বায়ুর আদ্রতা (Humidity):- সূর্যের তাপে সাগর, মহাসাগর, নদনদী, হ্রদ ও অন্যান্য জলাশয় থেকে জল বাষ্পে পরিনত হারে বায়ুর সঙ্গে মিশে । ফলে বায়ু আর্দ্র হয় । শুকনো ও ভিজে কুন্ডযুক্ত হাইগ্রোমিটার (Hygrometer) যন্ত্র দিয়ে বায়ুর আর্দ্রতা নির্ণয় করা হয় । বায়ু সব সময় একই রকম আর্দ্র থাকে না । স্থান ও ঋতুভেদে বায়ুর আর্দ্রতার পরিবর্তন ঘটে । বায়ু যত বেশি উষ্ণ হয় জলীয়বাষ্প ধারণ করার ক্ষমতা তত বেশি হয় ।
সম্পৃক্ত বায়ু (Saturated) :- এক নির্দিষ্ট পরিমাণ বায়ু নির্দিষ্ট উষ্ণতায় এক নির্দিষ্ট পরিমাণ জলীয়বাষ্প ধারণ করে । যখন তার চেয়ে বেশি জলীয়বাষ্প ধারণ করার ক্ষমতা বায়ুর থাকে না তখন সেই বাতাসকে সম্পৃক্ত বায়ু বা পরিপৃক্ত বায়ু বলে ।
আপেক্ষিক আদ্রতা (Relative Humidity) :- সাধারণভাবে কোনও নির্দিষ্ট পরিমাণ তাপে এক নির্দিষ্ট পরিমাণ বায়ুতে যে পরিমাণ জলীয়বাষ্প থাকে, তাকে ঐ বায়ুর নিরপেক্ষ আর্দ্রতা বা চরম আর্দ্রতা (Absolute Humidity) বলে । আর যে পরিমাণ জলীয়বাষ্প ঐ নির্দিষ্ট তাপে বায়ুতে থাকা সম্ভবপর [অর্থাৎ ঐ বায়ুকে সম্পৃক্ত বা পরিপৃক্ত করার জন্য যে পরিমাণ জলীয় বাষ্পের প্রয়োজন তার সঙ্গে ঐ প্রকৃত পরিমাণের অনুপাতকে সাপেক্ষ আর্দ্রতা বা আপেক্ষিক আর্দ্রতা বলে ।
অর্থাৎ, আপেক্ষিক আর্দ্রতা = নির্দিষ্ট পরিমাণ বায়ুতে উপস্থিত জলীয় বাষ্প X ১০০
ওই তাপমাত্রায় সমপরিমাণ বায়ুকে সম্পৃক্ত করতে প্রয়োজনীয় জলীয়বাষ্পের পরিমাণ
(i) আপেক্ষিক আর্দ্রতা একটি অনুপাত ।
(ii) সাধারণত এই অনুপাতকে শতকরা হিসাবে প্রকাশ করা হয় ।
(iii) বায়ুর উষ্ণতা ও আপেক্ষিক আর্দ্রতার সম্পর্ক ব্যাস্তানুপাতিক – অর্থাৎ বায়ুর উষ্ণতা বাড়লে আপেক্ষিক আর্দ্রতা কমে এবং বায়ুর উষ্ণতা কমলে আপেক্ষিক আদ্রতা বাড়ে ।
(iv) আপেক্ষিক আদ্রতার সাহায্যে কোনও স্থানের বায়ুর আপেক্ষিক স্যাঁতস্যাঁতে ভাব মাপা হয় ।
(v) কোনো স্থানের আপেক্ষিক আদ্রতা জানার ফলে সেই স্থানে পৃথিবীপৃষ্ঠের তাপ বিকিরণের হার, ঝড়বৃষ্টি ও তুষারপাতের সম্ভাবনা প্রভৃতির পূর্বাভাষ পাওয়া যায় ।
(vi) শুষ্ক ও আদ্রকুণ্ড-যুক্ত হাইগ্রোমিটার (Dry & Wet Bulb Hygrometre) -এর সাহায্যে কোনো স্থানের বায়ুর আপেক্ষিক আদ্রতার পরিমাপ করা হয় ।
বায়ুর আর্দ্রতার সঙ্গে আবহাওয়া ও জলবায়ুর অন্যান্য উপাদানের সম্পর্ক :- বায়ুর তাপ, চাপ, বায়ুপ্রবাহ, মেঘ ও বৃষ্টির সঙ্গে আর্দ্রতার সম্পর্ক বর্তমান ।
(ক) তাপে জল বাস্পীভূত হয় । বায়ু উত্তপ্ত হলে তার জলীয়বাষ্প ধারণ ক্ষমতা বাড়ে ।
(খ) জলীয়বাষ্পপূর্ণ আর্দ্র বায়ু হালকা । এই বায়ুর চাপ কম । ফলে সহজেই উপরে উঠে যায় ।
(গ) সেখানে শীতল বায়ুর সংস্পর্শে এসে শীতল ও ঘনীভূত হয়ে মেঘ ও বৃষ্টির উত্পত্তি ঘটায় । কৃষ্ণবর্ণের কিউমিউলাস মেঘে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয় ।
(ঘ) বায়ুতে থাকা জলীয় বাষ্পের পরিমাণের ওপর স্থানীয় আবহাওয়া অনেকাংশে নির্ভরশীল । মেঘ, বৃষ্টি, কুয়াশা প্রভৃতি নৈসর্গিক ব্যাপার হল জলীয়বাষ্পের ঘনীভবনের ফল ।
(ঙ) কোনো স্থানের বায়ুতে দীর্ঘকাল ধরে জলীয়বাষ্পের অভাব হলে (অর্থাৎ আর্দ্রতা কম হলে) সেখানে মরুভূমির সৃষ্টি হয় ।
(চ) অন্যদিকে কোনো স্থানের বায়ুতে পরে দীর্ঘসময় ধরে জলীয়বাষ্পের পরিমাণ (অর্থাৎ আর্দ্রতা) বৃদ্ধি পেলে সেখানে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় এবং মরুপ্রায় অঞ্চল শস্য শ্যামলা হয়ে হয়ে ওঠে ।
*****
- 10504 views