সিরাজ-উদ-দৌলা ও পলাশির যুদ্ধ

Submitted by avimanyu pramanik on Sat, 11/01/2014 - 10:34

সিরাজ-উদ-দৌলা ও পলাশির যুদ্ধ (Sirajuddowla and The Battle of Plassey) :

পলাশির যুদ্ধের দুটি দিক ছিল— (১) ইংরেজদের সঙ্গে সিরাজের বিরোধ ও (২) বাংলার মসনদ দখলে মিরজাফরের উচ্চাকাঙ্খা ।

(১) ইংরেজদের সঙ্গে সিরাজের বিরোধ : সিরাজের সঙ্গে ইংরেজদের সংঘর্ষের জন্য ইংরেজ ঐতিহাসিকরা সিরাজকেই দায়ী করেছেন । তাঁদের মতে, সিরাজের অহমিকা ও দম্ভ, অপরিমিত অর্থলোভ ও অহেতুক ইংরেজ বিরোধিতা ছিল এই সংঘর্ষের মুল কারণ । আধুনিক ঐতিহাসিকগণ এই বিশ্লেষণ গ্রহণযোগ্য বলে মনে করেন না । তাঁদের মতে ইংরেজদের উদ্ধত আচরণ ও নবাবের সার্বভৌম ক্ষমতার ওপর বিদেশি বণিকদের অবাঞ্ছিত হস্তক্ষেপেই এই সংঘর্ষকে অনিবার্য করে তোলে । ১৭৫৬ খ্রিষ্টাব্দে সিরাজের সিংহাসনে আরোহণের পর থেকেই ইংরেজরা তাঁর বিরুদ্ধাচারণ করছিল । অন্তত তিনটি ঘটনা এই প্রসঙ্গে উল্লেখ করা যেতে পারে ।  

(ক) সিরাজের আপত্তি সত্যেও ইংরেজরা অবৈধভাবে ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গ নির্মাণ ও সংস্কার করতে শুরু করে ।

(খ) ঢাকার দেওয়ান রাজবল্লভের পুত্র কৃষ্ণবল্লভ বহু ধনরত্ন নিয়ে কলকাতায় পালিয়ে এলে ইংরেজরা তাঁকে আশ্রয় দিয়ে অধিকারের সীমা লঙ্ঘন করেছিল ।

(গ) ইংরেজরা সিরাজের মাসি ঘসেটি বেগমকে সিরাজের বিরুদ্ধে সমর্থন করায় সিরাজ ইংরেজদের প্রতি অসন্তুষ্ট ছিলেন ।  

তা ছাড়া নতুন নবাবকে প্রচলিত রীতি অনুযায়ী কোনো উপঢৌকন বা শুভেচ্ছেসূচক বাণী না পাঠিয়ে ইংরেজরা অশালীন আচরণ করে । এই অসম্মানীয় আচরণ প্রদর্শন ছিল ইংরেজদের ঔদ্ধত্যের পরিচয় । সর্বোপরি ইংরেজরা ১৭১৭ খ্রিষ্টাব্দের ফরমান অপব্যবহার করায় সিরাজ তাঁদের ওপর বিরূপ ছিলেন ।  

(২) বাংলার মসনদ দখলে মিরজাফরের উচ্চাকাঙ্ক্ষা : মিরজাফর বাংলার তথা ভারতের ইতিহাসে একটি ঘৃণিত এবং নিন্দনীয় চরিত্র ।  আমাদের কাছে তিনি বিশ্বাসঘাতকতার প্রতীক । তবে এক নবাবকে সরিয়ে অন্য আর একজনের সিংহাসন দখল করা তখনকার দিনে কোনো অস্বাভাবিক ঘটনা ছিল না । স্বয়ং মুরশিদকুলি খান এবং আলিবর্দিও এই কাজ করেছিলেন । তবে তাঁরা তা করেছিল নিজ বাহুবলে এবং কোন বিদেশি শক্তির সাহায্য ছাড়াই । ইংরেজরা মিরজাফরের উচ্চাকাঙ্ক্ষা এবং সিরাজ বিরোধিতার সুযোগ নিয়ে নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থ করতে চেয়েছিল । আসলে সিরাজের সিংহাসন লাভ অনেকেই সহ্য করতে পারেনি । ইংরেজরা নতুন নবাবের এইসব সমস্যা ও বিরোধিতাকেই কাজে লাগিয়ে নিজেদের ব্যবসায়িক স্বার্থ রক্ষা করতে চেয়েছিল । সিরাজ যদি তাদের অবৈধ ব্যবসা মেনে নিতেন তাহলে হয়তো তারা বাংলার রাজনৈতিক পট পরিবর্তন নিয়ে মাথা ঘামাত না ।

*****

Related Items

সুলতানি ও মুঘল আমলের চিত্রকলা

একটি সময় ছিল যখন মনে করা হত সুলতানি আমলে চিত্রকলার কোনো চর্চা হত না । ইসলামে ছবি আঁকা নিষিদ্ধ ছিল । বর্তমানে এই ধারণা ভ্রান্ত বলে প্রমাণিত হয়েছে । আসলে ভারতে ইসলামের আর্বিভাবের ফলে যে সমন্বয়ী প্রক্রিয়ার সূত্রপাত হয়েছিল, তা ভারতের সংস্কৃতিকে গভীরভাবে ...

মুঘল যুগের স্থাপত্য

স্থাপত্য ও চিত্রকলার ইতিহাসে মুঘল যুগের অবদান স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে । নির্মাতা হিসাবে মুঘল সম্রাটদের খ্যাতি ছিল জগৎজোড়া । এই যুগের স্থাপত্য ভারতীয় ও পারস্য শিল্পরীতির সমন্বয়ে গড়ে উঠেছিল । মুঘল স্থাপত্যরীতির সুচনা হয় আকবরের সময়ে ...

সুলতানি যুগের স্থাপত্য

দিল্লির কুতুবমিনার (Qutb Minar) হল এয়োদশ শতকের মুসলিম স্থাপত্যের সবচেয়ে বড় নিদর্শন । সুফি সাধক কুতুবউদ্দিন বখতিয়ার কাকির প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ নিবেদনের উদ্দেশ্যে এটি নির্মিত হয়েছিল । কুতুবমিনারের নির্মাণ কার্য শুরু করেন কুতুবউদ্দিন আইবক এবং সম্পূর্ণ হয় ইলতুৎমিসের আমলে । ...

প্রাচীন ভারতীয় শিল্পরীতি ও মুসলিম শিল্পরীতির সংমিশ্রণ

প্রাচীন ভারতীয় শিল্পরীতি ও মুসলিম শিল্পরীতির সংমিশ্রণ :

ফার্গুসনের মতে, সুলতানি স্থাপত্যের প্রকৃতি ছিল ইন্দো-স্যারাসিনিক (Indo-Saracenic) বা পাঠান । আবার হ্যাভেলের মতে, এই শিল্পরীতির ‘দেহ ও আত্মা’ ছিল ভারতীয় । আসলে সুলতানি যুগের স্থাপত্য প্রাচীন ভারতীয় শিল্পরী

সুলতানি যুগে আঞ্চলিক ভাষা ও সাহিত্যের বিকাশ

সুলতানি ও মুঘল আমল ছিল বাংলা সাহিত্যের সুবর্ণময় যুগ । বিখ্যাত বৈষ্ণব কবি চণ্ডীদাস সম্ভবত চতুর্দশ শতকের শেষ দিকে বীরভূম জেলার নানুর গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেছিলেন । সমকালীন কবি বিদ্যাপতি মিথিলার অধিবাসী হলেও আদতে বাংলার কবি বলেই স্বীকৃত ছিলেন । ...