নদীর মধ্যগতি ও সৃষ্ট ভুমিরূপ

Submitted by avimanyu pramanik on Tue, 05/22/2012 - 20:44

নদীর মধ্যগতি : নদীর বহন ও অবক্ষেপণের ফলে সৃষ্ট ভুমিরূপ :

নদীর মধ্যগতি ও মধ্যগতিতে নদীর প্রধান কাজ :-

উত্তর : পার্বত্য অঞ্চল ছাড়িয়ে কোনো নদী যখন সমভূমির ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয় তখন ওই নদীর গতিপ্রবাহকে মধ্যগতি বা সমভূমি প্রবাহ বলে । মধ্যগতিতে নদী ক্ষয়, সঞ্চয় ও বহন এই তিন ধরনের কাজই করে থাকে । নদীর মধ্যগতিতে উচ্চগতির তুলনায় নদীর গতিপ্রবাহ অপেক্ষাকৃত কম থাকায় ক্ষয়কাজের পরিমাণ অনেক কমে যায় । আবার নদীর মধ্যগতিতে নিম্নগতির তুলনায় নদীর গতিপ্রবাহ অপেক্ষাকৃত বেশি থাকায় সঞ্চয় কাজও কম হয় । কাজেই মধ্যগতিতে নদীর প্রধান কাজই হল বহন করা । মধ্যগতিতে স্রোতের বেগ কমে যাওয়ায় পার্বত্যঅঞ্চল থেকে বয়ে নিয়ে আসা নুড়ি, বালি, কাঁকর, কাদামাটি, শিলাচূর্ণ, পলিমাটি প্রভৃতি নদী আর বহন করতে পারে না । তখন সেগুলি নদী তার দুই তীরে সঞ্চিত করে এবং নানা রকম ভূমিরূপ গঠন করে । হরিদ্বার থেকে ধুলিয়ান পর্যন্ত অংশে গঙ্গার গতিপ্রবাহ হল গঙ্গার মধ্যগতি বা সমভূমি প্রবাহ ।

নদীর বাঁক (Meander) : নদীর মধ্যগতিতে সমভূমির উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার সময় যে সমস্ত রকম ভূমিরূপের সৃষ্টি হয়, নদীর বাঁক হল তাদের মধ্যে অন্যতম । মধ্যগতিতে এবং বিশেষ করে নিম্নগতিতে নদীর স্রোতের বেগ কমে যাওয়ায় নদী কোনো রকম বাধা অতিক্রম করার শক্তি হারিয়ে ফেলে । নদী তার গতিপথে বাধা পেলে সেই বাধা এড়িয়ে আঁকা বাঁকা পথে নদী প্রবাহিত হতে থাকে । এই সময় নদীপ্রবাহের বাঁকা অংশকে নদীর বাঁক বলা হয় । বারাণসীর কাছে গঙ্গানদীর সুন্দর নদীর বাঁক দেখা যায় ।

অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ (Ox-bow Lake বা Horse-bow Lake) : নদীর মধ্যগতিতে নদীর সঞ্চয়কাজের ফলে যে সমস্ত রকম ভূমিরূপের সৃষ্টি হয়, অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ হল তাদের মধ্যে অন্যতম । বাঁক ঘোরার সময় নদী তীরের যে জায়গা ঠিক স্রোতের মুখে পড়ে, সেই জায়গায় স্রোতের আঘাত সবচেয়ে বেশি লাগে । ফলে ওই জায়গায় নদী তীর ভাঙ্গতে থাকে এবং অপর দিকে নদী তীরে স্রোতের আঘাত বিশেষ না লাগায় নদী বাহিত বালি, পলি, কাদা, কাঁকর, শিলাচূর্ণ, নুড়ি প্রভৃতি জমে চড়ার সৃষ্টি হয় । এই প্রক্রিয়া ক্রমাগত চলার ফলে নদীর বাঁক বাড়তে থাকে ও দুই বাঁকের মধ্যবর্তী স্থান ক্রমাগত ক্ষয় পেতে থাকে ও সংকীর্ণ হতে থাকে । শেষ পর্যন্ত দুই বাঁক পরস্পরের সঙ্গে মিলে যায় এবং নদীর পুরনো খাতের মুখ বন্ধ হয়ে বাওড় বা হ্রদের সৃষ্টি হয় । এই রকম হ্রদ ঘোড়ার খুরের মত দেখতে হয়, তখন তাকে অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ বলা হয় । নদীর দুই বাঁকের মধ্যবর্তী পরস্পরের সঙ্গে মিলে জুড়ে গেলে নদী আবার সোজা পথে অগ্রসর হয় ।

*****

Related Items

কাবেরী নদী (The Kaveri)

কাবেরী নদী (The Kaveri) : কর্ণাটক রাজ্যের তালাকাভেরি উচ্চভূমি থেকে উৎপন্ন হয়ে কাবেরী নদী কর্ণাটক ও তামিলনাড়ুর মধ্য দিয়ে পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে মিলিত হয়েছে । কাবেরী নদীর দৈর্ঘ্য ৭৬৫ কিমি.

কৃষ্ণা নদী (The Krishna)

কৃষ্ণা নদী (The Krishna) : পশ্চিমঘাট পর্বতমালার মহাবালেশ্বরের শৃঙ্গের কিছুটা উত্তরে প্রায় ১৪০০ মিটার উচ্চতা থেকে উৎপন্ন হওয়ার পর কৃষ্ণা নদী দক্ষিণ-পূর্বে তেলেঙ্গানা ও অন্ধপ্রদেশ রাজ্যের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বিশাল বদ্বীপ সৃষ্টি করে

গোদাবরী নদী (The Godavari)

গোদাবরী নদী (The Godavari) : গোদাবরী নদী 'দক্ষিণ ভারতের গঙ্গা' নামে পরিচিত । মহারাষ্ট্রের ব্রম্ভগিরি পাহাড়ের ত্র্যম্বক শৃঙ্গ থেকে উৎপন্ন হয়ে এবং পরে পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয়ে গোদাবরী নদী মহারাষ্ট্র, ছত্তিশগড়, তেলেঙ্গানা ও অন্ধ্রপ্রদেশ

মহানদী (The Mahanadi)

মহানদী (The Mahanadi) : ছত্তিসগড় রাজ্যের রায়পুর জেলার দক্ষিণাংশের সিয়াওয়া মালভূমি থেকে উৎপন্ন হয়ে পূর্বদিকে প্রবাহিত হয়ে মধ্যপ্রদেশ ও ওড়িশা রাজ্য অতিক্রম করার পর বদ্বীপ সৃষ্টি করে বঙ্গোপসাগরে মিলিত হয়েছে । মহানদী

তাপী নদী (The Tapti)

তাপী বা তাপ্তি নদী (The Tapti) : মধ্যপ্রদেশের মহাদেব পর্বতের মুলতাই উচ্চভূমির প্রায় ৭৭০ মিটার উচ্চতা থেকে উৎপন্ন হয়ে তাপী নদী মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র ও গুজরাটের ওপর দিয়ে পশ্চিম দিকে প্রবাহিত হয়ে সাতপুরা ও অজন্তার মধ্যবর্তী সংকীর্ণ উপত