ইতালিতে ফ্যাসিবাদ ও মুসোলিনির পররাষ্ট্র নীতি

Submitted by avimanyu pramanik on Mon, 04/23/2012 - 21:55

ইতালিতে ফ্যাসিবাদ ও মুসোলিনির পররাষ্ট্র নীতি (Fascism in Italy) :

ইতালিতে ফ্যাসিবাদ (Fascism in Italy) : প্যারিস শান্তি সম্মেলনে সম্পাদিত চুক্তিগুলির দ্বারা স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয় নি । প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সর্বনাশা পরিণাম যথা— লোকক্ষয়, সম্পত্তিবিনাশ, শিল্পের ধ্বংস, ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষতি, বেকারত্ব প্রভৃতি ইউরোপের নানা দেশে সমস্যা তীব্রতর করে তোলে । ফলে ওই সব দেশে প্রতিক্রিয়াশীল শক্তির উদ্ভব হয় । সমসাময়িক কালে এই প্রতিক্রিয়াশীল শক্তি ইটালি ও জার্মানিতে প্রবল হয়ে উঠেছিল ।

ফ্যাসিবাদের উৎপত্তি (rise of Fascism) : প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ইটালি মিত্রপক্ষে যোগ দান করেছিল । প্যারিস শান্তি সম্মেলনে আশানুরূপ সুবিধা না পাওয়ায় হতাশ হয়ে ইটালির প্রধানমন্ত্রী অর্লান্ডো সম্মেলন বর্জন করেন । প্রথম বিশ্ব যুদ্ধের পরে ইটালিতে দারুন অর্থনৈতিক সংকট ঘনীভূত হয়, সর্বস্তরে চরম বিশৃঙ্খলা ও অরাজকতা দেখা দেয় । ইটালি তখন এই অবস্থা সামাল দিয়ে উঠতে পারে নি । ফলে প্রতিক্রিয়াশীল শক্তি সক্রিয় হয়ে ওঠে । ইটালিতে এই শক্তির যারা উৎস তাদেরকে ফ্যাসিস্ট বলা হত এবং তাদের অনুসৃত নীতি হল ফ্যাসিবাদ । ল্যাটিন ভাষায় 'ফ্যাসিও' শব্দের অর্থ  'কাষ্ঠ খন্ডের বান্ডিল' থেকেই ফ্যাসি নামের উৎপত্তি । ইতালির ফ্যাসিস্ট দলের নেতা ছিলেন বেনিটো মুসোলিনি । বেনিটো মুসোলিনি দেশের অরাজকতার সুযোগ নিয়ে এক শক্তিশালী সৈন্যদল গঠন করেন । তাঁর নেতৃত্বে দেশের সমস্যা সমাধান হতে পারে এই আস্থা রেখে ইটালির হাজার হাজার মানুষ ও মহাযুদ্ধ প্রত্যাগত সৈনিকরা তার দলে যোগদান করেন । এই দলের সদস্যদের পরনে থাকত কালো শার্ট তাই এরা ব্ল্যাকসার্ট নামেও পরিচিত । এঁদের প্রতীক ছিল দন্ড, তাই এদের বলা হত ফ্যাসিস্ট । ফ্যাসিবাদীরা ব্যক্তিস্বাধীনতা, গণতন্ত্র ও সমাজবাদের ঘোর বিরোধী ছিলেন । সামরিক কায়দায় দেশ শাসন করাই এদের নীতি । সমাজতন্ত্রী নেতা ম্যাটিওটির মৃত্যুর পর ফ্যাসিস্ট দল সর্বশক্তিমান হয়ে ওঠে । ১৯২২ সালে মুসোলিনি রোম অভিযান করে দখল করে নেন । ইটালির রাজা ভিক্টর তৃতীয় ইমান্যুয়েল বিনা প্রতিবাদে মুসোলিনির হাতে ক্ষমতা তুলে দেন । ফলে রোমের ফাক্টা মন্ত্রিসভা ত্যাগ করে 'ফ্যাসিস্ট মন্ত্রীসভা' গঠিত হয় । ১৯২২ খ্রিস্টাব্দের ৩১শে অক্টোবর ভিক্টর তৃতীয় ইমান্যুয়েল মুসোলিনিকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করেন । এরপর মুসোলিনি সকল বিরোধী শক্তিকে ধ্বংস করে ইটালিতে একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন ও নিজে তাঁর সর্বাধিনায়ক হন । ক্ষমতা দখলের পর তিনি ইটালির পুনর্গঠন করেন ও তার যোগ্য নেতৃত্বে ইটালি এক শক্তিশালী দেশরূপে আত্মপ্রকাশ করে ।

ফ্যাসিস্ট আদর্শ (Ideology of Fascism) : ফ্যাসিস্টদের মতে দলই সব, সেখানে ব্যক্তিসত্তার কোনো মূল্য নেই । এই দলের আদর্শ ছিল—

(ক) রাষ্ট্রের মর্যাদা বৃদ্ধি করা,

(খ) কমিউনিস্ট প্রভাব থেকে ইটালিকে মুক্ত রাখা,

(গ) বিশ্বের দরবারে ইটালিকে স্বমহিমায় প্রতিষ্ঠিত করার উদ্দেশ্যে উপযুক্ত বিদেশনীতি প্রণয়ন করা,

(ঘ) ব্যক্তিগত ধনসম্পত্তি সুরক্ষিত করা ইত্যাদি । 

মুসোলিনির পররাষ্ট্র নীতি : মুসোলিনি মনে করতেন যে, আন্তর্জাতিক শান্তি হল কাপুরুষের স্বপ্ন, অন্যদিকে সাম্রাজ্যবাদ ও যুদ্ধনীতি হল জাতির প্রাণশক্তির প্রাচুর্যের প্রমাণ । ইতালির শাসনভার গ্রহণ করার পর মুসোলিনি তাঁর পররাষ্ট্রনীতি ঘোষণা করেন । মুসোলিনির ফ্যাসিবাদী পররাষ্ট্রনীতির মূল উদ্দেশ্য ছিল—

(ক) সাম্রাজ্য বিস্তারের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ইতালিকে পৃথিবীর সর্ব শ্রেষ্ঠ দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা ।

(খ) ভার্সাই সন্ধি ও অন্যান্য সন্ধির দ্বারা ইতালির ওপর যে অবিচার করা হয়েছে তার বিরোধিতা করা ।

(গ) কারণে-অকারণে জাতিসংঘ বা লিগ অফ নেশনস্‌ -এর কার্যকলাপের তীব্র সমালোচনা করা, কারণ মুসোলিনি এই সংস্থাকে পশ্চিমী দেশগুলির স্বার্থরক্ষাকারী সংঘ বলে মনে করতেন ।

*****

Related Items

ভারতের সংবিধানের চারটি মূল বৈশিষ্ট্য উল্লেখ কর ।

প্রশ্ন:-  ভারতের সংবিধানের চারটি মূল বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করো ।

১৯৫০ খ্রিস্টাব্দের ২৬শে জানুয়ারি ভারতের সংবিধান প্রকাশ করা হয় । ভারতীয় সংবিধানের চারটি উল্লেখযোগ্য প্রধান বৈশিষ্ট্য হল—

মুসলিম লিগ কবে প্রতিষ্ঠিত হয় ? স্যার সৈয়দ আহম্মদ খাঁ মুসলমানদের কংগ্রেসে যোগ না দিতে পরামর্শ দিয়েছিলেন কেন ? মুসলিম লিগ কেন ‘প্রত্যক্ষ সংগ্রাম দিবস’ পালন করে ?

প্রশ্ন:-  মুসলিম লিগ কবে প্রতিষ্ঠিত হয় ? স্যার সৈয়দ আহম্মদ খাঁ মুসলমানদের কংগ্রেসে যোগ না দিতে পরামর্শ দিয়েছিলেন কেন ? মুসলিম লিগ কেন ‘প্রত্যক্ষ সংগ্রাম দিবস’ পালন করে ?

‘দ্বিজাতি তত্ত্ব’ কী ? ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রামের শেষ পর্যায়ে এই তত্ত্বের প্রভাব উল্লেখ কর ।

প্রশ্ন:- ‘দ্বিজাতি তত্ত্ব’ কী ? ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রামের শেষ পর্যায়ে এই তত্ত্বের প্রভাব উল্লেখ কর ।

ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে নৌ-বিদ্রোহের গুরুত্ব কী ? দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর ভারতে ছাত্র আন্দোলনের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও ।

প্রশ্ন:-  ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে নৌ-বিদ্রোহের গুরুত্ব কী ? দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর ভারতে ছাত্র আন্দোলনের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও ।

আজাদ হিন্দ ফৌজের লক্ষ্য কতদূর পরিপূর্ণ হয় ? আজদ হিন্দ ফৌজের বিচার ভারতীয় জনগণের ওপর কী প্রভাব বিস্তার করে ?

প্রশ্ন:- আজাদ হিন্দ ফৌজের লক্ষ্য কতদূর পরিপূর্ণ হয় ? আজদ হিন্দ ফৌজের বিচার ভারতীয় জনগণের ওপর কী প্রভাব বিস্তার করে ?