বসু বিজ্ঞান মন্দির (Bose Institute):-
ঔপনিবেশিক ভারতে আধুনিক বিজ্ঞানচর্চা ও বিজ্ঞান শিক্ষার বিকাশের উদ্দেশ্যে যেসকল প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে সেগুলির মধ্যে অন্যতম হল 'বসুবিজ্ঞান মন্দির' বা বোস ইনস্টিটিউট । ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দের ৩০শে নভেম্বর জগদীশচন্দ্র বসু ইংল্যান্ডের রয়্যাল ইন্সটিটিউশনের অনুকরণে এই 'বসুবিজ্ঞান মন্দির' প্রতিষ্ঠা করেন । আধুনিক ভারতের বিজ্ঞানচর্চার উৎকর্ষ বৃদ্ধিতে এই প্রতিষ্ঠান উল্লেখযোগ্য অবদান রাখে । বসুবিজ্ঞান মন্দির প্রতিষ্ঠা সম্পর্কে জগদীশচন্দ্র বলেন "আজ যাহা প্রতিষ্ঠা করিলাম তাহা মন্দির, কেবলমাত্র পরীক্ষাগার নহে ।" এই বিজ্ঞান প্রতিষ্ঠানটির মুখ্য উদ্দেশ্য হল বিজ্ঞানের অগ্রগতি এবং জ্ঞানের প্রসার ঘটানো । বসুবিজ্ঞান মন্দির প্রতিষ্ঠানটি সমকালীন বিশ্বে প্রথম সারির গবেষণা প্রতিষ্ঠান হয়ে ওঠে । বিজ্ঞানচর্চায় বসু বিজ্ঞান মন্দিরের অবদান আন্তর্জাতিক খ্যাতি লাভ করে । এখানকার গবেষকগণ পরবর্তীকালে ভারত তথা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে বিজ্ঞানচর্চায় খ্যাতি অর্জন করেছেন । বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয়ের গবেষণার পাশাপাশি বায়োফিজিকস অর্থাৎ বায়োলজি এবং ফিজিক্স -এর ওপরেও এখানে গবেষণার উদ্যোগ নেওয়া হয় । বসুবিজ্ঞান মন্দির পরিচালনার জন্য যে তত্ত্বাবধায়ক সমিতি গঠিত হয় তার অন্যতম সদস্যগণ ছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, সত্যেন্দ্রপ্রসন্ন সিংহ, নীলরতন সরকার, ভূপেন্দ্রনাথ বসু, সুধাংশুমোহন বসু, সতীশরঞ্জন দাশ, অবলা বসু ও জগদীশচন্দ্র নিজে । বসুবিজ্ঞান মন্দির প্রতিষ্ঠার পূর্বে জগদীশচন্দ্র বসু বিজ্ঞান গবেষণার ক্ষেত্রে নানা রকম বাধাবিঘ্নের সম্মুখীন হয়েছিলেন । সেজন্য তরুণতর বিজ্ঞানকর্মীরা যাতে তাঁর মতো সমস্যার সম্মুখীন না হন তার জন্য তিনি বসুবিজ্ঞান মন্দির গড়ে তোলেন । জগদীশচন্দ্র বসু বলেন বসুবিজ্ঞান মন্দিরে যে সমস্ত আবিষ্কার হবে তার সুফলে প্রত্যেকের অধিকার থাকবে । এই প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘ গবেষণার পর জগদীশচন্দ্র বসু 'ক্রেসকোগ্রাফ' যন্ত্র আবিষ্কার করেন ও এই যন্ত্রের সাহায্যে তিনি প্রমাণ করেন যে প্রাণীদের মত উদ্ভিদেরও প্রাণ এবং অনুভুতি শক্তি আছে । জগদীশচন্দ্র বসুর মৃত্যুর পর তাঁর ভাগ্নে দেবেন্দ্র মোহন বসু বসুবিজ্ঞান মন্দিরের অধিকর্তার দায়িত্বভার গ্রহণ করেন । বসুবিজ্ঞান মন্দিরের গবেষকরা ভারতে প্রথম কক্রফট-ওয়ালটন যন্ত্র, উইলসন চেম্বার প্রভৃতি তৈরি করেন ।
****