায্যে শ্বাসকার্য চালায় এমন দুটি প্রাণীর নাম কী ?

Answer:- ভেজা ত্বকের সাহায্যে শ্বাসকার্য চালায় কেঁচো ও জোঁক । ফুলকার সাহায্যে শ্বাসকার্য চালায় মাছ ।

Question No. 55  অতিরিক্ত শ্বাসযন্ত্র কাকে বলে ?

Answer:-  কই, সিঙি, মাগুর  প্রভৃতি জিওল মাছের ফুলকা ছাড়া যে বিশেষ শ্বাসযন্ত্রের মাধ্যমে বায়ুর অক্সিজেন গ্রহন করতে পারে তাকে অতিরিক্ত শ্বাসযন্ত্র বলে ।

Question No. 56  বাজারে  রুই ও কাতলা মাছ বেশির ভাগ মরা অবস্থায় পাওয়া যায় কিন্তু কই আর মাগুর মাছ বেশির ভাগ জীবন্ত থাকে — কারণ কি ?

Answer:- রুই ও কাতলা মাছের অতিরিক্ত শ্বাসযন্ত্র না থাকায় তারা বায়ুমন্ডলের অক্সিজেন (O2) গ্রহন করে শ্বাসকার্য চালাতে পারে না, তাই তারা মারা যায় । কিন্তু কই ও মাগুর মাছে অতিরিক্ত শ্বাসযন্ত্র থাকায় বায়ুমন্ডলের অক্সিজেন (O2) গ্রহন করে সহজেই শ্বাসকার্য চালাতে পারেএবং অনেকক্ষণ জীবন্ত থাকে । 

Question No. 57 পাখিদের ফুসফুসের সঙ্গে অতিরিক্ত বায়ুথলি বা এয়ার স্যাক থাকে কেন ? 

Answer:- আকাশে ক্রমাগত ওড়ার জন্য পাখিদের অধিক শক্তির দরকার । অধিক শক্তির জন্য প্রয়োজন অধিক অক্সিজেন । তাই বেশি অক্সিজেন ধারণের জন্য এদের ফুসফুসের সঙ্গে অতিরিক্ত বায়ুথলি বা এয়ার স্যাক যুক্ত থাকে ।

Question No. 58  কই, সিঙি, মাগুর মাছের অতিরিক্ত শ্বাসযন্ত্র কিরূপ ?

Answer:-   কই মাছের অতিরিক্ত শ্বাসযন্ত্র দেখতে গোলাপফুলের মতো । মাগুর মাছের অতিরিক্ত শ্বাসযন্ত্র কদমফুলের মতো বা শাখাপ্রশাখাযুক্ত বৃক্ষের মতো । সিঙি মাছের অতিরিক্ত শ্বাসযন্ত্র নলাকার ।

Question No. 59  জিওল  মাছ কী কারণে ডাঙ্গায় অনেকক্ষণ বেঁচে থাকে ?

Answer:-   জিওল মাছের (কই, সিঙি, মাগুর) অতিরিক্ত শ্বাসযন্ত্র থাকায় তারা বায়ুর অক্সিজেন গ্রহন করে শ্বাসকার্য চালাতে পারে । বায়ুর অক্সিজেন গ্রহন করার উপযোগী শ্বাসঅঙ্গ থাকায় তারা ডাঙায় অনেকক্ষণ বেঁচে থাকতে পারে ।

Question No. 60  কুনোব্যাঙের শ্বাসঅঙ্গগুলি কী কী ?

Answer:- কুনোব্যাঙের শ্বাসঅঙ্গগুলি হল —ফুসফুস, মুখবিবর-গলবিলীয় মিউকাস পর্দা ও ত্বক । ডাঙায় ফুসফুসের দ্বারা, জলে মুখবিবর-গলবিলীয় মিউকাস পর্দা দ্বারা ও শীতঘুমের সময় ত্বকের দ্বারা শ্বাসকার্য চালায় ।

Question No. 61  মানুষের দেহে কোন পথে বায়ুমন্ডলের অক্সিজেন ফুসফুসে প্রবেশ করে তা তীর চিহ্নের সাহায্যে দেখাও ।

Answer:-  ফুসফুসে O2 এর প্রবেশ (প্রশ্বাস) ।

বায়ুমন্ডলের O→ বহিঃনাসারন্ধ্র → নাসাপথ → অন্তঃনাসারন্ধ্র → নাসাগলবিল → গ্লটিস → স্বরযন্ত্র → ট্রাকিয়া → ক্রোমশাখা বা ব্রঙ্কাস → উপক্রোমশাখা বা ব্রঙ্কিওল → অ্যালভিওলাই 

Question No. 62  অধিক CO2 যুক্ত বায়ু কোন পথে ফুসফুস থেকে পরিবেশে নির্গত হয় তা তীর চিহ্নের সাহায্যে দেখাও ।

Answer:-  ফুসফুস থেকে CO2 নির্গমন (নিশ্বাস) ।

অ্যালভিওলাই → উপক্রোমশাখা বা ব্রঙ্কিওল → ক্রোমশাখা বা ব্রঙ্কাস → ট্রাকিয়া → স্বরযন্ত্র → গ্লটিস → নাসাগলবিল → অন্তঃনাসারন্ধ্র → নাসাপথ → বহিঃনাসারন্ধ্র → পরিবেশ

Question No. 63   প্রশ্বাস বায়ু ও নিশ্বাস বায়ুতে অক্সিজেনের শতকরা পরিমাণ কত ?

Answer:- প্রশ্বাস বায়ুতে অক্সিজেনের (O2) এর শতকরা পরিমাণ —20.94%  আর নিশ্বাস বায়ুতে অক্সিজেনের (O2) এর শতকরা পরিমাণ —16.4%

Question No. 64   প্রশ্বাস বায়ু ও নিশ্বাস বায়ুতে কার্বন ডাই-অক্সাইডের শতকরা পরিমাণ কত ?

Answer:- প্রশ্বাস বায়ুতে কার্বন ডাই-অক্সাইডের (CO2) এর শতকরা পরিমাণ —0.03%  আর নিশ্বাস বায়ুতে কার্বন ডাই-অক্সাইডের (CO2) এর শতকরা পরিমাণ —4.07%

Question No. 65  শ্বসন হার কী ?

Answer:- প্রতি মিনিটে যতবার শ্বাসক্রিয়া (একবার প্রশ্বাস ও একবার নিশ্বাস) সংঘটিত হয় তাকে শ্বসন হার বলে । স্বাভাবিক অবস্থায় প্রাপ্তবয়স্ক সুস্থ মানুষের শ্বাসহার 14 - 18 বার । পরিশ্রমকালে বা ব্যায়ামের ফলে শ্বসন হার বেড়ে যায় ।

Question No. 66   প্রশ্বাস ও নিশ্বাসকার্যে সাহায্যকারী পেশিগুলির নাম কী ? 

Answer:- প্রশ্বাসকার্যে সাহায্যকারী পেশিগুলির নাম হল মধ্যচ্ছদা বা ইন্টারকস্টাল পেশি (বহিস্থ ও অন্তঃস্থ উভেয়ই) ।

নিশ্বাসকার্যে সাহায্যকারী পেশিগুলির নাম স্কেপুলার ইলিভেটর, স্কেলেনি ।

Question No. 67  পেশির  ক্লান্তি বলতে কী বোঝ ?   অথবা বেশি পরিশ্রম করলে পেশি ক্লান্ত হয়ে পড়ে কেন ?

Answer:-  মানুষের ঐচ্ছিক পেশিকোষে অতিরিক্ত পরিশ্রমকালে অক্সিজেনের অভাব ঘটায় অবাত শ্বসন হয় ও ল্যাকটিক অ্যাসিড পেশিকোষে জমতে থাকে । এর ফলে অম্লতা বৃদ্ধি পাওয়ায় পেশিকোষের সংকুচিত হবার ক্ষমতা লোপ পায় । একে পেশির ক্লান্তি বলে ।

    কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিলে পেশীকলা থেকে ল্যাকটিক অ্যাসিড দূরীভূত হয় , ফলে আবার পেশি সক্রিয় হয় ও পেশির ক্লান্তি দূর হয় ।

Question No. 68  সন্ধান প্রক্রিয়ার ফলে দ্রবণটি গেঁজে ওঠে কেন ?

Answer:-  কোহল সন্ধান প্রক্রিয়ায় গ্লুকোজ বা শর্করার দ্রবণ ঈস্ট নামক ছত্রাকের উপস্থিতিতে ইথাইল অ্যালকোহল ও CO2 উৎপন্ন করে । উৎপন্ন CO2 অসংখ্য বুদবুদের আকারে নির্গত হয় বলে দ্রবণটি গেঁজে ওঠে ।

Question No. 69 প্লুরা কী এবং এর কাজ কী ?

Answer:-  মানুষের ফুসফুসের আবরণকে প্লুরা বলে । এর দুটি স্তর —ফুসফুস সংলগ্ন ভিতরের স্তরটি হল ভিসেরাল প্লুরা এবং বক্ষসংলগ্ন বাহিরের স্তরটি হল প্যারাইটাল প্লুরা ।

   প্লুরা (i) ফুসফুসকে বাইরের আঘাত থেকে রক্ষা করে   (ii) শ্বাসকার্যের সময় বক্ষপিঞ্জরের ঘর্ষণজনিত আঘাত থেকে ফুসফুসকে রক্ষা করে ।

Question No. 70  শ্বসন ও পুষ্টি কিরূপে সম্পর্কিত ?

Answer:- শ্বসন ও পুষ্টি পরস্পর সম্পর্কযুক্ত দুটি পদ্ধতি । করণ — জীবদেহে গৃহিত খাদ্য পরিপাক, শোষণ ও আত্তীকরণের মাধ্যমে প্রতিটি দেহকোষে গ্লুকোজ, অ্যামিনো অ্যাসিড ও ফ্যাট (শ্বসন বস্তু) সরবরাহ হয় । শ্বসনে এই খাদ্য উপাদান বা শ্বসন বস্তুর জারণ ঘটে শক্তি মুক্ত হয় । সুতরাং পুষ্টি পদ্ধতির জন্য প্রয়োজনীয় শক্তির যোগান দেয় শ্বসন ।

Question No. 71  দ্বিশ্বসন কী ?

Answer:- পাখিদের ক্ষেত্রে একই বায়ুর দ্বারা প্রশ্বাসের সময় (ফুসফুসের বায়ু দ্বারা) একবার এবং নিশ্বাসের সময় (বায়ু থলির বায়ু দ্বারা) আর একবার মোট দুইবার ফুসফুসে গ্যাসীয় বিনিময় ঘটে বলে পাখিদের শ্বসনকে দ্বিশ্বসন বলে । 

Question No. 72 শ্বসন সমস্ত জীবের পক্ষে অপরিহার্য কেন ?

Answer:- প্রত্যেক জীবদেহে নানাপ্রকার জীবজ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয় । এই জীবজ ক্রিয়াগুলি সম্পন্ন হওয়ার জন্য শক্তির প্রয়োজন । জীবদেহে শ্বসন ক্রিয়ার সময় খাদ্যস্থ স্থৈতিক শক্তি তাপশক্তিরূপে মুক্ত হয়ে জীবজ ক্রিয়াগুলি নিয়ন্ত্রণ করে । সুতরাং শক্তি উৎপাদনের জন্য সমস্ত জীবের পক্ষে শ্বসন অপরিহার্য ।

Question No. 73  পরিশ্রম করলে শ্বাসকার্যের হার বৃদ্ধি পায় কেন ? অথবা দৌড়লে হাঁফাই কেন ?

Answer:-  অধিক পরিশ্রম করলে বিপাক হার বেড়ে যাওয়ার জন্য শক্তির চাহিদা বেড়ে যায় । এই শক্তির চাহিদা মেটানোর জন্য কোষের মধ্যে বেশি পরিমাণ খাদ্যের জারণ ঘটে এবং এর জন্য দ্রুত অক্সিজেনের প্রয়োজন হয় । এই কারণে শ্বাসকার্যের হার বৃদ্ধি পায় । শ্বাসকার্যের হার বৃদ্ধি পাওয়ায় দ্রুত অতিরিক্ত অক্সিজেন নিতে হয় বলে আমরা হাঁফাই ।

Question No. 74 CO2 — O2 বিনিময় বা আদানপ্রদানের সঙ্গে জড়িত উদ্ভিদ অঙ্গগুলির নাম লেখো । 

Answer:- (i) পত্ররন্ধ্র (উদ্ভিদের পাতার ত্বক ও কচি কান্ডে অবস্থিত),   (ii) লেন্টিসেল (গুল্ম ও বৃক্ষ জাতীয় উদ্ভিদের কাণ্ডের ত্বকে)    (iii) নিউম্যাটোফোর বা শ্বাসমূল (লবনাম্বু উদ্ভিদ) ।

Question No. 75 শ্বাসনল কী ? এটি কোথায় দেখা যায় ?

Answer:- সিঙি মাছের ফুলকার পিছন দিক থেকে দেহকাণ্ডের দু'পাশে পৃষ্ঠপাখনা পর্যন্ত বিস্তৃত নলাকার অতিরিক্ত শ্বাসযন্ত্রটি হল শ্বাসনল ।

Question No. 76 সবুজ গাছ কীভাবে শ্বাসক্রিয়ায় সাহায্য করে ?

Answer:- সবুজ গাছ সালোকসংশ্লেষের সময় পরিবেশ থেকে যত অণু CO2 গ্রহন করে ঠিক তত অণু O2 পরিবেশে নির্গত করে । পরিবেশে নির্গত এই অক্সিজেনের সাহায্যেই প্রাণীরা শ্বাসক্রিয়া চালায় । অর্থাৎ সবুজ গাছ সালোকসংশ্লেষে উপজাত রূপে যে অক্সিজেন (O2) নির্গত করে তা প্রাণীরা তথা সকল জীবের শ্বাসক্রিয়া চালাতে সাহায্য করে ।

Question No. 77  নর্দমার জলে তেল ঢেলে দিলে মশার লার্ভাগুলি মারা যায় কেন ?

Answer:-  মশার লার্ভা শ্বাস সাইফনের সাহায্যে শ্বাসকার্য চালায় ।  নর্দমার জলে তেল ঢেলে দিলে তা একটি অপ্রবেশ্য স্তর সৃষ্টি করে ও অক্সিজেন প্রবেশ করতে পারে না বলে শ্বাসকার্য চালাতে পারে না । তাই লার্ভাগুলি মারে যায় ।

Question No. 78  শ্বাসকার্য ও শ্বসনের সম্পর্ক কী ?

Answer:-  শ্বাসকার্য হল একটি যান্ত্রিক প্রক্রিয়া যার দ্বারা পরিবেশের অধিক O2 যুক্ত বায়ু শ্বাসঅঙ্গে প্রবেশ করে ও অধিক CO2 যুক্ত বায়ু শ্বাসঅঙ্গের মাধ্যমে পরিবেশে নির্গত হয় । শ্বাসকার্যের মাধ্যমে গৃহিত O2 কোষে কোষে প্রবেশ করে খাদ্যবস্তুকে জারিত করে শক্তির মুক্তি ঘটায় ও CO2 উৎপন্ন করে । অর্থাৎ শ্বাসকার্যই দেহে O2 এর সরবরাহ বজায় রাখে ও দেহে উৎপন্ন CO2 কে নির্গত করতে সাহায্য করে । দেহে O2 সরবরাহ করে খাদ্যকে জারিত করা, শক্তির মুক্তি ঘটানো ও CO2 নির্গত করতে শ্বাসকার্য ও শ্বসন অবিচ্ছেদ্যভাবে সম্পর্কযুক্ত । 

*****

Related Items

শ্বসন (Respiration)

যে জৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় জীবকোষস্থ খাদ্যবস্তু (শ্বসন বস্তু) মুক্ত অক্সিজেনের উপস্থিতিতে বা অনুপস্থিতিতে উৎসেচকের সহায়তায় জারিত হয়ে কার্বন ডাই-অক্সাইড, জল (কখনো ইথাইল অ্যালকোহল বা ল্যাকটিক অ্যাসিড) উৎপন্ন করে এবং খাদ্যে আবদ্ধ স্থৈতিক শক্তি গতি শক্তি বা তাপশক্তিতে ...

সালোকসংশ্লেষ (Photosynthesis)

যে শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ায় ক্লোরোফিলযুক্ত কোষে আলোর উপস্থিতিতে পরিবেশ থেকে শোষিত জল ও গৃহিত কার্বন ডাই-অক্সাইডের আলোক রাসায়নিক ও জৈব রাসায়নিক বিক্রিয়ার ফলে সরল শর্করা (গ্লুকোজ) সংশ্লেষিত হয় ও উৎপন্ন খাদ্যে সৌরশক্তি স্থিতিশক্তি রূপে আবদ্ধ হয় এবং উপজাত বস্তু ..

মানুষের গমন পদ্ধতি

গমন অঙ্গের নাম, গমন পদ্ধতির নাম, মানুষের গমনে সহায়ক অস্থি সমূহ , মেরুদণ্ড, শ্রোণীচক্র, পায়ের অস্থি , ফ্লেক্সর পেশী, এক্সটেনসর পেশী, অ্যাডাকটর পেশী , মানুষের গমনে সহায়ক অস্থি সন্ধি সমূহ , মানুষের গমনে সহায়ক পেশী , দ্বিপদ গমন ক্রিয়া । ...

প্রাণীদের গমন

প্রাণীদের গমন , প্রাণীদের গমন অঙ্গ সম্পর্কে সাধারণ ধারণা - গমনের সময় প্রাণীরা কোনো না কোনো অঙ্গ বা অঙ্গাণু ব্যবহার করে। গমনে সাহায্যকারী অঙ্গকে গমন অঙ্গ বলে। মানুষের হাত ও পা , তিমির প্যাডেল , ব্যাঙের পা , পাখির ডানা , হাঁসের লিপ্ত পদ , শামুকের মাংসল পদ ...

মাছের গমন (Locomotion of Fish)

গমন অঙ্গের নাম, গমন পদ্ধতির নাম, গমন পদ্ধতি - মাছের সাতটি পাখনা আছে। একটি পৃষ্ঠপাখনা, একটি পায়ুপাখনা, একটি পুচ্ছপাখনা এবং একজোড়া করে বক্ষ ও শ্রোণী পাখনা। বক্ষপাখনার সাহায্যে মাছ জলের গভীরে যেতে পারে এবং শ্রোণীপাখনার সাহায্যে ...