ভারতীয় জাতীয়তাবাদ (Indian Nationalism)

Submitted by avimanyu pramanik on Sun, 04/22/2012 - 21:35

ভারতীয় জাতীয়তাবাদ (Indian Nationalism)

জাতীয়তাবাদ কাকে বলে (Nationalism) : স্বদেশের তথা মাতৃভূমির গৌরব ও অগৌরবকে কেন্দ্র করে সেই দেশের মানুষ বা জাতির অন্তরে যে উল্লাস, স্বতঃস্ফূর্ত আবেগ, অনুভূতি, জাতীয় চেতনা, আত্মমর্যাদা ও আত্মাভিমান সঞ্চারিত হয় তাকেই জাতীয়তাবাদ বলে । জাতীয়তাবাদ একটি আধুনিক ধারণা । যেমন আন্তর্জাতিক খেলাধুলার আসরে বিজয়ী দেশগুলির সমর্থকদের বাঁধ ভাঙ্গা উচ্ছ্বাস দেখা যায়, তেমন বিজিত দেশগুলির সমর্থকদের মধ্যে দেখা যায় সীমাহীন বিষাদ ও হতাশা । দেশের প্রতি এই মমত্ববোধ ও একাত্মতাই হল জাতীয়তাবাদ । 

ভারতীয় জাতীয়তাবাদের পটভূমি (Background of Indian Nationalism) :

জাতীয়তাবাদ বলতে যে আবেগ বা ধারণা বোঝায় এদেশে ইংরেজদের আগমনের আগে সেই আবেগ বা অনুভূতি তেমন ভাবে প্রকট হয় নি । তখন ভারতবর্ষ কতকগুলি খন্ড রাজ্যের সমষ্টি ছিল । ইংরেজরা এদেশে এসে সেই খন্ড খন্ড রাজ্যগুলিকে একই পতাকার তলায় নিয়ে এসে পরোক্ষভাবে এই দেশকে রাজনৈতিক দিক দিয়ে ঐক্যবদ্ধ করেছিল । ইংরেজবিরোধী আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে ভারতীয় জাতীয়তাবাদ রূপ পরিগ্রহ করেছিল । এছাড়া এর মূলে ছিল ইউরোপীয় জাতীয়তাবাদী চেতনার প্রেক্ষিত । ইউরোপে ষোড়শ ও সপ্তদশ শতকে জাতীয় রাষ্ট্রের উদ্ভবের সঙ্গে জাতীয়তাবাদী ধারণার উন্মেষ ঘটেছিল । অষ্টাদশ শতাব্দীতে অনুষ্ঠিত ঘটনাবলি যথা ফরাসি বিপ্লব, আমেরিকার স্বাধীনতা সংগ্রাম, ইটালি ও জার্মানির ঐক্য আন্দোলন প্রভৃতির মাধ্যমে এই জাতীয়তাবাদ সুষ্ঠু রূপ পরিগ্রহ করেছিল । ফরাসি বিপ্লবের বাণী— স্বাধীনতা, সাম্য ও মৈত্রী, আমেরিকার রাষ্ট্রপতি টমাস জেফারসনের মানবাধিকারের ঘোষণা ভারতীয়দের আবেগকে গভীরভাবে নাড়া দিয়েছিল । ঊনিশ শতকে ভারতীয় দেশীয় রাজ্যগুলি একই শাসনাধীনে আসার পর এদেশে ইংরেজ শাসনের বজ্রমুষ্টি যতই দৃঢ় হতে থাকে, ততই তার কুটিল রূপ ভারতীয়দের চোখ খুলে দেয় । ভারতীয়রা ধীরে ধীরে দেশবাসী হিসাবে নিজেদের অস্তিত্ব ও গুরুত্ব অনুভব করে । ঊনিশ শতক থেকে ভারতে এই জাতীয়তাবাদী ধারণার উন্মেষ ঘটেছিল । এভাবেই বলা যায় ঊনিশ শতকের এই জাতীয়তাবাদী চেতনার মূলে ছিল ইউরোপীয় চেতনার প্রেক্ষিত । 

ভারতীয় জাতীয়তাবাদের উৎস :

এদেশে ইংরেজ শাসন প্রবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে ইংরেজি শিক্ষার প্রচলন হয় । রাজা রামমোহন রায়, হেনরি ভিভিয়ান ডিরোজিও, ডেভিড হেয়ার, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, ডিঙ্কওয়াটার বেথুন প্রমুখ ভারতীয় ও ইংরাজ মনীষীগণ এদেশে ইংরেজি শিক্ষা প্রবর্তনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন । আর এই ইংরেজি শিক্ষার সুবাদে ভারতীয়রা পাশ্চাত্য জ্ঞান, বিজ্ঞান, শিক্ষা, সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত হয় । এর সঙ্গে ভারতীয়গণ ইউরোপের জাতীয়তাবাদী ধ্যান ধারণার সঙ্গে পরিচিত হন এবং নিজেরাও জাতীয়তাবোধে উদ্দীপ্ত হন ।  ইংরেজি শিক্ষা প্রবর্তনের সঙ্গে ভারতীয়রা ইউরোপের চিন্তানায়কদের সঙ্গে পরিচিতি লাভ করে । ইংরেজি শিক্ষার সূত্রে ভারতীয়রা মিল, বেন্থাম, স্টুয়ার্ট, ভলটেয়ার, রুশো, ম্যাৎসিনি, গ্যারিবল্ডি, কার্লমার্কস প্রভৃতি পাশ্চাত্য দার্শনিক ও চিন্তাবিদদের প্রগতিশীল চিন্তাধারার সংস্পর্শে আসেন । ফরাসি বিপ্লবের স্বাধীনতা, সাম্য ও মৈত্রীর আদর্শ, আমেরিকার স্বাধীনতা সংগ্রাম, ইটালি ও জার্মানির ঐক্য আন্দোলন প্রভৃতি ভারতীয়দের নবচেতনায় উদ্বুদ্ধ করে । ক্রমশ ভারতীয়গণ উপলব্ধি করেন যে তাঁরাও একটি জাতি ও জাতি হিসাবে তাঁদেরও স্বাধীন সত্তা আছে এবং সেই স্বাধীনতাকে কেউ হরণ করতে পারে না । আর যদি তা কেউ করে তা থেকে মুক্তি পাবার অধিকার সব জাতিরই আছে । উনবিংশ শতাব্দীর সূচনা থেকেই পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত প্রথম ভারতীয় রাজা রামমোহন রায় ভারতীয়দের মধ্যে এই নব জাগরণের উন্মেষ ঘটান । জাতীয়তাবাদী ধারণার প্রথম উন্মেষ ঘটে বাংলায় এবং পরে তা সারা ভারতে পরিব্যাপ্ত হয় ।

*****

Related Items

বহু বিকল্পীয় প্রশ্নোত্তর (M.C.Q) - উত্তর ঔপনিবেশিক ভারত (১৯৪৭-১৯৬৪)

বহু বিকল্পীয় প্রশ্নোত্তর (M.C.Q) - উত্তর ঔপনিবেশিক ভারত:-

মাধ্যমিকের নমুনা প্রশ্ন:-

১. ভারতের রাজনীতিতে 'লৌহ মানব' বলে পরিচিত ছিলেন—        [মাধ্যমিক-২০১৭]

বহু বিকল্পীয় প্রশ্নোত্তর (M.C.Q) - বিশ শতকের ভারতের নারী, ছাত্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর আন্দোলন

বহু বিকল্পীয় প্রশ্নোত্তর (M.C.Q) - বিশ শতকের ভারতের নারী, ছাত্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর আন্দোলন:-

মাধ্যমিকের নমুনা প্রশ্ন:-

১. দীপালি সংঘ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন—          [মাধ্যমিক-২০১৭]

বহু বিকল্পীয় প্রশ্নোত্তর (M.C.Q) - বিশ শতকের ভারতে কৃষক, শ্রমিক ও বামপন্থী আন্দোলন

বহু বিকল্পীয় প্রশ্নোত্তর (M.C.Q) - বিশ শতকের ভারতে কৃষক, শ্রমিক ও বামপন্থী আন্দোলন:-

মাধ্যমিকের নমুনা প্রশ্ন:-

১. একা আন্দোলনের নেতা ছিলেন—     [মাধ্যমিক-২০১৭]

স্যাডলার কমিশন (Sadler Commission)

১৯০৪ খ্রিস্টাব্দে বিশ্ববিদ্যালয় আইন পাশ হবার পর দেশে উচ্চশিক্ষার প্রসার ক্রমশ বৃদ্ধি পায় । উচ্চশিক্ষাকে আরও ফলপ্রসূ করার লক্ষ্যে ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে বড়লাট চেমসফোর্ডের সময় স্যার মাইকেল স্যাডলারের সভাপতিত্বে 'স্যাডলার কমিশন' গঠন করা হয় । স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায় এই কমিশনের সদস্য ছিলেন ...