বক্সারের যুদ্ধ ও বক্সারের যুদ্ধের গুরুত্ব :
বক্সারের যুদ্ধ (The Battle of Buxar) : কাটোয়া, মুর্শিদাবাদ, গিরিয়া, সুটি, মুঙ্গের ও উদয়নালায় পরপর ছয়টি যুদ্ধে মিরকাশিম পরাজিত হন । এই অবস্থায় ১৭৬৩ খ্রিষ্টাব্দে মিরকাশিমকে সিংহাসনচ্যুত করে ইংরেজরা মিরজাফরকে আবার বাংলার মসনদে বসান । কিন্তু মিরকাশিম হাল না ছেড়ে মুঘল সম্রাট শাহ আলম ও অযোধ্যার নবাব সুজা-উদ-দৌলার সঙ্গে একযোগে ইংরেজদের মোকাবিলার জন্য বক্সারের প্রান্তরে মিলিত হন । ১৭৬৪ খ্রিস্টাব্দের ২২শে অক্টোবর বক্সারের যুদ্ধে এই মিলিত বাহিনীর চূড়ান্ত পরাজয় ঘটল ।
বক্সারের যুদ্ধের গুরুত্ব (Importance of The Battle of Buxar) : বক্সারের যুদ্ধ বাংলা তথা ভারতের ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ।
(১) পলাশির যুদ্ধে বাংলায় ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের গোড়াপত্তন হয়েছিল । কিন্তু ষড়যন্ত্র ও বিশ্বাসঘাতকতার মাধ্যমে পলাশির যুদ্ধের মীমাংসা হয়েছিল । ব্রিটিশ রণশক্তি ও কৌশলের কোনো পরিচয় সেখানে পাওয়া যায় নি । কাজেই কেবলমাত্র পলাশির যুদ্ধের ফলে বাংলায় ব্রিটিশ সাম্রাজ্য স্থাপিত হলে তা ইংরেজদের পক্ষে মর্যাদা হানিকর ও কলঙ্কজনক ঘটনা বলে বিবেচিত হত । কিন্তু বক্সারের যুদ্ধে ব্রিটিশ সামরিক প্রাধান্য স্বীকৃত ছিল । এই যুদ্ধ প্রমাণ করল শক্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েই ইংরেজরা বাংলা দখল করেছিল । পলাশির প্রান্তরে যার সূচনা, বক্সারে তার পরিপূর্ণতা ও পরিসমাপ্তি ।
(২) কেবল বাংলা নয়, বক্সারের যুদ্ধ জয়ে দিল্লি সহ প্রায় সমগ্র উত্তর ভারতে কোম্পানি সাম্রাজ্য স্থাপনের সুযোগ পায় । কিন্তু বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়ে তারা সে সুযোগ গ্রহণ করে নি । বাণিজ্যিক স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিয়ে তারা মুঘল সম্রাটকে তাঁর সিংহাসনের বিনিময়ে বাংলার দেওয়ানি লাভ করে । দেওয়ানি কোম্পানির আর্থিক স্বচ্ছলতার সহায়ক হয় ।
*****
- 11987 views