Submitted by avimanyu pramanik on Tue, 01/12/2021 - 19:38

কলকাতা বিজ্ঞান কলেজ (The Calcutta Science College) :-

১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে লর্ড কার্জনের বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে বাংলায় স্বদেশি ও বয়কট আন্দোলন অত্যন্ত শক্তিশালী হয়ে ওঠে । এই সময় স্বদেশি বিজ্ঞানচর্চার প্রসার ঘটানোর উদ্দেশ্যে ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দের ২৭শে মার্চ কলকাতা বিজ্ঞান কলেজের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপিত হয় । উপাচার্য আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের উদ্যোগে এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থসাহায্যে 'কলকাতা বিজ্ঞান কলেজ' -র গৃহনির্মাণ কার্য শুরু হয় । ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা বিজ্ঞান কলেজের অধীনে রসায়ন বিভাগ এবং ১৯১৬ খ্রিস্টাব্দে বিশুদ্ধ পদার্থবিদ্যা বিভাগের সূচনা হয় । স্থানাভাবে ১৯১৮ খ্রিস্টাব্দে ৩৫, বালিগঞ্জ সার্কুলার রোডে উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগ এবং ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে প্রাণীবিদ্যা বিভাগ খোলা হয় । ইতিপূর্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিলে শিক্ষাদরদি স্যার তারকনাথ পালিত সাত লক্ষ টাকা এবং আইনবিদ স্যার রাসবিহারী ঘোষ ১০ লক্ষ টাকা দান করেন । এই দানের টাকায় ফলিত গণিত, পদার্থবিদ্যা, রসায়নশাস্ত্র এবং কৃষিমূলক উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগে চারটি অধ্যাপক পদ তৈরি করা হয় এবং গবেষণায় উৎসাহ দেওয়ার জন্য গবেষক ছাত্রদের ৮টি বৃত্তির ব্যবস্থা রাখা হয় । কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবিচ্ছেদ্য অংশ হলেও কলকাতা বিজ্ঞান কলেজের কোনো প্রাদেশিক চরিত্র ছিল না । সারা ভারতের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অধ্যাপনা, গবেষণা এবং পড়াশোনার জন্য অধ্যাপক, গবেষক এবং ছাত্রগণ কলকাতা বিজ্ঞান কলেজে যোগ দেন । সেই যুগের বহু স্বনামধন্য শিক্ষক ও বিজ্ঞানী কলকাতা বিজ্ঞান কলেজে শিক্ষাদান করেন । রসায়ন বিভাগের অধ্যাপকদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন প্রফুল্লচন্দ্র রায়, প্রফুল্লচন্দ্র মিত্র, জ্ঞানেন্দ্রচন্দ্র ঘোষ, জ্ঞানেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়, নীলরতন ধর, পুলিনবিহারী সরকার প্রমুখ । বিশুদ্ধ পদার্থবিদ্যা বিভাগে অধ্যাপকগণ ছিলেন সি ভি রমন, দেবেন্দ্রনাথ বসু, যোগেশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়, ফনীন্দ্রনাথ ঘোষ, সত্যেন্দ্রনাথ বসু, মেঘনাথ সাহা প্রমুখ ।

কলকাতা বিজ্ঞান কলেজের বিভিন্ন শিক্ষক দেশ ও সমাজ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন । এখানকার শিক্ষক আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায় 'বেঙ্গল কেমিক্যালস' প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দেশের যুবসমাজকে স্বনির্ভর হতে উৎসাহিত করেন । বিজ্ঞানী সত্যেন্দ্রনাথ বসু এবং মেঘনাদ সাহা স্বাধীন ভারতে 'জাতীয় পরিকল্পনা কমিশন' -এ যুক্ত থেকে দেশ গঠনের কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন । ঔপনিবেশিক আমলে 'কলকাতা বিজ্ঞান কলেজ' দেশীয় বিজ্ঞানচর্চার ক্ষেত্রে এক নবযুগের সূচনা করে । বিশিষ্ট অধ্যাপকদের উপস্থিতিতে এবং কৃতি ছাত্রদের সাফল্যে পৃথিবীর সর্বত্র এই প্রতিষ্ঠানের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে ।

*****

Comments

Related Items

শ্রীরামপুর মিশন প্রেস কিভাবে একটি অগ্রনী মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানে পরিণত হল ?

প্রশ্ন : শ্রীরামপুর মিশন প্রেস কিভাবে একটি অগ্রনী মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানে পরিণত হল ?

উঃ- ১৮০০ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৮৩৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ৩৮ বছর বাংলা মুদ্রণ ও প্রকাশনায় শ্রীরামপুর মিশনের অবদান খুবই গুরুত্বপূর্ণ ।

বাংলায় মুদ্রণ শিল্পের বিকাশে গঙ্গাকিশোর ভট্টাচার্যের কীরূপ অবদান ছিল ?

প্রশ্ন : বাংলায় মুদ্রণ শিল্পের বিকাশে গঙ্গাকিশোর ভট্টাচার্যের কীরূপ অবদান ছিল ?

১৮৫৭ -এর মহাবিদ্রোহকে কি সামন্ত-শ্রেণির বিদ্রোহ বলা যায় ?

প্রশ্ন : ১৮৫৭ -এর মহাবিদ্রোহকে কি সামন্ত-শ্রেণির বিদ্রোহ বলা যায় ?

উঃ- ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহের সময় থেকেই এই বিদ্রোহের চরিত্র বা প্রকৃতি নিয়ে বিভিন্ন ধারার ইতিহাসচর্চার নানা ধরনের গবেষণালব্দ মতামত পাওয়া যায় ।

কী উদ্দেশ্যে ঔপনিবেশিক সরকার অরণ্য আইন প্রণয়ন করেন ?

প্রশ্ন : কী উদ্দেশ্যে ঔপনিবেশিক সরকার অরণ্য আইন প্রণয়ন করেন ?

এদেশের চিকিৎসাবিদ্যার ক্ষেত্রে কলিকাতা মেডিকেল কলেজের কীরূপ ভূমিকা ছিল ?

প্রশ্ন : এদেশের চিকিৎসাবিদ্যার ক্ষেত্রে কলিকাতা মেডিকেল কলেজের কীরূপ ভূমিকা ছিল ?