বর্ণবিদ্বেষ (Racial Discrimination)

Submitted by avimanyu pramanik on Mon, 04/23/2012 - 07:45

বর্ণবিদ্বেষ (Racial Discrimination) :

ভারতীয়দের প্রতি ব্রিটিশ শাসকদের ঘৃণা, অসম্মানজনক ও বৈষম্যমূলক আচরণ ভারতবাসীকে ক্ষুব্ধ করে তুলছিল । প্রথম থেকেই জাতিগত শ্রেষ্ঠত্বের অহংকারে ইংরেজরা ভারতীয়দের প্রচন্ডভাবে অবজ্ঞা করত । প্রশাসনিক, সামরিক ক্ষেত্র থেকে শুরু করে দৈনন্দিন জীবনযাত্রাতেও ভারতীয়দের প্রতি তাদের তীব্র ঘৃণা, বিদ্বেষ ও অবজ্ঞা প্রকাশ পেত । সর্বসাধারণের ব্যবহারের জায়গা যথা— রেল, স্টিমার, হোটেল, খেলার মাঠ,  ক্লাব এমনকি রাজপথ প্রভৃতি ক্ষেত্রে ইউরোপীয়দের জন্য সংরক্ষিত থাকত । বিচারব্যবস্থায় শ্বেতাঙ্গ কৃষ্ণাঙ্গ বৈষম্য ছিল প্রকট । স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল প্রভৃতি স্থানে ভারতীয়দের প্রকাশ্যে লাঞ্ছনা, অপমান ইত্যাদি সহ্য করতে হত । ভারতীয়দের প্রতি ব্রিটিশ সরকার তথা ইউরোপীয়দের এই বিমাতৃসুলভ মনোভাব ভারতীয়দের মমত্ববোধ জন্মায় । 

পাশ্চাত্য শিক্ষার সংস্পর্শে এসে ভারতীয়রা পাশ্চাত্য জ্ঞান, বিজ্ঞান, শিক্ষা, সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত হয় । পাশ্চাত্য শিক্ষার আলোকে আলোকিত হয়ে ভারতীয়রা ইউরোপীয় সমাজ, রাজনীতি ও জাতীয়তাবাদী ধ্যানধারণার সঙ্গে পরিচিত হন এবং নিজেরাও জাতীয়তাবোধে উদ্দীপ্ত হয়ে ওঠেন । পাশ্চাত্য শিক্ষার সূত্রে ভারতীয়রা মিল, রুশো, বেন্থাম, ভলটেয়ার, স্টুয়ার্ট, ম্যাৎসিনি, গ্যারিবল্ডি, কার্লমার্কস প্রভৃতি পাশ্চাত্য দার্শনিক ও চিন্তাবিদদের প্রগতিশীল চিন্তাধারার সংস্পর্শে এসে তাঁদের উদারনৈতিক ভাবধারার সঙ্গে পরিচিত হন । ফরাসি বিপ্লব, আমেরিকার স্বাধীনতা লাভ, ইটালি ও জার্মানির ঐক্য আন্দোলন, ব্রিটিশ বিরোধী সংগ্রামে আফ্রিকার জাতীয়তাবাদীদের সাফল্য প্রভৃতি সমসাময়িক ঘটনাবলি ভারতীয়দের গভীরভাবে প্রভাবিত করেছিল । ক্রমশ তাঁদের মধ্যে ইংরেজদের অন্যায়, অবিচার, বর্ণবিদ্বেষ ও বৈষম্যমূলক আচরণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানোর স্পৃহা সঞ্চারিত হয় । ভারতীয়গণ ইংরেজ শাসনের স্বরূপ উপলব্ধি করে ও তাঁদের মধ্যে জাতীয় চেতনার উন্মেষ ঘটে এবং জাতীয় মুক্তি আন্দোলনে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সক্রিয় অংশ গ্রহণ করেন ।

******

Related Items

মধুসূদন গুপ্ত

ভারতে আধুনিক চিকিৎসাবিদ্যা প্রসারের সঙ্গে মধুসূদন গুপ্তের নাম ওতপ্রোতভাবে জড়িত । তিনি ১৮০০ খ্রিস্টাব্দে হুগলি জেলার বৈদ্যবাটি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন । ডেভিড হেয়ারের 'পটলডাঙ্গা স্কুলে' প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে তিনি কলকাতার সংস্কৃত কলেজে আয়ুর্বেদ চিকিৎসা নিয়ে পড়াশুনা ...

কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ এবং চিকিৎসাবিদ্যা চর্চার বিকাশ

কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ এবং চিকিৎসাবিদ্যা চর্চার বিকাশ:-

ঊনিশ শতকের সূচনালগ্নে ভারতে প্রাচীন দেশীয় চিকিৎসা-ব্যবস্থা প্রচলিত ছিল । পরবর্তীকালে ভারতের গভর্নর জেনারেল লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্ক দেশীয় চিকিৎসা-শাস্ত্রে শিক্ষাদানের পরিবর্তে আধু

পাশ্চাত্য শিক্ষাবিস্তারে ডেভিড হেয়ার ও জন এলিয়ট ড্রিঙ্কওয়াটার বিটন -এর ভূমিকা

উনিশ শতকে যে সব মানুষ বাংলায় পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম হলেন ডেভিড হেয়ার । ১৭৭৫ খ্রিস্টাব্দে তিনি স্কটল্যান্ডে জন্মগ্রহণ করেন । ১৮০০ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় এসে ঘড়ির ব্যবসা করে প্রচুর অর্থ উপার্জন করেন । ঔ

পাশ্চাত্য শিক্ষাবিস্তারে রাজা রামমোহন রায় ও রাজা রাধাকান্ত দেব -এর ভূমিকা

ঊনিশ শতকে বাংলায় আধুনিক পাশ্চাত্যশিক্ষার প্রসারে রাজা রামমোহন রায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেন । রাজা রামমোহন রায় মনে করতেন আধুনিক পাশ্চাত্য শিক্ষার ওপর ভিত্তি করেই নতুন ভারত গড়ে উঠবে । তিনি নিজের খরচে ১৮১৫ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় 'ইন্ডিয়ান অ্যাকাডেমি' নামে

নারীশিক্ষা ও ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর

ঊনিশ শতকের সূচনালগ্ন পর্যন্ত নানা রকম সামাজিক বিধিনিষেধের ফলে বাংলায় নারীশিক্ষার বিশেষ প্রসার ঘটেনি । এরপর থেকে উনিশ শতকে ভারতে নারীশিক্ষা প্রসারের উদ্দেশ্যে কিছু সমষ্টিগত ও ব্যক্তিগত উদ্যোগ শুরু হয় । সমষ্টিগত উদ্যোগে নব্যবঙ্গীয় গোষ্ঠী, খ্রিস্টান মিশনারি এবং ব্রাহ্মসমা