ভূপৃষ্ঠের বায়ুচাপ বলয়গুলির সঙ্গে নিয়ত বায়ুপ্রবাহের সম্পর্ক কী

Submitted by avimanyu pramanik on Sun, 01/02/2022 - 11:38

প্রশ্ন : ভূপৃষ্ঠের বায়ুচাপ বলয়গুলির সঙ্গে নিয়ত বায়ুপ্রবাহের সম্পর্ক কী ?

বায়ুচাপের পার্থক্যই নিয়ত বায়ুপ্রাহের প্রধান কারণ । যেখানে বায়ুর চাপ বেশি, সেখান থেকে যে দিকে বায়ুর চাপ কম, সেদিকেই বায়ু প্রবাহিত হয় । এই নিয়ম মেনে পৃথিবীর চারটি স্থায়ী উচ্চচাপ বলয় থেকে তিনটি স্থায়ী নিম্নচাপ বলয়ের দিকে সারা বছর ধরে নিয়মিতভাবে ও নির্দিষ্ট গতিতে প্রবাহিত বায়ুই হল নিয়ত বায়ুপ্রবাহ । নিয়ত বায়ুপ্রবাহ তিন রকমের, যথা— আয়ন বায়ু, পশ্চিমাবায়ু ও মেরুবায়ু ।

(১) আয়ন বায়ুর সঙ্গে বায়ুচাপ বলয়ের সম্পর্ক :

(ক) উত্তর গোলার্ধে কর্কটীয় উচ্চচাপ বলয় এবং দক্ষিণ গোলার্ধে মকরীয় উচ্চচাপ বলয় থেকে নিরক্ষীয় নিম্নচাপ বলয়ের দিকে সারা বছর ধরে আয়ন বায়ু প্রবাহিত হতে থাকে ।

(খ) মোটামুটিভাবে ৩০ থেকে ৫ উত্তর ও দক্ষিণ অক্ষরেখার মধ্যে আয়নবায়ু প্রবাহিত হয় । ফেরেলের সূত্র অনুসারে উত্তর গোলার্ধে এই বায়ুপ্রবাহ ডান দিকে কিছুটা বেঁকে উত্তর-পূর্ব দিক থেকে ছুটে আসে ।

(গ) উত্তর-পূর্ব দিক থেকে আসে বলে উত্তর গোলার্ধে এই বায়ুপ্রবাহের নাম উত্তর-পূর্ব আয়ন বায়ু

(ঘ) দক্ষিন গোলার্ধে আয়নবায়ু ফেরেলের সূত্র অনুসারে খানিকটা বাঁ দিকে বেঁকে দক্ষিন-পূর্ব দিক থেকে ছুটে আসে । দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে আসে বলে দক্ষিণ গোলার্ধে এই বায়ুপ্রবাহের নাম দক্ষিন-পূর্ব আয়ণ বায়ু

(ঙ) নিরক্ষরেখা নিকটবর্তী নিরক্ষীয় ক্রান্তীবলয় অঞ্চলে ৫ উত্তর অক্ষাংহ থেকে ৫ দক্ষিণ অক্ষাংশ পর্যন্ত স্থানে  উত্তর-পূর্ব ও দক্ষিন-পূর্ব আয়ণ বায়ু মিলিত হয় বলে ওই অঞ্চলে কোনো বায়ুপ্রবাহ থাকে না ।

(২) পশ্চিমাবায়ুর সঙ্গে বায়ুচাপ বলয়ের সম্পর্ক : পশ্চিমাবায়ু উভয় গোলার্ধে সাধারণত ৩০ থেকে ৬০ অক্ষরেখার মধ্যে ক্রান্তীয় উচ্চচাপ বলয় থেকে মেরুবৃত্ত প্রদেশীয় নিম্নচাপ বলয়ের দিকে সারা বছর ধরে প্রবাহিত হয় । এই বায়ু ফেরেলের সূত্র মেনে উত্তর গোলার্ধে ডান দিকে বেঁকে দক্ষিণ-পশ্চিম পশ্চিমাবায়ু হিসেবে এবং দক্ষিণ গোলার্ধে বাঁ দিকে বেঁকে উত্তর-পশ্চিম পশ্চিমাবায়ু হিসাবে প্রবাহিত হয় ।

(৩) মেরুবায়ুর সঙ্গে বায়ুচাপ বলয়ের সম্পর্ক : মেরুবায়ু সাধারণত উভয় গোলার্ধে মোটা মুটি ৭০ থেকে ৮০ অক্ষরেখার মধ্যে মেরুদেশীয় উচ্চচাপ বলয় থেকে মেরুবৃত্তপ্রদেশীয় নিম্নচাপ বলয়ের দিকে সারা বছর ধরে প্রবাহিত হয় । এই বায়ু উত্তর গোলার্ধে উত্তর-পূর্ব মেরুবায়ু এবং দক্ষিণ গোলার্ধে দক্ষিণ-পূর্ব মেরুবায়ু নামে প্রবাহিত হয় ।

*****

Comments

Related Items

স্বাভাবিক বাঁধ (Natural Levee)

স্বাভাবিক বাঁধ (Natural Levee) : সমভূমি প্রবাহে ও বদ্বীপ প্রবাহে নদীর সঞ্চয়কাজের ফলে যে সমস্ত ভূমিরূপের সৃষ্টি হয়, তাদের মধ্যে অন্যতম একটি ভূমিরূপ হল স্বাভাবিক বাঁধ । সমভূমি প্রবাহে নদীর বহন ক্ষমতা একেবারে কমে যায় বলে নদীবাহিত পলি, বাল

প্লাবনভূমি (Flood Plain)

প্লাবনভূমি (Flood Plain) : নদী মধ্যপ্রবাহ থেকে মোহনার দিকে যতই অগ্রসর হতে থাকে, ততই নদীর স্রোতের বেগ কমতে থাকে । স্রোতের বেগ কমে যাওয়ায় নদীবাহিত শিলাচূর্ণ, নুড়ি, কাদা, পলি, বালি, প্রভৃতি নদী গর্ভে ও নদীর দুই তীরে জমা হতে থাকে । ফলে নানা রকম ভূমিরূপ গড়ে

অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ (Ox-bow lake)

অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ (Ox-bow lake) : নদীর মধ্যগতির শেষের দিকে এবং নিম্নগতিতে নদীর ক্ষয়কাজ ও সঞ্চয়কাজের ফলে যে সমস্ত রকম ভূমিরূপের সৃষ্টি হয়, অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ হল তাদের মধ্যে অন্যতম । সমভূমি প্রবাহে নদী এঁকে-বেঁকে প্রবাহিত হলে নদীর জলস্রোত বাঁকের মুখে ক

নদীবাঁক (Meander)

নদী বাঁক (Meander) : নদীর মধ্যগতিতে সমভূমির উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার সময় যে সমস্ত রকম ভূমিরূপের সৃষ্টি হয়, নদী বাঁক [Meander] হল তাদের মধ্যে অন্যতম । তুরস্কের বাঁকবহুল 'মিয়েন্ড্রেস' নদীর নামানুসারে এই ভূমিরূপের নামকরণ হয় 'মিয়েন্ডার' ।

পলল ব্যজনী (Alluvial Cone)

পলল ব্যজনী (Alluvial Cone) : পার্বত্য অঞ্চল থেকে সমভূমিতে নেমে আসার সময়ে নদীর মাধ্যগতিতে গতিপথের ঢাল হঠাৎ কমে যাওয়ার কারণে নদীর গতিবেগ হ্রাস পায় । স্রোতের বেগ কমে যাওয়ায় পার্বত্য অঞ্চল থেকে বয়ে নিয়ে আসা নুড়ি, বালি, কাঁকর, কাদামাটি, শিলাচূর্ণ, পলিমাটি