উনিশ শতকের বাংলা — শিক্ষা সংস্কার : বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা:-
ভারতে ব্রিটিশ শাসনের সূচনাপর্বে বাংলা তথা ভারতের শিক্ষার্থীরা পাঠশালা, টোল, মক্তব ও মাদ্রাসা থেকে সংস্কৃত, আরবি ও ফারসি -র মাধ্যমে শিক্ষা গ্রহণ করত । এসব প্রতিষ্ঠানে মূলত ধর্মীয় কাহিনি, সংস্কৃত, আরবি, ফারসি প্রভৃতি ভাষা এবং সাধারণ কিছু বিষয়ের প্রাথমিক শিক্ষা দেওয়া হত । ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি প্রথম দিকে ভারতের শিক্ষা ব্যবস্থায় হস্তক্ষেপ করতে চায় নি । কারণ (১) তারা মনে করত ভারতীয়দের শিক্ষার অগ্রগতির জন্য ব্রিটিশদের অর্থব্যয়ের কোনো প্রয়োজন নেই । (২) ভারতবর্ষের ধর্মভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থায় হস্তক্ষেপ করলে তারা সরকারের ওপর ক্ষুব্ধ হতে পারে । (৩) ভারতীয়রা আধুনিক পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত হলে ভাবিষ্যতে তাদের মধ্যে স্বাধীনতার চেতনা জেগে উঠতে পারে ।
ইংরেজরা অত্যন্ত বাস্তব দুটি কারণে এদেশের শিক্ষা নিয়ে চিন্তাভাবনা শুরু করে । প্রথমত তারা বুঝতে পারে প্রশাসনের উচ্চপদে কোম্পানির কর্মচারীরা থাকলেও প্রশাসনের নিম্নস্তর চালানোর জন্য উপযুক্ত লোকবল তাদের নেই । ভারতীয় কর্মচারীদের ওপর তাদের নির্ভর করতেই হবে । ইংরেজ আমলে প্রশাসনের ভাষা হিসেবে প্রচলিত ফারসি ভাষার জায়গায় ইংরেজি ভাষা স্থান দখল করে । কাজেই ভারতীয়দের জীবিকা নির্বাহের জন্য ন্যূনতম ইংরেজি জ্ঞান থাকা প্রয়োজন । শুধু জ্ঞানার্জন নয়, নিছক কেরানি তৈরির প্রয়োজনে কোম্পানির শাসকরা ইংরেজি শিক্ষাবিস্তারে উদ্যোগী হয় । ইংরেজ আমলে শিক্ষাবিস্তার বলতে ইংরেজি শিক্ষাবিস্তারকেই বোঝাত । দ্বিতীয়ত ভারতে ইংরেজ শাসন দীর্ঘস্থায়ী করতে হলে এদেশের মানুষকেই মনেপ্রাণে ইংরেজ করে তুলতে হবে ।
বড়লাট লর্ড ওয়ারেন হেস্টিংস -এর আমলে সর্বপ্রথম বিদ্যাচর্চার ওপর জোর দেওয়া শুরু হয় । প্রাচ্যবিদ্যার পৃষ্ঠপোষক হিসেবে হেস্টিংস আরবি-ফরাসি ও মুসলিম আইনচর্চার লক্ষ্যে ১৭৮১ খ্রিস্টাব্দে 'কলকাতা মাদ্রাসা' গড়ে তোলেন । প্রাচ্য বিদ্যাচর্চার লক্ষ্যে সুপ্রিমকোর্টের বিচারপতি উইলিয়াম জোন্সের উদ্যোগে ১৭৮৪ খ্রিস্টাব্দের ১৫ই জানুয়ারী 'এশিয়াটিক সোসাইটি' গড়ে ওঠে । ভারতে কর্মরত উচ্চপদস্থ ইংরেজ কর্মচারীদের ভারতীয় ভাষা, আইন, সংস্কৃতি ও রীতিনীতি সম্পর্কে অবহিত করানোর উদ্দেশ্যে ব্রিটিশ ভারতের গভর্নর-জেনারেল লর্ড ওয়েলেসলি কলকাতায় ১৮০০ খ্রিস্টাব্দের ১০ জুলাই 'ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ' গড়ে তোলেন ।
****