বায়ুর কাজ কোথায় বেশি দেখা যায় ? বায়ু কোন কোন প্রক্রিয়ায় ক্ষয়সাধন এবং বহন করে ?

Submitted by avimanyu pramanik on Tue, 12/28/2021 - 17:08

প্রশ্ন:- বায়ুর কাজ কোথায় বেশি দেখা যায় ? বায়ু কোন কোন প্রক্রিয়ায় ক্ষয়সাধন এবং বহন করে ?

প্রধানত মরুভূমি অঞ্চলেই বায়ুর ক্ষয়কাজ সবচেয়ে বেশি হয় । এর কারণ হল—

(১) মরুভূমি অঞ্চলে পাহাড়-পর্বত, গাছপালা প্রভৃতির উপস্থিতি না থাকায় মরুভূমির ওপর দিয়ে যখন বায়ু প্রবাহিত হয় বায়ুপ্রবাহ কোন রকম বাধার সম্মুখীন হয় না । ফলে মরুভূমির ওপর দিয়ে প্রবলবেগে বায়ু প্রবাহিত হয়,

(২) আর্দ্রতা, বৃষ্টিপাত এবং গাছপালা কোনো স্থানের ভূমিকে দৃঢ় ও সংবদ্ধ করে রেখে ক্ষয়ীভবনে বাধা সৃষ্টি করে । মরুভূমিতে এই তিনটিরই অভাবের জন্য মরুভূমিতে শিথিল মাটি ও বালির ওপর বায়ু সহজেই তার ক্ষয়কাজ চালাতে পারে,

(৩) মরুভূমিতে শীত ও গ্রীষ্ম এবং দিন ও রাত্রির মধ্যে তাপমাত্রার প্রভেদ খুবই বেশি । এই জন্য ব্যাপক সংকোচন ও প্রসারনের ফলে সংঘটিত যান্ত্রিক বিচূর্ণীভবনের দ্বারা শিলা সহজেই চূর্ণবিচূর্ণ ও শিথিল হয়ে বালিতে পরিণত হয়, এতে বায়ুর ক্ষয়কার্যের সুবিধা হয় ।

এছাড়া সমুদ্র উপকূলেও বায়ুর কাজ দেখা যায় ।

বায়ুর ক্ষয়সাধন প্রক্রিয়ায় : বায়ু প্রধানত তিনভাবে ক্ষয়কার্য করে, যথা-  (ক) অবঘর্ষ, (খ) ঘর্ষণ ও  (গ) অপসারণ ।

(ক) অবঘর্ষ (Abrasion) :  বায়ুপ্রবাহের সঙ্গে ভাসমান বালি, ছোটো ছোটো পাথরখন্ড, শক্ত কোয়ার্টজ কণা প্রভৃতির সঙ্গে ঘর্ষণে শিলাস্তর ক্ষয় পায়, এই প্রক্রিয়াকে অবঘর্ষ বলে । অবঘর্ষের ফলে শিলাস্তরে আঁচড়ের মত গভীর দাগ বা মৌচাকের মতো অসংখ্য ছোটো ছোটো গর্তের সৃষ্টি হয় । কঠিন শিলাস্তরের চেয়ে কোমল শিলাস্তরে অবঘর্ষের পরিমাণ বেশি হয় ।

(খ) ঘর্ষণ (Attrition) : মরূভূমিতে প্রবলবেগে বায়ুপ্রবাহের ফলে বড়ো বড়ো পাথরগুলি পরস্পরের সঙ্গে ঠোকাঠুকি লেগে অথবা ঘষা খেয়ে চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে গিয়ে অবশেষে ছোটো ছোটো গোলাকৃতি বালিকণায় পরিণত হলে তাকে ঘর্ষণ প্রক্রিয়া বলে । বায়ুর ঘর্ষণ প্রক্রিয়ায় মরুভূমি অঞ্চলে বড়ো বড়ো পাথরের খন্ডকে ক্ষয় করে বালিতে পরিণত করে ।

(গ) অপসারণ (Deflation) : প্রবল বায়ুপ্রবাহের ফলে মরুভূমির শিথিল বালুকারাশি এক স্থান থেকে অপর স্থানে স্থানান্তরিত হলে তাকে অপসারণ বলা হয় ।

বায়ুর বহন প্রক্রিয়া : ক্ষয়কাজের পর বায়ুর দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ হল বহন প্রক্রিয়া । বায়ু তিনটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বহন কাজ সম্পন্ন করে থাকে, যথা- (১) ভাসমান প্রক্রিয়া, (২) লম্ফদান প্রক্রিয়া এবং (৩) গড়ানো প্রক্রিয়া ।

(১) ভাসমান প্রক্রিয়া : প্রবল বায়ুপ্রবাহে মরু অঞ্চলের বালি, ধূলিকণা প্রভৃতি অতি সূক্ষ্মকণা বায়ুতে ভাসমান অবস্থায় একস্থান থেকে অন্য স্থানে বাহিত হয় । একে ভাসমান প্রক্রিয়া বলে ।

(২) লম্ফদান প্রক্রিয়া : অপেক্ষাকৃত বড়ো ও ভারী শিলাখন্ডগুলি বায়ুপ্রবাহের সঙ্গে ভূমিতে ঠক্কর খেতে খেতে সন্মুখে এগিয়ে চলে । এই প্রক্রিয়াকে লম্ফদান প্রক্রিয়া বলে ।

(৩) গড়ানো প্রক্রিয়া : বড়ো বড়ো বালুকণা ও প্রস্তরখন্ড ভারী হওয়ায় বাতাসে ভেসে থাকতে পারে না । এগুলি মাঝে মাঝে প্রবল বায়ুপ্রবাহের টানে ভূমির সাথে গড়িয়ে গড়িয়ে একস্থান থেকে অন্যস্থানে বাহিত হয় । একে গড়ানো প্রক্রিয়া বলে ।

বায়ুবাহিত বালুকণার লম্ফদান প্রক্রিয়ায় সবচেয়ে বেশি পরিমাণে বালি মরুভূমিতে একস্থান থেকে অন্যস্থানে বাহিত হয় ।

*****

Comments

Related Items

ভারতের বর্তমান রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল সমূহ

ভারতের বর্তমান রাজ্য সমূহ (২০২১ সাল পর্যন্ত ) :

১. অন্ধ্রপ্রদেশ : এই রাজ্যের আয়তন হল ১,৬০,২০৫ বর্গ কিমি. ও রাজধানী হল অমরাবতী ।

২. অরুণাচল প্রদেশ : এই রাজ্যের আয়তন হল ৮৩,৭৪৩ বর্গ কিমি. ও রাজধানী হল ইটানগর ।

স্বাধীনতা-উত্তর ভারতের রাজ্যগুলির বিন্যাস

স্বাধীনতা-উত্তর ভারতের রাজ্যগুলির বিন্যাস : প্রায় ১০০ বছর প্রত্যক্ষভাবে ইংরেজ শাসনাধীন থাকার পর ব্রিটিশ পার্লামেন্টে পাস হওয়া ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের 'ভারতের স্বাধীনতা আইন' অনুসারে ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ১৫ই আগস্ট অবিভক্ত ভারত দ্বিখণ্ডিত হয়ে স্বাধীনতা লাভ করে এব

ভারতের ভৌগলিক অবস্থান

অবস্থান (Location) : ভারত পৃথিবীর উত্তর গোলার্ধে এশিয়া মহাদেশের দক্ষিণে অবস্থিত একটি দেশ । নিরক্ষরেখার উত্তরে অর্থাৎ উত্তর গোলার্ধে এবং মূলমধ্যরেখার পূর্বে অর্থাৎ পূর্ব গোলার্ধে অবস্থিত অর্থাৎ ভারত উত্তর-পূর্ব গোলার্ধে অবস্থিত । ভারতের মূল ভূখণ্ড দক্ষি

ভারত (India)

ভারত :- প্রাচীন পারসিক লিপিতে 'সপ্ত সিন্ধু' কে বলা হয়েছে হপ্ত হিন্দু । সিন্ধু তীরবর্তী বসবাসকারী মানুষকে বিদেশীরা হিন্দু বলত এবং তার থেকেই হিন্দুস্থান কথাটি এসেছে । প্রাচীন পারসি শব্দ হিন্দুস (Hindus) থেকে উৎপন্ন ইণ্ডাস (Indus) থেকে ইণ্ডিয়া (INDIA) নামট

ভাগীরথী-হুগলী নদীর ওপর বর্জ্যের প্রভাব (Effects of waste disposal on Bhagirathi-Hooghly river)

ভাগীরথী-হুগলী নদীর ওপর বর্জ্যের প্রভাব (Effects of waste disposal on Bhagirathi-Hooghly river) : প্রায় 2500 কিমি দীর্ঘ গঙ্গা নদী ভারতের জীবন রেখা । গঙ্গা নদীর পার্শ্ববর্তী কলকারখানার বর্জ্য, পৌরসভার বর্জ্য, কৃষি ক্ষেত্রের কীটনাশক বাহিত জল ইত্যাদি এই নদ