ওয়াভেল পরিকল্পনা (Wavell Plan)

Submitted by avimanyu pramanik on Tue, 04/24/2012 - 09:49

ওয়াভেল পরিকল্পনা (Wavell Plan) :

লর্ড লিনলিথগোর পর ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দের অক্টোবর মাসে লর্ড আর্কিবল্ড ওয়াভেল ভারতের বড়লাট নিযুক্ত হন । ভারতীয়দের দীর্ঘ প্রতীক্ষিত স্বাধীনতার দাবি সম্পর্কে সচেতন হয়ে লর্ড ওয়াভেল ভারতে রাজনৈতিক সমস্যার সমাধানে এগিয়ে আসেন । ভারতীয়দের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের ক্ষেত্রে যে সমস্ত সমস্যার উদ্ভব হতে পারে সেগুলির সমাধানে লর্ড ওয়াভেল একটি খসড়া পরিকল্পনা প্রস্তুত করেন । ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দের ৩১শে মে লর্ড ওয়াভেল তাঁর খসড়া পরিকল্পনাটি ব্যক্ত করেন । এই খসড়া পরিকল্পনাটি 'ওয়াভেল পরিকল্পনা' নামে খ্যাত । খসড়া পরিকল্পনার মূল বৈশিষ্ট্যগুলি হল —

(ক) সংবিধান রচনার পূর্বে একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা,

(খ) এই সরকারে হিন্দু, মুসলিম এবং অন্যান্য অনুন্নত সম্প্রদায়ের আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব থাকবে,

(গ) গভর্নর জেনারেলের কাউন্সিলে একমাত্র গভর্নর জেনারেল এবং সৈন্যাধ্যক্ষ ছাড়া আর সকল সদস্যই হবেন ভারতীয় ।

(ঘ) ক্ষমতা হস্তান্তর না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরক্ষার দায়িত্ব ব্রিটিশ সৈন্যাধ্যক্ষের হাতে থাকবে ।

ভারতীয় নেতৃবৃন্দের সঙ্গে পরিকল্পনার খুঁটিনাটি বিষয় আলোচনার জন্য লর্ড ওয়াভেল সিমলায় ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দের ২৫শে জুন এক সর্বদলীয় সম্মেলন আহ্বান করেন । কিন্তু মুসলিম লীগ পাকিস্তান দাবিতে অনড় থাকার জন্য সিমলা সম্মেলন ব্যর্থ হয় । তথাপি লর্ড ওয়াভেল এক তরফা ভাবে অন্তর্বর্তী সংবিধান রচনার লক্ষ্যে সংবিধান সভা গঠনের প্রস্তুতি চালিয়ে নিয়ে যেতে থাকেন । লর্ড ওয়াভেল কংগ্রেসের সভাপতি জওহরলাল নেহেরুকে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের জন্য আহ্বান জানালে কংগ্রেস সম্মতি জানায় । এই ঘটনায় উত্তেজিত ও ক্রুদ্ধ হয়ে মুসলিম লিগ ‘প্রত্যক্ষ সংগ্রাম’ শুরু করার সিদ্ধান্ত নেয় । ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দের ১৬ই আগস্ট সমগ্র ভারতে ‘প্রত্যক্ষ সংগ্রাম দিবস’ রূপে পালিত হয় । ওই দিন কলকাতায় ভয়াবহ দাঙ্গা-হাঙ্গামা বাধে এবং এরপর থেকে ভারতের অন্যান্য অঞ্চলেও সাম্প্রদায়িক সংঘাতের আগুন ছড়িয়ে পড়ে । জওহরলাল নেহেরুর নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হওয়ার কিছুদিনের মধ্যে মুসলিম লিগ বড়লাটের অনুরোধে এই সরকারে যোগদান করলেও কংগ্রেস ও মুসলিম লিগ সদস্যরা ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে সক্ষম হন নি । ফলে সরকারি প্রশাসনে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয় ।

*****

 

Related Items

কাশ্মীর রাজ্যের ভারত অন্তর্ভুক্তি

কাশ্মীর রাজ্যের ভারত অন্তর্ভুক্তি (Annexation of Kashmir):-

ব্রিটিশ পার্লামেন্টে পাস হওয়া ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের 'ভারতের স্বাধীনতা আইন' অনুসারে ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ১৫ই আগস্ট অবিভক্ত ভারত দ্বিখণ্ডিত হয়ে স্বাধীনতা লাভ করে এবং ভারত ও পাকিস্তান নামে দু

হায়দ্রাবাদ রাজ্যের ভারত অন্তর্ভুক্তি

হায়দ্রাবাদ রাজ্যের ভারত অন্তর্ভুক্তি (Annexation of Hyderabad):-

১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের 'ভারতের স্বাধীনতা আইন' -এ বলা হয় ভারতে ব্রিটিশ শাসনের অবসানের পর দেশীয় রাজ্যগুলির সঙ্গে ব্রিটিশ সরকারের সম্পাদিত চুক্তির পরিসমাপ্তি ঘটবে ।

দেশীয় রাজ্যগুলির ভারতভুক্তির উদ্যোগ ও বিতর্ক

দেশীয় রাজ্যগুলির ভারতভুক্তির উদ্যোগ ও বিতর্ক (Initiatives Undertaken and Controversies Related to the Accession of Princely State with India):-

১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের 'ভারতের স্বাধীনতা আইন' অনুসারে ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ১৫ই আগস্ট অবিভক্ত ভারত দ্বিখণ

উত্তর ঔপনিবেশিক ভারত : বিশ শতকের দ্বিতীয় পর্ব (১৯৪৭ - ১৯৬৪)

উত্তর ঔপনিবেশিক ভারত : বিশ শতকের দ্বিতীয় পর্ব (১৯৪৭ - ১৯৬৪) [Post-Colonial India : Second Half od the 20th Century (1947-1964)]:-

দীর্ঘদিনের ত্যাগ, তিতিক্ষা ও আত্মবলিদানের পর ব্রিটিশ পার্লামেন্টে পাস হওয়া ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের 'ভারতের স্বাধীনতা

বাংলায় নমঃশূদ্র আন্দোলন

হিন্দু জাতিভুক্ত নিম্নবর্গীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে নমঃশূদ্র সম্প্রদায় ছিল ঔপনিবেশিক আমলে বাংলার উল্লেখযোগ্য দলিত হিন্দু সম্প্রদায় । নমঃশূদ্ররা হিন্দু জাতিভুক্ত হওয়া সত্ত্বেও তথাকথিত উচ্চবর্ণের হিন্দুরা নমঃশূদ্রদের অত্যন্ত ঘৃণার চোখে দেখত । নমঃশূদ্ররা উচ্চবর্ণের হিন্দুদের বিভিন্ন ধরণের নির্যাতন, বঞ্চনা ও বৈষম্যের শিকার হয়েছিল । ...