নদী উপত্যকার সঙ্গে হিমবাহ উপত্যকার পার্থক্য লেখ এবং নদী উপত্যকা ও হিমবাহ উপত্যকার আকৃতির পার্থক্যের কারণ কী ?

Submitted by avimanyu pramanik on Tue, 12/28/2021 - 17:51

প্রশ্ন :- নদী উপত্যকার সঙ্গে হিমবাহ উপত্যকার পার্থক্য লেখ এবং নদী উপত্যকা ও হিমবাহ উপত্যকার আকৃতির পার্থক্যের কারণ কী ?

নদী উপত্যকা ও হিমবাহ উপত্যকার পার্থক্য —

 

বৈশিষ্ট্য

নদী উপত্যকা

হিমবাহ উপত্যকা

(১) অবস্থান গত পার্থক্য

(১) মেরু প্রদেশের বরফাবৃত অঞ্চল এবং উষ্ণ ও শুষ্ক মরুভূমি অঞ্চল ছাড়া অন্যান্য অঞ্চলে নদী উপত্যকার উপস্থিতি লক্ষ করা যায় না ।

(১) কেবলমাত্র বরফে ঢাকা ঊঁচু পার্বত্য অঞ্চল এবং হিমশীতল মেরু অঞ্চলেই হিমবাহ উপত্যকার উপস্থিতি লক্ষ করা যায় ।

(২) আকৃতিগত পার্থক্য

(২) পার্বত্য অঞ্চলে নদীর উচ্চগতিতে নদী উপত্যকার আকৃতি ইংরেজী ‘I’ বা সরু ‘V’ আকৃতির হয় । উচ্চগতির শেষে ও মধ্যগতির প্রথমে নদী উপত্যকায় ‘নদীমঞ্চ’ সৃষ্টি হয় । সমভূমিতে নদীর মধ্যগতিতে নদী উপত্যকার আকৃতি প্রশস্ত ও খুব চওড়া এবং নদীখাত ক্রমশ অগভীর ও বিরাট চওড়া হতে থাকে । নিম্নগতিতে নদীখাতে চড়া পড়ে নদী উপত্যকায় বিশাল চড়ার সৃষ্টি হয় এবং নদী উপত্যকা অসম্ভব আঁকাবাঁকা হয়ে যায় । নদী উপত্যকার আঁকাবাঁকা এই গতিপথকে মিয়েন্ডার বলে ।

(২) উচ্চ পার্বত্য অঞ্চল হিমবাহের ক্ষয়কাজের ফলে খুব চওড়া তলদেশ এবং অপেক্ষাকৃত মসৃণ ও খাড়া পাড়যুক্ত হিমবাহ উপত্যকার সৃষ্টি হয় । এই সময়ে হিমবাহ উপত্যকার মধ্য দিয়ে অসম্ভব ভারী এবং কঠিন বরফের চাঁই প্রবাহিত হওয়ার জন্য হিমবাহ উপত্যকার আকৃতি হয় অনেকটা ইংরেজী ‘U’ অক্ষরের মতো । সাধারণত সোজাপথে প্রবাহিত হয় বলে হিমবাহ উপত্যকায় কখনোই বাঁক বা মিয়েন্ডার গঠিত হয় না । হিমবাহ উপত্যকায় কোনো রকমের মঞ্চ সৃষ্টি হয় না ।

(৩) প্রবাহের গতি (৩) পার্বত্য ও উচ্চ সমভূমি অঞ্চলে নদী স্রোতের গতিবেগ প্রবল হয়, নিম্নভূমিতে নদী স্রোতের গতিবেগ ধীরে ধীরে কমে আসে । (৩) বেশিরভাগ সময়েই হিমবাহ অত্যন্ত ধীরগতিতে প্রবাহিত হয় ।
(৪) ক্ষয়ের প্রকৃতি (৪) নদী উপত্যকায় ক্ষয়কাজের ফলে সৃষ্ট পাথরখন্ডগুলির আকৃতি গোলাকার ও মসৃণ হয় । (৪) হিমবাহ উপত্যকায় ক্ষয়কাজের ফলে সৃষ্ট পাথরখন্ডগুলির কোনো নির্দিষ্ট আকার থাকে না এবং আকৃতিতে এরা এবড়ো খেবড়ো হয় ।
(৫) ভূমিরূপের পার্থক্য (৫) নদীর সঞ্চয় কাজের ফলে নদী উপত্যকায় প্লাবনভূমি, স্বাবাভিক বাঁধ, বদ্বীপ প্রভৃতি ভূমিরূপের সৃষ্টি হয় । (৫) হিমবাহের সঞ্চয় কাজের ফলে হিমবাহ উপত্যকায় গ্রাবরেখা, ড্রামলিন, টিলা, কেম প্রভৃতি ভূমিরূপের সৃষ্টি হয় ।

নদী-উপত্যকা ও হিমবাহের উপত্যকার পার্থক্যের কারণ :-  নদী উপত্যকার আকৃতি ইংরেজী 'I' অথবা 'V' -এর মতো, কিন্তু হিমবাহ উপত্যকার আকৃতি 'U' -এর মতো হয়, এর কারণ হল:-

(১) নদীর উচ্চগতিতে ভূমির ঢাল বেশি হওয়ায় নদী প্রবল গতিবেগ সম্পন্ন হয় এবং নদী শুধুই নীচের দিকে ক্ষয় করে । এর ফলে নদী উপত্যকার আকৃতি ইংরেজি 'I' -এর মতো হয় ।

(২) ক্রমশ নদী উপত্যকার পার্শ্বদেশ বৃষ্টির জল, আবহবিকার বা ধসের ফলে ক্ষয় পেতে থাকলে উচ্চ পার্বত্য অঞ্চলে নদী উপত্যকা সংকীর্ণ 'V' -এর মতো হয় ।

(৩) নদীর অন্যান্য গতিতে নদী-উপত্যকা নীচের দিকে ক্ষয়প্রাপ্ত হয় না বললেই চলে । পরিবর্তে নদী-উপত্যকা পাশের দিকে ক্ষয় হয়, ফলে নদী উপত্যকা সংকীর্ণ 'V' -এর পরিবর্তে প্রশস্ত 'V' -এর আকার নেয় । 

হিমবাহ যখন উপত্যকার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয় তখন সেখানে হিমবাহের নিম্নক্ষয় ও পার্শ্বক্ষয় প্রায় সমানভাবে হতে থাকে । এক্ষেত্রে হিমবাহের ক্রমাগত ক্ষয়, বহন ও সঞ্চয়ের ফলে উপত্যকাটি বরফমুক্ত হলে দেখা যায় —

(ক) হিমবাহের তলদেশ বেশ প্রশস্ত, 

(খ) পার্শ্বদেশ বেশ খাড়া এবং, 

(গ) আড়াআড়ি পার্শ্বদেশ অনেকটা ইংরেজি 'U' অক্ষরের মতো দেখতে হয় ।

*****

Comments

Related Items

কাবেরী নদী (The Kaveri)

কাবেরী নদী (The Kaveri) : কর্ণাটক রাজ্যের তালাকাভেরি উচ্চভূমি থেকে উৎপন্ন হয়ে কাবেরী নদী কর্ণাটক ও তামিলনাড়ুর মধ্য দিয়ে পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে মিলিত হয়েছে । কাবেরী নদীর দৈর্ঘ্য ৭৬৫ কিমি.

কৃষ্ণা নদী (The Krishna)

কৃষ্ণা নদী (The Krishna) : পশ্চিমঘাট পর্বতমালার মহাবালেশ্বরের শৃঙ্গের কিছুটা উত্তরে প্রায় ১৪০০ মিটার উচ্চতা থেকে উৎপন্ন হওয়ার পর কৃষ্ণা নদী দক্ষিণ-পূর্বে তেলেঙ্গানা ও অন্ধপ্রদেশ রাজ্যের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বিশাল বদ্বীপ সৃষ্টি করে

গোদাবরী নদী (The Godavari)

গোদাবরী নদী (The Godavari) : গোদাবরী নদী 'দক্ষিণ ভারতের গঙ্গা' নামে পরিচিত । মহারাষ্ট্রের ব্রম্ভগিরি পাহাড়ের ত্র্যম্বক শৃঙ্গ থেকে উৎপন্ন হয়ে এবং পরে পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয়ে গোদাবরী নদী মহারাষ্ট্র, ছত্তিশগড়, তেলেঙ্গানা ও অন্ধ্রপ্রদেশ

মহানদী (The Mahanadi)

মহানদী (The Mahanadi) : ছত্তিসগড় রাজ্যের রায়পুর জেলার দক্ষিণাংশের সিয়াওয়া মালভূমি থেকে উৎপন্ন হয়ে পূর্বদিকে প্রবাহিত হয়ে মধ্যপ্রদেশ ও ওড়িশা রাজ্য অতিক্রম করার পর বদ্বীপ সৃষ্টি করে বঙ্গোপসাগরে মিলিত হয়েছে । মহানদী

তাপী নদী (The Tapti)

তাপী বা তাপ্তি নদী (The Tapti) : মধ্যপ্রদেশের মহাদেব পর্বতের মুলতাই উচ্চভূমির প্রায় ৭৭০ মিটার উচ্চতা থেকে উৎপন্ন হয়ে তাপী নদী মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র ও গুজরাটের ওপর দিয়ে পশ্চিম দিকে প্রবাহিত হয়ে সাতপুরা ও অজন্তার মধ্যবর্তী সংকীর্ণ উপত