পোশাক-পরিচ্ছদের ইতিহাস (History of Dress & Costume)

Submitted by avimanyu pramanik on Tue, 09/22/2020 - 11:00


পোশাক-পরিচ্ছদের ইতিহাস : প্রাচীনকাল থেকে শুরু করে বর্তমানকাল পর্যন্ত মানুষের পোশাক-পরচ্ছদে নানা বিবর্তন ও পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয় । পোষাক-পরিচ্ছদ পরিধান করা প্রতিটি সভ্য মানবসমাজের অন্যতম বৈশিষ্ট্য । সামগ্রিক ইতিহাস চর্চার প্রয়োজনে পোষাক-পরিচ্ছদের ইতিহাসচর্চারও প্রয়োজন রয়েছে ।  মানুষের সামাজিক অবস্থান, অর্থনৈতিক অবস্থান, রাজনৈতিক অবস্থানসহ পছন্দ-অপছন্দের নানা দিক পোশাক-পরিচ্ছদের মধ্যে দিয়ে ফুটে ওঠে । অভিজাত, ধনী গরিব কৃষক ও শ্রমিক প্রভৃতি বিভিন্ন মানুষের পোশকের মান পৃথক হয় । পোশাক-পরিচ্ছদ থেকে সংশ্লিষ্ট জনগোষ্ঠীর পরিচয় পাওয়া যায় । আবার কোন সমাজের সামাজিক বিধিনিষেধ কেমন ছিল, সেই সমাজ কতটা প্রগতিশীল বা রক্ষনশীল ছিল, সমাজে লিঙ্গবৈষম্য ছিল কিনা প্রভৃতি সম্পর্কে সেই সমাজের মানুষের পোশাক-পরিচ্ছদ থেকে জানা যায় । কোনো সংস্কৃতি অন্য কোনো সমাজের সংস্কৃতি দ্বারা প্রভাবিত ছিল কিনা বা কতটা প্রভাবিত ছিল, তা সেই সমাজের মানুষের পোশাক-পরিচ্ছদ থেকে বোঝা যায় । যেমন— ঔপনিবেশিক শাসনকালে ভারতীয়দের পোশাক-পরিচ্ছদের ওপর পাশ্চাত্যের পোশাক-পরিচ্ছদের ব্যাপক প্রভাব পড়ে । পোশাক-পরিচ্ছদ জনগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক অবস্থার পরিচায়ক । যেমন, আদিবাসী কৃষক এবং শহুরে বাবুদের পৃথক পৃথক পোশাক-পরিচ্ছদ উভয় গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক পার্থক্যের পরিচয় বহন করে । উন্নত পোশাক-পরিচ্ছদ তৈরীর জন্য উন্নত মানের প্রযুক্তির প্রয়োজন হয় তাই কোনো জনগোষ্ঠীর পোশাক-পরিচ্ছদের উৎকর্ষতা দেখে সেই জনগোষ্ঠীর ব্যবহৃত প্রযুক্তির অগ্রগতি সম্পর্কে আভাষ পাওয়া যায় ।

মধ্যযুগের ফ্রান্সের নাগরিকরা সামাজিক পদমর্যাদা অনুযায়ী পোশাক পরিধান করত । কেবলমাত্র রাজপরিবারের সদস্যরা-ই দামি পোশাক পরতে পারত । ফ্রান্সে যারা লম্বা মোজা বা ব্রিচেস পরতে পারত না, তারা সাঁ কুলোৎ নামে পরিচিত ছিল । শিল্পবিপ্লবের ফলে পোশাকে ইউরোপীয় প্রভাব বৃদ্ধি পায় । ভারতে বিত্তবান পারসিকরাই প্রথম পাশ্চাত্য পোশাক পরা শুরু করে । পারসিক রীতির অনুসরণে বাংলায় ব্রাহ্মসমাজের নারীরা শাড়ি পরা চালু করে, তার নাম হয় 'ব্রাহ্মিকা শাড়ি' । মহাত্মা গান্ধীর জীবনের বিভিন্ন পর্বে বিভিন্ন পোশাক তাঁর ব্যক্তিত্বের ও জাতীয়তাবাদের প্রতীক হয়ে ওঠে । তাঁর ব্যবহৃত টুপি বা গান্ধি টুপি সমকালীন জাতীয় নেতৃবর্গের কাছে ভীষণ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে । সৌদামিনি খাস্তগির রচিত 'স্ত্রীলোকের পরিচ্ছদ', সি কেশবের আত্মজীবনী 'জীবিত সমরম', এম্মা টারলো রচিত 'ক্লোথিং ম্যাটারস ড্রেস অ্যান্ড আইডেনটিটি ইন ইন্ডিয়া' প্রভৃতি পোশাক-পরিচ্ছদের ওপর উল্লেখযোগ্য কাজ ।

*****

Comments

Related Items

শ্রীরামপুর মিশন প্রেস কিভাবে একটি অগ্রনী মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানে পরিণত হল ?

প্রশ্ন : শ্রীরামপুর মিশন প্রেস কিভাবে একটি অগ্রনী মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানে পরিণত হল ?

উঃ- ১৮০০ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৮৩৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ৩৮ বছর বাংলা মুদ্রণ ও প্রকাশনায় শ্রীরামপুর মিশনের অবদান খুবই গুরুত্বপূর্ণ ।

বাংলায় মুদ্রণ শিল্পের বিকাশে গঙ্গাকিশোর ভট্টাচার্যের কীরূপ অবদান ছিল ?

প্রশ্ন : বাংলায় মুদ্রণ শিল্পের বিকাশে গঙ্গাকিশোর ভট্টাচার্যের কীরূপ অবদান ছিল ?

১৮৫৭ -এর মহাবিদ্রোহকে কি সামন্ত-শ্রেণির বিদ্রোহ বলা যায় ?

প্রশ্ন : ১৮৫৭ -এর মহাবিদ্রোহকে কি সামন্ত-শ্রেণির বিদ্রোহ বলা যায় ?

উঃ- ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহের সময় থেকেই এই বিদ্রোহের চরিত্র বা প্রকৃতি নিয়ে বিভিন্ন ধারার ইতিহাসচর্চার নানা ধরনের গবেষণালব্দ মতামত পাওয়া যায় ।

কী উদ্দেশ্যে ঔপনিবেশিক সরকার অরণ্য আইন প্রণয়ন করেন ?

প্রশ্ন : কী উদ্দেশ্যে ঔপনিবেশিক সরকার অরণ্য আইন প্রণয়ন করেন ?

এদেশের চিকিৎসাবিদ্যার ক্ষেত্রে কলিকাতা মেডিকেল কলেজের কীরূপ ভূমিকা ছিল ?

প্রশ্ন : এদেশের চিকিৎসাবিদ্যার ক্ষেত্রে কলিকাতা মেডিকেল কলেজের কীরূপ ভূমিকা ছিল ?