প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরে ইউরোপীয় দেশগুলির অর্থনৈতিক অবস্থা কীরূপ ছিল ? ইতালিতে ও জার্মানিতে গণতন্ত্রের পতন হয় কেন ?

Submitted by avimanyu pramanik on Tue, 01/11/2022 - 18:31

প্রশ্ন:- প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরে ইউরোপীয় দেশগুলির অর্থনৈতিক অবস্থা কীরূপ ছিল ?  ইতালি ও জার্মানিতে গণতন্ত্রের পতন হয় কেন ?

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালে (i) মুদ্রাস্ফীতি, (ii) শিল্পে অচলাবস্থা, (iii) কৃষিজাত পণ্যের মূল্য হ্রাস, (iv) অর্থনৈতিক মন্দা, (v) বেকারের সংখ্যা বৃদ্ধি প্রভৃতি কারণে ইউরোপীয় দেশগুলির অর্থনৈতিক অবস্থা প্রায় ভেঙে পড়েছিল ।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের তাৎক্ষণিক ফল ছিল গণতন্ত্রের প্রসার, কিন্তু এই ব্যবস্থাও চিরস্থায়ী হয়নি । কয়েক বছরের মধ্যেই ইউরোপের বহু দেশে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থার পতন হয় এবং একনায়কতন্ত্রী রাষ্ট্র গড়ে উঠতে থাকে । ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে ইউরোপে ৩৫টিরও বেশি দেশে গণতান্ত্রিক সরকার ছিল, কিন্তু ১৯৩৮ সালে তা কমে ১৭টি দেশে পৌঁছায় । এই প্রসঙ্গে অধ্যাপক গ্যাথন হার্ডি লিখেছেন যে, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের বহু দেশে ‘গণতন্ত্রের মড়ক দেখা দেয় । জার্মানি ও ইতালিতেও তার ব্যতিক্রম হয়নি ।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী কালে  (i) নব প্রতিষ্ঠিত সরকারগুলির দুর্বলতা, (ii) গণতান্ত্রিক ঐতিহ্যের অভাব, (iii) দূরদর্শী রাষ্ট্রনেতার অভাব, (iv) অর্থনৈতিক মহামন্দা, (v) জাতিসংঘের ব্যর্থতা, (vi) আর্থিক সংকট, (vii) খাদ্যাভাব, (viii) শিল্পে অবনতি, মুদ্রাস্ফীতি, বেকারি প্রভৃতি আর্থ-সামাজিক সংকট, (ix) সাধারণ মানুষের হতাশা, (x) রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে বিরোধ প্রভৃতি কারণের ফলে ইতালিতে ফ্যাসিস্ট দল ও জার্মানিতে নাৎসি দল দেশের শাসনক্ষমতা দখল করে নিয়েছিল, যার ফলশ্রুতিতে এই দুটি দেশে গণতন্ত্রের পতন ঘটে এবং ফ্যাসিবাদী ও নাৎসিবাদী একনায়কতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা হয় ।

ঐতিহাসিক গর্ডন গ্রেসের মতে, ইতালি ও জার্মানিতে গণতন্ত্রের পতন এবং ফ্যাসিস্ট দল ও নাৎসী দলের ক্ষমতা দখলের পটভূমি তৈরি করে দিয়েছিল দুটি প্রধান ঘটনা, যার একটি ছিল অর্থনৈতিক মহামন্দা এবং অপরটি হল গণতান্ত্রিক ঐতিহ্যের অভাব, এর ফলে এই দুটি দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আসেনি । প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক অস্থিরতার সুযোগে ইতালিতে ফ্যাসিস্ট দল ও জার্মানিতে নাৎসি দল দেশের শাসনক্ষমতা দখল করে নিয়েছিল, যার ফলশ্রুতিতে এই দুটি দেশে গণতন্ত্রের পতন ঘটে এবং ফ্যাসিবাদী ও নাৎসিবাদী একনায়কতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা হয় ।

*****

Comments

Related Items

সতীদাহ প্রথা বিরোধী আন্দোলন

প্রাচীনকাল থেকেই ভারতীয় হিন্দুসমাজে নারীরা বিভিন্ন ধরণের সামাজিক নির্যাতন ও নিষ্ঠুরতার শিকর হতেন । এই সব নির্যাতনের মধ্যে অন্যতম ছিল সতীদাহপ্রথা বা সহমরণ । এই প্রথা অনুযায়ী ঊনিশ শতকের সূচনালগ্নেও বাংলা তথা ভারতীয় হিন্দুসমাজে মৃত স্বামীর জ্বলন্ত চিতায় তার বিধবা...

উনিশ শতকের বাংলায় ব্রাহ্মসমাজ সমূহের উদ্যোগ

উনিশ শতকের প্রথমদিকে বাংলার সমাজজীবনে বিভিন্ন ধরণের কুপ্রথা প্রচলিত ছিল । সতীদাহপ্রথা, বাল্যবিবাহ, বহুবিবাহ, দেবদাসীপ্রথা, জাতিভেদ প্রথা, অস্পৃশ্যতা, কৌলিন্য প্রথা, গঙ্গাজলে সন্তান বিসর্জন প্রভৃতি নানান অমানবিক কুপ্রথা ও মানুষের মনে অন্ধবিশ্বাস বাংলার সমাজজীবনকে জর্জরিত

উনিশ শতকের বাংলা — সমাজ সংস্কার : বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা

উনিশ শতকের শুরুর দিকে বাংলায় ব্রিটিশ শাসন সুদৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত হয় । সেই সময় বাংলার সমাজজীবনে চরম দুর্দিন চলছিল । হিন্দুসমাজে তখন ব্রাহ্মণদের প্রতিপত্তি সুপ্রতিষ্ঠিত ছিল এবং তারাই সমাজের ভাগ্য নিয়ন্ত্রণ করতেন । হিন্দুসমাজে প্রকট জাতিভেদ প্রথা চালু ছিল । হিন্দুসমাজ ছিল

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় এবং উচ্চশিক্ষার বিকাশ

১৮৫৪ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বোর্ড অব কন্ট্রোলের সভাপতি স্যার চার্লস উড শিক্ষানীতির ওপর একটি পরিকল্পনা পেশ করেন যা 'উডের ডেসপ্যাচ' নামে পরিচিত । এই শিক্ষা পরিকল্পনায় যে সমস্ত সুপারিশগুলি করা হয় সেগুলির মধ্যে অন্যতম

মধুসূদন গুপ্ত

ভারতে আধুনিক চিকিৎসাবিদ্যা প্রসারের সঙ্গে মধুসূদন গুপ্তের নাম ওতপ্রোতভাবে জড়িত । তিনি ১৮০০ খ্রিস্টাব্দে হুগলি জেলার বৈদ্যবাটি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন । ডেভিড হেয়ারের 'পটলডাঙ্গা স্কুলে' প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে তিনি কলকাতার সংস্কৃত কলেজে আয়ুর্বেদ চিকিৎসা নিয়ে পড়াশুনা ...