Submitted by avimanyu pramanik on Thu, 04/26/2012 - 15:41

রাজ্যপাল (Governor)

রাজ্যপাল রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধান । সাধারণত প্রতিটি রাজ্যে একজন রাজ্যপাল ও রাজ্য মন্ত্রিসভাকে নিয়ে অঙ্গরাজ্যের শাসনবিভাগ গঠিত হয়ে থাকে । রাজ্যপাল পাঁচ বছরের জন্য রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিযুক্ত হন । রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যপালের নামে সমস্ত কাজ করে থাকেন । তিনি রাজ্যের নিয়মতান্ত্রিক প্রধান । তাঁর বিরুদ্ধে কোনো গ্রেপ্তারি পরোয়ানা বা ফৌজদারি অভিযোগ আনা যায় না । অবশ্য কেন্দ্রীয় সরকার ইচ্ছা করলে মেয়াদ পূর্তির আগেই রাজ্যপালকে বরখাস্ত করতে পারেন ।

রাজ্যপাল পদপ্রার্থীর যোগ্যতাবলী :

(ক) রাজ্যপাল পদপ্রার্থীকে অবশ্যই ভারতের নাগরিক হতে হবে ।

(খ) তাঁর বয়স অন্তত ৩৫ বছর বা তার বেশি হতে হবে ।

(গ) রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী হওয়ার সময় তিনি সংসদের উভয়কক্ষের বা রাজ্যবিধান সভার সদস্য থাকতে পারবেন না ।

(ঘ) কোনও সরকারি বা বেসরকারি পদে অথবা অর্থ প্রাপ্তি হয় এমন কোনোও পদে তিনি নিযুক্ত থাকতে পারবেন না ।

রাজ্যপালের ক্ষমতা :

(১) রাজ্যের শাসন ব্যবস্থায় সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী হলেন রাজ্যপাল । রাজ্যপ্রশাসনের সমস্ত ক্ষমতা তাঁর ওপর ন্যস্ত থাকে ।

(২) রাজ্যপাল রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ও রাজ্যের অন্য সদস্যদেরও নিয়োগ করেন । এছাড়া রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল ও রাজ্য পাবলিক সার্ভিস কমিশনের সদস্যদেরও তিনি নিয়োগ করেন । রাজ্যের হাইকোর্টের বিচারপতিদের নিয়োগের সময় রাষ্ট্রপতি তার মতামত নেন ।

(৩) রাজ্যের বিধানসভা রাজ্যপালকে নিয়ে গঠিত হয় । তাঁর অনুমোদন ছাড়া রাজ্য বিধানসভায় গৃহীত কোনো বিলকে আইনে পরিণত করা যায় না ।

(৪) রাজ্যের বিধানসভার অধিবেশন না থাকলে প্রয়োজন হলে রাজ্যপাল অর্ডিনান্স বা অস্থায়ী আইন জারি করতে পারেন যা বিধানসভার অধিবেশন শুরুর ৬ সপ্তাহের মধ্যে বিধানসভার অনুমোদন না পেলে বাতিল হয়ে যায় ।

(৫) রাজ্য মন্ত্রীসভা যদি সংবিধান ভঙ্গ করে অথবা বিধানসভার সংখ্যা গরিষ্ঠতা হারালেও পদত্যাগ করতে রাজি না হয়, সেক্ষেত্রে রাজ্যপাল রাষ্ট্রপতি তথা কেন্দ্রীয় সরকারের অনুমোদন সাপেক্ষে রাজ্য মন্ত্রীসভাকে বরখাস্ত করতে পারেন ।

(৬) কোনো কোনো ক্ষেত্রে রাজ্যপাল সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তির সাজা মুকুব করতে বা মেয়াদ কমিয়ে দিতে পারেন, তবে মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত ব্যক্তিকে ক্ষমা প্রদর্শনের এক্তিয়ার রাজ্যপালের নেই ।

*****

  

Related Items

প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ : বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ

প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ (Resistance and Rebellion) : ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দের ২৩শে জুন নবাব সিরাজদ্দৌলাকে পলাশির যুদ্ধে পরাজিত করার পর ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ভারতে তাদের ক্ষমতা বিস্তার করতে শুরু করে । এদিকে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অপশাসনের বিরুদ্ধে ভারতের বি

উনিশ শতকের বাংলার 'নবজাগরণ' ধারণার ব্যবহার বিষয়ক বিতর্ক

পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রভাবে উনিশ শতকে বাংলার সমাজ, সংস্কৃতি, ধর্ম, শিক্ষা প্রভৃতি ক্ষেত্রে যে অগ্রগতি লক্ষ্য করা যায় কেউ কেউ তাকে 'নবজাগরণ' বলে অভিহিত করেছেন । প্রকৃত অর্থে এই অগ্রগতিকে নবজাগরণ বলা যায় কি না তা নিয়ে ঐতিহাসিক ও পন্ডিতমহলে বিতর্কের শেষ নেই । ঐতিহাসিক যদুনাথ

বাংলার নবজাগরণ -এর চরিত্র ও পর্যালোচনা

ঊনিশ শতকে বাংলায় আধুনিক পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রভাবে বাংলার শিক্ষা, সংস্কৃতি, শিল্পকলা, রাজনীতি, ধর্ম, সমাজ প্রভৃতি ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব অগ্রগতি লক্ষ্য করা যায় । এই অগ্রগতি সাধারণভাবে 'ঊনিশ শতকে বাংলার নবজাগরণ' নামে পরিচিত । রেনেসাঁস (Renaissance) কথাটির আক্

লালন ফকির

ঊনিশ শতকে বাংলায় সর্বধর্মসমন্বয়ের ক্ষেত্রে যাঁরা গুরুত্বপূর্ন অবদান রেখেছিলেন লালন ফকির বা লালন সাঁই হলেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম আধ্যাত্মিক বাউলসাধক । তিনি বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী ও বাংলাদেশের বাউলগানের শ্রেষ্ঠতম রচয়িতা ছিলেন । তিনি সাধারণ মানুষের কাছে লালন ফকির ...

স্বামী বিবেকানন্দের ধর্মসংস্কারের অভিমুখ : নব্য বেদান্ত — বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা

ভারতের প্রাচীন অদ্বৈত বেদান্ত দর্শনের ব্যাখ্যাকর্তা ছিলেন আদি জগৎগুরু 'শঙ্করাচার্য' । 'বেদান্ত' শব্দের অর্থ হল বেদের অন্ত বা শেষ, আর বেদের অন্ত হল উপনিষদসমূহ । ব্রহ্ম হল বেদান্ত দর্শনের মূল আলোচ্য বিষয় । উপনিষদ, ভগবতগীতা এবং ব্রহ্ম সূত্র ও তার ভাষ্য বি