ইলবার্ট বিল কী ? ইংরেজরা কেন ইলবার্ট বিলের বিরোধিতা করে ? ইলবার্ট বিল আন্দোলনে ভারতসভা কী ভূমিকা পালন করেছিল ?

Submitted by avimanyu pramanik on Sun, 01/09/2022 - 11:36

প্রশ্ন:-  ইলবার্ট বিল কী ?  ইংরেজরা কেন ইলবার্ট বিলের বিরোধিতা করে ? ইলবার্ট বিল আন্দোলনে ভারতসভা কী ভূমিকা পালন করেছিল ?

ব্রিটিশ ভারতের বিচারব্যবস্থায় জাতিভেদমূলক বৈষম্য দূর করার জন্য বড়লার্ট (ভাইসরয়) লর্ড রিপনের পরামর্শ অনুসারে ভাইসরয়ের কাউন্সিলের আইন-সদস্য ইলবার্ট একটি আইনের খসড়া তৈরি করেন, এই খসড়া আইনই ইলবার্ট বিল নামে পরিচিত । এই খসড়া আইনে ভারতীয় বিচারকদের ইউরোপীয় বিচারকদের সমতুল্য মর্যাদা ও ক্ষমতা দেওয়ার প্রস্তাব করা হয় এবং বলা হয় যে, ভারতীয় বিচারকরাও শ্বেতাঙ্গদের বিচার করতে পারবেন ।

ইলবার্টের প্রস্তাব প্রকাশিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ইউরোপীয়রা ইলবার্ট বিলের বিরুদ্ধে তুমুল আন্দোলন শুরু করে, কারণ: এই খসড়া আইনটি ব্রিটিশ পার্লামেন্টে পাস হলে ভারতীয় বিচারকরাও ইউরোপীয়দের বিচার করতে পারতেন এবং সেক্ষেত্রে তাদের মর্যাদা ইউরোপীয় বিচারকদের সমতুল্য হত । তারা এই অভিমত প্রকাশ করেন যে, ইউরোপীয়দের বিচার করার যোগ্যতা ও উপযুক্ত ক্ষমতা ভারতীয়দের নেই । বিলটি প্রত্যাহারের জন্য তারা ‘ডিফেন্স অ্যাসোসিয়েশন’ নামে এক সংস্থা গঠন করে আন্দোলন চালায় । সমকালীন ‘স্পেকটেটর’ও ‘টাইমস’ পত্রিকাও এই বিলের সমালোচনা করে ।

ইলবার্ট বিল আন্দোলনে ভারতসভা -র ভূমিকা :

(১) ১৮৮৩-৮৪ খ্রিস্টাব্দে ভারতসভার পরিচালনায় ইলবার্ট বিল আন্দোলন শুরু হয় ।

৩) ইলবার্ট বিলের বিরুদ্ধে ইউরোপীয়দের আন্দোলন ও বিক্ষোভের প্রত্যুত্তরে সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে ভারতসভা প্রতি আন্দোলন গড়ে তোলে । ইলবার্ট বিলের সমর্থনে ভারতসভা দেশের নানা স্থানে জনসভা করে এবং সংবাদপত্রে মতামত জানাতে থাকে । কিন্তু সরকার শেষ পর্যন্ত ইউরোপীয়দের দাবির কাছে মাথা নত করে । প্রস্তাবিত আইনের খসড়াটি বাতিল করা হল না বটে, কিন্তু তার কয়েকটি উদারনৈতিক ধারার সংশোধন করা হয় । এতে ইলবার্ট বিলের আসল উদ্দেশ্য ব্যর্থ হয়ে যায় । ভারত সভার উদ্যোগে ইলবার্ট বিল আন্দোলনকে উপলক্ষ করে ভারতীয় জাতীয়তাবাদ তীব্র হয় ।

*****

Comments

Related Items

সন্ন্যাসী-ফকির বিদ্রোহ (১৭৬৩-১৮০০ খ্রিষ্টাব্দ)

সন্ন্যাসী-ফকির বিদ্রোহ (Sanyasi-Fakir Rebellion):- ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ শাসন ও শোষনের বিরুদ্ধে অবিভক্ত বাংলার ঢাকায় ১৭৬৩ থেকে ১৮০০  খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত 'গিরি' ও 'দাশনামী' সম্প্রদায়ভুক্ত সন্ন্যাসী ও 'মাদারী' সম্প্রদায়ভুক্ত ফকিরদের নেতৃত্বে যে কৃষকবিদ্রোহ

পাগলপন্থী বিদ্রোহ (প্রথম পর্ব ১৮২৫ - ২৭ খ্রিস্টাব্দে)

পাগলপন্থী বিদ্রোহ (Pagal Panthi Revolt) : ঊনিশ শতকে বাংলায় যেসব কৃষক বিদ্রোহ সংঘটিত হয়েছিল সেগুলির মধ্যে 'পাগলপন্থী' বিদ্রোহ বিশেষ উল্লেখযোগ্য ছিল । ঔপনিবেশিক শাসনকালে অবিভক্ত বাংলায় ময়মনসিং জেলার শেরপুর পরগনার পাহাড়ি এলাকায় গারো ও

মুন্ডা বিদ্রোহ (১৮৯৯-১৯০০ খ্রিস্টাব্দে)

মুন্ডা বিদ্রোহ (Munda Rebellion):- বর্তমান ঝাড়খন্ড রাজ্যের রাঁচিসহ ছোটোনাগপুর অঞ্চলে এবং তৎসংলগ্ন মধ্যপ্রদেশ, উড়িষ্যা ও বাংলার একাংশে মুন্ডা উপজাতিরা বসবাস করত । ১৮৯৯-১৯০০ খ্রিস্টাব্দে রাঁচিতে আদিবাসী মুন্ডা সম্প্রদায় বিরসা মুন্ডার নেতৃ

সাঁওতাল হুল (১৮৫৫-৫৬ খ্রিস্টাব্দ)

সাঁওতাল বিদ্রোহ (Santhal rebellion) : ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনকালে যে সমস্ত আদিবাসী বিদ্রোহগুলি ঘটেছিল সেগুলির মধ্যে 'সাঁওতাল বিদ্রোহ' বা 'সাঁওতাল হুল' সবথেকে ভয়াবহ ও জঙ্গি ছিল । সাঁওতালি ভাষায় বিদ্রোহকে হুল বলা হয় । সাঁওতালগণ

কোল বিদ্রোহ (১৮৩১ -৩২ খ্রিস্টাব্দ)

কোল বিদ্রোহ (Kol Rebellion) : উনবিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে যেসব আদিবাসী বিদ্রোহ ঘটে, তাদের মধ্যে কোল বিদ্রোহ ছিল অন্যতম । বিহারের ছোটনাগপুর, সিংভূম, মানভূম প্রভৃতি অঞ্চলে ব্রিটিশ শাসনকালে কোল উপজাতি গোষ্ঠী বসবাস করত । কোল উপজাতি গোষ্