Submitted by avimanyu pramanik on Mon, 04/23/2012 - 13:57

শক্তিজোট গঠন (Alliances) :

ইউরোপীয় প্রধান দেশগুলি পারস্পরিক প্রতিহিংসা ও সন্দেহের মনোভাব থেকে সমগ্র বিশ্ব দুটি শক্তি শিবিরে বিভক্ত হয়ে যায় । একটি জার্মানি, ইটালি ও অস্ট্রিয়াকে নিয়ে ত্রিশক্তি চুক্তি (Triple Alliance), এবং অন্যটি ইংল্যান্ড, ফ্রান্স ও রাশিয়াকে নিয়ে ত্রিশক্তি মৈত্রী (Triple Entente) । এই দুই শক্তি গোষ্ঠির সংঘাতে বিশ্ব পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে । উভই পক্ষই প্রতিপক্ষকে চরম আঘাত হানার জন্য সামরিক প্রস্তুতি শুরু করে দেয় । এই সময় অস্ট্রিয়ার যুবরাজ আর্চ ডিউক ফ্রান্সিস ফার্ডিন্যান্ড ও তাঁর স্ত্রী সোফিয়া বসনিয়ার রাজধানী সেরাজেভো শহরে সফরে এলে ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দে ২৮ শে জুন 'ব্ল্যাকহ্যান্ড' সোসাইটির সদস্য গ্যাবরিলো প্রিন্সেপ তাঁদের সেরাজেভোর রাজপথে প্রকাশ্য দিবালোকে হত্যা করেন । অস্ট্রিয়া সেরাজেভোর কাছে এক চরম পত্র পাঠিয়ে চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে আততায়ীকে তাদের হাতে তুলে দিতে নির্দেশ দেয় । সেরাজেভো সেই চরম পত্রের জবাব দিতে অপারগ হয়  । এভাবে সেরাজেভোর হত্যাকান্ড বিশ্বের অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতিকে স্ফুলিঙ্গ জোগায় । এই হত্যাকান্ডের এক মাস পর ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দের ২৮ শে জুলাই অস্ট্রিয়া সার্বিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করলে ইংল্যান্ড, ফ্রান্স ও রাশিয়া সার্বিয়াকে এবং জার্মানি ও ইটালি অস্ট্রিয়াকে সমর্থন করে । এভাবেই প্রথম বিশ্বযুদ্ধের দাবানল জ্বলে ওঠে । চার বছর যুদ্ধ চলার পর ১৯১৮ খ্রিস্টাব্দের ১১ই নভেম্বর জার্মানি আত্মসমর্পণ করলে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের অবসান হয় ।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধ ইউরোপের মাটিতে হলেও ভারতে তার প্রভাব পড়েছিল । তৎকালীন ভারতসচিব এডউইন মন্টেগু ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দে ঘোষণা করেন যে (ক) নতুন শিল্পগঠনের মাধ্যমে ভারতের আর্থিক অবস্থার উন্নতি ঘটানো হবে ও (খ) শাসন সংস্কারের মাধ্যমে ভারতীয়দের বহু আকাঙ্ক্ষিত স্বায়ত্তশাসনের দাবি পূরণ করা হবে । ব্রিটিশের এই মনোভাব লক্ষ করে জাতীয়তাবাদী কংগ্রেস নেতারা, এমনকি চরমপন্থীনেতা লোকমান্য বালগঙ্গাধর তিলক ব্রিটিশ সরকারকে সমস্ত রকম সাহায্য করার জন্য সর্বস্তরের মানুষকে আহ্বান জানান । ফলে ভারতীয়রা অর্থ, অস্ত্র, রসদ, সেনা ও অন্যান্য উপকরণ দিয়ে ব্রিটিশ বাহিনীকে সাহায্য করে । ১২ লক্ষ ৫০ হাজার ভারতীয় সেনা ব্রিটেনের পক্ষে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে যোগ দেয় । তার মধ্যে ১০ হাজার সৈন্য মারা যায় । এই যুদ্ধে ভারতের রাজস্ব থেকে প্রায় ১২ কোটি ৭৮ লক্ষ পাউন্ড অর্থ খরচ হয় । ওই সময় ভারতীয়রা চাঁদা হিসেবে ৬ কোটি ২১ লক্ষ টাকা দেন ।

*****

Related Items

ঔপনিবেশিক শিক্ষা ধারণার সমালোচনা

ঔপনিবেশিক শিক্ষা ধারণার সমালোচনা (Critique of Colonial Ideas Regarding Education):-

ভারতে ব্রিটিশ শাসনের সূচনাপর্বে বাংলা তথা ভারতের শিক্ষার্থীরা পাঠশালা, টোল, মক্তব ও মাদ্রাসা থেকে সংস্কৃত, আরবি ও ফারসি -র মাধ্যমে শিক্ষা গ্রহণ করত । এসব প্রতি

বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট

বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট (The Bengal Technical Institute) :-

ব্রিটিশ আমলে ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে লর্ড কার্জনের বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে স্বদেশি আন্দোলনের সময় ব্রিটিশ সরকারের শিক্ষাব্যবস্থার বিকল্প হিসাবে বাংলায় স্বদেশি উদ্যোগে বিজ্ঞান ও কারিগরি শিক

জাতীয় শিক্ষা পরিষদ (National Council of Education)

জাতীয় শিক্ষা পরিষদ (National Council of Education):-

ব্রিটিশ আমলে লর্ড কার্জনের সময় ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে বাংলাকে দ্বিখন্ডিত করার পর স্বদেশী আন্দোলন শুরু হলে ব্রিটিশ শিক্ষাব্যবস্থার বিকল্প রূপে দেশীয় প্রগতিশীল স্বদেশী ধাঁচে বাংলায় বিজ্ঞান ও কারিগরি শিক্ষার প্রস

বাংলায় কারিগরি শিক্ষার বিকাশ

বাংলায় কারিগরি শিক্ষার বিকাশ (Development of Technical Education in Bengal) :-

ব্রিটিশ শাসন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পূর্বে বাংলায় পাশ্চাত্য ধাঁচের কারিগিরি শিক্ষার অস্তিত্ব ছিল না । ঊনিশ শতক থেকে বাংলায় আধুনিক পাশ্চাত্য শিক্ষার ও বিজ্ঞান শিক্ষার অগ্

বসু বিজ্ঞান মন্দির (Bose Institute)

বসু বিজ্ঞান মন্দির (Bose Institute):-

ঔপনিবেশিক ভারতে আধুনিক বিজ্ঞানচর্চা ও বিজ্ঞান শিক্ষার বিকাশের উদ্দেশ্যে যেসকল প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে সেগুলির মধ্যে অন্যতম হল 'বসুবিজ্ঞান মন্দির' বা বোস ইনস্টিটিউট । ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দের ৩০শে নভেম্বর জগদীশচন্দ্র বসু ইংল্যান্ডের র