আজাদ হিন্দ ফৌজের ভারত অভিযান

Submitted by avimanyu pramanik on Thu, 08/08/2013 - 14:08

আজাদ হিন্দ ফৌজের ভারত অভিযান :

(১) ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দের ১৪ই জুলাই ভারতের বিশিষ্ট বিপ্লবী রাসবিহারী বসুর ইচ্ছা অনুসারে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু আজাদ হিন্দ ফৌজের নেতৃত্ব গ্রহণ করেন ।

(২) নেতাজির রণধ্বনি ‘দিল্লী চলো’ ও ‘জয় হিন্দ’ মন্ত্রে উদ্দীপ্ত হয়ে আজাদ হিন্দ বাহিনী ভারত সীমান্তে এসে পৌঁছায় ।

(৩) ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দের ৬ই নভেম্বর জাপানের প্রধানমন্ত্রী তোজো নেতাজির হাতে আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ দুটি অর্পণ করেন । ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দের ৩১শে ডিসেম্বর সুভাষচন্দ্র বসু এই দুটি দ্বীপপুঞ্জের দায়িত্ব গ্রহণ করে সেখানে ত্রিবর্ণ পতাকা উত্তোলন করে দ্বীপগুলির নতুন নামকরণ করেন যথাক্রমে 'শহিদ দ্বীপ' ও 'স্বরাজ দ্বীপ' ।

(৪) সাঁড়াশি আক্রমণ চালাতে নেতাজি ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দের ৪ঠা জানুয়ারি বার্মার রাজধানী রেঙ্গুনে প্রধান সামরিক ঘাঁটি গড়ে তোলেন । আজাদ হিন্দ বাহিনীর একটি দল ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দের ১৯শে মার্চ কোহিমায় উপনীত হয়ে স্বাধীন ভারতের ত্রিবর্ণরঞ্জিত পতাকা উত্তোলন করেন । অন্য একটি বাহিনী মণিপুরের রাজধানী ইম্ফলের অদূরে মৈরাং -এ জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন এবং কোহিমা ও মৈরাং সহ ভারতীয় এলাকার প্রায় ১৫০ মাইল ব্রিটিশ শাসন মুক্ত করার পর মণিপুরের রাজধানী ইম্ফল অধিকারের উদ্দেশ্যে অগ্রসর হয় । ইতিমধ্যে প্রবল বর্ষা শুরু হলে আজাদ হিন্দ বাহিনীর ভারত অভিযান ব্যাহত হয় ।

আজাদ হিন্দ বাহিনীর আত্মসমর্পণের প্রধান কারণ :

(১) দূর্গম পার্বত্য এলাকায় যুদ্ধ পরিচালনায় নানান অসুবিধা এবং নির্দিষ্ট সময়ের আগেই প্রবল বর্ষা নামায় আজাদ হিন্দ বাহিনীর যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে ।

(২) অস্ত্রশস্ত্র, খাদ্য ও সরঞ্জামের অভাবের ফলে আজাদ হিন্দ ফৌজের সৈনিকরা পিছু হটতে বাধ্য হয় ।

(৩) ঐতিহাসিক এ.এম. নায়ারের মতে, জাপান ও সুভাষচন্দ্র বসুর ভারত অভিযানের পরিকল্পনা সময় উপযোগী ছিল না ও রণকৌশল ছিল ত্রুটিপূর্ণ ।

(৪) এই সময়ে ইঙ্গ-মার্কিন বাহিনীর আক্রমণে জাপান বিধ্বস্ত হয়ে পড়ে । জাপানের সাহায্য বন্ধ হয়ে যায় । জাপানিরা পিছু হটায় পরিস্থিতি পাল্টে যায় ও আজাদ হিন্দ বাহিনী ব্রিটিশ ফৌজের কাছে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয় ।

আজাদ হিন্দ বাহিনী তার ঘোষিত লক্ষ্য পূরণে ব্যর্থ হলেও ভারতের স্বাধীনতার ইতিহাসে আজাদ হিন্দ বাহিনীর অভিযানের ফলাফল ছিল সুদূরপ্রসারী ।

(১) আজাদ হিন্দ বাহিনীর সংগ্রামের তাৎক্ষণিক ফল হিসাবে ভারতীয় নৌ-সেনারা বিদ্রোহ ঘোষণা করে;

(২) ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে ভারতের নৌ-সেনাদের বিদ্রোহের পর, আজাদ হিন্দ সরকারের প্রধান হিসাবে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুই ভারতবর্ষের স্বাধীনতার দাবিকে একটি আন্তর্জাতিক প্রশ্নে পরিণত করেন ।

(৩) দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে দিল্লীর লালকেল্লার প্রকাশ্য সামরিক আদালতে আজাদ হিন্দ বাহিনীর বিচার শুরু হলে বিখ্যাত আইনজীবী জওহরলাল নেহরু, তেজবাহাদুর সাপ্রু, ভুলাভাই দেশাই প্রমুখ আজাদ হিন্দ বন্দি সেনাদলের পক্ষ নেয় । আজাদ হিন্দ ফৌজের বিচার ভারতীয় জনগণের ওপর ভয়ংকর প্রভাব বিস্তার করে । এই বিচারকে কেন্দ্র করে ১৯৪৫ সালের শেষের দিকে সারা ভারতে যে তুমুল উত্তেজনা ও ব্রিটিশ-বিরোধী আন্দোলনের সৃষ্টি হয়, তা ব্রিটিশ সরকারকে ক্রমশ ভীত ও সন্ত্রস্ত করে তোলে । নেতাজির আজাদ হিন্দ বাহিনী প্রকৃত পক্ষে ব্যর্থ হয়নি । ব্রিটিশ শক্তির ওপর চূড়ান্ত আঘাত হেনে তারা ভারতের স্বাধীনতা অর্জনের পথকে সুগম করে তুলেছিল ।

*****

Related Items

শ্রীরামপুর মিশন প্রেস কিভাবে একটি অগ্রনী মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানে পরিণত হল ?

প্রশ্ন : শ্রীরামপুর মিশন প্রেস কিভাবে একটি অগ্রনী মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানে পরিণত হল ?

উঃ- ১৮০০ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৮৩৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ৩৮ বছর বাংলা মুদ্রণ ও প্রকাশনায় শ্রীরামপুর মিশনের অবদান খুবই গুরুত্বপূর্ণ ।

বাংলায় মুদ্রণ শিল্পের বিকাশে গঙ্গাকিশোর ভট্টাচার্যের কীরূপ অবদান ছিল ?

প্রশ্ন : বাংলায় মুদ্রণ শিল্পের বিকাশে গঙ্গাকিশোর ভট্টাচার্যের কীরূপ অবদান ছিল ?

১৮৫৭ -এর মহাবিদ্রোহকে কি সামন্ত-শ্রেণির বিদ্রোহ বলা যায় ?

প্রশ্ন : ১৮৫৭ -এর মহাবিদ্রোহকে কি সামন্ত-শ্রেণির বিদ্রোহ বলা যায় ?

উঃ- ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহের সময় থেকেই এই বিদ্রোহের চরিত্র বা প্রকৃতি নিয়ে বিভিন্ন ধারার ইতিহাসচর্চার নানা ধরনের গবেষণালব্দ মতামত পাওয়া যায় ।

কী উদ্দেশ্যে ঔপনিবেশিক সরকার অরণ্য আইন প্রণয়ন করেন ?

প্রশ্ন : কী উদ্দেশ্যে ঔপনিবেশিক সরকার অরণ্য আইন প্রণয়ন করেন ?

এদেশের চিকিৎসাবিদ্যার ক্ষেত্রে কলিকাতা মেডিকেল কলেজের কীরূপ ভূমিকা ছিল ?

প্রশ্ন : এদেশের চিকিৎসাবিদ্যার ক্ষেত্রে কলিকাতা মেডিকেল কলেজের কীরূপ ভূমিকা ছিল ?