বঙ্গবিভাগ পরিকল্পনার ক্ষেত্রে লর্ড কার্জনের প্রকৃত উদ্দেশ্য কী ছিল ? ভারতবাসী কেন এই পরিকল্পনা মানতে পারেনি ?

Submitted by avimanyu pramanik on Mon, 01/10/2022 - 08:11

প্রশ্ন:-  বঙ্গবিভাগ পরিকল্পনার ক্ষেত্রে লর্ড কার্জনের প্রকৃত উদ্দেশ্য কী ছিল ? ভারতবাসী কেন এই পরিকল্পনা মানতে পারেনি ? বঙ্গভঙ্গ কোন বছরে রদ্‌ করা হয় ?

বঙ্গভঙ্গের পরিকল্পনায় লর্ড কার্জনের প্রকৃত উদ্দেশ্য ছিল তিনটি, যেমন—

(১) উনিশ শতকে কলকাতা কেন্দ্রিক বাংলা চরমপন্থী জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের প্রধান কেন্দ্র হওয়ায় ব্রিটিশ স্বার্থের পক্ষে বিপজ্জনক ছিল । এই আন্দোলনের ক্ষতিকারক প্রভাব থেকে তিনি ভারতবর্ষের অন্যান্য অঞ্চলকে মুক্ত রাখতে চেয়ে ছিলেন । বঙ্গভঙ্গের মাধ্যমে তৎকালীন বাংলার উগ্র জাতীয়তাবাদকে দমন করাই ছিল লর্ড কার্জনের বঙ্গভঙ্গের পরিকল্পনার মুখ্য উদ্দেশ্য ।

(২) বঙ্গভঙ্গের মাধ্যমে পশ্চিমবাংলার সঙ্গে বিহার ও উড়িষ্যাকে পশ্চিমবাংলার জাতীয়তাবাদী চেতনাযুক্ত হিন্দু বাঙালিদের ওড়িয়া ও বিহারিদের সংখ্যাগরিষ্ঠতার চাপে নতজানু করা এবং পূর্ব বাংলার সংখ্যা গরিষ্ঠ মুসলিম সম্প্রদায়কে নতুন প্রদেশ দান করে অনুগত রাখাই ছিল লর্ড কার্জনের বঙ্গভঙ্গ পরিকল্পনার অন্যতম উদ্দেশ্য । অর্থাৎ লর্ড কার্জন বঙ্গভঙ্গের মাধমে অবিভক্ত বাংলাকে ভাগ করে বাংলার হিন্দু-মুসলমান ঐক্যে ফাটল ধরাতে চেয়েছিলেন ।

(৩) তৎকালীন ভারতবর্ষে রাজনৈতিক চিন্তাধারা, সচেতনতা ও বুদ্ধিবৃত্তিতে বাঙালিরা ছিল অগ্রগণ্য, এছাড়া ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের নেতৃত্বও তখন ছিল বাঙালিদের হাতে । তাই বঙ্গভঙ্গের মাধ্যমে বাঙালিকে দুর্বল করে জাতীয় কংগ্রেস তথা ভারতের জাতীয়তাবাদী আন্দোলনকে ধ্বংস করাই ছিল লর্ড কার্জনের বঙ্গভঙ্গের পরিকল্পনার তৃতীয় উদ্দেশ্য ।

বঙ্গভঙ্গের পরিকল্পনাকে ভারতবাসী মানতে না পারার কারণ : বাংলা তথা ভারতীয় জাতীয়তাবাদীদের কাছে বঙ্গভঙ্গের পরিকল্পনা ছিল একটা বিরাট চ্যালেঞ্জ, কারণ ভারতের জাতীয়তাবাদী আন্দোলনকে দুর্বল করার জন্যই বঙ্গভঙ্গের পরিকল্পনা করা হয়ে ছিল । ১৯১১ খ্রিস্টাব্দের ১২ই ডিসেম্বর বঙ্গভঙ্গ রদ করা হয় ।

*****

Comments

Related Items

আইন অমান্য আন্দোলন পর্বে শ্রমিক আন্দোলন

আইন অমান্য আন্দোলন পর্বে শ্রমিক আন্দোলন (The Civil Disobedience Movement and the Working Class) :-

১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে আইন অমান্য আন্দোলন শুরু হলে ভারতের বিভিন্ন প্রদেশের শ্রমিকরা এই আন্দোলনে অংশ গ্রহণ করে । এই সময় বাংলায় শ্রমিক আন্দোলন যথেষ্ট শ

ওয়ার্কার্স অ্যান্ড পেজেন্টস পার্টি

ওয়ার্কার্স অ্যান্ড পেজেন্টস পার্টি (Workers and Peasants Party) :-

কুতুবুদ্দিন আহমদ, কাজী নজরুল ইসলাম, অধ্যাপক হেমন্ত সরকার, সামসুদ্দিন হোসেন প্রমুখ ব্যক্তির উদ্যোগে ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দের ১লা নভেম্বর বাংলায় 'লেবার স্বরাজ পার্টি অব দা ইন্ডিয়ান

অহিংস অসহযোগ আন্দোলন পর্বে শ্রমিক আন্দোলন

অহিংস অসহযোগ আন্দোলন পর্বে শ্রমিক আন্দোলন (Non Co-operation Movement and the Working Class):- 

অহিংস অসহযোগ আন্দোলনের সময় সারা ভারতে শ্রমিকরা আন্দোলনে শামিল হয় । এই সময় বাংলায় শ্রমিক আন্দোলন অত্যন্ত শক্তিশালী ওঠে । শ্রমিকদের কাজের সময় কমানো, ব

বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলন পর্বে শ্রমিক আন্দোলন

বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলন পর্বে শ্রমিক আন্দোলন (Anti-Partition Movement and the Working Class):-

ব্রিটিশ শাসনের প্রথমদিকে পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ ব্রিটিশ শাসনের বিরোধিতা না করলেও ভারতের নিম্নবর্গের মানুষ বিশেষত শ্রমিক

বিশ শতকের ভারতে শ্রমিক আন্দোলনের বৈশিষ্ট্য

বিশ শতকের ভারতে শ্রমিক আন্দোলনের বৈশিষ্ট্য (Working Class Movement in the Twentieth Century):-

দীর্ঘ চার বছর ধরে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ধ্বংসলীলা চলার পর ১৯১৮ খ্রিস্টাব্দের ১১ই নভেম্বর জার্মানি আত্মসমর্পণ করলে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের অবসান  ঘটে । বিশ শ