দেওয়ানি লাভ ও দেওয়ানি লাভের গুরুত্ব

Submitted by avimanyu pramanik on Sun, 11/02/2014 - 19:48

দেওয়ানি লাভ ও দেওয়ানি লাভের গুরুত্ব :

দেওয়ানি লাভ (The Grant of Diwani) : বক্সারের যুদ্ধে ত্রিশক্তির পরাজয়ের পর প্রায় সমগ্র উত্তর ভারত জুড়ে ইংরেজদের নিরঙ্কুশ প্রাধান্য স্থাপনের সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়ে ওঠে । এই অবস্থায় ১৭৬৫ খ্রিষ্টাব্দের মে মাসে বাংলায় ক্লাইভের পুনরাগমন ঘটে । ১৭৬৫ খ্রিস্টাব্দের এলাহাবাদ চুক্তিতে ৫০ লক্ষ টাকার বিনিময়ে কারাএলাহাবাদ ছাড়া সমগ্র অযোধ্যা সুজা-উদ-দৌলাকে ফিরিয়ে দেওয়া হয় । ক্লাইভ শাহ আলমকেও দিল্লির সিংহাসন ফিরিয়ে দেন । ইংরেজদের প্রতি কৃতজ্ঞতার নিদর্শন স্বরূপ কারা ও এলাহাবাদের বিনিময়ে এবং বাৎসরিক ২৬ লক্ষ টাকার করদানের শর্তে সম্রাট ইংরেজদের বাংলা, বিহার ও ওড়িশার দেওয়ানির দায়িত্ব দেন ।

দেওয়ানি লাভের গুরুত্ব (The Grant of Diwani and Its Importance) :

(১) এই ঘটনা বাংলায় ইংরেজ রাজত্ব স্থাপনের পথে আরও একটি বলিষ্ঠ পদক্ষেপ । দেওয়ানির অর্থ ছিল রাজস্ব আদায় ও দেওয়ানি বিচারের অধিকার । মুঘল সম্রাটের হাত থেকে দেওয়ানি গ্রহণের তাৎপর্য ছিল বাংলার ব্রিটিশ শাসনের আইনসম্মত ও আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি । মুঘল রাষ্ট্র কাঠামো অনুসারে বাংলা ছিল দিল্লির অধীন ও সম্রাটের মনোনীত ব্যক্তিই বাংলার দেওয়ান হিসাবে প্রেরিত হতেন । সুতরাং পলাশির গুরুত্ব যাই হোক না কেন, ইংরেজরা সম্রাটের বিনা অনুমতিতে বাংলার শাসন দায়িত্ব পালনের অধিকারি ছিলেন না । কিন্তু ১৭৬৫ খ্রিষ্টাব্দে দেওয়ানি লাভের পর ইংরেজরা বাংলার শাসনব্যবস্থায় হস্তক্ষেপ করবার অধিকারী হয় । ১৭৬৫ খ্রিষ্টাব্দ থেকে তাই শুরু হল বাংলার ইতিহাসে এক নতুন পর্ব । নেপথ্য থেকে বেরিয়ে এবার ইংরেজদের প্রত্যক্ষ শাসনভার দায়িত্ব গ্রহণের পালা ।

(২) শুধু তাই নয়, দেওয়ানি বাবদ প্রাপ্ত অর্থ দিয়ে কোম্পানি বাংলার দ্রব্যসামগ্রী ক্রয় করতে সক্ষম হল । অর্থাৎ, এ কাজে তাকে স্বদেশ থেকে সোনা–রূপো আর আনতে হল না ।

(৩) অন্যদিকে এই টাকাতেই সে ভারতের অন্যত্র সাম্রাজ্য বিস্তারের কাজে হাত দেয় । 

*****

Related Items

ফিরোজ শাহ তুঘলক (Firuz Shah Tughluq)

মহম্মদ বিন তুঘলকের পর তাঁর খুড়তুতো ভাই ফিরোজ শাহ তুঘলক সিংহসনে বসেন । তিনি আমির, ওমরাহ এবং ধর্মীয় নেতাদের অনুরোধে দিল্লীর সিংহাসনে আরোহণ করেন । কিন্তু বিজেতা বা শাসক হিসাবে তিনি যোগ্যতার পরিচয় দিতে পারেনি । মানুষ হিসাবে তিনি ছিলেন ন্যায় পরায়ণ,..

মহম্মদ বিন তুঘলক

খলজি বংশের অবসানের পর তুঘলকি আমল শুরু হয় । তুঘলকি বংশের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন গিয়াস উদ্দিন তুঘলক । গিয়াস উদ্দিনের পুত্র মহম্মদ বিন তুঘলক (১৩২৫-১৩৫১) ছিলেন এই বংশের শ্রেষ্ঠ সুলতান । সম্ভবত তিনি তাঁর পিতাকে হত্যা করে দিল্লির সিংহাসনে বসেন ...

খলজি বংশ ও আলাউদ্দিন খলজি

১২৮৭ খ্রিস্টাব্দে সুলতান গিয়াসউদ্দিন বলবনের মৃত্যু হয় । তারপর তাঁর উত্তরাধিকারীদের হত্যা করে প্রধান সেনাপতি জালালউদ্দিন খলজি ১২৯০ খ্রিস্টাব্দে দিল্লির সুলতান হন । জালালউদ্দিন খলজির দিল্লি দখলের সঙ্গে সঙ্গে দাস বংশের অবসান ঘটে ও খলজি বংশের সূচনা হয় । ...

গিয়াসউদ্দিন বলবন (Ghias-ud-din Balban)

গিয়াসউদ্দিন বলবন ১২৬৩ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১২৮৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত রাজত্ব করেন । ইলতুৎমিসের মৃত্যুর পর ইলবেরি তুর্কিজাত সুলতানদের মধ্যে গিয়াসউদ্দিন বলবনের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য । সিংহাসনে আরোহণ করার পরে গিয়াসউদ্দিন বলব্ন এক জটিল পরিস্থিতির সম্মুখীন হন ...

সুলতানা রাজিয়া (Razia)

ইলতুৎমিসের মৃত্যুর পর তাঁর কন্যা রাজিয়া দিল্লির সিংহাসনে আরোহণ করেন । রাজিয়া ১২৩৬ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১২৪০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত রাজত্ব করেন । ইলতুৎমিসের পুত্ররা অযোগ্য বিবেচিত হওয়ায় ইলতুৎমিস নিজেই কন্যা রিজিয়াকে দিল্লির সুলতান পদে মনোনীত করেন । তাঁর সিংহাসন লাভ ...