নবাব সিরাজের সাফল্য ও ব্যর্থতা এবং পলাশির যুদ্ধের গুরুত্ব :
সিরাজ-উদ-দৌলার সাফল্য ও ব্যর্থতা : প্রথমদিকে সিরাজ-উদ-দৌলার সাফল্য ছিল আশাতীত । তিনি বিনা রক্তপাতে মাসি ঘসেটি বেগমকে মুর্শিদাবাদ প্রাসাদে নজরবন্দি করেন । অপর প্রতিদ্বন্দ্বী আলিবর্দি খানের দ্বিতীয় কন্যার পুত্র পূর্ণিয়ার নবাব সৌকত জঙ্গকে মনিহারির যুদ্ধে পরাজিত করে সিংহাসন নিষ্কণ্টক করেন । তার আগেই তিনি ১৭৫৬ খ্রিষ্টাব্দের ২০শে জুন কলকাতা দখল করে ইংরেজদের উচিৎ শিক্ষা দেন । এই কলকাতা দখলের সঙ্গে বহু বিতর্কিত হলওয়েল উদ্ভাবিত অন্ধকূপ হত্যার কাহিনি প্রচলিত আছে । একটি রুদ্ধ কক্ষে ১৪৬ জন ইংরেজকে বন্দি করা হয়েছিল । জুন মাসের প্রচণ্ড গরমে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে নাকি এদের মধ্যে ১২৩ জনের মৃত্যু হয় । অনেক ঐতিহাসিকই এই কাহিনির সত্যতা সম্পর্কে প্রশ্ন তুলেছেন । অন্ধকূপ হত্যার জন্য সিরাজ-উদ-দৌলার কোন প্রত্যক্ষ দায়িত্ব ছিল বলে মনে করা হয় না । যাই হোক, সিরাজ-উদ-দৌলার এই সাফল্য ছিল কিন্তু সাময়িক । ইংরেজরা কলকাতা পুনরাধিকার করে ১৭৫৭ খ্রিষ্টাব্দের ৯ই ফেব্রুয়ারি সিরাজ-উদ-দৌলাকে আলিনগরের সন্ধি স্বাক্ষর করতে বাধ্য করে । পরবর্তী উল্লেখযোগ্য ঘটনা হল, ইংরেজদের হাতে ফরাসি অধ্যুষিত চন্দন নগরের পতন । ইতিমধ্যে মিরজাফরের নেতৃত্বে কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তি সিরাজ-উদ-দৌলাকে অপসারণের জন্য চক্রান্ত করে । ইংরেজরাও এই চক্রান্তের শরিক হন । এরপর ১৭৫৭ খ্রিষ্টাব্দের জুন মাসে পলাশির যুদ্ধে লর্ড কাইভের হাতে সিরাজ-উদ-দৌলার পরাজয় ঘটে । ইংরেজদের আজ্ঞাবহ পুতুল মিরজাফর বাংলার মসনদে বসেন ।
পলাশির যুদ্ধের গুরুত্ব : পলাশির যুদ্ধের গুরুত্ব নিয়ে আবেগের কোন অবকাশই নেই । এর ফলে আইনত বাংলার স্বাধীনতা লুপ্ত হয়নি বা বাংলায় ইংরেজ শাসক প্রবর্তিত হয়নি ।
(১) বাংলার শাসনে ইংরেজদের অদৃশ্য হাত : বাংলার নতুন নবাব হলেন মীরজাফর । তবে তিনি ইংরেজদের আজ্ঞাবহ । ফলে শাসনের দায়িত্ব না নিয়েও আসল ক্ষমতা চলে গেল ইংরেজদের হাতে । সেই অর্থে বাংলার আর স্বাধীনতা রইল না ।
(২) ইংরেজদের অবৈধ ব্যবসা : মিরজাফর ইংরেজদের অবৈধ ব্যবসা মেনে নিলেন । এর ফলস্বরূপ দেশীয় বণিকদের চরম ক্ষতি হল । কিন্তু মিরজাফরের কিছু করবার রইল না ।
(৩) পলাশির লুন্ঠন : কোম্পানির কর্মচারীদের লোভের সীমা-পরিসীমা ছিল না । বাংলার অফুরন্ত ধনসম্পদ তারা নানাভাবে লুন্ঠন করতে লাগল । নানা অজুহাতে তারা মিরজাফরের কাছ থেকে টাকা আদায় করতে থাকল । ফলে বাংলার জনগণের দুঃখ দুর্দশার সীমা রইল না । ১৭৬০ এর দশক তাই বাংলার ইতিহাসে ‘পলাশি লুন্ঠনের যুগ’ বলে পরিচিত হয়ে রইল । ইংরেজরা বুঝল রাজনৈতিক বিপ্লব ঘটানোর মতো লাভজনক ব্যবসা আর নেই । এই দিক দিয়ে বিচার করলে পলাশির যুদ্ধের রাজনৈতিক ফল অপেক্ষা অর্থনৈতিক ফল আরও গুরুত্বপূর্ণ ।
*****
- 1262 views